পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে বিস্তারিত জানুন
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে অনেকেই গুগলের সার্চ দিয়ে থাকেন। আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হন তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করব পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? এ সকল বিষয় সম্পর্কে।
পাসপোর্ট এর কথা শুনলেই আমাদের মাথায় সর্বপ্রথম যে কথাটি আসে সেটা হল দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। এর মানে হলো দেশের বাইরে যেতে চাইলেই পাসপোর্ট করতে হবে। সুতরাং দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই পাসপোর্ট থাকতে হবে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ভূমিকা
পাসপোর্ট হল বিদেশে যাওয়া বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জারি করা একটি পরিচয় পত্র। দেশের বাইরে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গমনের জন্য এ পাসপোর্ট থাকা অপরিহার্য। এজন্য পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। পাসপোর্ট কত প্রকার ও কি কি? পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এবং পাসপোর্ট কত বছর মেয়েদের হয়ে থাকে এবং পাসপোর্ট এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন করতে হয়।
এই সকল বিষয়ে জানা আমাদের খুবই জরুরী। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সহ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। তাই আপনাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। আশা করি আর্টিকেলটি পড়তে আপনাদের ভালো লাগবে।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট করতে হলে প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে এবং জমা দিতে হবে। পাঁচ বছর হোক কিংবা ১০ বছর মেয়াদী হোক পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র অবশ্যই লাগবে। এছাড়া যাদের বয়স ২০ এর নিচে অর্থাৎ ভোটার এখনো হয়নি।
তাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের সনদ অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। সাধারণত বাংলাদেশে পাসপোর্ট আবেদন করার ভিত্তিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। বয়সের পার্থক্যের কারণে পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টগুলোও কিছু আলাদা হয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে সকল তথ্য সম্পর্কে।
শিশুদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সদনের ফটোকপি
- পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- অনলাইন আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম
- অনলাইন আবেদনের কপি
- কপি আবেদনের ফি বাবদ
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে এ চালানের কপি
- টিকা কার্ডের ফটোকপি ও
- সম্প্রতি সদ্য তোলা 3R সাইজের ছবি
প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট কার্ড এর ফটোকপি
- পৌরসভার চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র
- অনলাইন আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম
- অনলাইন আবেদনের কপি
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে এ চালানের কপি
- আবেদনকারী যদি ছাত্র হয় তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড
- আবেদনকারী চাকুরীজীবী হলে চাকরির কার্ড ও
- সম্প্রতি সদ্য তোলা 3R সাইজের ছবি
সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি
- নাগরিক সনদপত্র
- অনলাইন আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম
- অনলাইন আবেদনের কপি
- ব্যাংক ড্রাফ এর কপি
- সম্প্রতি সদ্য তোলা 3R সাইজের ছবি
- নো অবজেক্টশন সার্টিফিকেট (NOC) ও
- গভমেন্ট অর্ডার (GO)
সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকের থেকে (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট এবং গভমেন্ট অর্ডার) এই দুইটি ডকুমেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। সরকারি কর্মকর্তারা যখন বিদেশ ভ্রমণ বা বাইরের দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর আবেদন করেন। তখন তার মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে এই দুইটি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে আবেদন ফরম এর সাথে জমা দিতে হয়। এই দুইটি ডকমেন্ট ব্যতিত সরকারি চাকরিজীবীদের অন্য কোন ডকুমেন্ট তেমন প্রয়োজন হয় না।
পাসপোর্ট কত প্রকার
বাংলাদেশ সরকার প্রধানত তিন ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকেন বা প্রদান করেন। পাসপোর্ট ভেদে এই তিন প্রকার পাসপোর্টের মলাটের রং আবার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই পাসপোর্টগুলোর মলাটের রং সাধারণত সবুজ, নীল এবং লাল রঙের হয়। এই তিন ধরনের পাসপোর্ট গুলো হলঃ
- নিয়মিত বা সাধারন পাসপোর্ট
- দাপ্তরিক পাসপোর্ট
- কূটনৈতিক পাসপোর্ট
পাসপোর্ট করার নিয়ম
পাসপোর্ট করার জন্য প্রথমেই অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। এছাড়াও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের গিয়েও সহস্তে লিখে এ আবেদন করা যায়। পাসপোর্ট এর ফরম কয়েকটি ধাপে পূরণ করতে হয়। ফরম পূরণ করার পর পাসপোর্ট ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে এ প্রয়োজনের কাগজপত্র ও পরিচয় পত্রসহ বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে।
এরপর পাসপোর্ট এর টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পাসপোর্ট অফিস থেকে মেসেজ যাবে পাসপোর্ট বইটি উত্তোলনের জন্য। এরপর পাসপোর্ট এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে এবং পাসপোর্ট বইটি হাতে পাওয়া যাবে। পাসপোর্ট আবেদন ফরমে সঠিক তথ্য এবং সবগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রদান করলে পাসপোর্ট ডেলিভারিতে জটিলতার সৃষ্টি হয় না। ফলে খুব সহজেই আমাদের কাঙ্খিত পাসপোর্টটি পেতে পারি।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এবং পাসপোর্ট কত বছর মেয়াদের হয়ে থাকে
৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রেঃ
- ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ফি ৪০২৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারির পাওয়া যাবে ২১ কর্ম দিবস এর মধ্যে।
- ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ৬৩২৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ১০ কর্মদিবস এর মধ্যে।
- ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার অতি জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ৮৬২৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ০২ কর্মদিবস এর মধ্যে।
৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রেঃ
- ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ফি ৬৩২৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারির পাওয়া যাবে ২১ কর্ম দিবস এর মধ্যে।
- ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ৮৬২৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ১০ কর্মদিবস এর মধ্যে।
- ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার অতি জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ১২০৭৫ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ০২ কর্মদিবস এর মধ্যে।
১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রেঃ
- ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ফি ৫৭৫০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারির পাওয়া যাবে ২১ কর্ম দিবস এর মধ্যে।
- ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ৮০৫০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ১০ কর্মদিবস এর মধ্যে।
- ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার অতি জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ১০৩৫০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ০২ কর্মদিবস এর মধ্যে।
১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রেঃ
- ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ফি ৮০৫০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারির পাওয়া যাবে ২১ কর্ম দিবস এর মধ্যে।
- ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ১০৩৫০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ১০ কর্মদিবস এর মধ্যে।
- ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার অতি জরুরী পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ফ্রি ১৩৮০০ টাকা। পাসপোর্ট ডেলিভারি পাওয়া যাবে ০২ কর্মদিবস এর মধ্যে।
পাসপোর্ট এর জন্য কখন পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়
পুলিশ ভেরিফিকেশন পাসপোর্ট একটি প্রক্রিয়া। একজন ব্যক্তির পাসপোর্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাদি এবং সকল কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করার নামই হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন। পুলিশ ভেরিফিকেশন যত দ্রুত হবে পাসপোর্ট এর কপি তত তাড়াতাড়ি ডেলিভারি পাওয়া যাবে। এর জন্য স্থানীয় থানার একজন এসআই আবেদনকারী প্রার্থীর নিম্নলিখিত কয়েকটি তথ্যের সত্যতা যাচাই করে থাকেন সেগুলো হলঃ
- পাসপোর্ট আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ( অর্থাৎ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক কিনা)
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র সত্যতা যাচাই
- আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সনদ যাচাই
- স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা
- কর্মসংস্থান
- পারিবারিক অবস্থা
- আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা আছে কি না ইত্যাদি তথ্য যাচাই করে।
- পূর্বে কোন মামলা থাকলে সেই মামলায় খারিজ হয়েছে কি না এই তথ্যাদি যাচাই করে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, আমি এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। আশা করি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। যদি পড়ে থাকেন তাহলে আপনিও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে বা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। এবং কাঙ্খিত পাসপোর্টটি সহজেই পেয়ে যেতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হন। তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনি যদি এই রকম আরো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পেতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আবার দেখা হবে কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং প্রিয়জনদের ভালোবাসুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url