উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে - ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি

আসসালামু আলাইকুম। উলঙ্গ হলে কি ওযু ভাঙ্গে এবং ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি এই সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান। যদি এই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান তবে আমার এই পোস্টোটি শুধুমাত্র আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমার এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন উলঙ্গ হলে কি ওযু ভাঙ্গে এবং অজু ফরজ ও সুন্নত কয়টি।
উলঙ্গ হলে কি ওযু ভাঙ্গে
সুপ্রিয় মুসল্লি ভাই ও বোনেরা। আপনারা যদি আমার এই পোস্টটি প্রথম থেকে সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন উলঙ্গ হয়ে কি অজু ভাঙ্গে এবং অজুহ সুন্নত কয়টি ও কি কি। আমার এ পোস্টটিতে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি ভুল হলে কি ওযু ভাঙ্গে এবং অজুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি ও কি কি।

উপস্থাপনা

ওযু আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিছন্নতা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় পাক পবিত্রতা অর্জনের জন্য শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত মুখমণ্ডল, দুই হাত কুনুইসহ ও দুই পা টাকনুসহ ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ করার নামই অজু। অজু ছাড়া নামাজ কবুল হয় না কোরআন স্পর্শ ও কাবাঘরের তাওয়াফ করা যায় না।

ওযুর ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে চিনতে পারবো"। তখন সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আপনি কিভাবে আপনার উম্মাতদের চিনবেন? উত্তরে নবী কারীম সাল্লাহু সাল্লাম বললেন, অজুর হলে আমার উম্মতদের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় চকচক করবে। 

তাতেই আমি আমার উম্মাদের চিনতে পারবো ( বুখারী ও মুসলিম)। পাঠক, আমার এই পোস্টটি মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে - ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি। আরও জানতে পারবেন অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ, গালি দিলে কি ওযু ভেঙে যায় ও ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণ সম্পর্কে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে

মুসল্লী ভাই ও বোনদের মাথায় সবসময় একটা সাধারণ প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে। আর সেই সাধারণ প্রশ্নটি হল উলঙ্গ হলে কি ওযু ভাঙ্গে। সে সকল ভাই ও বোনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আসলে ওযু ভঙ্গের সাথে উলঙ্গ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তাই শরীর কাপড়ে ঢাকা থাকুক বা উলঙ্গ থাকুক এই দুই অবস্থায় ওযু করলে অজু ভাঙ্গে না। 

ওযু ভঙ্গের যতগুলো কারণ রয়েছে এগুলোর মধ্যে উলঙ্গ হলে ওযু ভাঙবে এমন কোথাও উল্লেখ করা নাই। কাপড়ের ময়লা মাটি লাগলে বা বিভিন্ন কারণে অনেক সময় উলঙ্গ হয়ে কাপড় পরিবর্তন করতে হয়। এই উলঙ্গ অবস্থায় ওই ব্যক্তির যদি অজু থাকে তবে তার ওযু ভাঙ্গে না। তাহলে বুঝতে পারছেন যে শরীর থেকে কাপড় সরিয়ে ফেললে বা উলঙ্গ হলে ওযু ভাঙ্গে না।

ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি

ওযুর ফরজঃ ওযুর ফরজ চারটি। এই চারটি ফরজের মধ্যে একটি বাদ পড়লে অজু হবে না। তাই ওযু করার সময় এই চারটি ফরজ কাজ আমাদের অবশ্যই সঠিকভাবে পালন করতে হবে তাহলে আমাদের অজু সম্পন্ন হবে। ওযুর চারটি ফরজগুলো হলোঃ

  • সমস্ত মুখমণ্ডল ভালোভাবে একবার ধৌত করা
  • উভয় হাত কোন সহ একবার ধৌত করা
  • মাথা চার ভাগের একভাগ একবার মাসাহ করা
  • এবং উভয় পা টাকনুসহ একবার ধৌত করা

ওযুর সুন্নতঃ অজু হল পবিত্রতা অর্জনের সবথেকে ভাল উপায়। ওযুর মাধ্যমে পাক পবিত্র থাকা যায় এবং আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ওযু করা ব্যতীত নামাজ হয় না। এছাড়া মনকে প্রফুল্ল এবং সুন্দর রাখতে ওযুর কোন বিকল্প নাই। ওযু সুন্নত ১৮টি। ওযুর শুরুতে এই সুন্নত গুলো পালন করলে সওয়াব অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। নিম্নে ওযুর সুন্নতগুলো আলোচনা করা হলোঃ

  • ওযুর শুরুতে নিয়ত করা।
  • বিসমিল্লাহ পড়ে ওযু শুরু ক।
  • উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
  • মিসওয়াক করা অথবা আঙ্গুল দিয়ে দাঁত ঘষে নেওয়া।
  • তিনবার কুলি করা।
  • তিনবার নাকে পানি দেওয়া।
  • রোজাদার না হলে ভালোভাবে গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি দেওয়া।
  • প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধৌত করা।
  • চেহারা ধৌত করার সময় দাড়ি খিলাল করা।
  • হাত ও পা ধোয়ার সময় ভালোভাবে আঙ্গুল খিলাল করা।
  • পুরো মাথা একবার মাসেহ করা।
  • মাথা মাসাহ করার সাথে কানও মাসাহ করা।
  • প্রথম অঙ্গ শুকানোর আগে পরের অঙ্গ ধোয়া।
  • ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো ঘোষে ধোয়া।
  • ধারাবাহিকভাবে ওযু করা।
  • বাম হাত দিয়ে প্রথমের ডান হাত ধোয়া এবং বাম হাত দ্বারা প্রথমের ডান পা ধোয়া।
  • ওজুর পর কালেমা শাহাদাত পাড়া
  • তারপর দোয়া পড়া। দোয়াটি হলোঃ আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত্তাউয়াবিনা ওয়াজআলনি মিনাল মুতাতাহহিরিন।

অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ

সুপ্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন? কি কারনে অজু ভেঙ্গে যায়। পাক-পবিত্র হওয়ার জন্য অজু করতে হয়। তবে আমরা অনেকেই জানিনা ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে। আপনি যদি ওযু ভঙ্গের কারণগুলো সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনার ওযু ভঙ্গ হয়ে গেলেও আপনি বুঝতে পারবেন না। এর ফলে আপনার নামাজ হবে না। তাই আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন অজু ভঙ্গের কারণগুলো কি কি সে সম্পর্কে। নিম্নে ওযু ভঙ্গের কারণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

ওযু ভঙ্গের কারণসমূহঃ
  • প্রসাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে ওযু ভেঙে যায়
  • শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত বা পুঁজ বা তরল আঠালো পদার্থ গড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙে যায়
  • মুখ ভর্তি বমি হলে। থুতু ও কাশি ব্যতীত ভূমির সঙ্গে রক্ত পুজ বা খাদ্য বের হলে ওযুভেঙে যায়
  • ভুতুর সঙ্গে বেশি পরিমাণ রক্ত বের হলে ওযু ভেঙ্গে যায়
  • হেলান দিয়ে ঘুমালে ওযু ভেঙে যায়
  • নেশাগ্রস্ত হলে ওযু ভেঙে যায়
  • নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসাহাসি করলে ওযু ভেঙ্গে যায়

গালি দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

ওযু করার পর ওযু অবস্থায় থাকার সময় কেউ যদি গালি দিয়ে থাকে বা মুখ দিয়ে খারাপ কোন শব্দ বের করে তাহলে কি ওযু ভেঙে যায়। এমন সাধন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। যারা মনে করেন ওযু থাকা অবস্থায় গালি দিলে ওযু ভেঙে যায় তাদের ধারণাটি একেবারে ভুল। গালি দেওয়ার সাথে ওযু ভঙ্গের কোন সম্পর্ক একেবারে নেই। এছাড়াও গালি দিলে কি ওযু ভেঙে যায় এ সম্পর্কে কোন হাদিসেও উল্লেখ নাই।

কেউ যদি ওযু থাকা অবস্থায় গালি দেয় বা অশ্লীল কথাবার্তা বলে তবে তার ওযু ভাঙবে না বরং তাকওয়া ভঙ্গ হবে এবং যে ব্যক্তি গালাগালি ও অশ্লীল কথাবার্তা বলবে তার গুনাহ হবে। আশা করি আমার এই আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন যে, ওযু থাকা অবস্থায় গালি দিলে ওযু ভেঙে যায় না।

ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণ

পাক পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু করা বাধ্যতামূলক। তাই অজু করার কিছু সুন্নত রয়েছে। অজু করার সময় এই সুন্নত গুলোর প্রতি ভালোভাবে নজর না দিলে ওযু সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণভাবে হয় না। এর ফলে শরীয়ত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অপছন্দনীয় বলে বিবেচিত হয়। যা মাকরুহ হিসেবে পরিচিত।ওযু মাকরুহ হওয়ার বা অপছন্দনীয় কিছু কারণ নিম্ন আলোচনা করা হলোঃ

  • ওযু করার সময় ওযুর ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা।
  • অপবিত্র স্থানে বসে ওযু করা
  • ওযুর সময় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি খরচ করা।
  • ওযযু করার সময় অপ্রয়োজনীয় গল্প বা কথাবার্তা বলা।
  • তিনবারের বেশি কোন অঙ্গ ধোয়া বা অজুর অঙ্গ গুলো একবার ধুয়ে মুছে ফেলা।
  • মুখ অথবা অন্য অঙ্গ গুলোতে জোরে পানি মারা
  • ওযুর সময় ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা
  • ওযুর সময় প্রথমে বাম হাত বাম পা ধোয়া
  • একের অধিক বার মাথা মাসেহ করা

মন্তব্য

আপনারা ইতিমধ্যে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে এবং ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি ও কি কি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনি যদি সত্যিই উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমার এই পোষ্টেটি সকলের মাঝে শেয়ার করুন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url