আমাশয়ে বেলের উপকারিতা, পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আমাশয়ে বেলের উপকারিতা, পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা জানতে চান? তাহলে আমার এই প্রতিবেদনটি শুধু মাত্র আপনার জন্য উপকারী ও প্রয়োজনীয় হতে চলেছে। এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন আমাশয়ে বেলের উপকারিতা ও পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা। তাহলে চলুন জেনে নিন।
আমাশয়ে বেলের উপকারিতা-পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা
আপনি যদি ধৈর্য ধরে ও মনোযোগ সহকারে এই প্রতিবেদনটি পড়েন তাহলে জানতে পারবেন আমাশয়ে বেলর অপকারিতা ও পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব আলোচনা। তাই আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই প্রতিবেদনটির সাথেই থাকুন।

আরম্ভ

আমাশয়ে বেলের উপকারিতা - পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা জানা আমাদের সকলের দরকার। আমার এই প্রতিবেদনটিতে আমি সহজ ভাষায় উক্ত আলোচলার বিষয়টি সাজানোর চেষ্টা করেছি। আপনি এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে আরও জানতে পারবেন বেলের পুষ্টিগুণ, পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা, 

বেল খাওয়ার সঠিক সময় ও বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম এবং বেল পাতার উপকারিতা। এ সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আপনাকে এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

বেল

বেল একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। আমাদের সকলের কাছে এই সুস্বাদু ফলটি খুব পরিচিত। বেলের বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos Correa। এই ফলটি কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থাতেই বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। 

বেল পুষ্টিগুনে ভরপুর হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ছোট বড় সকলেই বেল খেতে খুব পছন্দ করে। এই ফলটি দামে তুলনামূলক অন্যান্য ফলের চেয়ে সস্তা হওয়ার কারণে এর চাহিদাও ব্যাপক।

বেলের পুষ্টিগুণ

বেড়ে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যার কারণে এই ফলটি এত সুপরিচিত ও সহজলভ্য। অন্যান্য সহজলভ্য ফলগুলোর থেকে বেলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বেল কাঁচা হোক অথবা পাকা হোক দুই অবস্থাতেই এই ফলটি খাওয়া যায়। 

বেলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, প্রোটিন, থায়ামিন, শর্করা, ক্যারোটিন, নিয়াসিন, ক্যালরি, খাদ্য আঁশ, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে রয়েছে-

  • পানির পরিমাণ ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম
  • প্রোটিন ১.৮ থেকে ২.৬২ গ্রাম
  • স্নেহ পদার্থ ০.২ থেকে ০.৩৯ গ্রাম
  • শর্করা ২৮.১১ থেকে ৩১.৮ গ্রাম
  • ক্যারোটিন ৫৫ মিলি গ্রাম
  • থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম
  • রিবোফ্লেবীন ১.১৯ মিলিগ্রাম
  • এসকরবিক এসিড ৮ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম
  • নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ও
  • টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।

আমাশয়ে বেলের উপকারিতা

আমাশয় নিরাময়ে বেলের উপকারিতা অপরিসীম। আমাশয় রোগ থেকে মুক্তির জন্য কাঁচা বেল পুড়িয়ে খাওয়া হয়। বেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই বেল খেলে কোষ্টিকাঠিন্য ও আমাশয়ের মত রোগ দ্রুত ভালো হয়। এছাড়াও কাঁচা অথবা পাকা বেল খেলে পেটের ছোটখাটো বিভিন্ন রকম সমস্যা গুলো সহজেই দূর হয়। এই ফলটি নরম ও সহজপাচ্য তাই খাবার হজম বা পরিপাকে সাহায্য করে।

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। আর এই অপকারিতা হলো কোন জিনিসের অতিরিক্ত ব্যবহার। প্রয়োজনে তুলনায় অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। 

এতে উপকারিতার থেকে অপকারিতায়ই বেশি হয়। তাই বেল খাওয়ার ফলে যেমন মানুষের বিভিন্ন উপকার সাধিত হয় ঠিক তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে কিছু অপকারিতাও দেখা দেয়। বেল প্রধানত একটি মিষ্টি জাতীয় ফল। 

তাই ডাইবেটিস রোগীরা যদি বেশি পরিমাণে বেল খায়। তবে তাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে পেটে দুর্গন্ধ বায়ু সৃষ্টি হয়।

পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। অনেকে আবার এ ফলটি খেতে তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানত তাহলে এই ফলটি খাওয়া কখনো অপছন্দ করতো না। 

তাই আপনার জানার জন্য আমাদের প্রতিবেদনটি মাধ্যমে আমি আলোচনা করতে চলেছি পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। নিম্নে পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পাকা বেল হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই ফলটিতে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের খাবার সহজে পরিপাক করে। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমের সময় পাকা বেল শরবত করে খাওয়া হয়। বেলে শরবত সইকে ঠান্ডা রাখে এবং গ্রীষ্মকালে বদহজম গ্যাস পেট ফাঁপা এই সমস্যাগুলো দূর করে। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারের সময় বেলের শরবতের জুড়ি নেই।

শরীরকে সতেজ রাখেঃ শরীরকে সতেজ রাখতে এবং শরীরের শক্তি জোগাতে বিয়ের একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বেল শরীরের পেশীগুলোকে মজবুত এবং মন ফুরফুরে রাখতে সাহায্য করে। প্রচন্ড গরমে যখন আমাদের শরীর একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন এক গ্লাস বেলের শরবত মিনিটের মধ্যে আমাদের শরীরকে চাঙ্গা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ বেল খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। যেহেতু বেলে ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সাথে অনেকে পরিচিত। এই রোগটি এতটাই ব্যাথা দায়ক, যারা এই রোগে ভুগেন একমাত্র তারাই এই কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন। যারা এ রোগটিতে ভুগছেন তাদের জন্য বেলের শরবত একটি মহা ঔষধ। বেল যেহেতু খাবার হজমে সাহায্য করে তাই কষ্টিকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগ দ্রুত সারায় বেল।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ বেলে ভিটামিন এ রয়েছে। আমরা সবাই জানি ভিটামিন এ চোখের জন্য খুব উপকারী। যারা নিয়মিত বেল খায় তাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও চোখের বিভিন্ন রকম অসুখ দূর করতে বেল সাহায্য করে।

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণেঃ বেলে রয়েছে মেথানল নামক এক ধরনের উপাদান যা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। আই ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে ভালো ফল পেতে হলে বেল এমনি খেতে হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ বেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

গ্যাস্ট্রিক ও আলসার দূর করেঃ বেল আঁশ জাতীয় খাবার এবং এটা আমাদের পরিপাকে সাহায্য করে।এর ফলে পেটের গ্যাস্ট্রিক ও আলসার দূর হয়।

বেল খাওয়ার সঠিক সময়

আপনি কি বেল খাওয়া সঠিক সময় কোনটি সেটা জানতে চান। এই সুস্বাদু আঠালো ও মিষ্টি জাতীয় ফলটি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় খেতে হয়। তাই দিনের এমন একটা সময় বেছে নিতে হবে যে সময় খেলে আপনার হজমে কোন সমস্যা হবে না। 

বেল বা বেলের শরবত খেতে হলে আপনাকে দুপুর অথবা রাতের মাঝামাঝি কোন একটা সময় বেছে নিতে হবে ও খেতে হবে। অথবা কাজের ফাঁকে যখন আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন শরীরের এনার্জি বাড়ানোর জন্য এই ফল খেতে পারেন।

বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম জানতে চাইছেন। আমারে প্রতিবেদনটিতে আমি বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনি বিলের শরবত হানিম জানতে পারবেন। 

পাকা বেল সাধারণত শরবত বানিয়ে খাওয়া হয়। বেলের শরবত যেমন পুষ্টিকর তেমনি সুস্বাদু ও লোভনীয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড গরম পড়ে তখন বেলের শরবতে চাহিদা আরও দ্বিগুণ বাড়ে। নিম্নে বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম দেয়া হলো- 

বেলের শরবত খাওয়ার জন্য প্রথমে একটি বেলকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পরিষ্কার বেলটি ফাটিয়ে ভিতর থেকে আশ গুলোকে বের করে একটি পাত্রে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আশের মধ্যে থাকা বিচিগুলো অবশ্যই আলাদা করে ফেলে দিতে হবে।

এরপর পাত্রে রাখা বেলের হাঁস গুলোর মধ্যে দুই থেকে তিন চা চামচ চিনি এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নেড়ে শরবত বানিয়ে ফেলুন। পরিশেষে পরিবেশন করুন এবং খান। আশা করি পাঠক আপনারা বেলে সর্বত্র নিয়ম বুঝতে পেরেছেন।

বেল পাতার উপকারিতা

বেলের মতো বেলের পাতারও বহু উপকারিতা গুনাগুন রয়েছে। বেলের কয়েকটা পাত পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে এরপর পাতা থেকে পানি ঝরে গেলে। সে পরিষ্কার পাতাগুলো ঘি দিয়ে ভেজে সামান্য পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। এছাড়াও বেল পাতা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে সকালে বাসে পেতে বেলের পাতা খেলে হার্ট অ্যাটাক সহ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।

শেষ কথা

আশা করি আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার এই প্রতিবেদনটি সসম্পূর্ণ পড়েছেন। আর পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন আমাশয় বেলের উপকারিতা ও পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। আমার এই প্রতিবেদনটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে। তবে এই প্রতিবেদনটি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url