স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব জেনে নিন
স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে আপনি কি আগ্রহী? তাহলে আজকের এই আর্টিকেল শুধুমাত্র আপনার জন্য। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এ দেশের নাগরিক হিসেবে স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো সে সম্পর্কে জানা একান্ত জরুরী। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব সে সম্পর্কে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।
আমরা বাংলাদেশে বসবাস করি। নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার স্মার্ট কার্ড থাকা প্রয়োজন।আমাদের সকলের প্রায় জানা দরকার দেশে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্মার্ট কার্ড থাকাটা কতটা জরুরী। তাই সময় নষ্ট না করে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিন স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব।
ভূমিকা
স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো এ সম্পর্কে তথ্যগুলো জানা দরকার। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্ট কার্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই স্মার্ট কার্ড আমাদের নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব। স্মার্ট কার্ড কি? বাংলাদেশে স্মার্ট কার্ড কোথায় তৈরি করা হয়।
স্মার্ট কার্ডের সুবিধা, স্মার্ট কার্ডের মেয়াদকাল কত বছর, স্মার্ট কার্ডের কিছু অসুবিধা এবং স্মার্ট কার্ডে কি টাকা থাকে। এর সকল বিষয়ে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। পাঠক বন্ধুগণ, এ সকল বিষয়গুলো জানার জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ুন। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব
স্মার্ট কার্ডের জন্য সঠিক নিয়মে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। কিছুদিন সময় পর যখন স্মার্ট কার্ডটি তৈরি বা প্রস্তুত হয় তখন তা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করার সময় যে টোকেনটা দেয় ওই টোকেনটা উক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসে জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ডটি সংগ্রহ করতে পারেন।
গ্রামগঞ্জে বা শহর অঞ্চলে এলাকার উপর ভিত্তি করে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য ক্যাম্পেইন তৈরি করা হয় এ ক্যাম্পেইনের সদস্য মেম্বারদের কাছ থেকেও আপনি স্মার্ট কার্ড টি নিতে পারেন। অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর অফিসে গিয়েও স্মার্ট কার্ডটি সংগ্রহ করতে পারেন। এরপ্র স্মার্ট কার্ডটি হাতে পাওয়ার পর আপনার সকল তথ্যগুলো যাচাই করে নিবেন এবং সযত্নে সংরক্ষিত রাখবেন।
স্মার্ট কার্ড কি ?
স্মার্ট কার্ড বলতে আমরা সাধারণত এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স কার্ড বুঝে থাকি। আমরা এদেশের নাগরিক। এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের পরিচয় কে তুলে ধরার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card) বা ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। এই এনআইডি কার্ড কে ডিজিটালকরণ করাটাই হল স্মার্ট কার্ড। এই ডিজিটালকরাণ স্মার্ট কার্ডটি হল একজন নাগরিকের তথ্যের নিরাপদ ও সুরক্ষিত স্থান।
বাংলাদেশের এই স্মার্ট কার্ড টি তৈরি করা হয় পলি কার্বনেট দিয়ে। এক স্মার্টকার্ডের মধ্যে যেই কন্ট্রাক চিপ রয়েছে এটার তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা প্রায় ২৫৬ কিলোবাইট। বাংলাদেশে যে স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা হয় এটি তথ্য ধারণ করে রাখার ক্ষমতা বিশ্বে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এবং টেকসই। এই সকল বিষয় এর উপর ভিত্তি করে এই কার্ডটির নাম হয় স্মার্ট কার্ড।
প্রথম স্মার্ট কার্ড ১৯৭০ সালে ফ্রান্সের তার্ক শহরে ব্যবহার করা হয়। সে সময় এই স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা হতো ক্যালকুলেটিং মেশিন আবিষ্কার এর কাজে। ১৯৭৪ সালের রোমানিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে এই স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হয়। এটি মূলত তারা ব্যবহার করত পেট্রল স্টেশনে। তবে এই স্মার্ট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার এবং প্রয়োগ দিন দিন প্রসারিত হতে থাকে ১৯৯০ সালের পর থেকে।
বাংলাদেশের স্মার্ট কার্ড কোথায় তৈরি হয়
শুরুর দিকে বাংলাদেশ স্মার্ট কার্ড তৈরীর জন্য ফ্রান্সের একটি কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হতো। ফ্রান্সের সে কোম্পানি চুক্তি মোতাবেক সময় মত স্মার্ট কার্ড তৈরিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ দেশেই নিজস্ব জনবল দিয়ে স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করেন।বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ হিসেবে স্মার্ট কার্ড তৈরিও এই স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ।
এ পর্যন্ত যত স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়েছে এর সকল কার্যক্রম এদেশের সম্পূর্ণ করা হয়েছে । স্মার্ট কার্ড সর্বপ্রথম চালু করা হয় অক্টোবর মাসের ২০১৬ সালে। এই স্মার্ট কার্ড চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মার্ট কার্ড ব্যবস্থা সারা দেশে একসাথে চালু করা না গেলেও। প্রথমে জেলা ভিত্তিক বিতরণ করা হয় পরবর্তীতে বিভিন্ন উপজেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের কার্যক্রম চলতে থাকে এবং ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
স্মার্ট কার্ডের সুবিধা
- সরকারি সব অনলাইন সুবিধা
- সম্পত্তি কেনাবেচা
- ই পাসপোর্ট
- ব্যাংক খোলা
- বিয়ের রেজিস্ট্রেশন
- শেয়ার-বিও একাউন্ট
- ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ
- সরকারি যেকোনো ভাতা উত্তোলন
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- ট্রেড লাইসেন্স
- যানবাহন রেজিস্ট্রেশন
- গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ
- মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন
- হেলথ কার্ড বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির কাজ ও
- রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ
যারা স্মার্ট কার্ড পাননি
যারা স্মার্ট কার্ড পায়নি সে সকল নাগরিক বা ভোটাররা দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিসের বায়োমেট্রিক তথ্য সাবমিট করে পেতে পারেন স্মার্ট কার্ড। আমাদের মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে ভোটার নিবন্ধন করার পরেও অনেকেই স্মার্ট কার্ড পায় না।
২০১৬ সালের পূর্বে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের এখনো অনেকে স্মার্ট কার্ড পাননি। পরবর্তিতে ২০১৬ সালের পরে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের মধ্যেও অনেকে স্মার্ট কার্ড পাননি। এর মূল কারণ হলো অপরিপূর্ণ বা ভুল তথ্য এবং স্মার্ট কার্ড কার্ড জটিলতা কারণে।
স্মার্ট কার্ড এর মেয়াদ কত বছর
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা জানেন স্মার্ট কার্ডের মেয়াদকাল কত বছর। আবার অনেকেই এই বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। তথ্য মতে, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের আয়ুষ্কাল বা মেয়াদকাল অন্ততপক্ষে ১০ বছর। তবে এদেশের একজন নাগরিকের এই ব্যবহারকারী স্মার্ট কার্ডটির মেয়াদকাল ১৫ বছর ধরা হয়েছে।
যে দিন থেকে স্মার্ট কার্ডটি ইস্যু করা হয় তার পরবর্তী ১৫ বছর পর্যন্ত এই কার্ডটির মেয়াদ অব্যাহত থাকে। এরপর স্মার্ট কার্ড টি আবার পুনরায় নবায়ন করতে হয়। উক্ত স্মার্ট কার্ডটি মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ব্যবহারের যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ বা এক্সপায়ার স্মার্ট কার্ড হিসেবে বিবর্জিত হবে।
স্মার্ট কার্ডের মধ্যে যে চিপের আইসি থাকে এর আয়ুষ্কাল প্রায় এক লক্ষ সাইকেলেরও বেশি। এই স্মার্ট কার্ড টি প্রতিদিন প্রায় ২৮ বার বা তার বেশি পাঞ্চ করা যাবে। আমরা যে স্মার্ট কার্ড টি ব্যবহার করি এই স্মার্ট কার্ডে একজন এদেশের নাগরিক হিসেবে তার ২৮ ধরনের তথ্য থাকে। এই তথ্য গুলোর মাধ্যমে একজন নাগরিককে সনাক্ত করা সম্ভব।
স্মার্ট কার্ডের অসুবিধা
প্রতিটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে। ঠিক তেমনি স্মার্ট কার্ডেরও কিছু সাধারণ অসুবিধা রয়েছে। অসুবিধা সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক স্মার্ট কার্ডের অসুবিধা সম্পর্কে।
- স্মার্ট কার্ডের প্রথম অসুবিধা হলো এই স্মার্ট কার্ড টি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায় না এবং পরবর্তীতেও যাবে না।
- বর্তমানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি করে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়। যা কোনক্রমে হারিয়ে গেলে বা ভেঙে গেলে দ্বিতীয় বার দেওয়া হবে না। তবে পরবর্তীতে এই স্মার্ট কার্ড হারিয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আবেদন করে স্মার্ট কার্ড তুলে নেওয়া যাবে।
- এই আবেদন করার জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি জমা দিতে হবে।তাহলে বুঝতে পারছেন প্রথম স্মার্ট কার্ড টি তোলার জন্য কোন টাকা পয়সা না লাগলেও পরবর্তীতে আবেদনের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড তুলতে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
স্মার্ট কার্ড এ কি টাকা থাকে
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা এই উদ্ভট প্রশ্নটি করে থাকেন। স্মার্ট কার্ড নাকি টাকা থাকে। যেহেতু স্মার্ট কার্ডটা দেখতে অনেকটা এটিএম কার্ডের মত। তাই অনেকে মনে করে থাকেন যে স্মার্ট কার্ডে হয়তোবা টাকা থাকে। কিন্তু এ তথ্যটি সম্পূর্ণ ভূল। স্মার্ট কার্ড যখন হাতে পাওয়া শুরু হয় প্রথম দিকে সবাই এমনটাই ভাবতো যে, হয়তো এই স্মার্ট কার্ড দিয়ে এটিএম মেশিনে টাকা তোলা যাবে।
এই স্মার্ট কার্ডের চিপের মধ্যে শুধুমাত্র একজন ভোটারের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে এর ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা চালু করেন। এদেশের নাগরিক হিসেবে একজন ভোটারের সকল তথ্য যাচাই করার জন্য এই স্মার্ট কার্ড রিলোডে কার্ডটি পাঞ্চ করলে সেই ব্যক্তির সকল তথ্য প্রদর্শিত হয়।
মন্তব্য
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবেন। এই স্মার্ট কার্ড পাওয়ার মাধ্যমে আপনি যদি স্মার্ট কার্ডের সুযোগ সুবিধা গুলো পেতে চান তাহলে কিভাবে স্মার্ট কার্ড পাবেন তার জন্য আপনার নিজ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এর ফলে খুব সহজেই স্মার্ট কার্ড টি পেয়ে যাবেন।
আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। এবং আমার এই ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url