বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানুন
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের কি কি শারীরিক পরিবর্তন হয় আপনি কি সে সকল বিষয়ে জানতে চান? যদি এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমি এই আর্টিকেলে আলোচনা করব বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে।
তাই আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ে বিস্তারিত জেনে নিন বয়সন্ধিকালে ছেলে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে। একই সাথে আপনি জেনে নিন বয়সন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মানসিক পরিবর্তন, বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের বিশেষ যত্ন সম্পর্কে।
বয়ঃসন্ধিকাল কি
মানুষের জীবনে বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষের শরীর ছোট্ট শিশু অবস্থা থেকে কিশোর অবস্থা প্রাপ্ত হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা মতে ১০ বছর বয়স থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টাই হল কৈশোর বা বয়সন্ধিকাল।
আরেকটু ব্যতিক্রম ভাবে বলতে গেলে জীবনে যে সময় ছেলের ও মেয়েদের গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়। এবং ছেলে ও মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গগুলো সক্রিয়তা লাভ করে ও দৃঢ় হয়। তাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। অর্থাৎ কৈশোর এবং সাবালকত্ব প্রাপ্তির সময়কাল হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন
মানুষের জীবনে বয়সন্ধিকাল একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। যা প্রতিটি মানুষের জীবনে এটি আসে। বিভিন্ন পত্রিকা, বই-পুস্তক এবং বিভিন্ন আর্টিকেলে এই বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে লেখা হয়ে থাকে। সেই সকল লেখাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে সচেতনতামূলক লেখালেখি করা হয়।
তবে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালের সচেতনামূলক বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা লেখালেখি চোখে পড়ে না। আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন বয়সন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক কি কি পরিবর্তন হয় সে সম্পর্কে। নিম্নে বয়সন্ধিকাল ছেলেদের শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
শারীরিক পরিবর্তনঃ
- ছেলেদের কণ্ঠস্বর ভেঙে যায়। কখনো তা মিহি, কর্কশ বা মোটা হয়ে যায়।
- ছেলেদের গুপ্তঅঙ্গ যেমন বগল এবং পুরুষাঙ্গের উপরে লোম গজায়।
- শুক্রথলি চামড়ার রং একটু লালচে ও মোটা হতে শুরু করে।
- পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি পায় একই সাথে শুক্রথলি আরও পুরু হতে থাকে।
- মুচ ও দাড়ি গজাতে শুরু করে এবং গুপ্ত অঙ্গের লোমগুলো ঘন হতে থাকে।
- কারো কারো মুখে ব্রণ বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- শরীরের উচ্চতা একটু একটু করে বাড়ে।
- এ সময় ছেলেদের কাজ চওড়া হয়, ও পিসি গঠিত হয়।
- এ সময় ছেলেরা স্বাভাবিকের তুলনা একটু বেশি ঘামে।
- জন আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। অনেকের মধ্যে আবার রাতে উত্তেজক মুহূর্তের স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাত ঘটে।
মানসিক পরিবর্তনঃ
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু মানসিক পরিবর্তনও দেখা যায়। এ সময় ছেলেদের মাঝে তীব্র অনুভূতি দেখতে পাওয়া যায়। তারা খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ফলে এক পর্যায়ে ছেলেরা তাদের বাবা মার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ সময় ছেলেরা একা থাকতে পছন্দ করে।বয়ঃসন্ধিকালে অনেক ছেলেরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্মের প্রতি লিপ্ত হয়।
এ সময় ছেলেরা মোবাইল, ইন্টারনেট বা সোসাল মিডিয়ায় অপরিচিত মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় জড়িত হয়। বেশিরভাগ সময় ছেলেদের মেজাজ খিট নিচে থাকে এবং তারা একটুতে বিরক্ত বোধ করে। বিশেষশ করে এই সময় ছেলেরা বিভিন্ন রকম নেশা জাতীয় বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেকে আবার নেশায় জড়িত হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের কি সমস্যা হয়
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের মত মেয়েদের প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়সন্ধিকাল শুরু হয় কয়েক বছর আগে। অর্থাৎ মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কাল শুরু হয় ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সে। মেয়েদের বয়সন্ধিকাল একটু জটিল ছেলেদের তুলনায়। নিম্নে বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- মেয়েদের বয়ঃসন্ধির শুরুতে শারীরিক বিকাশ খুব দ্রুত ঘটে। তাদের দৈহিক উচ্চতা দিন দিন বাড়তে থাকে।
- বয়সন্ধিক সময় মেয়েদের শারীরিক বিকাশের প্রথম লক্ষণবাদ চিহ্ন হলো তাদের স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়।
- এই সময় মেয়েদের ওজন বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের নিতম্ব এবং পেটে হালকা মেদ জমতে থাকে।
- গুপ্ত অঙ্গ যেমন বগল ও যৌনাঙ্গের উপরে চুল গজাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এই চুলগুলো ঘন হয়।
- মেয়েদের মাসিক বাধিত চক্র শুরু হয় মাসিক চলাকালীন তাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে যেমন পেটে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।
- বয়সন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয় যার ফলে মেয়েদের ত্বক তৈলাক্ত হয়।
- এ সময় মেয়েদের মুখে ব্রণ বের হয় এবং শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ঘামে।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কি সমস্যা হয়
বয়সন্ধিকাল মানে শারীরিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ফলে মেয়েরা কিছুটা বিভ্রান্তিকর এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে এর ফলে তাদের মানসিক সমস্যার করতে হয়।
এই সময় মেয়েরা আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করে। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের যৌন আকাঙ্ক্ষা দেখা দেয় ফলে তারা বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। এর ফলে বিভিন্ন দিক দিয়ে মেয়েদের উপর চাপের সৃষ্টি হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন
বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। এ সময় শরীরের যত্ন হিসাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময় ছেলে ও মেয়েদের শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামে যার ফলে শরীরে দুর্গন্ধ হয়। তাই বয়সন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরী।
শরীরের যত্নে হাত, পা, চোখ, কান, চুল ও নখ প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে হবে। এবং শরীরের যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কাপড়ে ঢাকা থাকে সেগুলোর প্রতিও যত্ন নিতে হবে। এ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোর প্রতি যত্ন নেয়ার জন্য প্রতিদিন সাবান ও পানি প্রয়োজনে পানির সাথে স্যাভলন মিশিয়ে গোসল করতে হবে।
এ সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে যেমন বিশুদ্ধ পানি, দুধ, ডাবের পানি, গ্লোকুজের পানি, ভাতের মাড় ও শরবত। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের বিশেষ যত্নের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। এ সময় শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়ক্ষয়ের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
আমিষ জাতীয় খাবারগুলো হল মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুদ্ধ জাতীয় সকল খাবার। এছাড়াও সয়াবিন, বাদাম, মটরশুঁটি, তৈল বীজ, ব্রকলি ও বিভিন্ন ধরনের ডাল ইত্যাদি। এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন হিসাবে পুরুষরা পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরিধান করতে হবে।
বিশেষ করে মেয়েদের মাসিকের সময় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ সেনেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে।যেহেতু মেয়েদের এটা একটি সেনসিটিভ অংশ তাই মেয়েদেরকে বয়ঃসন্ধিকালে বেশি সজাগ থাকতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপ মোকাবেলার উপায়
শেষ কথা। বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে
প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুগণ আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়েছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন বয়সন্ধিকালে ছেলে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন কেমন হয়, শারীরিক পরিবর্তনের সময় ছেলে ও মেয়েদের শরীরের যত্ন কিভাবে নিতে হয় এই সকল বিষয় সম্পর্কে।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে উপকারী বলে মনে হয় তাহলে সকলের সাথে শেয়ার করবেন। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। আজকের এই আর্টিকেল এ পর্যন্তই। দেখা হবে আবারও অন্য কোন আর্টিকেল নিয়ে সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url