বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম, বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ আপনি কি জানতে চাইছেন? যদি জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় অনুসন্ধান করেছেন। আমার এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ
তাই আপনাকে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণগুলো কি কি এই বিষয়ে। তাহলে চলুন আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আলোচনাগুলো জেনে নিন।

আরম্ভ

কৃমি একটি পরজীবী। আর এই পরজীবীর আক্রমণের কারণে বড়দের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়। আমার এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ, বড়দের কৃমি দূর করার উপায়। 

আরও জানতে পারবেন বড়দের কৃমির ঔষধের নাম এবং কৃমি নিয়ন্ত্রণ কোন কোন খাবারে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটির সাথে থাকুন। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লাগবে। সম্মানিত পাঠক, তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ

শুধু ছোটরা কৃমিতে আক্রান্ত হয় এমনটা না। বড়রাও কৃমিতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। অনেকে আবার এমন আছে যারা বুঝতেই পারে না যে, তার শরীরে কৃমিতে বাসা বেধেছে। পেট ব্যথা কিংবা পেটে যন্ত্রণা করলে তারা মনে করে তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে এমনটা হচ্ছে। 

তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শুধু তেল মশলাযুক্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়ে পেটে ব্যথা করে না। বরং শরীরে কৃমির আক্রমণ হলেও পেটে ব্যথা করে। তাই আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চলেছি বড়দের কৃমি হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো। 

এই লক্ষণগুলো পূর্ব থেকে জানা থাকে তাহলে সহজেই আপনি কৃমি রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হতে পারবেন। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কৃমির আক্রমণের লক্ষণগুলো বুঝতে পারর সাথে সাথে চিকিৎসা নিলে কৃমির ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। নিম্নে বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো-

  • শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়
  • তলপাটে ব্যথা ও অস্থির যন্ত্রণা করে
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
  • অল্পতে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়
  • পেটে গ্যাস হয় ও পেট ফেঁপে যায়
  • দ্রুত ওজন কমতে থাকে
  • শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়
  • বমি বমি ভাব ও বমি হয়
  • ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য মত রোগ হয়

বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ

বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ কি এ বিষয়ে জানতে অনেকে আগ্রহী। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনার সাথে আলোচনা করব বড়দের ঘন ঘন ক্রিমে হওয়ার কারণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো। তাহলে সুপ্রিয় পাঠক, চলুন জেনে নিন বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ কি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে সবথেকে বেশি মানুষ কৃমিতে আক্রান্ত হয়। কেউ যদি নোংরা, স্যাঁতসেঁতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন যাপন করে তবে তার কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।

অপরিচ্ছন্ন খাদ্য ও অনিরাপদ পানিঃ অপরিচ্ছন্ন খাদ্য ও নিরাপদ কৃমি হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দূষিত পানি ও দূষিত খাবার খেলে সহজে যে কেও কৃমিদের সংক্রমিত হয়। অনেকে বাসি খাবার খেয়ে থাকে এই বাসি খাবার খেলেও কৃমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার অনেকে ফলমূল না ধুয়ে খায় এটাও কৃমি হওয়ার কারণ হয়ে দাড়ায়।

হাত না ধোয়ার অভ্যাসঃ খাবার গ্রহণের আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত না ধোয়ার অভ্যাসের করনে কৃমি সংক্রমনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা।

পায়খানা ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি না মানঃ পায়খানা ব্যাপারে সঠিক পদ্ধতি না মানার কারণেও কৃমির সংক্রমণ ঘটে থাকে। সাধারণত গ্রামগঞ্জে এখনো খোলা জায়গায় পায়খানা করা হয়। এর ফলে বিভিন্ন ভাবে কৃমিসহ আরো অনেক রোগব্যাধির সংক্রমণ ঘটতে পারে।

হাতের নখ চিবানোঃ হাতের নখ চিবানো কৃমি হওয়ার আরেকটি কারণ। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা অবসর সময়ে একটু ফাঁকা পেলে হাতের নখ মুখে দিয়ে চিবাই। আমার অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটে। আর এই হাত ও নখ ভালোভাবে না ধোয়ার কারণে সেই নখে থাকা কৃমির ডিম মুখের ভিতর দিয়ে পেটে যায়। এটাও কৃমি সংক্রমনের কারণ হয়।

পোষা প্রানী দ্বারা সংক্রমনঃ পোষা প্রাণী কৃমির ডিম বহন করে। তাই পোষা প্রাণী সংস্পর্শে আসার পর ভালোভাবে হাত না ধুলে খাবার গ্রহণ করলে কৃমি দ্বারা সংক্রমণ হওয়া সম্ভবনা আরো বেড়ে যায়।

বড়দের কৃমি দূর করার উপায়

উপরোক্ত আলোচনা গুলোর মাধ্যমে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে। কৃমি হওয়ার কারণগুলো যেহেতু জানতে পেরেছেন। এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে বড়দের কৃমি কিভাবে দূর করা যায় বা বড়দের কৃমি দূর করার উপায় গুলো কি কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের প্রতিবেদনটির সাথেই থাকুন এবং জেনে নিন বড়দের কৃমি দূর করায় উপায়গুলো।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাঃ সব সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এর সাথে সাথে পরিধেয় বা পরনের কাপড়-চোপড়ও পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। নোংরা পরিবেশের দ্বারা মানুষ থেকে সংক্রমিত হয়। তাই নিজেকে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি আশেপাশের পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধোয়াঃ বাসা বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। টয়লেট থেকে কৃমি দ্বারা সবচেয়ে বেশি মানুষ সংক্রমিত হয় তাই। তাই কৃমির সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে হলে টয়লেট বা শৌচাগার অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

নিয়মিত নখ কাটতে হবেঃ নিয়মিত ভাবে নখ কাটতে হবে। কেননা বড় বড় নখের মাধ্যমে আমাদের পেটে কৃমি যেতে পারে তাই সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ছোট ছোট করে নখ কাটতে হবে। পেটের অসুখের জন্য বেশিরভাগ দায়ী বড় বড় নখ। তাই কৃমি ও অন্যান্য রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে হলে নখ ছোট ছোট করে কাটতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণঃ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সাথে সাথে টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং নিয়মিত নখ ছোট ছোট করে কাটার পরেও যদি আপনি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হন তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগকে অবহেলা করবেন না। রোগের লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন এবং সুস্থ থাকুন।

বড়দের কৃমির ঔষধের নাম

বড়দের কৃমির লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ সেবন করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। আর অবশ্যই একটা বিষয়ে মনে রাখা উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত না। নিম্নে বড় দেখে ওষুধের নাম গুলো উল্লেখ করা হলো-

  • Albendzole Tablet
  • Mebendazole Tablet
  • Praziquantel Tablet
  • Ivermectine Tablet
  • Levamisol Tablet
  • Almex Tablet
  • Albezen Tablet
  • Ben-A Tablet
  • Estazol Tablet
  • Durazol Tablet

কৃমি নিয়ন্ত্রণ কোন কোন খাবারে

বড়দের কৃমির নিয়ন্ত্রণ করতে যে সকল খাবারগুলো খাওয়া উচিত সেই খাবারগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আশা করি নিম্নক্ত খাবারগুলো খেলে আপনার কৃমি নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং আপনি উপকৃত হবেন। তাহলে জেনে নিনি কৃমি নিয়ন্ত্রনে রাখাব খাবারগুলো সম্পর্কে।

হলুদঃ হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রয়েছে যা পেটের সকল ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে এক টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাবেন।

পাঁকা পেঁপেঃ পাঁকা পেঁপেতে অ্যান্টি-অ্যামিবিক এবং অ্যানথেলমিন্টিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অন্ত্রের কিমি দূর করতে সাহায্য করে।

গাজরঃ গাজর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তাই সকালে খালি পেটে গাজর খেতে পারেন।

নিমঃ নিমপাতা কৃমি নিয়ন্ত্রণের জম না মহাঔষধ হিসেবে পরিচিত। এই পাতাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রয়েছে যা কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অন্ত্রের কৃমি দূর করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে। কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতা রস করে খেতে পারেন।

কাঁচ রসুনঃ কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কৃমি দূর করতে সাহায্য করে কাঁচ রসুন। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কোয়া কাঁচ রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে কৃমির সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবেন।

লবঙ্গঃ কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে লবঙ্গ খেতে পারেন। কয়েকটা লবঙ্গ নিয়ে অল্প পরিমাণ পানিতে ৫ থেকে ৬ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর ফুটন্ত পানিটুকু হালকা কুসুম হলে পান করুন। এভাবে সপ্তাহে কয়েকবার লবঙ্গ ও পানির মিশ্রণ পান করুন। দেখবেন কৃমি নিয়ন্ত্রণে ভালো ফলাফল পাবেন।

মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠক মন্ডলী আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে জানতে পেরেছেন বড়দের কৃমি হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সত্যিই উপকৃত হয়ে থাকেন।

তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমার www.sumonworld.com ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং কৃমি হওয়ার লক্ষণগুলো বুঝতে পারার সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা নিন। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url