কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হয় জানুন
সম্মানীত পাঠক, কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে এই বিষয়ে আপনি কি জানতে চান? যদি এ বিষয়ে জানতে চান তবে আমার এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারী হতে চলেছে। পবিত্র মাহে রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই ও বোনেরা যাকাত পালন করে থাকে। আমারি আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিন কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ যাকাত। যাকাত আদায় করা ফরজ। তাই কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে এটা জেনে রাখা আমাদের সকলের উচিত। সঠিকভাবে ও সঠিক নিয়মে যাকাত আদায় করলে মাল পবিত্র হয় এবং সম্পদে আল্লাহ তায়ালার বরকত দান করেন। তাহলে চরম সময় নষ্ট না করে জেনে নিন কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।
আরম্ভ
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে যাকাত পঞ্চম। ধনীরা যাকাত দিলে তাদের জান মাল পবিত্র হয় এবং তাদের যানমালে আল্লাহর বরকত দেন। যাকাতের মাধ্যমে জানমাল নিরাপদ থাকে। ধনী ও বৃত্তশালীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার আছে কাজে গরিবের নির্ধারিত অংশ দিয়ে দিলে অবশিষ্ট সম্পদ ধনীদের জন্য পবিত্র হয়ে যায় এ দিক বিবেচনায় যাকাত অর্থ পবিত্রতা।
আমার এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হয়। আরোও জানতে পারবেন যাকাত কি, কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়, সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়, কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ, ১ লাখ টাকায় যাকাত কত ও যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কাদের দেয়া যাবে। সকল বিষয়গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
যাকাত কি?
যাকাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ইসলামিক শরীয়তের পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসার (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে। যাকাত ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি। ধ্বনি দিয়ে নিশাব পরিমাণ সম্পত্তি এক বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির প্রায় ২.৫% বিতরন করতে হয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ এবং টাকা শুধুমাত্র নির্ধারিত ও শর্তসাপেক্ষে সারিদের জন্য ফরজ। তো আল কুরআনের যাকাত শব্দের উল্লেখ রয়েছে প্রায়। এছাড়াও কুরআন মাজিদের বহু জায়গায় সালাত আদায়ের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ অর্থঃ" আর তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর।" (সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত ২০)
যাকাত হলো দরিদ্রের আল্লাহর প্রদত্ত অধিকার। ধনীদের দয়া বা অনুগ্রহ নয়। বরং এটি আদায় করা ধনীদের উপর ফরজ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ অর্থঃ " তাদের (ধনীদের) ধন সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।"( সূরা আয- যারিয়াত আয়াত ১৯)
কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হয়
কথা বুঝে রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কত ভরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হয় এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।তাই কত ভোরি রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে এটা জেনে যাকাত সঠিকভাবে আদায় করুন। নিসাব আরবি শব্দ ও এর অর্থ হচ্ছে নির্ধারিত পরিমাণ।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নির্ধারিত পরিমান কে নিস্তাম বলে। সারাবছর প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পর বছর শেষে যার হাতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ গুচ্ছিত থাকে তাকে বলা হয় নিসাব বা নিসাবের মালিক। আর নিসাবের উপরে যাকাত ফরজ। তাই নিসাবের পরিমাণ হলো কমপক্ষে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা ওই মূল্যের অর্থ বা সম্পদ।
উক্ত সম্পদ কোনো ব্যক্তির নিকট পূর্ণ এক বছর স্থায়ীভাবে থাকলে ওই রুপা বা সম্পদের মূল্যের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা শতকরা ২.৫ টাকা হারে যাকাত দেওয়া ফরজ। কিন্তু সম্পদ নিসাবের কম থাকলে যাকাত দেওয়া ফরজ না। অর্থাৎ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে সম্পদ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে যাকাত দিতে হয় না।
কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়
রুপার মত কারো কাছে যদি সাড়ে ৫২ তোলা বা ভোরি স্বর্ণ থাকে তবে তাকে যাকাত দিতে হবে। ঠিক রুপার মত স্বর্ণের ক্ষেত্রেও, কারো হাতে যদি বছরে প্রথমে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, বছরের মাঝে কোন কারনে নিসাব হতে কমে যায় এবং বছর শেষে আবার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে তাকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে।
বর্তমান সময়ে স্বর্ণের বাজার মূল্য অনুযায়ী মোট মূল্যে ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা শতকরা ২.৫ টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে। কাজেই সোনার অলংকার নি সব পরিমাণ হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। সোনা ও রুপা ব্যতীত তামা, কাসা ও পিতল ইত্যাদি ব্যবহার্য জিনিস হিসেবে থাকলে যাকাত দিতে হবে না।
সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে
কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে এমন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে জেনে নিন সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়। যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দুপুরে ঘুরছি তো আছে তাকে যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কাদের উপর ফরজ
যাকাত সেই সফল পূর্ণবয়স্ক ও স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ গুচ্ছিত আছে। যাকাত যাদের উপর ফরজ নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
- মুসলমান হওয়াঃ তাদের উপরে যাকাত ফরজ হবে যারা মুসলমান। অমুসলিমদের ওপর যাকাত ফরজ না। কিন্তু কোন অমুসলিম যদি মুসলমান হয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তবে তাকে সেদিন থেকে নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকলে যাকাত দিতে হবে।
- নিসাবের মালিক হওয়াঃ ইসলামী শরীয়তে যে পরিমাণ অর্থ ধন সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয় সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
- ঋণগ্রস্ত না হওয়াঃ কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হলে তার যদি নিশা পরিমাণ সম্পদ থাকে তাও তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না। এর কারণ সে জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে ঋণ পরিশোধের পর যদি তার কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ থাকে তবে তাকে যাকাত দিতে হবে।
- মাল এক বছর স্থায়ী থাকাঃ হিসাব পরিমাণ সম্পদ কোন ব্যক্তির নিকট যদি এক বছর পূর্ণ স্থায়ীভাবে থাকে তবে তার উপর যাকাত ফরজ।
- জ্ঞান সম্পন্ন হওয়াঃ যাকাত ফরজ তাদের উপরে যারা জ্ঞানসম্পন্ন। জ্ঞান বুদ্ধিহীন ও পাগলের উপর যাকাত ফরজ না।
- বালেগ হওয়াঃ যাকাত দানকারীকে অবশ্যই বালেক এবং প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। না বালক ও শিশু যতই সম্পদের মালিক হোক না কেন তার ওপর যাকাত ফরজ না।
যাকাত কাদের দেয়া যাবে
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
লাখ টাকায় যাকাত কত
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠকগণ আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়েছেন। এবং পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন রুপা থাকলে যাকাত দিতে হয়। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আমার এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।
এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। পরিশেষে বলতে চাই যাকাত গরিবদের হক এই হক সঠিকভাবে পালন করুন। নিজে যাকাত দিন এবং অন্যকে যাকাত দিতে উৎসাহিত করুন। তাহলে ইহকাল ও পরকালে উনার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আল্লাহ হাফেজ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url