কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এ সকল বিষয়ে জানার জন্য আপনি কি গুগলের সার্চ দিয়ে খোঁজাখুঁজি করছেন। যদি করেন তাহলে আমার এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এই পোস্ট পোস্টে আমি আলোচনা করতে চলেছি কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এ সকল সম্পর্কে।
তাই এই পোস্টটি যদি আপনি ধৈর্য ধরে সম্পন্ন করেন তাহলে আপনিও জানতে পারবেন কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এ সকল বিষয় সম্পর্কে। তাই আপনার এ অজানা প্রশ্নটির সঠিক উত্তর বা তথ্য জানার জন্য আমার এই পোষ্টের বিষয়বস্তু কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে? এর সাথেই থাকুন।
সূচনা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মাংসের চাহিদার অনেকটা পূরণ হয় কবুতরের মাংস থেকে। কবুতরের মাংস অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং খেতে অনেক সুস্বাদু। আমরা প্রায় সকলেই কবুতরের মাংস খেয়ে থাকি কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা কবুতর এর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এই বিষয় সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে প্রায় সকলের মাথায় একটি প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে যে কবুতরের মাংস খেলে কি অ্যালার্জি হয়।
এ সকল প্রশ্নের উত্তর আমার এ পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করা হয়েছে। এই পোস্টে আরো আলোচনা করা হয়েছে কবুতরের মাংস রান্নার রেসিপি সম্পর্কে। এ সকল বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্টটি আপনাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। তাহলে সুপ্রিয় পাঠক, চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা
আমারা বাসা বাড়িতে কবুতর শখের বসে পালন করি। বর্তমানে অনেকে আবার বাণিজ্যিকভাবেও পালন করে থাকে। আমাদের খাদ্য তালিকায় কবুতরের মাংস প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। অন্যান্য মাংস অপেক্ষায় কবুতরের মাংসের প্রায় দুই থেকে চব্বিশ শতাংশ বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে। নিম্নে কবুতর মাংস খার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কবুতরের মাংস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কবুতরের মাংসে থাকা বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এর ফলে আমরা কর্মক্ষম থাকি।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ কবুতরের মাংস আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এর পাশাপাশি আমাদের ত্বকে মসৃণ ও উন্নত করে। কবুতরের মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন থাকার কারণে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- পুষ্টি পরিপূরক হিসেবে কাজ করেঃ কবুতরের মাংস আমাদের রক্তের লিপির ও শর্করা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বিভিন্ন মাংসের পরিবর্তে কবুতরের মাংস পুষ্টি পরিপূরক হিসেবে খাওয়া হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য কবুতরের মাংস একটি আদর্শ খাবার। কবুতরের মাংস বিপাকে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- লিভার কিডনি ও রক্তে সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, কবুতরের মাংস আমাদের লিভারকে সুস্থ রাখতে এবং কিডনিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কবুতরের মাংস যারা খায় তাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকে। এছাড়াও কবুতরের মাংস খেলে বেশি ব্যথা কম হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে
কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।কবুতরের মাংসে এলার্জি আছে কি না এই বিষয় নিয়ে আমি আলোচনা করতে চলেছি। আশা করি উত্তরটি জেনে আপনি উপকৃত হবেন। যে সকল ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে কবুতরের মাংস খায় তাদের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেললার সম্ভবনা থাকে। এর কারণ হলো কবুতরের মাংস তেমন চর্বিযুক্ত না হলেও এর চামড়ায় রয়েছে প্রচুর চর্বি।
একটি বিষয় শুনে হয়তো বা আপনার একটু হলেও খারাপ লাগতে পারে যে, কবুতর তার শরীরে অনেক রোগ জীবাণু বহন করে। এ রোগ জীবাণুগুলো মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ারও সম্ভবনা থাকে। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে কবুতরের মাংস খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বা অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা বোঝার একটা সহজ উপায় হল আপনার শরীরে যদি এলার্জি থাকে এবং আপনি যদি কবুতর মাংস খান তারপর শরী্রে যদি অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
তাহলে আপনি সহজ ভাবে বুঝতে পারবেন যে কবুতরের মাংসে এলার্জি বাড়ে। এছাড়া যদি কবুতরের মাংস খাওয়ার পর এলার্জ না বাড়ে বা অ্যালার্জির কোন লক্ষণ বোঝা না যায় তাহলে সহজেই বুঝতে বুঝবেন কবুতরের মাংসের আপনার জন্য কোন প্রকার এলার্জি নেই বললেই চলে। এর জন্য আপনাকে কবুতরের মাংস প্রথমে খেতে হবে এবং খাওয়ার পর আপনার শরীরের লক্ষণ অনুযায়ী বুঝতে চেষ্টা করবেন যে আদৌ কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে না নাই।
কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ
একটি কবুতরের মাংসে থাকা পুষ্টি উপাদান একটি মুরগির মাংসের চেয়েও বেশি। কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ বা পুষ্টি উপাদান গুলো হলো। যেমনঃ প্রোটিন,খনিজ, লৌহ, দস্তা, জিংক, ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, রিবোফ্লাভিন বি২, নিয়োসিন বি৩, থায়ামিন বি ১, ফলিক এসিড বি৯, পলিয়ুনস্যাচুরেটেড ফ্যাট।
কবুতরের মাংস রান্নার রেসিপি
কবুতরের মাংস রান্না বা কবুতর ভুনার স্বাদ আপনারা যারা একবার পেয়েছেন তারাই জানেন এটি কত সুস্বাদু ও লোভনীয়। ছোট বড় সকলেই কবুতরের মাংস খেতে খুব পছন্দ করে। আমাদের দেশে কবুতরের মাংস খুব জনপ্রিয় উঠে হয়ে উঠেছে। অন্যান্য মানুষের চেয়ে কবুতরের মাংস দামে তুলনামূলকভাবে কম এবং রান্না করতেও খুব কম সময় লাগে যার কারণে এটি খুব জনপ্রিয় এক প্রকার মাংস। নিম্নে কবুতরের মাংস রান্নার রেসিপি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।
প্রথমে কবুতরটকে জবাই করে পালকগুলো তুলে পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে কবুতরের চামড়া ছিড়ে ফেলতে হবে এরপর ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
কবুতরের মাংস রান্নার উপকরণঃ পরিষ্কার করা কবুতর দুইটা, সয়াবিন তেল পরিমাণ মতো, আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি, এক টেবিল চামচ আদা বাটা, এক টেবিল চামচ রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া, এক টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়া, ৫ থেকে ৭টি কাঁচামরিচ ঝাল পছন্দ অনুযায়ী, এক টেবিল চামচ ধনে গুঁড়া, কয়েকটা গোলমরি, তেয়াজপাতা দুই থেকে তিনটা, হাফ চা চামচ চিড়া গুঁড়া, দুই তিনটা লবঙ্গ, দুই থেকে তিন টুকরো দারুচিনি এবং স্বাদ মতো লবন।
কবুতরের মাংস রান্না প্রণালীঃ প্রথমে গ্যাস অথবা চুলায় একটি করায়ে পরিমানমত তেল দিতে হবে। তেল যখন গরম হবে তখন সেখানে পেঁয়াজ কুচিগুলো দিয়ে একটু বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত ভালো করে ভেজে নিতে হবে। তারপর সেখানে এক এক করে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুড়া, কাঁচামরিচ, ধনে গুঁড়া, গোলমরিচ,তিয়ায়জ পাতা, জিরা গুড়া, লবঙ্গ ও দারুচিনি এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে মসলাটি ভালোভাবে নেড়েচেড়ে কষিয়ে নিতে হবে।
উক্ত মসলাগুলো থেকে যখন হালকা তেল ছাড়বে তখন সেখানে একটু সামান্য পরিমাণ পানি যোগ করতে হবে। তারপর দুই এক মিনিট ভালোভাবে নাড়ার পর কবুতরের মাংসগুলো দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। মাংসগুলো কষানো হয়ে গেলে সেখানে পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে যাতে করে মাংসগুলো সিদ্ধ হয়। কবুতরের মাংসগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে সেখানে চাইলে আপনি মাংসের মসলাও একটু দিতে পারেন ব্যাস হয়ে গেল সুস্বাদু কবুতরের মাংস রান্না।
উপসংহার
এ পোস্টটি ইতিমধ্যে পড়ার মাধ্যমে আপনি জেনে গেছেন কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগণ এবং কবুতরের মাংসে কি এলার্জি আছে এ সকল বিষয় সম্পর্কে। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। যদি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে।
তবে অবশ্যই আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আবারও দেখা হবে কোন এক নতুন পোষ্টের মাধ্যমে আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করলাম। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url