মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা জেনে নিন
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? যদি এ সকল বিষয়ে তথ্যগুলো জানতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুব প্রয়োজনীয় হতে চলেছে। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবা সমূহ সম্পর্কে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।
সেই সাথে মোবাইল ব্যাংকিং কিভাবে এক্টিভ করতে হয় সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই আর্টিকেলে। আশা করি মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে তথ্যগুলো পড়তে আপনার ভালো লাগবে। সুতরাং সময় নষ্ট না করে চলুন জেনে নিই এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে আমরা কম বেশি সকলেই এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে খুবই পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোবাইল ব্যাংকিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। দিন দিন এই মোবাইল ব্যাংকিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা ব্যাংকিং এর সকল সুবিধা পেয়ে থাকি। ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম শুরু হয় বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আমরা জানব মোবাইল ব্যাংকিং কি মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহ মোবাইল ব্যাংকিং কিভাবে একটিভ করতে হয় মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। এ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক
মোবাইল ব্যাংকিং কি
মোবাইল ব্যাংকিং হলো এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যা মোবাইলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা হয়ে থাকে।সাধারণভাবে বলতে গেলে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনগুলোর সাথে জড়িত সকল কার্যক্রম যা মোবাইল ডিভাইস এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে তাকেই বোঝায়।
যেমন ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করা, অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা, শেয়ার বাজারের লেনদের পরিচালনা করা, কাস্টমাইজ তথ্য ব্যবহার করা, বিল পেমেন্ট করা সহ ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের কাজ গুলো এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা সম্ভব।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবা সমূহ
মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবা সমূহ অনেক। একজন মোবাইল ব্যবহারকারী এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনেকগুলো সেবা উপভোগ করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন গ্রাহক যে সকল সেবা গুলো গ্রহণ করে তার নিম্নে দেয়া হলোঃ
- ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে টাকা লেনদেন করা।
- লেনদেনের তথ্য বা হিস্টোরি দেখা।
- অনলাইনের ট্রেন, বাস, লঞ্চ ও বিমানের টিকিট বুক করা।
- বিভিন্ন রকম ব্যাংকিং লোনের জন্য আবেদন।
- অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করা।
- নিজের একের অধিক একাউন্টের মধ্যে টাকা পাঠানো হয়।
- বিভিন্ন ধরনের অনলাইন পেমেন্ট প্রদান ক।
- মোবাইলে রিচার্জ করা।
মোবাইল ব্যাংকিং কিভাবে এক্টিভ করতে হবে?
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন রকম ব্যাংকের আলাদা আলাদা অ্যাপস থাকার কারণে এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা একটিভ করার প্রক্রিয়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। প্রধানত বেশিরভাগ ব্যাংকগুলোতে তাদের অফিসিয়াল মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস ডাউনলোড করার পর সরাসরি সেখানে একাউন্ট রেজিস্ট্রার করার অপশনগুলো দেওয়া থাকে। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া। একাউন্ট ডাউনলোড অপশনটি ভালোভাবে পড়ে সঠিকভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পূরণ করতে হবে।
এরপর একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে একাউন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার ফোন নম্বর ও এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড দিতে হবে। যদি এটিএম কার্ড বা ডেবিট কার্ডের রশিদের বিবরণ থাকে। তবে তার বিস্তারিত সেখানে সংযত করতে হবে। এ সকল তথ্যগুলো পরবর্তীতে আপনার ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের জন্য অপরিহার্য বলে গণ্য হবে। বর্তমান সময়ে এই মোবাইল ব্যাংকিং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং গ্রাহকদের জন্য এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।
মোবাইল ব্যাংকিং সমূহগুলো কি কি
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং নামে একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু করা হয় ২০১১ সালের ৩১ শে মার্চ বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রথম ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেন। এর পর অনেকগুলো ব্যাংক এই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করতে থাকেন। নিম্নে মোবাইল ব্যাঙ্কিং সমূহের নাম গুলো দেয়া হলোঃ
- বিকাশ- ব্রাক ব্যাংক।
- নগদ- ডাক বিভাগ।
- রকেট- ডাচ বাংলা ব্যাংক।
- শিওর ক্যাশ- রুপালী ব্যাংক।
- রেডি ক্যাশ- জনতা ব্যাংক।
- ইউ ক্যাশ (উপায়)-ইউসিবি ব্যাংক।
- এম ক্যাশ- ইসলামী ব্যাংক।
- মাই ক্যাশ- মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
- ওকে ওয়ালেট- ওয়ান ব্যাংক।
- ট্যাপ- ট্রাস্ট ব্যাংক।
- এজেন্ট ব্যাংকিং- ব্যাংক এশিয়া।
- পল্লী লেনদেন- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।
- ট্যাপ এন পে- মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড।
- টেলিক্যাশ- সাউথইস্ট ব্যাংক।
- ইসলামিক ওয়ালেট- আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক।
- আই ব্যাংকিং- এবি ব্যাংক।
- সিটি টার্চ- সিটি ব্যাংক।
- আমার অ্যাকাউন্ট- আই এফ আইসি ব্যাংক।
- জাস্ট পে- যমুনা ব্যাংক।
- স্কাই ব্যাংকিং- ইয়েস্টার্ন ব্যাংক।
- ডিবিএল গো- ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড।
- পি মানি- প্রিমিয়ার ব্যাংক।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ গ্রাহকি তাদের ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত লেনদেনগুলো নিজেরা নিজেই তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে সম্পূর্ণ করছেন। আবার অনেকে আছেন যারা মোবাইলের ব্যবহার সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। এর ফলে সে সকল গ্রাহকগণ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।
যে সকল গ্রাহকগণ মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সম্পর্কে জানেন না। তারা জেনে নিন মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহ সম্পর্কে।আর যে সকল গ্রাহকগণ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন তাদেরও এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা গুলো জেনে রাখা উচিত। নিম্নে মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা গুলো আলোচনা করা হলোঃ
- যেকোন স্থান অর্থাৎ সিম নেটওয়ার্ক পায় এইরকম স্থান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবহার প্রধানত বা মূলত ইন্টারনেটের সাহায্যে করা হয়ে থাকে। তবে যদি ইন্টারনেট না থাকে। তবে আপনি এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
- এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি দিনরাত ২৪ ঘন্টা এবং বছরে ৩৬৫ দিনই গ্রহণ করতে পারবেন। যেকোনো মোবাইল বা ট্যাবলেট এর মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব। এই সুবিধার ফলে আপনি আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর সকল তথ্য ২৪ ঘন্টায় ঘরে বসে পান
- এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে যেকোনো সময় আপনি আপনার নিজের ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। এর জন্য কষ্ট করে আপনাকে ব্যাংকে যাওয়া লাগবে না। তে করে আপনার সময়ও বাঁচবে এবং যাতায়াত খরচ কমবে।
- নিরাপত্তাগত দিক থেকে এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা অনেক সুরক্ষিত এবং কঠোর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রবেশ বা লগইন করার জন্য সকল তথ্য, পাসওয়ার্ড, ট্রানজেকশন কোড বা নম্বর প্রদান করতে হয়। এ সকল তথ্যগুলো ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এ লগইন করা সম্ভব নয়। এ সকল তথ্যগুলো শুধুমাত্র একজন মোবাইল ব্যাংকিং গ্রহনকারী গ্রাহকের কাছেই থাকে। এই সকল বিষয়গুলো থেকে বুঝতেই পারছেন যে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা কতটা সুরক্ষিত ও নিরাপদ।
- এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। কোন প্রকার ঝামেলা ও সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে। মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা খুবই সহজ। মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের বাসা বাড়ির গ্যাসের বিল ইন্টারনেট বিল পানির বিল খুব সহজে দিতে পারি।
- মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধার ফলে আমরা আমাদের লেনদেনের হিসাব সহ সকল তথ্য নিজের ফোনে দেখতে পায়। ব্যক্তিগত সিম কার্ড এবং ব্যক্তিগত অনুমোদন ব্যতীত অন্য কেউ আপনার ব্যাংকিং একাউন্টে লগইন করে ঢুকতে পারে না।
মোবাইল ব্যাংকিং এর অসুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং এর যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে। গ্রাহকদের কিছু অসাবধানতার কারণে এ অসুবিধা গুলো হয়ে থাকে। যার ফলে গ্রাহকগণ কে ভুক্তভোগী হতে হয়। নিম্নে মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে জড়িত বেশ কিছু অসুবিধা গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রধান অসুবিধা হলো যদি আপনার স্মার্টফোন না থাকে তাহলে আপনি এই সুবিধা সঠিক ভাবে উপভোগ করতে পারবেন না। এর কারণ হলো মোবাইল ব্যাংকিং এর জন্য অ্যাপস ব্যবহার করতে হয়। তাই অ্যাপস ব্যবহারের জন্য স্মার্টফোন প্রয়োজন।
- মোবাইল ব্যাংকিং এর আরেকটি সাধারন অসুবিধা হলো প্রতারক চক্র। বেশিরভাগ মোবাইল ব্যাংকিং এর গ্রাহকগণ এই প্রতারক চক্রের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। গ্রাহকদের অসাবধানতার কারণে প্রতারক চক্র যদি কোনক্রমে পিন নাম্বার জেনে যায় তাহলে আপনার একাউন্টের সকল টাকা যে কোন সময় হাতিয়ে নিতে পারে।
- মোবাইল ব্যাংকিং এ সারাদিন আপনার ইচ্ছামত আপনি টাকা লেনদেন করতে পারবেন না। এটি লেনদেনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা একটি বড় অসুবিধা।
- মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক তাদের গ্রাহকন্দের কাছ থেকে কিছু পরিমাণ টাকা চার্জ করে থাকেন। এটিও মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি অসুবিধা হলে পরিলক্ষিত হয়।
- অনেক সময় মোবাইল চুরি হয়ে গেলে বা সিম কার্ডটি হারিয়ে ফেললে মোবাইল ব্যাংকিং এর গ্রাহকদের অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা উক্ত মোবাইলটি হারানোর ফলে আমাদের সকল ডিটেলস অন্যের কাছে যাওয়া সম্ভব থাকে।
শেষ কথা।।মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুপ্রিয় গ্রাহক হন আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য পড়েছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে জেনে গেছেন মোবাইল ব্যাংকিং কি মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এই মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
যার ফলে এই ব্যাংকিং সেবা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনিও এই ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আসতে পারেন এবং সুবিতাগুলো উপভোগ করতে পারেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তবে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url