রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে তথ্য জেনে নিন

আপনি কি রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইছেন?তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে তথ্যগুলো আপনাদেরকে জানাবো।কেননা রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা হিসেবে এই বিভাগ সম্পর্কে জানা আমাদের একান্তই জরুরি।
রাজশাহী বিভাগ
আমরা রাজশাহী বিভাগে বসবাস করি।কিন্তু রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না।প্রিয় রাজশাহীবাসী তাহলে চলুন রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।এর জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে তথ্যগুলো জানা আমাদের খুব জরুরি।যেহেতু আমরা এই বিভাগে বসবাস করি।এই বিভাগেই আমাদের জন্ম,বেড়ে উঠা তাই এই বিভাগ সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য জানা দরকার।বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগ হলো একটি।এই বিভাগটি সবুজে ভরা এবং বিভাগটি শিক্ষানগরী হিসেবে সুপরিচিত।

রাজশাহী বিভাগের ইতিহাস

রাজশাহী বিভাগ ছিলো পুন্ড্র রাজ্যের অংশ। পুন্ড্র রাজ্য ছিলো বাংলার অন্যতম শক্তিধর ও শক্তিশালী রাজ্য। বাংলার এই শক্তিশালী রাজ্যটি ৭ম শতাব্দীতে আরবরা জয় করে। আরবরা এই অঞ্চল জয় করার পর সেখানে ইসলামের প্রবর্তন করেন। এরপর দিল্লির সালতানাত ১৩ শতকে এই রাজ্যটি নিজের দখলে আনে।

প্রাই ২ শতক পর ১৬ শতকে এই রাজ্যটি মুঘলরা জয় করে। মুঘল সাম্রাজ্য যখন পতন হয়ে যায়। তারপর এই অঞ্চলটিতে পলাশীর যুদ্ধ শুরু হয় ১৭৫৭ সালে। এই অঞ্চলটিতে ব্রিটিশরা শাসন শুরু করে। বৃটিশরা প্রাই দেড়শ বছর রাজশাহী অঞ্চলটি শাসন করে। বৃটিশদের সময়ে রাজশহী অঞ্চলটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখে।

রাস্তা ঘাট, রেলপথ, ছোট বড় ব্রিজ, খাল খনন ইত্যাদি অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল নির্মান করেন। ভারতীয় সাম্রাজ্যকে ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিভক্ত করেন। আমাদের এই রাজশাহী অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে বিভক্ত ছিল। 

ব্রিটিশদের দুই ভাগে বিভক্ত দুইটি অঞ্চলের পশ্চিম অংশ ছিল পাকিস্তানের আর পূর্ব অংশ ছিল ভারতের। তারপরে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীনতা রাষ্টের জন্ম হয়এই যুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাস চলেছিল এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়েছিলো। এরপর লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ হয় আমদের প্রিয় রাজশাহী।

রাজশাহী বিভাগের জেলা সমূহের নাম

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ১টি প্রশাসনিক ও সুপরিচিত অঞ্চল হলো রাজশাহী বিভাগ। বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের পর ৩য় জনবহুল বিভাগ হলো এই বিভাগ।রাজশাহী বিভাগের আয়তন ১৮,১৫৪ বর্গ কিলোমিটার।এই শিক্ষানগরী নামে খ্যত এই বিভাগটির ৮টি জেলা,৬৭টি উপজেলা, ৫৯টি পৌরসভার।এই বিভাগের রাজধানী বলা হয় রাজশাহী জেলাকে।এই বিভাগের জেলাগুলো হলোঃ
  • রাজশাহী
  • সিরাজগঞ্জ
  • বগুড়া এবং
  • পাবনা 
  • নাটোর
  • নওগাঁ
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও
  • জয়পুরহাট

রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় জেলা কোনটি?

রাজশাহী বিভাগের সবথেকে বড় জেলার নাম নওগাঁ জেলা।নও’ (নতুন -ফরাসী শব্দ ) ও গাঁ’ (গ্রাম ) শব্দ দু’টি হতে নওগাঁ শব্দটির এসেছে বা উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’ ও গাঁ’ শব্দ দু’টির অর্থ নতুন গ্রাম। অনেক অনেক ছোট ছোট নদী এ জেলাটিতে। আত্রাই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলটিতে এই নওগাঁ শহরটি। এক সময় নওগাঁ ছিল রাজশাহীর অন্তর্গত। এই জেলার লোকজন ছিলো পুন্ড্র জাতির বংশধর।

নওগাঁ জেলা ছিল প্রাচীন পুন্ড্র জাতির আশ্রয়স্থল। এই জেলাটি প্রাচীন কাল থেকেই বৈচিত্রে ভরপুর ছিল। এই জেলাটি যেহেতু নদী বহুল ছিল সেই প্রাচীন কাল থেকেই। তাই এই জেলাটি কৃষকদের সকল প্রকার কাষি কাজের জন্য প্রসদ্ধি ছিলো। এ অঞ্চলে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী ছিল এবং তারেদ আশ্রয়েই কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগীতার জন্য সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে এ অঞ্চলে।

সাঁওতালদের মত এ অঞ্চলে আরো অন্যান্য আদিবাসীদের আগমন ঘটে। বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে নওগাঁ জেলার বৈচিত্র্য অপরূপ সোন্দর্যে ভরপুর। এই জেলাই রয়েছে অসংখ্য ছটো বড় পুরাতন মসজিদ, পুরাতন জমিদার বাড়ি, মন্দির ও গীর্জা। এসকল স্থাপনাগুলো প্রমাণ করে যে নওগাঁ জেলার ইতিহাস বহু পুরাতন। নওগাঁ শহরের পশ্চিমে চকবাড়া নামক একটি গ্রামের পুকুর থেকে ১৯৭০ খ্রিঃ একটি পাথরের তৈরি মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল।

রাজশাহী বিভাগ কিসের জন্য বিখ্যাত

রাজশাহী বিভাগ বিখ্যাত হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে।পাঠক,আপনাদের মাঝে সুন্দরভাবে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

শিক্ষানগরী হিসেবে বিখ্যাতঃ
রাজশাহী প্রধানত শিক্ষানগরী হিসেবেই বেশি প্ররিচিত।বাংলাদেশে প্রতিবছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সহ সকল পাবলিক প্ররিক্ষায় রাজশাহী বিভাগ সাফল্যের সাথে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এই সুনাম এ অবদি অব্যাহত আছে।

এই বিভাগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী সদর হাসপাতাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ইউনির্ভারসিটি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজি, রাজশাহী কলেজসহ আরো অনেক কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। এজন্য এই অঞ্চলকেটি বাংলাদেশের "শিক্ষা নগরী" হিসেবে বহুল সুপরিচিত।

রেশম চাষের জন্য বিখ্যতঃ
প্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহী শিল্পের জন্য বিখ্যাত।বাংলাদেশের যতগুলো বৃহত্তম রেশম মিল আছে তার মধ্যে রাজশাহীর রেশম মিল অন্যতম।মিলটি বিভিন্ন পোষাক সামগ্রী সহ নানা রকমের রেশমী পণ্য তৈরি করে এবং সেগুলো বাজারজাত করেন।রাজশাহী সিল্ক বিলাসবহুল , উচ্চ মানসম্পুর্ন , নরম ও আরামদায়ক ।

ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাতঃ
রাজশাহী ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি শহর।পুন্ড্র রাজ্যের বেশ কিছু নির্দশন রয়েছে এই বিভাগে।এই বিভাগে ছোট সোনা মসজিদ, বড় সোনা মসজিদ , রাজশাহী জাদুঘর , রাজশাহী কেল্লাসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্রঃ
রাজশাহীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।রাজশাহী চিড়িয়াখানা, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক,আইসিটি পার্ক, রাজশাহী বোটানিক্যাল গার্ডেন, রাজশাহী গলফ ক্লাব,রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পার্ক, এরকম অনেক ছটো বড় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এই বিভাগে।

রাজশাহীর আমঃ
আমের স্বাদ নির্ভর করে মাটি ও আবোহাওয়ার উপর। রাজশাহীর মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের জন্য উপযোগী। এজন্য প্রায় সব জাতের আম ভালো হয় এই বিভাগে। এমনকি সারা দেশব্যাপী রাজশাহীর আমের খ্যাতি আছে।  বর্তমানে এই বিভাগে যেসব আম বেশি পরিচিত সেগুলো হলোফজলী, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত, লকনা, মহনভোগ, কাঁঠমিষ্টি ও আমরুপালি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রাজশাহী জেলার উপজেলা সমূহ

  • পবা
  • চারঘাট
  • বাঘা
  • পুঠিয়া
  • তানোর
  • মোহনপুর
  • দূর্গাপুর
  • বাগমারা
  • গোদাগাড়ী

রাজশাহীর বিখ্যাত ব্যক্তি

রাজশাহীতে আনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন  শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সমাজসেবা, রাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ে এই সকল ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছের। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা এদের মধ্যে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে জানবো।

মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাঃ
১ মে, ১৯৩৪ সালে বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারতে মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা।তিনি ১৯৬৯ সালের ফেব্রয়ারি মাসে পাকিস্থানি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন।

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানঃ
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি নাটোর জেলায় মামার বাড়িতে ২৬শে জুন ১৯২৩ সালের জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ কামারুজ্জামানের পৈতৃক নিবাস ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ এলাকায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসায় নিহত হন। সে সময় আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ আরো ৩ নেতাকে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোরে জাতীয় এই চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে হয়। এজন্য ৩ নভেম্বর নাংলাদেসগের ইতিহাসে “জেল হত্যা দিবস” হিসেবে পরিচিত।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরঃ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭ মার্চ ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার জন্মগ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে তিনি শত্রুর গুলিতে শহীদ হন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনঃ
এ এইচ এম(আবুল হাসনাত মোহাম্মদ) খায়রুজ্জামান লিটন ১৪ আগস্ট ১৯৫৯ সালে রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসনা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মাতার নাম জাহানারা বেগম । এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।তিনি ২০২৩ সালে আবার মেয়র নির্বাচিত হন।

শেষ কথা

পাঠক, আশা করি এই আরর্টিকেলটির মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এই আরর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করুন ও প্রিয়জনদের সাথে সেয়ার করুন। এবং এ রকন আরোও ভালো ভাল আরর্টিকেল পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url