আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা
সুপ্রিয় পাঠক, আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে অনেকে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে থাকেন। যে সকল ব্যক্তি বা আমাশয়ের রুগীগণ এ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। তাদের জন্য আমার এই পোস্টটি। এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আলোচনা করতে চলেছি আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে।
তাই আমাশায় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ভুমিকা
আমাশয় একটি বহুল পরিচিত একটি রোগ। আমাদের দেশে এ রোগটির পাদুর্ভাব ব্যাপক। আমাশয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ এই রোগের কারণে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন। আমাশয় রোগে আক্রান্ত হলে সময় মত পায়খানা হয় না।
পায়খানার চাপ আসে কিন্তু পায়খানা পরিষ্কারভাবে না হওয়ার কারণে রোগীকে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আলোচনা করব আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে।
এছাড়া আরো আলোচনা করব আমাশয় কি? আমাশয় রোগের কারণ ও আমাশয় রোগের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়তে আপনার ভালো লাগবে। পাঠকগণ, তাহলে জেনে নিন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে।
আমাশয় কি?
আমাশয় এক ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ যা মানুষের অন্ত্রে হয়। আমাশয় কে জীবাণুবাহিত রোগও বলা হয়ে থাকে। আমাশয় এমন একটি রোগ যা হলে মলা শাড়ির ভিতরে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া ও ব্যথার সৃষ্টি হয়। এই জ্বালাপোড়া ও ব্যথার সাথে সাথে মলদ্বার দিয়ে শ্লেষ্মা ও রক্তপাত হয়।
আমাশয় রোগের জন্য দায়ী সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো শিগেলা, সালমোনেলা, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, এশেরিকিয়া কোলাই ইত্যাদি। আমাশয় প্রধানত দুই প্রকার।যথাঃ অ্যামিবিক আমাশয় ও ব্যাসিলাস আমাশয়।
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাশয় রোগ যেহেতু একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের ফলে আমাশয় হয়।এছাড়াও আমাশয় রোগ হওয়ার যে সকল কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হলো অপরিষ্কার বা নোংরা থাকা।
এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরোয়াভাবে আমাশয় রোগের চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই চলুন নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জেনে নিন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।
- থানকুনি পাতার রসঃ আমাশয়ের রোগ দূর করতে থানকুনি পাতার রস খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমাশয় সহ পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতার জুড়ি নেই। এই থানকুনি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবন করলে আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি চাইলে থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চা চামচ মধু মিশেও খেতে পারে।
- গুড়ঃ আখের গুড় আমাশয় রোগ সারাতে ও অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে খুব উপকারী। দীর্ঘদিন ধরে যারা আমাশয় ভোগে। সে সকল ব্যাক্তি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ করে আখের গুড় খাওয়ার অভ্যাস করেন। তাহলে আমাশয় অনেকটা কমে যায।
- জাম ও ডালিমের পাতার রসঃ জাম ও ডালিমের পাতার রস আমাশয় রোগ সরাতে ভূমেকা রাখে।আমাশয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জাম ও ডালিমের পাতার রস সেবন করলে আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যায়।
- ডাবের পানিঃ আমাশয় হলে ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয় এর ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হওয়ার কারণে শরীর ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়। শরীরকে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে রক্ষা করতে ঘন ঘন ডাবের পানি পান করতে হবে। আপনি চাইলে ডাবের পানির পাশাপাশি পানির সাথে লেবু ও লবন মিশিয়ে শরবত করে খেতে পারেন।
- অর্জুনের ছালঃ আমাশয় রোগ প্রতিরোধ করতে অর্জুনের ছাল মাহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্জুন গাছের ছাল খেয়ে বেটে রস বানিয়ে সেবন করলে আমাশয় রোগ ভালো হয়। আপনি চাইলে অর্জুন গাছের ছালের রসের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশেও সেবন করতে পারেন।
- কুলেখাড়া রসঃ অনেক সময় অন্ত্রে আম জমে থাকার ফলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়। তাই সকালবেলা কুলেখাড়া পাতার রস তিন থেকে চার চা চামচ সেবন করতে পারেন।
আমাশয় রোগের কারণ
আমাশয় সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো যখন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং অন্ত্রের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যায় তখন আমাশয় রোগ হয়। এছাড়াও যাদের পেটে কৃমি রয়েছে তাদেরও আমাশয় রোগ হয়ে থাকে।আমাশয় রোগের ব্যাকটেরিয়াগুলো এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যে সকল মাধ্যম বা কারণ রয়েছে সেগুলো হলোঃ
- দূষিত পানি পান করার কারণে
- পঁচা ও বাঁশি খাবার খাওয়ার কারণে
- দূষিত পানিতে গোসল ও থালা বাসন মাজলে
- আমাশয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মলত্যাগের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করলে
আমাশয় রোগের লক্ষণ
একজন আমাশয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চেনার জন্য নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারনা থাকতে হবে। আমাশা রোগের লক্ষণ গুলো জানা থাকলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার আমার আমাশয় হয়েছে কিনা।
বাংলাদেশে আমাশয় রোগের প্রবণতা খুব বেশি। তাই আমাশয় রোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে প্রাথমিক অবস্থাতেই এই রোগের চিকিৎসা করে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব । নিম্নে আমাশয় রোগের কিছু সাদা লক্ষণগুলো দেয়া হলোঃ
- নাভির চারপাশে ও তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়
- পায়খানা করার সময় মলদ্বারের সাথে শ্লেষ্মা ও রক্ত বের হয়
- শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হয় এবং জ্বর হয়
- পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং পেট থেকে আওয়াজ হয়
- পায়খানার করার সময় মলদ্বার দিয়ে মিউকাস বের হয়
- দিনে তিন থেকে চার বারের বেশি পায়খানা
- বমি বমি ভাব হয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়
- মাঝেমধ্যেই পাতলা পায়খানা হয়
- মুভি গেছে পেট বেশি ফুলে যাওয়া
- পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা সৃষ্টি হয়
- শরীরে ওজন দ্রুত হ্রাস পায়
- মলে দুর্গন্ধ হয়
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তারা প্রায় প্রশ্ন করে থাকেন যে আমাশয় রোগ হলে কি স্বাভাবিকের মতো সব খাবারই খাওয়া যাবে। নাকি আমাশয় রোগীদের খাবার তালিকা ভিন্ন।
সে সকল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই হ্যাঁ প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা রয়েছে যা একটু ভিন্ন। আমাশয় রোগ হলে স্বাভাবিকের মতো সব খাবার খাওয়া যাবে না। আমাশয় রোগ থেকে খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে হলে আমাশয় রোগীকে অবশ্যই রোগীদের খাবারের তালিকা অনুসরণ করে খেতে হবে।
আপনার যদি আমাশয় রোগ হয় তাহলে এই সকল খাবারগুলো খেলে আপনি আমাশয় থেকে খুব দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা গুলো কি কি সে সম্পর্কে।
নিম্নে আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা গুলো আলোচনা করা হলোঃ মধু, দই , সিদ্ধ সবুজ শাকসবজি, গ্রিন টি ও তরল, স্যুপ, আপেল, কলা, খোসা ছাড়ানো আলু, কমলালেবু, ডালিম, বেদানা, অল্প মসলায় রান্না করা খাবার ইত্যাদি।
এছাড়াও আমাশয় রোগীদের যে সকল খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো হলঃ দুগ্ধজাত খাবার যেমনঃ দুধ, ক্রিম, পনির, মাখন, তেল মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, কলযুক্ত পানীয়, লাল মাংস ও চিনি যুক্ত খাবার। এ সকল খাবারগুলো খেলে আমাশয়ের লক্ষণগুলো বেড়ে যেতে পারে। তাই এ সকল খাবার খাওয়া থেতে বিরত থাকতে হবে।
আমাশয় রোগের ঔষধ
আমাশয় রোগ হলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা নিতে হয়। ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা নেয়ার পরও যদি আমাশয় রোগ ভালো না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবন করা উচিত। নিম্নে আমাশয় রোগের কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম দেয়া হলো। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধগুলোর নাম।
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Syproflaxacin)
- সেফট্রিয়াক্সোন (Safetriaxon)
- পিভমেসিলিনাম (Pivmessilinam)
- ব্যাসিল্যাক্স ট্যাবলেট (Basilex Talet)
- পিভিসিল ট্যাবলেট(Pivicil Tablet)
- ফ্লাজিল ট্যাবলেট (Flagyl Tablet)
- আলেক্সিড ট্যাবলেট (Alexid Tablet)
- এমছিল ট্যাবলেট (Emcil Tablet)
- লেক্সিপেন ট্যাবলেট (Lexipen Tablet)
- জক্স ট্যাবলেট (Zox Tablet)
- রিলেক্সিড ট্যাবলেট (Relexid Tablet)
- পিনাম ট্যাবলেট (Pinam Tablet)
শেষ কথা
পাঠক বন্ধুগণ, আশা করি আমার এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। যদি পড়ে থাকেন তাহলে ইতিপূর্বে আপনি জেনে গেছেন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই প্রিয়জনদের মাঝে এই পোস্টটি ছড়িয়ে দিন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন পোষ্টের মাধ্যমে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আরো পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url