কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা,ও কচু শাকের রেসিপি

 আপনি কি কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা,ও কচু শাকের রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাইছেন?যদি জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা,ও কচু শাকের রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কচু শাক
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারী হবে। এর জন্য আপনাকে এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে ও মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। তাই দেরি না করে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা,ও কচু শাকের রেসিপি সম্পর্কে।

ভূমিকা

আমাদের সবার কাছে একটি পছন্দের শাক হল কচুর শাক। গ্রাম অঞ্চলসহ শহর অঞ্চলেও এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। গ্রাম অঞ্চলে বাসা বাড়ি আশেপাশ, বাগান, বিলের ধারে, জমিতে, যেখানে সেখানে বিনা যত্নে বেড়ে ওঠে এই শাক। ইংরাজিতে এই শাককে বলে Arum Spinach। এই কচুর শাকের উপকারিতাগুণ বলে শেষ করা যাবে না।

এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ও কচুশাকের রেসিপি সম্পর্কে। এছাড়া আপনারা আরো জানতে পারবেন কচু শাকে কি কি ভিটামিন রয়েছে এবং গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক মহোদয়, তাহলে চলুন মূল আলোচনায় আসা যাক।

কচু শাকে কি কি ভিটামিন আছে

কচুর শাক ভিটামিনের ভরপুর। গ্রামগঞ্জে ও শহরাঞ্চলে এই কচুর শাকের যেহেতু জনপ্রিয়তা ব্যপক।তাই ছোট-বড় সবার কাছে এই কচুর শাক অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শাক। এই কচুশাককে ঔষধি শাকও বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেহের রক্তশূন্যতা সহ রক্ত পরিষ্কার করতে এই কচু শাকের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাখে যে সকল পুষ্টি উপাদান বা ভিটামিন রয়েছে সেগুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ
  • শর্করা ৬.৮ গ্রাম
  • প্রোটিন ৩.৯ গ্রাম
  • লৌহ ১০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) ০.২২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন) ০.২৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ‘সি ১২ মিলিগ্রাম
  • স্নেহ বা চর্বি ১.৫ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম, ২২৭ মিলিগ্রাম
  • খাদ্যশক্তি ৫৬ কিলোক্যালরি

কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

  • কচুর শাক হল ভিটামিন 'এ' এর প্রধান উৎস যা আমাদের চোখের জন্য খুবই দরকারি। কচুর শাকে থাকা ভিটামিন 'এ' রাতকানা রোগ দূর করে। এছাড়াও দৃষ্টিশক্তির জনিত যে সকল সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করে এই কচুর শাক।
  • কচু শাক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যেহেতু এই শাকে পটাসিয়াম রয়েছে তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে সে সকল ব্যক্তি যদি প্রতিদিন কচু শাক খান তবে তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে মানসিক চাপ কমে এবং মন প্রফুল্ল থাকে।
  • ওজন কমাতে কচুর শাক একটি উপযোগী খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কচুর শাকে থাকা ফাইবার ও আঁশ থাকার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হয়। এ ফাইবার ও আঁশ আমাদের খাদ্য হজমে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠিকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়।
  • কচুর শাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এবং ক্যান্সারের বিপক্ষে লড়তে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কচুর শাক খান তাদের ক্যান্সারের হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কম হয়।
  • কচু শাকে রয়েছে শর্করা। এই শর্করা আমাদের রক্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করতে ও ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন কচু শাক খাওয়া দরকার।
  • দাঁত ও হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে কচু শাক খেতে পারেন।কচুর শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস যা আমাদের আর ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। তাই যে সকল ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে খাবারের তালিকায় এ কচুর শাক রাখেন। তাদের দাঁত ও হাড় মজবুত ও ভালো থাকে।
  • কচুশাকের রয়েছে আয়রন ও ফোলেন যা আমাদের শরীরের রক্তের মাত্রা বাড়ায়। রক্তের মাত্রা বাড়ার ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এই শাকে থাকা ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা দূর করে। কচুর শাকে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে।

কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন

অনেকের কচু শাক খেলে গলা চুলকায়। এর প্রধান কারণ হলো কচু শাকে র‍্যাফাইড-এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই শরীরে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। অর্থাৎ যাদের শরীরে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে তাদের কচুর শাক বেশি না খাওয়াটাই ভালো।এতে অস্বস্তি বোধ হয় এবং গলা চুলকায়।

 অনেকে কচুর শাক খেয়ে বিব্রতিকর সমস্যার মধ্যে পড়েন। গলা চুলকানো কমাতে আমরা রান্না করা কচু শাকের সাথে লেবু বা তেতুলের রস মিশিয়ে খেয়ে থাকি। লেবু বা তেতুলে থাকা সাইট্রিক ও টারটারিক অ্যাসিড কে গলাতে সাহায্য করে। এর ফলে গলা চুলকানোর হার আনেকটা কম হয়।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর শাক খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের দৈনন্দিন খাদ্যে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। তাই গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদ বা ডক্টরের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু কচুর শাকে ভিটামিন, খনিজ, ফোলেন, আয়র, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। 

তাই গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়া দরকার। কচু শাক যেহেতু দামে সস্তা এবং সহলভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিনের উৎস হিসাবে এই কচু শাক খেয়ে থাকেন। কচুশাকে প্রচুর ভিটামিন ও আয়রন রয়েছে তাই গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণ করে এই কচুর শাক।

কচু শাকের রেসিপি

কচু শাকের উপকারিতা গুণের কারণে এই শাক এত জনপ্রিয় সবার কাছে। আমাদের দেশে এই শাকের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। সকলের এই শাক খেতে খুব পছন্দ করে। এই শাক বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে রান্না করেন। কেউবা মুসুরের ডাল দিয়ে কচু শাক, কেউবা ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক রান্না করে থাকেন।

প্রায় সকলকে বলতে শোনা যায় কচুর শাক খেলে নাকি গলা চুলকায়। এই চুলকানো সমস্যা দূর করতে রান্নার সময় কিছুটা লেবুর রস বা তেতুল গুলে দিলে চুলকানো ভাবটা দূর হয়। বন্ধুগণ, তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কচু শাক কিভাবে রান্না করতে হয় এ সম্পর্কে জেনে নিন।

কচু শাক রান্নার উপকরণঃ
  • চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী কচু শাক ৫০০ গ্রাম
  • মাঝারি সাইজের তিন থেকে চারটা পিঁয়াজের কুচি
  • এক টেবিল চামচ রসুন বাটা ও কিছু রসুনের কুচি
  • এক টেবিল চামচ লেবুর রস
  • এক টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া
  • এক টেবিল চামচ জিরা গুঁড়া
  • এক টেবিল চামচ ধোনা গুঁড়া
  • পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল
  • স্বাদমতো কাঁচা মরিচ
  • লবণ ও
  • পানি
কচু শাক রান্না করার প্রণালীঃ
প্রথমে কচু শাকগুলোকে ওটা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর গ্যাস অথবা চুলায় একটি করায় দিয়ে সেখানে কচু শাকগুলো দিয়ে দিতে হবে। শাক সেদ্ধ হওয়ার জন্য যতটুকু পানি দরকার কড়াইয়ে সে পরিমাণ পানি দিতে হবে।

কড়ায়ে শাকের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, লেবুর রস, জিরা গুঁড়া, ধোনা গুঁড়া, কিছু কাঁচা মরিচ এবং স্বাদমত লবন দিতে দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। কত শাকগুলো সেদ্ধ হয়ে গেলে সেগুলো একটা বাটিতে নামিয়ে রাখতে হবে। যে কড়াইয়ে শাকগুলো সেদ্ধ করেছিলাম সেই করাইয়ে পরিমান মত কিছু তেল এবং সেখানে কিছু রসুন কুচি ও কিছু কাঁচামরিচ দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে।

রসুনগুলো যখন তেলে ভাজা অবস্থায় সোনালী বর্ণের হবে তখন সেখানে বাটিতে রাখা শাঁকগুলো সেই কড়ায় তেলে ঢেলে দিতে হবে। ঢালার পর কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর রান্না করা শাক পরিবেশন করুন এবং গরম ভাতের সাথে মজা করে খান। কচুর শাকসহ যেকোনো শাক রান্নায় তেলের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হয়। এর কারণ শাকে থাকা ভিটামিন তেলে দ্রবীভূত হয়ে শাকের পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে দেয়।

শেষ কথা

আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা,ও কচু শাকের রেসিপি সম্পর্কে। এছাড়া আরো জেনেছেন কচু শাকে কি ভিটামিন আছে। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করুন এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং প্রিয়জনদের ভালবাসুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url