অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি? জেনে নিন

অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি? এ বিষয়ে জানার জন্য আপনি কি গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজছেন।তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছ। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি


তাই অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কিনা এ বিষয়ে জানার জন্য আপনাকে আমার এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কেননা আমার এই আর্টিকেলটিতে আমি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

আরম্ভ

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয়। তাই রমজান মাসে রোজা রাখা সকল মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ। কেউ যদি এটাকে অস্বীকার করে সে কাফির বলে গণ্য হবে। আর এই পবিত্র রমজান মাসে মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কিনা এই সাধন প্রশ্নটি সবার মনে জাগে।

আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি। আরও জানতে পারবেন অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি, পিরিয়ডের কত দিন পর রোজা রাখা যাবে, অনিয়মিত মাসিক হলে কি বাচ্চা হয়, 

অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ ও অনিয়মিত মাসিকে চিকিৎসা এবং অনিয়মিত মাসিকের ঔষধের নাম। এই সমস্ত বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আপনাকে এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। তাহলে চলুন জেনে নিন এই সকল বিস্তারিত তথ্য।

অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি

ইসলামের বিধিবিধান অনুযায়ী অনিয়মিত মাসিক হলে রমজান মাসে রোজা হবে না। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর রোজা ফরজ। যেহেতু রোজা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ তাই আমাদের রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করা উচিত। রমজান মাস হলো নিজেকে সংযত রাখার মাস। এই পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সমস্ত পাপকে মুছে ফেলা সম্ভব। 
রমজান মাসে অনেক মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। মাসিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাকৃতিক ঘটনা যা প্রতিটি মহিলাদের হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু শারীরিক সমস্যা ও খাদ্যবাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে মাসিক অনিমিত হয়ে। আর অনিয়মিত মাসিক যদি রমজান মাসে রোজা থাকা অবস্থায় হয়। তবে প্রত্যেক মহিলাকে রোজা থেকে বিরত থাকতে হবে।

অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি

ইসলামী শরীয়ত মোতাবে মাসিক চলাকালীন সময় নামাজ ও কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা যাবে না। অর্থাৎ এ সময় মহিলাদের নামাজ পড়া ও কুরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকতে হবে। অনিয়মিত মাসিক যখন সম্পূর্ণ ভাবে ভালো হয়ে যাবে। তখন পাক পবিত্র অর্থাৎ ফরজ গোসল করে যথা নিয়মে নামাজ পড়া যাবে। আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে, অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কিনা এই বিষয়ে।

পিরিয়ডের কত দিন পর রোজা রাখা যাবে

নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মত পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে রোজাও রাখা যাবে না পিরিয়ড চলা কালে। রমজান মাসের ফজিলত বলে শেষ করা যাবেনা। মহিলাদের যেহেতু প্রতি মাসে মাসে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হয়। এই পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার উপর কারো হাত থাকে না।পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব মহিলাদের প্রজননের ক্ষমতার হার কে আরো বেশি বাড়িয়ে তোলে। 
অনেক মা-বোনদের রমজানের সময় পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হয়। এ সময় মা বোনদের রোজা থেকে বিরত থাকতে হয়। পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব যখন ভালো হবে অর্থাৎ সেনেটারী প্যাড যখন সম্পূর্ণরূপে সাদা দেখাবে তখন পাকপবিত্র হওয়ার পর অর্থাৎ ফরজ গোসল করার পর রোজা রাখতে পারবে। সহজভাবে বলতে গেলে মহিলাদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব কারো কারো ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। 

সেক্ষেত্রে পঞ্চম দিনে ফরজ গোসল সেরে রোজার নিয়ত করে রোজা রাখতে পারবে। অনেক মা বোনরাই এই ভুলটি করে থাকে, আর সেটা হলো পিরিয়ড ভালো হয়ে গেছে মনে করে ভোরে সেহেরি খেয়ে রোজা ধরে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। এর কারন হলো হলুদ স্রাব যদি আসে তাহলেও আপনাকে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও রোজা থেকে বিরত থাকতে হবে।

অনিয়মিত মাসিক হলে কি বাচ্চা হয়

অনিয়মিত মাসিক হলে কি বাচ্চা হয় এই প্রশ্নটি সকল মহিলাদের মাথায় ঘোরাঘুরি করে। আসলে অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা হয় তবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণ হলো প্রতি মাসে মহিলাদের ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে একটা ম্যাচিউর বা পরিপক্ক ডিম্বাণু বের হয়ে যায়। এর ফলে অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের অনিয়মিত মা্সিক হয় তাদের ওভারিটিতে বা ডিম্বাশয়ে অনেক ছোট ছোট সিস্ট এর সৃষ্টি হয়।
এর জন্য সেখানে কোন ম্যাচিওর ফলিবল থাকে না। অনির্বত মাসিকের সময় মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের তারতম্যের জন্য শরীরে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে থাকে তাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হয়। তাই অনিয়ত মাসিক হলে এবং এ সকল সমস্যাগুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে।

অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ

অনিয়মিত মাসিকের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হল ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পর মাসিক বা ঋতুস্রাব হওয়া। এছাড়াও মাসিক চলাকালীন সময় কারো কারো অতিরিক্ত তলপেটে এবং পা ও হাতের গিরায় ব্যথা করে। এ সময় কারো কারো মেজাজ খিটমিটে হয় এবং মানসিক অশান্তি দেখা দেয়। অনেক মহিলার ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি পায়।

অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা

অনিয়মিত মাসিকের সাথে কম বেশি সকল মেয়েরাই পরিচিত। কিন্তু অনিয়মিত মাসিকের এত সমস্যার পরেও মহিলারা এটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে বিব্রতবোধ করে। এর কারনে মহিলারা মাসিক বা পিরিয়ড সম্পর্কে তেমন সচেতন না। 

মাসিক অনেক যন্ত্রণাদায়ক এর সাথে কোমর ও পেট ব্যথা তো আছে। মাসিক বা ঋতুস্রাব চক্রের সময়কাল সাধারণত ২৮ দিন ধরা হয়। আর এটা যদি এক সপ্তাহের বেশি দীর্ঘায়ু হয় তবে তাকে অনিয়মিত মাসিক বলে ধরা হয়। 

অনিয়মিত মাসিকের কারণে অনেক মহিলাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ওজন কমতে থাকে বা কারো কারো ওজন বাড়তে থাকে, থাইরয়েডের সমস্যা হয়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যকৃতের রোগ দেখা দেয়, যক্ষা এবং গর্ভপাতও হয়ে থাকে। 

তাই অনিয়মিত মাসিক হলে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। এর জন্য বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অথবা ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে অনিয়ন্ত্রিত মাসিকে চিকিৎসা করা যেতে পারে। ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে যদি ভালো না হয়। তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

  • আদাঃ আদা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। একই সাথে আদা মাসিকের সময় পেটের ব্যথা কমাতেও খুব কার্যকরী। এক চা চামচের অর্ধেক পরিমান আদা কুচি এক কাপ পরিমাণ পানিতে হালকা আছে তাপ দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ফুটানো পানিটুকু হালকা কুসুম হলে সেখানে সামান্য পরিমাণ চিনি ও মধু মেশাতে হবে। উক্ত মিশ্রণটি দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা কম হয়।
  • কাঁচা পেঁপেঃ খাচা পেঁপে খেলে অনিমিত মাসিক নিয়মিত হয়। আই অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে চাইলে প্রতিদিন গাজা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • করলার জুসঃ করলা জুস অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী। মাসিক চলাকালিন সময় সকালে খালি পেটে করলার জুস খেলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • হলুদঃ অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতে হলুদের কনো জুরি নাই। এক গ্লাস হালকা কুসুম দুধের সাথে এক চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশে খেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়।
  • ব্যায়ামঃ যে সকল মহিল প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করেন। তাদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা থাকে না। কিছু ঘরোয়া যোগব্যায়াম আছে যেগুলো করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • টক জাতীয় ফলঃ টক জাতীয় ফল খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়। টক জাতীয় ফলগুলো হল মাল্টা, তেতু্‌ল, জলপাই ও কমলা।
  • আপেল সাইডার ভিনেগারঃ ২ চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খাবার খাওয়ার আগে খেলে মাসিক নিয়মিত হয়।

অনিয়মিত মাসিকের ঔষধের নাম

যে কোন রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ সেবন করার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন প্রকার ওষধ সেবন করা উচিত না। অনিয়মিত মাসিকের জন্য আপনি চাইলে হোমিও ও এলোপ্যাথিক দুই ধরনের ওষুধ সেবন করতে পারেন। নিম্নে অনিয়মিত মাসিকের কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম দেয়া হলো।
  • এলোপ্যাথিক ঔষধঃ Bryonia Alb, Pulsetilla, Fer phos, Fer Met, platina, sepia, kreosote, Chamomilla, Cimicifuga, China Off, Milifolium, Hamamalis, Ipecac। একটি অথবা দুইটি সেবন করতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
  • হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ Hertone Uterotonic, Schwabe Agnus Pentarkan Tablet, Dysmenorrhea, Amenorrhea Drops, Wheezal Mensorin Drops, Wheezal Famiplan Tablet, Biocombination 15 Tablet, Bakson Pelvi Aid tablet, Ashoka Elixir Drops, Medisynth Utronic Syrup,

মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠ হোক আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি না পড়তে ভালো লেগেছে। সত্যি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লাগে তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url