কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকের এই আর্টিকেলটিতে কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। এবং পড়ার মাধ্যমে কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আপনি উপকৃত হবেন।
কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা কমবেশি সবাই কলার মোচার তরকারির সাথে পরিচিত। কলার মোচার তরকারির কথা শুনলে জিভে যেন পানি চলে আসে। আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভূমিকা

কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা। কিন্তু করার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না। কলার মোচায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এ সকল পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন ও ফসফরাস। 

আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই সময় নষ্ট না করে এই আর্টিকেলটির সাথে থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আরো জানতে পারবেন কলার মোচার পুষ্টিগুণ ও করার মোচার রেসিপি সম্পর্কে। হলে চলুন জেনে নিন কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে।

কলার মোচার উপকারিতা

করার মজা খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানিনা। কলার মোছার তরকারি আমরা কম বেশি সকলেই খেয়ে থাকি। কিন্তু এই করার মোচার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা।কলার মোচার পুষ্টিগণে ভরপুর ও খেতেও খুব সুস্বাদু। এই সবজিটি গ্রামগঞ্জসহ শহর অঞ্চলেও ব্যাপক সুপরিচিত। 

কলায় যে সকল পুষ্টিগণ থাকে কলার মোচাতেও ঠিক একই পরিমাণে থাকে। সেই সাথে কলার মোচায় থাকে মেন্থলের নির্যাস। যা সাধারণত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। কলার মোচাতে আরও বিদ্যমান থাকে উপকারী ফেনলিক এসিড। কলার মোচা সাধারণত আমরা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি। 

এছাড়াও করার মোচা দিয়ে বিভিন্ন রকম খাবার তৈরি করা যায়। যেমনঃ কলার মোচার চপ, ঘন্ট, কালিয়া ও কলার মোচার বড়া। কলার মোচাকে যেভাবেই রান্না করা হোক না কেন ভাতের সাথে খেতে খুব সুস্বাদু লাগে। তাই সবজি হিসাবে কলার মোচা আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় একটি তরকারি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কলার মোচার উপকারিতা সম্পর্কে-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কলার মোচাতে ফেনলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান রয়েছে। যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই যে সকল ব্যক্তি ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য কলার মোচা খাওয়া খুব উপকারী।

ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ কলার মোচায় থাকা ফিনোলিক অ্যাসিড, ট্যানিন, ফ্লেভানয়েড ও নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ক্যান্সার বিরুদ্ধে লোড়েতে সাহায্য করে। মানব শরীরে থাকা র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। একই সাথে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।

পিরিয়ড নিয়মিত রাখেঃ অনেক নারী আছেন যারা অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যায় ভুগে থাকন। পিরিয়ড চক্র ঠিক বা নিয়মিত রাখার জন্য কলার মোচার তরকারি খুব উপকারি। কলার মোচায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমায়। একই সাথে রক্তস্বল্পতা দূর।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ কলার মোচা পুষ্টিগুনে ভরপুর। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন রকম জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। কলার মোচা প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।

আয়রনের ঘাটতি দূর করেঃ কলার মোচা প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ। আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরের রক্তের অভাব দূর করে। এছাড়াও কলার মোচাতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন "ই" রয়েছে।

ওজন কমায়ঃ ওজন কমাতে কলার মোচার তরকারির জুড়ি নেই। গবেষণায় দেখা গেছে কলার মোচায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে। তাই আজ জাতীয় খাদ্য হওয়ার কারণে করার মোচা তরকারি খেলে পেট ভরা থাকে এবং খাবারের পরিমাণও কম লাগে। তাই ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত কলার মোচা তরকারি হিসেবে খেতে পারেন।

ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ ত্বক ভালো রাখতে অর্থাৎ অকালে বৃদ্ধ হওয়া ও ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে কলার মোচার তরকারি খুব উপকারী। নিয়মিত করার মোচা খেলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়।একই সাথে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।

রাতকানা রোগ দূর করেঃ করার মোছায় যেহেতু ভিটামিন এ রয়েছে। আর আমরা সকলেই জানি ভিটামিন এ রাতকানা রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। তাই অকালে দৃষ্টি শক্তি হারানোর থেকে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত কলার মোছার তরকারি খাওয়া উচিত।

কলার মোচার পুষ্টিগুণ

কলার মোচা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এছাড়াও কলার মোচা সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। এই শব্দটি কম বেশি সারা বছরই পাওয়া যায়। কলার মোচায় বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আমারে প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি কলার মোচায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলোর নাম সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নিন কলার মোচার পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি তা সম্পর্কে।

প্রতি ১০০ গ্রাম মোচায় থাকে -
  • ভিটামিন ‌এ
  • ভিটামিন বি সিক্স
  • ভিটামিন সি ৪২০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই
  • প্রোটিন ১.৭ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ৪২ মিলিগ্রাম
  • লৌহ ১.৬ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট ০.৭ গ্রাম
  • পটাশিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৫.১ গ্রাম
  • রিবোফ্লেবিন ০.০২ মিলিগ্রাম
  • আঁশ ১.৩ গ্রাম
  • থায়ামিন ০.০৫ মিলিগ্রাম

কলার মোচার অপকারিতা

কলার মোচা খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যে কোন জিনিস অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার বা গ্রহণ করলে তা অপকারিতা হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা অনেকেই কলার মোচা খেতে খুব পছন্দ করি। 

এবং নিয়মিতভাবে করার মোচা তরকারি হিসেবে খেয়ে থাকি। আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চলেছি কলার মোচার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন সুপ্রিয় পাঠক, এ প্রতিবেদনটি করার মাধ্যমে জেনে নিন কলা মোজা খাওয়ার কিছু অপকারিতা।

  • কলার মোচার প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এই সবজিটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটে ব্যথা সহ গ্যাস্ট্রিকের মতো বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
  • এছাড়া যাদের শরীরে এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের কলার মোচার সবজি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা কলার মোচায় থাকা ফিনো লিক এসিড এলার্জি জনিত রোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • বেশি পরিমাণে কলার মোচার তরকারি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। কেননা কলার মোচা ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ সবজি হওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কলার মোচার তরকারি খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং পেট খারাপ করে।

কলার মোচার রেসিপি

কলার মোচা সবজি হিসেবে কমবেশি সকলের কাছে খুব পছন্দের ও দারুন সুস্বাদুর তরকারি। তাই সবজি হিসাবে কলার মোচার সঠিক রেসিপি না জানার কারণে অনেকেই কলার মোচা ভালোভাবে রান্না করতে পারেন না। একই সাথে রান্না না জানার কারণে এই সবজিটি সুস্বাদুও হয় না। তাই কলার মোচার রেসিপি জানাটা খুব জরুরী। পাঠক, চলুন জেনে নিন কলার মোচার রেসিপি-

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • কলার মোচা ১টি
  • ছোট চিংড়ি ১কাপ
  • হলুদ গুঁড়া ১ চামচ
  • রসুন বাটা ১ চামচ
  • পেঁয়াজ বাটা- ১ চামচ
  • জিরা বাটা সামান্য পরিমাণ
  • কাঁচা মরিচ স্বাদমতো
  • লবণ স্বাদমতো
  • তেল পরিমাণ মতো
  • এলাচ ২ থেকে ৩ টা
  • দারুচিনি ২ থেকে ৩ টুকরা
প্রেস্তুত প্রনালীঃ প্রথমে মোচাগুলোকে ছুটিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে কেটে নিতে হবে। কাটা মোচা গুলো একটি পাতিলে নিয়ে সেখানে সামান্য পরিমাণ পানি ও লবণ দিয়ে চুলায় বসাতে হবে। মোচা গুলো যখন হালকা ভাব উঠবে তখন সেখানে সামান্য পরিমাণ হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। 

এরপর মোচা গুলো সিদ্ধ হয়ে গেলে পাতিল থেকে নামিয়ে রাখতে হবে। এরপর পাতিলে পরিমাণ মতো তেল দিতে হবে। তেল হালকা গরম হলে সেখানে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, কাঁচামরিচ, দারুচিনি ও এলাচ এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে মসলাটি ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। 
মসলা কষানো হলে সেখানে এক কাপ চিংড়ি ঠেলে দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। চিংড়িগুলো হালকা ভাজা হলে সেখানে তুলে রাখা সেদ্ধ কলার মোছার গুলো ঢেলে দিতে হবে। এরপর ভালোভাবে নেড়ে সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। 

এভাবে ১০ মিনিট রান্না করার পর নামিয়ে নিতে হবে। তারপর গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন। আপনি চাইলে এ প্রতিবেদনটি পড়ার পর এইভাবে কলার মোছার রান্নার রেসিপি নিজ বাসায় রান্না করে খেতে পারেন।

কলার মোচার বড়া

মন্তব্য

পাঠক বন্ধুগণ, আমি এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি, আপনারা এই আর্টিকেলটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যদি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।

এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আপনি চাইলে মতামত বক্সে আপনার মতামত জানাতে পারেন। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনাদের সুসাস্থ্য কামনা করি। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং প্রিয়জনদের ভালবাসুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url