ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন পদ্ধতি

প্রিয় পাঠক,আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য খুব আগ্রহী এবং আপনারা নিজেও এই জাতের ছাগল পালন করতে ইচ্ছুক। তাদের জন্য আমার এই আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। এর জন্য প্রিয় খামারি ভাই ও বোনেরা আপনাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ প্রর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। এখন দেরি না করে আসুন জেনে নেওয়া যাক এই জাতের ছাগল পালন সম্পর্কে।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায়

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ও ভারতের একটি জাত। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল আকারে তুলনামূলক ভাবে অন্য ছাগলের চেয়ে ছোট। কিন্তু শরীরের কাঠামো শক্ত ও পেশীবহুল। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল সাধারনত কালো রংয়ের হয়ে থাকে এছাড়াও বাদামী, ধূসর এবং সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। 

এদের গায়ের লোম খুব ছোট ছোট এবং মসৃণ ও শিং ছোট আকৃতির। ব্লাক বেঙ্গল উভলিঙ্গের ছাগলেরই দাঁড়ি গজায়। এরা খুব শান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। দুধ তুলনামূলকভাবে কম দিয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের ওজন প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি

এবং একটি পূর্ণবয়স্ক মেয়ে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের ওজন ২০ থেকে ২৫ কেজি। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতি বারে অন্তত দুইটি,পরের বার তিনটি বা সর্বোচ্চ ৫টি পর্যন্ত বাচ্চা একবারে দিয়ে থাকে।

ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিকা

আমাদের সকলেরই অবশ্যয় জানা দরকার ছাগলের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ছাগল পালনের জন্য। আমাদের মাথায় রাখতে হবে ছাগলের খাদ্য হচ্ছে প্রধান উপাদান যা ছাগলের লাভজনকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির করে। 

আর ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিক সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য থাকলে আমরা কম খরচে ছগলের উৎপাদন বেশি করে লাভবান হতে পারি। সব ধরনের ছাগলের খাদ্য চাহিদা একই রকম হয় না। ছাগলের জাতভেদে ও বয়স অনুসারে তাদের দৈনন্দিন খাদ্যের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। 

প্রত্যেক বয়সের ছাগলের খাদ্য তালিকায় থাকে ভিন্নতা। তাই ছাগলের জাতভেদে ও বয়স অনুসারে ছাগলকে তার প্রয়োজনীয় ও পরিমিত খাদ্য দিতে হবে। যাতে ছাগল সঠিক পরিমান খাদ্য খেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে।

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগকে দৈনিক কিছু দানাদার খাদ্য দিতে হবে। যেমনঃ গম ভাঙ্গা, ছোলা ভাঙ্গা, তিলের খৈল, সয়াবিন খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টা ভাঙ্গা, চিটা গুড়, চিলেটেড মিনারেল মিক্স ও লবন।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দাম

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের দাম তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য ছাগলের চেয়ে কম। বাজারের উপর নির্ভর করে একেক সময় একেক রকম দাম হয়ে থাকে। দিন দিন যেহেতু ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে মাংস ও পালনের জন্য। একটা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা মায়ের দুধ যখন ছাড়ে তখন বাচ্চাটি বিক্রি করা হয়ে থাকে।
  • বাচ্চাটি বয়স যখন ৪ থেকে ৫ মাস তখন তার দাম আনুমানিক ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
  • বাচ্চাটি যখন গাভিন হয়। গাভিন আবস্থায় ৩-৪ মাসের হলে তখন তার দাম আনুমানিক ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
  • ১ বছর বয়সের একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল খাসি ছাগলের দাম আনুমানিক ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।

গর্ভবতী ছাগলের খাবার তালিকা

গর্ভবস্থায় প্রথম ১ থেকে ২ মাস গর্ভবতী ছাগীর তেমন বাড়তি খাবারের দরকার হয় না। এই তিন মাস পর বাকি মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গাভীন ছাগীকে বাড়তি খাবার খেতে দিতে হয়। গর্ভবস্থায় গর্ভবতী ছগীকে খুব যত্নসহকারে খাবার দিতে হবে।

গর্ভবতী ছাগলকে প্রচুর কাচা ঘাস, কঁঠালের পাতা, লতা-পাতা, সবজির খোসা খেতে দিতে হবে। বালতি বা গামলাই পানির সাথে কিছুটা লবন মিশিয়ে রাখতে হবে। যাতে গাভীন ছাগী ইচ্ছা মতো পানি পান করতে পারে।

আমাদের অবশ্যয় মনে রাখা উচিত গর্ভবতী ছাগলকে বেশি দানাদার খাবার যেমন ( গম ভাঙ্গা, ছোলা ভাঙ্গা, ভুট্টা ভাঙ্গা) ইত্যাদি দেওয়া যাবে না। কারন গর্ভবতী ছগলের হজমে সমস্যা হয় এবং খাদ্য পরিপাকে বাধা সৃষ্টি করে। 

মোটকথা আমাদের মাথাই রাখতে হবে যে, গর্ভবতী ছাগলের সহজে হজম হয় ও পরিপাক ক্রিয়া যেন সহজ হয় এই ধরণের খাবার তালিকা তৈরি করে গর্ভবতী ছাগলেকে দিতে হবে। বিভিন্ন রকম বাসি পচা খাবার গর্ভবতী ছাগীকে দেওয় যাবে না। এতে গর্ভবতী ছাগলের পেট ফেপে যেতে পারে।

ছাগলের রোগের তালিকা

সকল গৃহপালিত প্রাণীর মতো ছাগলও বিভিন্ন রকমের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগ জীবাণুগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা, ভাইরাস দ্বারা, পরজীবী দ্বারা, অপুষ্টি, বংশগত সমস্যা, এবং কিছু কিছু বিষাক্ত পদার্থের কারণে হয়ে থাকে। নিম্নে এই রকম ছগলের কিছু রোগবালাই নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আমাদের ছাগল পালন করার পূর্বেই ছাগলের রোগ সম্পর্কে জানা দরকার।

পিপিআর রোগঃ পিপিআর হচ্ছে ছাগলের একটি অতি পরিচিত ও জীবনঘাতী রোগ। এই রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলের জ্বর, মুখে ঘা, চোখ দিয়ে পানি পড়া , পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।

এই পিপিআর রোগটি অনান্য প্রাণিদেরও হয়ে থাকে কিন্তু সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয় ছগল। এই রোগে আক্রান্ত ছাগলের সাথে ভালো বা সুস্থ ছাগল রাখলেও সুস্থ ছাগল রোগাক্রান্ত হয়ে যায়।

তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স রোগঃ এই রোগ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বেশি দেখা যায়। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের কারনে ছাগল তড়কা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগটি এতই মারাত্মক যে ছাগলের শরীরে প্রবেশ করার ১দিনের মধ্যেই এই লক্ষনটি প্রকাশ পায়। অনেক সময় তড়কার লক্ষন বোঝার আগেই ছাগল মারা যায়। ছাগলের তড়কা রোগ দেখা দিলে প্রবল জ্বর হয়। ছাগল জাবর কাটে না ও রক্ত পায়খানা করে। এক প্রর্যায়ে ছাগল অজ্ঞান হয়ে যায়।

ম্যাসটাইটিস বা ওলান পাকাঃ ছাগলের ওলান পাকা একটি মারাত্বক সমস্যা। ছাগলের বাচ্চা প্রসবের পূর্বে বা পরে এই রোগটি হয়ে থাকে। কোন কোন সময় পরজীবী বা ক্ষতের কারনেও এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ হলে ছাগলের প্রবল জ্বর হয়। ওলান শক্ত হয়ে যায় ফলে ছাগলের বাট দিয়ে দুধ বের হয় না। মাঝে মাঝে দুধ বের হলেও দুধের সাথে রক্ত বের হয়ে আসে।

ব্রুসেলোসিস বা জরায়ুর রোগঃ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া করনে এই রোগ হয়ে থাকে। ছাগলের গর্ভাবস্থায় বা গর্ভাবস্থায় না থাকলেও এই রোগ হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়ার কারনে ছাগলের জরায়ু ফুলে যায় এবং ছাগল গর্ভধারণে ব্যার্থ হয়। অপরদিকে পুরুষ ছাগলের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ফুলে যায়। অনেক সময় এই রোগের কারনে ছাগল মারাও যায়।

ছাগলের বাসস্থান

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনের জন্য উচু স্থানে খামার বা ঘর নির্মান করতে হবে। খামার বা ঘরটি অবশ্যয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত হতে হবে। ছাগল পালনের জন্য অপরিষ্কার, দুর্গন্ধযুক্ত, স্যাঁত স্যাঁতে, স্থান পরিহার করতে হবে। ছাগলের বাসস্থানে যেন অবশ্যয় আলো প্রবেশ করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। 

ছাগল সাধারনত উচু স্থান পছন্দ করে তাই ছাগলের ঘরে বাতার মাচা করে দিতে হবে। ছাগলের বাসস্থানে মশা ও মাছির উপদ্রব্য যেন বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য মশুরি বা ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, মহোদয় আমার এই আর্টিকেল থেকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। আমার লেখা এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে।

তাহলে আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন এবং এরকম আরোও পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। আর ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল নিজে পালন করুন এবং অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন। (০১)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url