পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয়, কি খাওায় উচিত
পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয় ও কি কি খাওয়া উচিত। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানার জন্য অনেক মা-বোনেরা গুগলে সার্চ দিয়ে থাকেন। সে সকল মা-বোনদের জন্য আজকের আমার এই পোস্টটি। আপনি পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন পিরিয়ডের সময় বেশি হলে কি করনীয় ও কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে।
তাই এই পোস্টটি আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয় ও কি কি খাওায় উচিত সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
উপস্থাপনা
পাঠক মহোদয়, আজকের এই পোষ্টের মূল আলোচনার বিষয় হল পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয় ও কি কি খাওয়া উচিত। আমাদের মা ও বোনেরা পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যায় ভুগে থাকেন।
পিরিয়ডের সময় ব্রিডিং বেশি হলে মা-বোনেরা কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জাবোধ ও বিব্রতবোধ করেন । এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন পিরিয়ড কি, পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয়? পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি হলে করনীয় কি?
অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ করার ঔষধ, পিরিয়ডের সময় কি কি খাবার খাওয়া উচিত, পিরিয়ডের সময় কি কি খাবার খাওয়া উচিত না। এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাই অনুরোধ রইলো এই পোস্টটি পুরোটা পড়ার জন্য।
আমার এই পোস্টটিতে আমি চেষ্টা করেছি পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয় ও কি কি খাওায় উচিত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার। আশা করি নিম্নোক্ত আলোচনা গুলো পড়তে আপনার ভালো লাগবে।
পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয়
পিরিয়ডের সময় ব্রিডিং বেশি হওয়া মহিলাদের একটি বড় সমস্যা। প্রায় অধিকাংশ মহিলাদের পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। পিরিয়ডের মহিলাদের কি পরিমান রক্তক্ষরণ হয় এটা নির্দিষ্ট ভাবে বলা মুশকিল।
তবে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণ গড় হিসাবে পিরিয়ডের সময়কাল ৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে কোন কোন মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পিরিয়ডের সময়কাল ৭ দিনের বেশি হয়ে থাকে।
এ সময় মহিলাদের ঘরে প্রায় ৬ থেকে ৮ চা চামচের কাছাকাছি রক্তক্ষরণ হয়। পিরিয়ডের সময় মহিলারা এমনিতে ক্লান্ত ও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে। য়েওর মধ্যে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে বা বেশি ব্লিডিং হয় তাহলে মহিলাদের শরীর আরো দুর্বল হয়ে যায় এবং সমস্যারও বাড়ে।
তাই পিরিয়ডের সময় ব্রিডিং বেশি হলে করণীয় হিসাবে হাতের কাছে ঘরোয়া উপায়ে অতিরিক্ত ব্রিডিং আনেকটা কমানো সম্ভব। নিম্নে পিরিয়ডের সময় বেদিন বেশি হলে করণীয় কিছু দিক আলোচনা করা হলোঃ
- পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে এক কাপ পরিমাণ পানিতে কয়েকটা দারুচিনি নিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর ফুটন্ত পানি হালকা কুসুম কুসুম অবস্থায় পান করুন। এই পিরিয়ড চলাকালীন সময় এভাবে কয়েকবার খেতে থাকুন।
- এক চা চামচ আদা পিষে নিয়ে এক কাপ পরিমাণ গরম পানিতে ফুঠিয়ে নিন।এরপর কুসুম অবস্থায় আদা পানি পান করুন দেখবেন ফলাফল ভালো পাবেন।
- আধা লিটার পানিতে ৩ থেকে ৪ গ্রাম ধোনের বীজ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ভিজানো ধনে বীজ ও পানি একসাথে পান করুন। দেখবেন পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হওয়ার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
- এছাড়া যে সকল খাবারগুলোতে বেশি পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে সেই সমস্ত খাবারগুলো অল্প অল্প করে খেতে থাকুন। দেখবেন ব্লিডিং কম হবে। মহিলাদেরকে পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি হলে করনীয়
যে সকল মহিলাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড ৭ দিন বা তার বেশিও হয়ে থাকে। তাই ৭ দিন বা তার বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলতে থাকলে করনীয় সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। যে সকল মহিলাদের পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। যদি মহিলাদের পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি সময় ধরে চলে সেক্ষেত্রে করণীয় বিষয় সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলোঃ
- যদি সাত দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
- পিরিয়ড সাত দিনের বেশি হলে বা অনিয়মিত হলে মহিলাদের অবশ্যই করণীয় হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে হবে।
- বিশেষ করে পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি হলে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ ও গন্ধ রোধ করতে ছয় ঘন্টা পরপর স্যানেটারি প্যাড পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে যৌনাঙ্গ হালকা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- পিরিয়ডের সময় অল্প অল্প করে হালকা হালকা ব্যায়ামগুলো বাসায় করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যায়াম শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোকে সচল রাখে। কষ্ট হলেও হালকা ব্যায়ামগুলো করতে হবে।
- অতিরিক্ত ভাজা পুড়া বা তেল জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া পরিহার করতে হবে। পিরিয়ডের সময় বেশি করে শাক-সবজি খেতে হবে।
অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ করার ঔষধ
পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্রিডিং হলে ঘরোয়া ভাবে কিছু খাবার-দাবার এবং কিছু নিয়ম মেনে চলাটাই উত্তম। পিরিয়ড চলাকালীন সময় ওষুধ সেবন করা মোটেও ঠিক না। এর কারণ হলো যে সকল মহিলাগণ পিরিয়ডের সময় বিভিন্ন রকম ওষুধ সেবন করেন তাদের পরবর্তীতে প্রজনন জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত যদি ব্লিডিং হয় এবং সমস্যা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
ইভাস্ট্যাট ৫০০ এম জি বা ২৫০ এম জি ট্যাবলেট ( Evastat 500 Mg/250 Mg Tablet) সাধারণত পিরিয়ডের অতিরিক্ত বিল্ডিং বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ট্যাবলেট টি এন টি ভি নো লাইটিং হিসেবে কাজ করে এবং রক্তের প্লট গুলি খুব দ্রুত বিচ্ছিন্ন হতে বাধা সৃষ্টি করে যার ফলে অতিরিক্ত বিল্ডিং এর আর কমে।
পিরিয়ডের সময় কি কি খাবার খাওয়া উচিত
মহিলাদের পিরিয়ডের সময় টা খুবই কঠিন সময়। এ সময় মহিলারা শারীরিকভাবে খুব দুর্বল থাকে।পিরিয়ডের সময় মহিলাদের পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, মেজাজ খিট মিটে এবং কারো কারো মাথা ঘুরে হয়ে থাকে। কিছু খাবার রয়েছে যে সকল খাবারগুলো এ সকল সমস্যাগুলো কমাতে অনেকটা সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলো।
- পানি বা সরল জাতীয় খাবারঃ পিরিয়ড চলাকালীন সময় প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এর কারণ হলো পিরিয়ড চলাকালীন সময় রক্তপাতের বা রক্তক্ষরণের সাথে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পানি বা তলর জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ পিরিয়ডের সময় শরীরে আয়রনের পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, খেজুর, আমড়া, কচু শাক, পুঁইশাখ, ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং রোধে চর্বি বাদে লাল মাংস খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
- ফলমূলঃ ফলমূলের প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তাছাড়া ফলমূল খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ভিটামিন সি যুক্ত ফল শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তাই শরীরে ভিটামিন সি পূরণের জন্য পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু ও কমলা খাওয়া উচিত।
- ডার্ক চকলেটঃ পিরিয়ডের সময় ডার্ক চকলেট খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়। তার চকলেট রয়েছে আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম।
পিরিয়ডের সময় কি কি খাবার খাওয়া যাবে না
পিরিয়ডের সময় যে সকল খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা সেগুলো হল অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার।বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার থেকে একেবারে দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও কোমল পানীয় যেমনঃ চা ও কফি এবং অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে আপনার অ্যালার্জি সমস্যা বেড়ে যায়। সে সকল খাবার গুলো পিরিয়ড চলাকালীন সময় একেবারে পরিহার করতে হবে।উপসংহার
পাঠাকগণ, আমি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চেষ্টা করেছি। পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে কি করনীয় ও কি কি খাওায় উচিত সে সম্পর্কে। আশা করি উক্ত আলোচনা ইতিপূর্বে পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
তাই পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং বেশি হলে করণীয় হিসেবে ঘরোয়া ভাবে যতদূর করা সম্ভব করার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আবারও দেখা হবে কোন এক নতুন পোষ্টের মাধ্যমে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিজেকে ভালোবাসুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url