শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ, ধবল রোগের হোমিও ঔষধ
ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? তাহলে আমার এই পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে। আমার এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
তাহলে চলুন আমাদের পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে নিম্নক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানুন ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে।
আরম্ভ।। শ্বেতী রোগ
ধবল বা শ্বেতী রোগ ডাক্তারি পরিভাষায় যা ভিটিলিগো নামে পরিচিত। ভিটিলিগো (vit-ih-LIE-go) হল এমন একটি রোগ যার কারণে ত্বকের বর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণত ত্বকের রং উৎপাদনকারী কোষ বা মেলানোসাইট রোগাক্রান্ত হলে বা সংখ্যায় কমতে থাকলে অথবা মারা যাওয়ার ফলে মেলানিন নামক ত্বকের রঞ্জক বা রং তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে ত্বকে ছোট ছোট সাদা বর্ণের দাগ বা ছোপ দেখা দেয়। আর এটাই হল ধবল বা শ্বেতী রোগ। আমার এই পোস্টটিতে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ সম্পর্কে। এই পোস্টটি পড়া মাধ্যমে আপনি আরো জানতে পারবেন শ্বেতী রোগ কেন হয়,
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ, শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির দোয়া, ধবল বা শ্বেতী রোগের ঔষধ, শ্বেতী রোগের খাবার, শ্বেতী রোগের মলম এবং শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়। এই সমস্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ
ধবল বা শ্বেতী রোগের জন্য হোমিও ঔষধ খুব কার্যকরী। প্রাথমিক পর্যায়ের হলে হোমিও ঔষধে সেরে যেতে পারে। তবে এ রোগ যদি দীর্ঘ হয় অর্থাৎ রোগী দীর্ঘদিন ধরে শ্বেতী রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন প্রয়োজন পড়ে।
ধবল বা শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার খুব ব্যয়বহ সাপেক্ষ এবং অন্যান্য ট্রিটমেন্ট গুলো খুব ব্যয়বহুল। তাই শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ খুব সহজলভ্য এবং দামেও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ঔষধের চেয়ে কম।
সুতরাং হোমিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হোমিও ঔষধ সেবন করলে শ্বেত রোগী সহজে আরোগ্য লাভ করবে ইনশাল্লাহ। হোমিও ঔষধ বিগত ১ শতাব্দী ধরে ধবল বা শ্বেতী রোগসহ আরও বহু রোগ সারিয়ে তুলতে কার্যকরী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ধবল বা শ্বেতী রোগের কয়েকটি হোমিও ঔষধের নাম নিম্নে দেয়া হলো-
- সিপিয়া
- সোডিনাম
- নেট্রাম কার্ব
- সিফিলিনাম
- ওয়েল বুচি
- নাইট্রিক এসিড
- সোরালিয়া কুরি
- সালফার আইড
- চেলডোনিয়াম
- রেডিয়াম ব্রোমাইড
- আর্সেনিক সালফ ফ্লেবাম
- পাইপার মিথিটিকাম
শ্বেতী রোগ কেন হয়
মানুষের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট নামক কোষ থাকে এবং সেই কোষে থাকে মেলানিন নামক এক ধরনের হরমোন। এই মেলানিন মানুষের ত্বকের রং ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ত্বকে থাকা এই মেলানিনের কার্যকলাপে যদি কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হয় তবে ধবল বা শ্বেতী রোগ হয়। মূলত হরমোনের তারতমের জন্যই গায়ের রং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
শ্বেতী বংশগতভাবে অর্থাৎ মা-বাবার জিনে যদি শ্বেতী রোগ থাকে তবে সন্তানেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে শ্বেতী রোগীদের প্রায় ৩০% বংশগত ধারায় হয়ে থাকে। আর বাকি ৭০% মানুষের ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ হয় প্রধানত মেলানিনের বিভিন্ন ত্রুটিগত কারণে। বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ এই শ্বেতী রোগে আক্রান্ত।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ
ধবল বা শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো সকলের জেনে রাখা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় শ্বেতী রোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে এই রোগটি থেকে চিকিৎসার মাধ্যমে খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। আর যদি শ্বতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা না থাকে তাহলে এই রোগটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাহলে চলুন জেনে নিন সেটি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ।
- শ্বেতির রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান লক্ষণ হল এই রোগটি প্রথম অবস্থায় মুখ, বাহু, হাত, শরীরে বিভিন্ন খোলা অংশ ও যৌনাঙ্গের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট সাদা দাগ পরিলক্ষিত হয়।
- এছাড়াও চোখের মাঝখানে, মাথার চামড়ায়, ভ্রুন এমনকি দাড়িতেও এ রোগ হয়ে থাকে। এমনকি দাড়ি এবং চুলের রং আস্তে আস্তে ফাকাশে ও ধূসর হতে থাকে।
- এমনকি মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেনে রংয়ের প্রলেপ আস্তে আস্তে উঠে যেতে পারে। শরীরের ছোট ছোট সাদা দাগ হলে রোদে বা আলোতে গেলে সেই সাদা দাগ গুলো লাল হয়ে যেতে পারে।
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে অবশ্যয় দোয়ার আমল করতে হবে। কেননা সকল রোগের মুক্তি বা সেফা দানকারী মহান আল্লাহ তা’আলা। তাই আপনি যদি শ্বেত রোগ থেকে মুক্তির দোয়া জানতে চান তাহলে আমার এ প্রতিবেদনটি মনযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নিন শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির দোয়া।
- উচ্চারণঃ আল্লা হুম্মা ইননী আঊ জু বিকা মিনাল বারাস্বি ওয়াল যুজা মি ওয়াল যুনূ নি ওয়া সায়্যিউল আসক্বাম। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট শ্বেতী (কুষ্ঠ), পাগলামি, কুষ্ঠ ও সব অনিষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ১৫৫৪)।
- উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আফি’নি, ইয়া শাফিয়াল-আমরাদ। লা শাফিয়াল-ইল্লা আন্তা.”। অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আমাকে নিরাময় করুন, হে সকল রোগের নিরাময়কারী। আপনার ছাড়া অন্য কোন নিরাময়কারী নেই।”
উপরোক্ত দোয়াগুলো পড়ার পাশাপাশি আপনাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতসহ সাধ্যমত দান সদকা করতে হবে। এবং নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আশা করি আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন এবং আপনাকে শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তি দিবেন।
ধবল বা শ্বেতী রোগের ঔষধ
ধবল বা শ্বেত রোগ যদি প্রাথমিক পর্যায়ে হয় তাহলে এই রোগটি পুরোপুরি সারানো সম্ভব। অপরদিকে রোগটি দীর্ঘদিনের হয়ে গেলে অর্থাৎ শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে গেলে পুরোপুরি ভালো নাও হতে পারে। অনেক সময় এই রোগটি ওষুধ সেবন না করেও সেরে যেতে পারে। ধবল বা শ্বতী রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজন হয়।
তাই এ রোগের চিকিৎসা নেয়ার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ ও ওষুধ সেবন করতে হয়। এই রোগের ধরন, রোগের বিস্তার ও রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকগণ একেক রোগীকে একেক রকম চিকিৎসা প্রদান করেন এবং ওষুধ জীবনের পরামর্শ দেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ধবল বা শ্বেতী রোগের ওষুধ সেবন করা উচিত না। নিম্নে ধবল বা শ্বেতী রোগের কিছু ঔষধের নাম দেয়া হলো-
- রিবোফ্ল্যাভিন ট্যাবলেট
- মুখের খাবার স্টেরইয়েড (প্রেডনিসলন) ট্যাবলেট
- এন্টিলিগো ক্যাপসুল
শ্বেতী রোগের খাবার
শ্বেতী রোগে কোন খাবারগুলো খেতে হয় এমন প্রশ্ন সকলে করে থাকেন। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার প্রতি অনেক সতর্ক থাকতে হয়। কেননা শ্বেতী রোগ হলে এমন কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে এ রোগ থেকে অনেকটা সুস্থ হওয়া সম্ভব। আমার এমন কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে এই রোগ আরো বেড়ে যায় ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
চিকিৎসকেরা শ্বেতী রোগীদের খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো হলঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত পানি পানের পাশাপাশি পেঁপে, বাদাম, আদা, তুলসীর পাতা, অ্যালোভেরা ও হলুদ। এছাড়াও, তরমুজ, পালং শাক, করলা, বিট, গাজর, মুল, মাশরুম, কলা, আপেল, পেয়ারা ও ভিটামিন "এ" সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শ্বেতী রোগ হলে অবশ্যই মদ্যপান ও ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে ধবল বা শ্বেতী রোগ আরো বেড়ে যায়। এছাড়া কিছু ফল রয়েছে যেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমনঃ আঙ্গুর, কমলালেবু, বেদানা ও পেয়ারা। এছাড়া বিভিন্ন রকম ফলের আচার, কাঁচা টমেটো, কাঁচা রসুন, তেতুল, মাছ, সামুদ্রিক মাছ , কফি, জাঙ্কফুর ও চকলেট ইত্যাদি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
শ্বেতী রোগের মলম
ধবল বা শ্বেতী রোগের ঔষধ সেবনের সাথে সাথে কিছু মলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে মলম ব্যবহার খুব কার্যকরী হয়। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি চাইলে শ্বেতী রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য মলম ব্যবহার করতে পারেন। নিম্নে ধবল বা শ্বেতী রোগের কয়েকটি মলমের নাম উল্লেখ করা হলো-
- বিভিন্ন মাত্রার কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় মলম
- কেলসিপট্রিন মলম
- টেক্রলিমাস
- পাইমেক্রলিমাস মলম
- ক্লোভেট
- মেলাডিনিন
- অনিমেন্ট
- সুমিফান ভিটিলিগো
শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়
শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়? অবশ্যই শ্বেতী রোগ ভালো হয়। অনেকের ধারণা শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই কথার কোন ভিত্তি নাই। শ্বেতী রোগের লক্ষণগুলো বুঝতে পারার সাথে সাথে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুচিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহর রহমতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ঔষধ সেবন করলে শ্বেতী রোগ ভালো হয়ে যায়। বিভিন্ন কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে যাদের ধবল বা শ্বেতী রোগ হয়।
তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর প্রধান কারণ হলো এই রোগটি সম্পর্কে সকলে ধারনা না থাকার কারণে এমনটা হয়। তাই শ্বেতী রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা মাত্রই চিকিৎসা নিন ও সুস্থ্য থাকুন।
শেষ কথা
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে এবং সামান্য পরিমাণ উপকৃত হন তাহলে আমার এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন পরিদর্শন করুন । আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভাল থাকুন এবং পরিবারকে ভালবাসুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url