জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ
আপনি কি জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে জানতে চাইছেন?এমন অনেকেই আছেন যারা জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে জানেন না।যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।এই পোস্টের মাধ্যমে আমি জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে।তাই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পুরোটা পড়ুন।এখন দেরি না করে আসুন জেনে নেওয়া যাক জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে।আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
পৃথিবীতে বাংলাদেশসহ ১৯৫ টি দেশ রয়েছে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে ভাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব থাকা খুবই প্রয়োজন।বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন দিক দিয়ে একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল।এভাবে দেশগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব,সম্প্রীতি এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক।
সম্প্রীতি ও সহযোগিতার প্রয়োজন উপলব্ধি করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ।এর প্রধান লক্ষ্য বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা।বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৪ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩ টি দেশ।
জাতিসংঘের প্রধান শাখা কয়টি
জাতিসংঘের প্রধান শাখাসমূহ হলো ছয়টি।এর মধ্যে তিনটি সংস্থাকে অপরিহার্য বলা হয়।এই তিনটি শাখা হলো সাধন পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ ও সচিবালয়। এছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫, টি দেশ যার মধ্যে স্থায়ী সদস্য পাঁচটি এবং অস্থায়ী সদস্য দশটি।তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক জাতিসংঘের প্রধান প্রধান শাখাসমূহ সম্পর্কে।
- সাধারণ পরিষদঃ এই পরিষদে বিভিন্ন সদস্য শাখা নির্বাচন,বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়। প্রতিবছরে একবার অধিবেশন হয় এবং একজন সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন।
- নিরাপত্তা পরিষদঃ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে এই পরিষদ।এর পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্র হল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন। বাংলাদেশ দুই বার নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।বাংলাদেশের সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছ।
- সচিবালয়ঃ এতে সকল প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা হয়।জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব পর্তুগালের নাগরিক অ্যান্টোনিও গুতেরেস।
- অছি পরিষদঃ এর কাজ অধিভুক্ত এলাকাসমূহের তত্ত্বাবধায়ন করা।উপনিবেশিক আমলে এই পরিষদের কাজ বেশি ছিল।বর্তমানে অছি পরিষদের কাজ নেই বললেই চল।
- আন্তর্জাতিক আদালতঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সীমানা সহ দেশের অন্য যেকোন বিরোধ মীমাংসা করা এর কাজ। ২০১২ সালে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে একটি বিরোধে বাংলাদেশ নিজের পক্ষে রায় পায়।
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদঃ এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষা, বেকারত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের কাজ করে থাকে।
জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক সংস্থার নাম
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা আছে যার মাধ্যমে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে।
ইউনিসেফঃ এর পুরো নাম জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল।United Nation International Children Emergency Fund( UNICEF)।যুক্তরাষ্ট্রের নিউওয়ার্ক শহরে এর সদর দপ্তর অবস্থিত।ইউনিসেফ শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা,গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ,স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি,মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা,শিশুদের বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসুচি ইত্যাদি কাজ করে।
বিশ্ব ব্যাংকঃ বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে।বিশ্ব ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে সাহায্য দিয়ে থাকে।
ইউএনডিপিঃ (UNDP)এর পূর্ণরুপ United Nations Development Programme। ইউএনডিপি এর মূলকাজ বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে কাজ করা এবং জাতিসংঘের কাজগুলোর সমন্বয় সাধন।বাংলাদেশে পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,দারিদ্র বিমোচন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে।
ইউনেস্কোঃ ইউনেস্কো এটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা। এর সদর দপ্তর ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত। (UNESCO) এর পূর্ণরুপ United Nations Educational ,Scientific and Cultural Organization।ইউনেস্কোর উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি (আমাদের ভাষা শহীদদিবস) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ডকুমেন্টারি হেরিটেজ( বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও এদেশে পাহাড়পুর সহ অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেস্কো সহযোগিতা করছে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থাঃ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) Food and Agricultural Organization ইতালির রোমে এর সদর দপ্তরে অবস্থিত। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সারা বিশ্বের খাদ্য সমস্যা মোকাবিলা ও জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে কাজ করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য ঘাটতি হলে এই সংস্থা আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাঃ ( WHO) World Health Organization বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের ছয়টি অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপায় সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রতিবছর ৭ই এপ্রিল তারিখে সংস্থাটির উদ্যোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয় মা ও শিশু স্বাস্থ্য পুষ্টি পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব কে
জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব এন্টনিও গুতেরেস।তিনি পর্তুগালের নাগরিক।অ্যান্টনিও গুতেরেস থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থীর হাইকমিশনার ছিলেন।২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব হিসেবে নিযুক্ত হন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক মহোদয়,আমি আমার এই আর্টিকেলে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাতে চেষ্টা করেছি জাতিসংঘের শাখাসমূহ ও এর উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে।আশা করি আপনার এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগেছে।যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে সেয়ার করবেন।এরকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করুন এবং ফলো দিয়ে পাশেই থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url