লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
সুপ্রিয় পাঠক, লো প্রেসারে ঘরোয়া চিকিৎসা জানার জন্য আপনি কি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করছেন? যদি খোঁজাখুঁজি করেন তাহলে আপনি ঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নটির উত্তর রয়েছে আমার আজকের এই পোস্টটিতে। আমার আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন লো প্রেশারের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।
তাই লো প্রেসারে ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে আপনাকে পড়তে হবে। কেননা আমার এ পোস্টটিতে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি লো প্রেসার এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে জেনে নিন লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা।
আরম্ভ
পাঠক মহোদয়, লো প্রেসার একটি রোগের নাম। তাই এই রোগ হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ করলে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আজকের এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো লো প্রেসারে ঘরোয়া চিকিৎসা।
এই লো প্রেসার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আপনাকে এই পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। আমার এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরও জানতে পারবেন লো প্রেসার কি? প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ, প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে ও লো প্রেসারের ঔষধের নাম। তাহলে চলুন মূল আলোচনার যাওয়া যাক।
লো প্রেসার
লো প্রেসার বা নিম্ন রক্ত চাপ একটি অতি পরিচিত রোগের নাম। ছোট-বড় সকল বয়সের এই রোগটি হয়ে থাকে। লো প্রেসার কে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। লো প্রেসার হলো এমন একটি রোগ যখন মানব দেহে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অথবা রক্ত চলাচল প্রবাহ আস্তে আস্তে হয়। এই আস্তে আস্তে রক্ত চলাচল প্রবাহকে লো পেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বলে অভিহিত করা হয়।
নিম্ন রক্তচাপ (ইংরেজিঃ Hypotension) হল মানব দেহের রক্ত সংবাহন তন্ত্রের এমন একটি অবস্থা যেখানে অর্থাৎ মানবদেহের রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি.পারদ এর নিচে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি.মি. এর নিচে থাকে। আর সেটাই নিম্ন রক্তচাপ। লো প্রেসার হলে না ঘাবড়িয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অথবা লো প্রেশারে ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা
লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা কিভাবে নিতে হয় আমাদের মধ্যে অনেকেই তা জানে না। ফলে হঠাৎ লো প্রেসার হলে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যে কোন রোগের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া চিকিৎসা খুব কার্যকরী।
তাই আপনার লো প্রেসার হলে প্রাথমিক পর্যায়ে লো প্রেসারের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারেন। আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।
পর্যাপ্ত পানি পানঃ শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেওয়ার ফলে শরীর ডিহাইড্রেশন হয়। এর ফলে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ হওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাই ডিহাইড্রেশন ও লো প্রেসার এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার সাথে সাথে তরল জাতীয় বিভিন্ন রকম খাবার খেতে হবে। লো প্রেসার এড়াতে ডাবের পানি খুব কার্যকরী। কারণ ডাবের পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা লো প্রেসার দূর করতে সাহায্য করে।
লবনঃ লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসায় খাবারে একটু হালকা পরিমাণ লবণ যোগ করতে পারেন। কেননা লবণ ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। তাই লো প্রেসার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি খাবারে লবন হালকা বৃদ্ধি করতে পারেন। এতে লো প্রেসার জনিত সমস্যা কমে যাবে।
কফি ও চা পানঃ কফি বা চা আমাদের বাসায় থাকে। তাছাড়া কফি ও চা সহজলভ্য। কফি ও চা খেলে রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়ে। তাই আমাদের মধ্যে যারা লো প্রেসার সমস্যায় ভোগেন তারা কফি ও চা পান করার অভ্যাস করতে পারেন। প্রতিদিন ১ থেকে ২ কাপ কফি ও চা পান করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে কফিও চা পান করা উচিত না।
শারীরিক ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে লো প্রেসার এর সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে শরীরের মাংস পেশি সচল থাকে যা লো পেশার দূর করতে সাহায্য করে। তাই যারা লো প্রেসারে ভুগছেন তারা প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করা অভ্যাস করতে পারেন। তাহলে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ সহজেই কমে যাবে।
বিটরুটের রসঃ বিটরুট নাইটের সমৃদ্ধ, বিটরুট রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং রক্ত প্রবাহ উন্নত করে। তাই বিটরুটের রস পান করলে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যা আনেকটা কমে যায়। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে বিশেষ করে যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিটরুটের রস পান করা মোটে উচিত না। এজন্য ডাক্তারে পরামর্শ নিতে হবে তারপর বিটরুটের রস পান করতে হবে।
অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকাঃ যে সকল ব্যক্তিদের লোপের সেবা নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা ভারী খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে নিলে রক্তচাপ অস্থায়ীভাবে কমতে শুরু করে ফলে লো প্রেসার দেখা দেয়। তাই সারাদিনে অল্প অল্প করে ২ থেকে ৩ বারে খাবার গ্রহন করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমানোঃ লো পেশাব বা নিম্ন রক্তচাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। সারাদিনে অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। মোটকথা শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে।
লো প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসার সাথে সাথে পরামর্শ স্বরূপ হিসেবে বলতে চাই। কারো লো প্রেসার হলে শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে লো প্রেসার সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা প্রতিটি ওষুধের ই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
তাই ঘরোয়া ভাবে যতটুকু করা সম্ভব লো প্রেসার সমস্যা দূর করতে তাই করতে হবে। বিশেষ করে অনেকক্ষণ শুয়ে অথবা বসে থাকার পর ওঠার সময় আস্তে আস্তে উঠতে হবে। লো প্রেসার এর লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
লো প্রেসার হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে পূর্ব এ থেকে ধারণা না থাকলে হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে বড় সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। যেকোনো রোগ সম্পর্কে এবং সেই রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি দ্রুত সনাত্মক করা সম্ভব হয় এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া যায়। শরীরে তাপমাত্রার তারতম্য হওয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত থাকা এবং নার্ভের বিভিন্ন রকম সমস্যার কারণে লো প্রেসার হয়।
এছাড়াও বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও লো প্রেসার হয়ে থাকে। আমাদের প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি নিম্ন রক্তচাপ বা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ সমূহ। তাহলে চলুন জেনে নিন প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণগুলো।
- মাথা ঘোরা অনুভব হওয়া বা মাথা ঘুরে
- মাথা ঘুরে অজ্ঞান হওয়া যাওয়া
- চোখে অন্ধকার বা ঝাপসা দেখা
- মাঝে মাঝে জ্বর হয় (১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট)
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও কাশি হয়
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- শারীরিক ও মানসিক অবসাদ
- প্রচুর পানির তৃষ্ণা অনুভব হওয়া
- ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
- হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- স্বাভাবিকের চেয়ে হৃদ স্পন্দন বা কম্পন কমে যাওয়া
প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে
প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে এই সাধারণ প্রশ্নটি সকলে মাথায় ঘুরাঘুরি করে। হঠাৎ লো প্রেসার দেখা দিলে দুশ্চিন্তা না করে নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে ঘরোয়া ভাবে কিছু খাবার খেলে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে জেনে নিন হঠাৎ তো প্রেসার হলে কি খেতে হবে এই সম্পর্কে। লো প্রেসার হলে নিম্নলিখিত খাবার গুলো খাওয়ার মাধ্যমে লো প্রেসার সমস্যা সহজে দূর করা সম্ভব।
- খাবার স্যালাইন লো প্রেসার দূর করতে খুব কার্যকরী। হঠাৎ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব খাবার স্যালাইন খেতে হবে। বাসায় স্যালাইন না থাকলে দুই চিমটি লবণ ও এক চা চামচ চিনি এক গ্লাস পানিতে মিশে শরবত করে খেতে হবে। শরীরে পানি শূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণে লো প্রেসার হয়ে থাকে। টাইল খাবার স্যালাইন লো প্রেসার কমাতে সবচেয়ে উপযোগী ও দ্রুত ফলদায়ক।
- গ্লুকোজ নিম্ন রক্তচাপ বা লো পেশার দূর করতে খুব উপকারী। লোকেশন দেখা দিলে এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ গ্লুকোজ মিশিয়ে খেলে খুব তৎক্ষণাৎ ফল পাওয়া যায়। তাই আপনার লো প্রেসার হলে গ্লুকোজ খেতে পারেন।
- ডিম ও দুধ লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ দূর করতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারো লো প্রেশার হলে তাৎক্ষণিকভাবে ১টি বা ২ টি সিদ্ধ ডিম বা এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে খুব দ্রুত লো প্রেসার সমস্যা দূর হয়। তবে মুরগির তুলনায় হাসির ডিম লো প্রেসার দূর করতে বেশ কার্যকরী।
- মধু ও বাদামও লো প্রেসার থেকে মুক্তি দেয়। তাই প্রেসার লো হলে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে তাতে কয়েকটা কাঠ বাদাম ও চিনা বাদাম পেস্ট করে অথবা আস্ত দিয়ে খেতে পারেন। এতে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া পাবেন।
- সতেজ শাকসবজি নিম্ন রক্তচাপ ভাল পেশার রোধে খুব উপকারী। এর কারণ হলো সবুজ শাকসবজি তে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। শাকসবজিতে থাকা ফলিক এসিড ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে।
লো প্রেসার কত থেকে কত
লো প্রেসার কত থেকে কত বা কত মিলিমিটার মার্কারির নিচে হলে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ হয় এটা আমরা অনেকেই জানিনা। সাধারণত মানব দেহের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি হয়ে থাকে। এই রক্তচাপের মাত্রা যখন ৯০/৬০ মিলিমিটার মার্কারির নিচে নেমে যায় তখন তাকে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ ৯০/৬০ মিলিমিটার মার্কারি। তাহলে বুঝতেই পারছেন লো প্রেসার কত থেকে কত মিলিমিটার মার্কারি।
লো প্রেসারের ঔষধের নাম
লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়
মন্তব্য
পাঠক ভাই ও বোনেরা, আমার এই পোষ্টের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।
তবে এই পোস্টটি আপনার পরিচিত ব্যক্তি ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। আরো গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumonworld.com এ প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন পোস্টের মাধ্যমে। পরিশেষে বলতে চাই লো প্রেসারের ঘর চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url