সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে ও সেহেরির দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আপনি কি জানতে চাইছেন? তাহলে আমার এই পোস্টটি আপনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় হতে চলেছে। আমারএই পোস্টটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে ও সেহেরির দোয়া।
প্রিয় মুসল্লী, অনেক সময় দেখা যায় সেহরি খাওয়ার পর রোজা থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়। যেহেতু স্বপ্নদোষ অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকে তাই এতে আমাদের করার কিছু থাকে না। অনেক মাওলানা ও হুজুরগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। তাই আপনি যদি সঠিক হাদিস জানতে চান যে সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে ও সেহরির দোয়া তাহলে আমারে পোস্টে সম্পূর্ণ পড়ুন।
ভূমিকা
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে এবং সেহেরির দোয়া সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। সেহেরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হওয়াটা একটা বিব্রতিকর অবস্থা। এই বিব্রতিকর অবস্থার সাথে কম বেশি সকল পুরুষ পরিচিত। আমার এ পোষ্টটির মাধ্যমে আমি আলোচনা করেছি সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে এবং সেহেরির দোয়া।
আমারে পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরোও জানতে পারবেন রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম, স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ, স্বপ্নদোষ হলে কি কি করা যাবে না ও স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির ইসলামিক দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে
একজন পুরুষের স্বপ্নদোষ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। স্বপ্নদোষ সম্পূর্ণভাবে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া বা মাধ্যম যা প্রাকৃতিক ভাবে হয়ে থাকে। স্বপ্নদোষ হওয়া তে কারো কোন হাত থাকে না এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছেলেদের হয়ে থাকে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে রোজা হবে। রোজা ভাঙবে না। যেহেতু স্বপ্নদোষ একটি অনিচ্ছাকৃত কাজ তাই এটা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তাই রমজান মাসে কেউ যদি ভরে সেহেরী খায় এবং খাওয়ার পর ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষ হয় তাহলে রোজা মোটেও ভাঙবে না। তবে আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত যে স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়। তাই সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে ফজরের নামাজের আগে গোসল করে নিয়া উত্তম। কেননা রোজা থাকা অবস্থায় বেশিক্ষন অপবিত্রতা থাকা ঠিক না।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি ঔষধ খাব
এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," যদি কোন ব্যক্তির সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির রোজা নষ্ট হবে না।" (তিরমিজি, হাদিস নংঃ ৭৬১)। সুতরাং উপারক্ত আলোচনার মাধ্যম বুঝতে পেরেছেন সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে রোজা হবে। রোজা নষ্ট হবে না।
সেহরির দোয়া
রোজার জন্য সেহেরী করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে আমাদের সেহেরী খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এর সাথে সাথে রোজার নিয়ত করাও জরুরী। এই সেহেরির দোয়া বা সেহরির নিয়ত জানার জন্য মুসলমানদের আগ্রহ প্রকাশ পায়।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, " রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।" আমরা যখন রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেহেরি খায় সেটাও রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত।
সহজ ভাষায় বা সহজ কথায় বলতে গেলে মনের ইচ্ছা প্রকাশ করাটাই হচ্ছে নিয়ত। শুধুমাত্র মুখে উচ্চারণ করলেই যে নিয়ত হবে এমন কোন বিষয় না। সেহরির দোয়া বা নিয়ত অনেকে আরবিতে ও পড়ে থাকে।আবার কেউ কেউ বাংলাতেও নিয়ত করে। নিম্নে সেহরির দোয়া বা নিয়ত অর্থ সহ বাংলায় উচ্চারণ দেওয়া হলোঃ
সেহরির দোয়া বা নিয়তঃ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন্ শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস্ সামিউল আলিম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র মাহে রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ বা (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম
রোজা থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি স্বপ্নদোষ হয় তবে তার রোজা ভাঙ্গে না। বরং সেই রোজাদার ব্যক্তির জন্য গোসল ফরজ হয়ে যায়। রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে যে গোসল করতে হয় তাকে আমরা ফরজ গোসল বলে থাকি। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ফরজ গোসল সম্পর্কে অবগত না। ফরজ গোসলের ফরজ তিনটি। রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম নিম্নে লেখা হলো-
- গড়গড়া করে কুলি করা
- নাকের ভেতরে পানি পৌঁছানো
- সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া
রোজ গোসল করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে গোসল আরম্ভ করতে হবে। রোজা থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে যেহেতু গোসল ফরজ হয়। তাই আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হবে ফরজ গোসল করার সময় অবশ্যই গড় গড়া সহ কুলি করা।
যেহেতু রোজা অবস্থায় মুখের ভিতর পানি নিয়ে গড়গড়া করলে মুখের ভিতর পানি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই রোজা ভেঙে যেতে পারে। তাই গড়গড়া করার সময় সতর্কতার সাথে গড় গড়া করতে হবে যেন মুখের ভিতর পানি না যায়।
এরপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর বাম হাতে পানি নিয়ে নাপাক স্থান যেখানে বীর্য লেগে আছে সে স্থান ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর অজু করে গোসল সম্পন্ন করতে হবে।
স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ
স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ এমন কথার কোন ভিত্তি নাই। কারণ স্বপ্নদোষের সাথে রোজা ভঙ্গের কোন সম্পর্ক একেবারে নাই। রোজা থাকা অবস্থায় রাতে অথবা দুপুরে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষ হয় তবে রোজা ভাঙ্গে না। সকল পুরুষকে স্বপ্নদোষের সম্মুখীন হতে হয়। তাই স্বপ্নদোষ রোজা ভঙ্গের কারণ না। তবে রোজা থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে যেহেতু গোসল ফরজ তাই যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ ইসলামে সপ্তাহে কতবার সহবাস করা উচিত
হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ না। যেমনঃ বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ হওয়া। স্বপ্নদোষ যেহেতু সম্পূর্ণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাই স্বপ্নদোষ রোজা ভঙ্গের কারণ বলে বিবেচিত হয় না। আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে স্বপ্নদোষ রোজা ভঙ্গের কারণ না।
স্বপ্নদোষ হলে কি কি করা যাবে না
স্বপ্নদোষ হলে কি কি করা যাবে না এমন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। তাই আপনাদের জন্য আমার এই প্রতিবেদনটি। আমাদের প্রতিবেদনে আমি আপনাদের জন্য আলোচনা করেছি স্বপ্নদোষ হলে কি কি কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে। স্বপ্নদোষ হলে যেহেতু শরীর অপবিত্র হয় তাই এই অপবিত্রতা থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।
স্বপ্নদোষ হলে যত দ্রুত সম্ভব গোসলের মাধ্যমে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হতে হয়। তাই স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসল না করে এমন কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা যাবে না বা করা নিষিদ্ধ। স্বপ্নদোষ হলে কি কি করা যাবে না এমন কিছু কাজ উল্লেখ করা হলো।
- নামাজ আদায়ঃ স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসল না করে নামাজ আদায় করা যাবে না। কারণ শরীর অপবিত্র থাকলে নামাজ কবুল হয় না। মহান আল্লাহতালা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন বান্দাদের ভালোবাসেন।
- কোরআন স্পর্শ করাঃ স্বপ্নদোষ হলে কোরআন স্পর্শ করা যাবে না। কোরআন হলো পবিত্র আসমানি কিতাব। তাই স্বপ্নদোষ হলে পবিত্রতা অর্জন না করে কোরআন স্পর্শ করলে অনেক পাপ হয়।
- কোরআন তিলাওয়াত করাঃ স্বপ্নদোস হলে যেসকল কাজ গুলো করা যাবে না সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কোরআন তিলাওয়াত করা।
- মসজিদে অবস্থান করাঃ অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান বা আসা যাবে না। মসজিদ হলো পবিত্র ও আল্লাহ ঘর। তাই স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসল না করে মসজিদে আবস্থান করা উচিৎ না। অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করলে অনেক গুনাহ হয়।
- কাবা ঘর তাওয়াফ করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবায় তাওয়াফ করা নামাজ আদায় করার সমান "। তাই স্বপ্নদোষ হলে কাবা ঘর তাওয়াফ করা যাবে না।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির ইসলামিক দোয়া
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্ত হওয়ার শরীয়ত ও ইসলামিক দোয়া সম্পর্কে জেনে নিন। ঘুমানোর আগে ওযূ করে পাক পবিত্র হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ওজু করলে শরীর পবিত্র হয় যার ফলে শয়তান দূরে থাকে এবং স্বপ্নদষ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই হাতের তালু একত্রে করে বিসমিল্লাহ বলে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পাঠ করে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে।
এবং এর সাথে আয়তাল কুরসি পাঠ করে ঘুমাতে যেতে হবে। এছাড়াও যাদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হয় সে সকল ব্যক্তিগণ নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে ঘুমাতে গেলে আল্লাহর রহমতে স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাবে। নিম্নে দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ দেয়া হলো - উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আউযুবিকা মিনাল এহ্তেলামি ওয়া মিন্ সুইল এহ্তিলামি ওয়াল মানামি ওয়া আন্ ইয়ালআবা বিশ্শাইত্বানু ফিল ইয়াক্বযাতি ওয়াল মানামি ।
মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আমার এই পোস্টটি মাধ্যমে আপনি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে ও সেহরির দোয়া। আমার এ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আশা করি আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদিও উপকৃত হয়ে থাকেন যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আমার এই পোস্টটি সকলের সাথে শেয়ার করে পাশে থাকুন। এবং প্রতিনিয়ত আমার ওয়েবসাইটটি পরিদর্শন করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url