দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে জানার জন্য আপনি কি অনুসন্ধান করছেন? যদি অনুসন্ধান করে থাকেন তাহলে আমার এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার
তাই সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনি যদি দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে আমার এই পোস্টটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লাগবে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

উপস্থাপনা

দুধ হল সর্বগুণ সম্পন্ন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। যতগুলো খাদ্য উপাদান রয়েছে সেগুলোর প্রায় সবই দুধের মধ্যে রয়েছে। তাই দুধকে একটি পরিপূর্ণ ও আদর্শ খাবার বলা হয়। দুধে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের সুস্থ সবল ও বিভিন্ন রকম রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণের দুধের কোন বিকল্প নাই। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে।

আমার এই পোস্টে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আরো আলোচনা করেছি দুধ খাওয়ার দোয়া, দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আরো আলোচনা করেছি দুধ খাওয়ার পদ্ধতি ও প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে। অনুরোধ রইল এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই জানি দুধের পুষ্টিগুণ এবং দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। দুধ খেতে সবাই পছন্দ করে। দুধ খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকি দুধ পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ তাই শিশু প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের দুধ খাওয়া উচিত। নিম্নে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  • শারীরিক শক্তি যোগাতেঃ দুধে রয়েছে প্রোটিন ও ল্যাকটিক এসিড যা আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খেলে সারাদিন আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চার হয় ফলে কাজকর্মে মন বসে এবং শরীর সতেজ থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ প্রতিদিন দুধ খেলে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেহেতু দুধে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল যা আমাদের শরীরের ইউনিটি সিস্টেমকে অনেক উন্নত করে। যার ফলে আমাদের শরীর যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাঃ দুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়। যে সকল ব্যক্তিদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে অনেক আরাম পাবে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ প্রতিদিন দুধ খেলে শরীরে কোলেস্টরের মাত্রা অনেকটা কম হয় এবং আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। দুধে যেহেতু রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা খারাপ কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হওয়ার কারণে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এনবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।
  • হাড় ও দাঁত গঠনেঃ দুধ হার ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠনকে শক্ত ও মজবুত করে। প্রতিদিন দুধ খেলে দাঁতের ক্ষয় রোধ ও হাড়ের বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে।
  • ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের যত্নে দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। দুধে রয়েছে ভিটামিন বি১২ যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতে এবং ত্বকে বয়সে ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুধ খেলে অল্প বয়সে আমাদের ত্বক কুঁচকে বা ঝুলে যায় না। তাই প্রতিদিন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
  • ফিট ও সুস্থ রাখতেঃ সবাইকে ফিট অসুস্থ রাখতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। দুধ এমন একটি সুষম খাবার যেটা খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে ও শরীর ফিট থাকে। দুধ স্বাস্থ্যকর খাবার তাই প্রতিদিন দুধ খেতে হবে।
  • মাংসপেশিকে সবল রাখেঃ দুধ খেলে মাংসপেশি সবল থাকে। দুধে থাকে প্রোটি ন প্রোটিন যা আমাদের মাংসপেশিকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও দুধ মাংস পেশি গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতেঃ যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে সে সকল ব্যক্তিদের প্রতিদিন পরিমাণ মতো দুধ খাওয়া উচিত। কেননা তোদের রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যা ডায়াবেটিস কমাতে খুব সাহায্য করে।
  • ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ ঘুমের সমস্যা কম বেশি সকলের একটি সাধারণ সমস্যা। এই ঘুমের সমস্যা দূর করতে অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা কখনোই ভাবি না যে ঘরোয়া ভাবে এ ঘুমের সমস্যা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করলে এই ঘুমের সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যায়।

দুধ খাওয়ার দোয়া

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা মুমিনের ২১ নম্বর আয়াতে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে বলেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম দুধ খেতে খুব পছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধ খাওয়ার সময় দোয়া পাঠ করতেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবীগণদেরকে দুধ খাওয়ার সময় দোয়া পাঠ করার নির্দেশও দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তোমাদের কেউ দুধ পান করবে এই দোয়াটি পাঠ করবে। দুধ খাওয়ার দোয়াটি হলো- 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাবিন লানা ফিহি ওয়াজিদনা মিনহু।

অর্থঃ হে আল্লাহ আমাদের এই খাবারের বরকত দিন এবং তা আরো বাড়িয়ে দিন (আবু দাউদ: ৩৭৩২)

দুধের পুষ্টি উপাদান

  • পানি ৮৭.৭,গ্রাম
  • আমিষ ৩.৩ গ্রাম
  • এ্যাশ ০.৭ গ্রাম
  • ফ্যাট গ্রাম ৩.৬ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি ৬৪ কিলো ক্যালরি
  • ক্যালসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম
  • কোলেস্টেরল ১১ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম ১৪৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন-এ ১৪০ আই ইউ

দুধ খাওয়ার পদ্ধতি

দুধ খাওয়ার পর দুধ থেকে ভালো উপকারিতা পেতে হলে দুধ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। দুধ খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো রাতে। রাতে দুধ খেলে খাবার পরিপাকে সহজে হয়। দুধ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি হিসেবে খাবার খাওয়ার অন্ততপক্ষে ৪০ মিনিট পর দুধ খাওয়া উচিত। খাবার খাওয়ার পর পরই দুধ খেলে হজমে সমস্যা হয়। দুধ খাওয়ার পূর্বে দই, টক জাতীয় ফল ও খাবার খাওয়া ঠিক না। এর ফলে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত

আমাদের শরীরে যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার অধিকাংশই মিলে এই দুধ থেকে। প্রতিদিন দুধ খেলে এই পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। তাই শরীরে চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত তা অনেকেই জানেন না। না জানার কারনে দুধ খাওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন।

তাই প্রতিদিন কতটুকু দুধ খেতে হবে সে বিষয় সম্পর্কে জানা অতি জরুরী। বিশেষজ্ঞদের মতে বয়স অনুযায়ী পরিমাণ মতো দুধ খাওয়া উচিত। শূন্য থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের গরু বা ছাগলের দুধ খাওয়ানো উচিত না। এ সময় শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ১ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুদের ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত।

 ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সের সকলের প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ এমএল দুধ খাওয়া উচিত। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সের লোকদের প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ এমএল দুধ খাওয়া প্রয়োজন। যেহেতু দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে তাই ১১ থেকে ৫০ বছর বয়সের সকলের প্রতিদিন পরিমাণ মতো দুধ খাওয়া প্রয়োজন।

দুধ খাওয়ার অপকারিতা

দুধ খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি দুধ খাওয়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাই যাদের দুধ খেলে সমস্যা হয় তাদের দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকাটাই ভালো। যাদের দুধ খেলে এলার্জি, আলসার ও পাতলা পায়খানা হয়।

সে সকল ব্যক্তিকে চিকিৎসকগণ দুধ খেতে বারণ করেন। যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। কিডনিতে যে সকল পাথরগুলো থাকে সেটির প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। তাই কিডনি রোগীকে একেবারে দুধ খাওয়া উচিত নয়।

পেটে কোন ধরনের অপারেশন হলে যতদিন পর্যন্ত না পুরোপুরি রোগীর সুস্থ হয়। ততদিন পর্যন্ত দুধ খাওয়া উচিত নয় এতে সমস্যা আরোও বেশি হতে পারে। এছাড়াও বেশি পরিমাণে দুধ খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।

তাই যাদের দুধ খেলে ডায়রিয়া হয় সে সকল ব্যক্তিদের দুধ না খাওয়াই ভালো। যাদের শরীরের ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কম রয়েছে তারা সহজেই দুধ হজম করতে পারেন না। তাই তাদের দুধ খাওয়ার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

উপসংহার

প্রিয় পাঠাক বন্ধু, এতক্ষণ আমি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চেষ্টা করেছি দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি উক্ত আলোচনা থেকে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আপনারা হয়তোবা জানেন প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তার অপকারিতাও আছে। দুইটি দিক বিবেচনা করে আপনার দুধ খাওয় উচিত। তাহলে এর ফলটিও ভালো পাবেন।

আমার এই পোস্টট পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে ছড়িয়ে দিতে ভুলবেন না। আবারও দেখা হবে কোন এক নতুন পোষ্টের মাধ্যমে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানে শেষ করলাম। আল্লাহ হাফেজ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url