ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব
ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয়?আমি এ বিষয়ে আজ আলোচনা করব।আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা জেনেও না জানার ভান করেন ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে।এই আর্টিকেলটি আজ তাদের জন্য।এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আজ আপনি জানতে পারবেন ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে।
এছাড়াও আরো জানতে পারবেন ধুমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে।তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় ও এর প্রভাব কি।এজন্য এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
বাংলাদেশে ধূমপান করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।ছোট বড় সকলে ধূমপান করে থাকেন। বর্তমানে মেয়েরাও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন মানুষ ধূমপানের প্রতি এতটাই আসক্ত হচ্ছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।যে সকল মানুষ ধূমপান করেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ জানেন না যে ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় এবং এর প্রভাব কতটা ক্ষতিকর।
তাই সে সফল ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আমার এই আর্টিকেলটি।যারা জানেন না ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয়, ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব,ধূমপান করলে কি কি রোগ হয়।এই সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চান তাহলে আমারই আর্টিকেলটি যত্ন সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ুন।
মানুষ ধুমপান করে কেন?
আমাদের সমাজে যে সকল মানুষ ধূমপান করেন।তাদের কিছু কিছু সাধারন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই সাধারণ প্রশ্নগুলো হল ধূমপান করেন কেন?ধূমপান করতে কি আপনার ভালো লাগে?ধূমপান করলে কি হয়? ইত্যাদি বিভিন্ন রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা অনেক সময় হাস্যকর হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে ধূমপান করাটা কোন মহৎ কাজ না।মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস চাইলে সহজে বদলানো যায় না।আর ধূমপান এমন একটা বদ অভ্যাস যা একবার শুরু করলে ছাড়া খুব কঠিন।মানুষ ধূমপান করে কেন এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন।যারা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধূমপান করে থাকেন।ধূমপান করলে তারা অল্প সময়ের জন্য মানসিক তৃপ্তি পান।অনেকে আবার হতাশাগ্রস্থ থাকার কারণে ধূমপান করে।
- অনেকে আবার পরিবারগত ভাবে ধূমপানে আগ্রহী হয়ে ওঠে।যেমন কোন পরিবারে বাবা ধূমপান করলে ছেলেও ধূমপানে আগ্রহী হয়।অথবা বড় ভাই বা পরিবারের গুরুজন ধূমপান করলে ছোটরাও এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ধূমপানে আসক্ত হয়।
- বন্ধু-বান্ধবের গুরুত্ব আমাদের জীবনে অনেক বেশি।এসকল বন্ধু-বান্ধবের যেমন উপকারী দিক রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারি দিকও রয়েছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরা তাদের বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে ধূমপানে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ধূমপানে আসক্ত হয়।
- নিষিদ্ধ যে কোন বস্তুর প্রতি সবার একটা অন্যরকম আকর্ষণ,চাহিদা এবং টান থাকে।এ কারণে মানুষ ধূমপানে আসক্ত হয়।
- আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা বিশেষ আনন্দের মুহূর্তে যেমন,পিকনিক, পার্টি,দাওয়াতের বাড়ি,বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডায় ধুমপান করে থাকেন।
- স্কুল-কলেজে থাকা অবস্থায় ছেলেরা বন্ধুদেরকে দেখানোর জন্য ধূমপান করে।অনেকে আবার গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রেমের দ্বন্দ্বের কারণে ধূমপান করে থাকেন।
- এছাড়াও ধূমপান করার আরো অনেক কারণ রয়েছে।আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত যে ধূমপান কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।তাই পরামর্শ স্বরূপ বলতে পারি যে,আপনি যদি ধূমপান করে থাকেন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধূমপান ত্যাগ করুন।কেননা ধূমপান অকাল মৃত্যু ঘটায়।
খালি পেটে ধূমপান করলে কি হয়?
ধূমপান খালি পেটে করেন আর ভরা পেটেই করেন এটার ক্ষতিকর প্রভাব একই।খালি পেটে বিষ পান করুন বা ভরা পেটে বিষপান করুন আপনার মৃত্যু নিশ্চিত।খালি পেটে ধূমপান করলে যে সকল সমস্যাগুলো হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- যৌন ক্ষমতা কমে যায়
- মুখে প্রচণ্ড র্দুগন্ধ হয়
- ঠোঁট কালো হয়ে যায়
- স্তন ক্যান্সার হয়
- যক্ষ্মা হয়
- শ্বাসকষ্ট হয়
- হাঁপানি হয়
- আয়ু কমে যায়
- আলসার হয়
- গ্যাস্ট্রিক হয়
- ফুসফুসে ক্যান্সার হয়
- দন্ত ক্ষয়
- দাঁতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়
- হৃদরোগ হয়।
- দৃষ্টি শক্তির কমে যায়
- মস্তিষ্কের রক্তক্ষরন হয়
- হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্ত হয়
- উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিহ পায়
- স্বাস্থ্য নষ্ট হয়
- ক্ষুধামান্দা দেখা দেয়
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব
পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাবঃ যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তাদের পরিপাকতন্ত্রের উপর বিশাল প্রভাব পড়ে।ধূমপায়ীদের গ্যাস্ট্রাইটি গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়।ধূমপান একটি ব্যাধি।যারা অ্যালকোহলের সাথে ধূমপান করেন তাদের এ সকল সমস্যাগুলো আরো প্রকোট আকার ধারণ করে।এছাড়াও স্বরযন্ত্র, অন্ননালী,মুখবিবর, গলা এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ত্বকের উপর প্রভাবঃ ধূমপান ত্বকের ওপর খুব খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করে।যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদের মুখের ত্বক কুঁচকে যেতে শুরু করে এবং চেহারায় বয়সের ভাব দেখা দেয়।অতিরিক্ত ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য যেমন বিপদজন ঠিক তেমনি এটি ইলাস্টিক হ্রাস করে।যার ফলে ত্বকে বলিরেখা হয়।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাবঃ ধূমপান করার পরে সিগারেত থেকে যে নিকটিন আপনার মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে থাকে।এই জন্য প্রাথমিকভাবে আপনি উজ্জীবিত হন।কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি আপনাকে শেষ করে দেয়।এবং আপনার আকাঙ্ক্ষা ধূমপানের উপর আরো বেড়ে যায়। এর ফলে উদ্বেগ রাগ এবং বিষন্নতার সৃষ্টি হয়।
উচ্চ কলেস্টেরলঃ অতিরিক্ত ধূমপান করা ফলে আমাদের রক্তনালীর দেওয়াল অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়।এজন্য শরীরে উচ্চ কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়।এর ফলে হার্ট অ্যাটাক,স্টোক এবং বিভিন্ন শারীরিক ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকিরঃ অতিরিক্ত ধূমপান করার ফলে ফুসফুস,মুখ,গলা,খাদ্যনালী,স্তন ক্যান্সার,যকৃত ও বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে দ্বিগুণ হয়।সিগারেটের থাকা কার্সিনোজেন আমাদের দেহকোষ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে।
প্রজননের উপর প্রভাবঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা অতিরিক্ত ধূমপান পান করে।সে সকল পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পায়।ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ইজিকশন জনিত সমস্যা হতে পারে। পুরুষদের লিঙ্গ দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে।অনেকের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা হয় এই ধূমপান করার ফলে।মহিলাদের ক্ষেত্রে,গর্ভবতী মহিলা যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদের জন্মগত ত্রুটি সহ শিশু বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করেঃ ধূমপায়ীরা জানার চেষ্টাও করে না যে তাদের শ্বাসযন্ত্রকে এই ধূমপান কতটা প্রবাহিত করে।এমফিসেমা রোগ ও ফুসফুসের ক্যান্সার ছাড়াও অনেকে আবার ব্রঙ্কাইটিস,অস্থায়ী খাশি,শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগতে পারে।
টয়লেটে বসে সিগারেট খেলে কি হয়?
আমাদের চারপাশে অনেকে আছেন যারা টয়লেটে বসে ধূমপান করতে খুব পছন্দ করেন। এক সময় তাদের এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। ভাবতে অবাক লাগে মানুষের রুচি কতটা নিচে নামলে এমনটা করতে পারে। তাই আপনারা যারা টয়লেটে বসে ধূমপান করেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই টয়লেট বা বদ্ধ জায়গায় ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।কেননা ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং এতে রাসায়নিক পদার্থ যেমন(কার্সিনোজেন ও কার্বন মনোক্সাইড) বিদ্যমান থাকে।
এটি আপনার সাস্থ্যকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে।এর ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার ও বিভিন্ন রকম হৃদরোগ এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যহীনতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ধূমপান করলে এমনিতে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়।তাই টয়লেট বা কোন বদ্ধ জায়গাতে ধূমপান করলে এর বিষাক্ত ধোঁয়া বন্দি অবস্থায় আপনার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়।
সুতরাং টয়লেটের বদ্ধ জায়গায় সিগারেটের আগুন থেকে অত্যন্ত বিপদজনক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।টয়লেটে ধূমপান করার ফলে সিগারেটের আগুন থেকে টয়লেট পেপার ও অন্যান্য জিনিসপত্রে আগুন লাগার সম্ভবনা থাকে।এই সিগারেটের আগুন দ্রুত টয়লেটে ছড়িয়ে যায় ফলে বিশাল বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও টয়লেটে সিগারেট খেলে পুরো বাসা বাড়িতে ধূমপানের ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। ফলে পরিবারে অসস্থিকর পরিবেশর সৃষ্টি হয়।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক,আজ এই আর্টিকেলে ধূমপান কি?মানুষ কেন ধূমপান করে?খালি পেটে ধূমপান করলে কি হয়?ধূমপানে করলে কি কি ক্ষতি হয়?এবং ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।আমাদের মধ্যে যারা ধূমপান করেন তাদের এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে রাখা দরকার।
আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে এসেছে।আরো গুরুত্বপূর্ণ আজকাল পেতে আমার এই ওয়েবসাইটিতে ভিজিট করুন এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত।তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকুন ও সুস্থ থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url