কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকের এই আর্টিকেলটিতে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। এবং পড়ার মাধ্যমে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আপনি উপকৃত হবেন।
আমরা কমবেশি সবাই কাঁচা কলার তরকারির সাথে পরিচিত। কাঁচা কলার তরকারি আমরা কম বেশি সকলেই খেতে খুব পছন্দ করি। আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ভূমিকা
কলা কাঁচা অথবা পাকা দুই অবস্থাতে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কাঁচা কলা বিশেষ করে তরকারি বা ভর্তা হিসেবে খাওয়া হয়। কাঁচা কলাতে এমন কিছু ভিটামিন উপাদান রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রকম অসুখের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁচা কলা দামে সস্তা এবং সহজলভ্য একটি সবজি। সারা বছর কাঁচা কলা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ কলার মোচার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আরোও জানতে পারবেন কাঁচা কলা পুষ্টি উপাদান ও কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয় এবং কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাও্যা যাক।
কাঁচা কলার উপকারিতা
কাঁচা কলা একটি সহজলভ্য সবজি হিসেবে সবার কাছে খুব জনপ্রিয়। কাঁচা কলার সবজি বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়া হয়। কলার কদর সবজি হিসেবে ব্যপক। কাঁচা কলা ভিটামিন, মিনারেলসহ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। নিম্নে কাঁচা কলার উপকারিতা আলোচনা করা হলো-
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাজা করাতে ফাইবার থাকার কারণে সহজে মেদ ভুরি জমতে পারে না। তাই ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখুন।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ যেহেতু কাঁচা কলা আঁশযুক্ত খাবার তাই রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই সবজিটিতে ভিটামিন বি৬ রয়েছে যা শরীরে গ্লূকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কাঁচা কলাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম সয়ে এর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে ফলে হৃদরোগে ঝুঁকি কমায়। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত কাঁচা কলার তরকারি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ডায়রিয়ার চিকিৎসায়ঃ ঘরোয়া ভাবে ডায়রিয়া চিকিৎসায় কাঁচা কলা গুরুত্ব অনেক। পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ কাঁচা কলা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে ডায়রিয়া ভালো করে। কাঁচা কলা পেটের বিভিন্ন রকম সংকমক রোগ ও ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ কাঁচা কলা কলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলাতে রয়েছে দুই ধরনের ফাইবার। এই দুই ধরনের ফাইবার হলো পেকটিন ও রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ। এই দুই ধরনের ফাইবারের মধ্যে রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ হজমে কিছুটা সমস্যা করলেও পেকটিন ফাইবার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ত্বক ও চুলের যত্নেঃ ত্বক ও চুলের যত্নে কাঁচা কলার ভূমিকা অপরিসীম। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল। যা আমাদের ত্বক, শরীর এবং চুলকে পুষ্টি প্রদান করে থাকে। এছাড়া কাঁচা করার তরকারি নিয়মিত খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও মুখে বলি রেখা দূর হয়।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে করা ভূমিকা অনেক। করাতে আয়রন থাকে তাই কাঁচা কলা খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কাঁচা গলায় থাকা ভিটামিন বি ৬ রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে যার রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি সিক্স রয়েছে। যা রক্তের গ্লুকোজ বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটা সাহায্য করে। এটি রক্তে ইনসুলিন অপসারণে সাহায্য করে।
কাঁচা কলার অপকারিতা
কাঁচা কলার যেমন বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে এবং নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচা খোলা না খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আর এটাই অপকারিতা হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা কম বেশি সকলেই জানি কোন কিছু অতিরিক্ততা অপকারিতা হিসেবে গণ্য হয়। নিম্নে কাঁচা কলার কিছু অপকারিতা উপস্থাপন করা হলো।
অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে পেট খারাপের মত সমস্যা হতে পারে। এছাড়া পেট ব্যথা পেট ফুলে যাওয়া এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের আবার কাঁচা কলা হজম করতে খুব সমস্যা হয়। কাঁচা কলা ফাইবারের একটি ভালো উৎস। কিন্তু অতিরিক্ত বা বেশি পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে কাচা কলা খেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে এলার্জি হতে পারে যার ফলে চুলকানির ফোলা ভাব হয়ে থাকে। তাই যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের কাঁচা কলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
কাঁচা কলার পুষ্টি উপাদান
কাঁচা কলায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আজকের এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা তা জানবো। কাঁচা কলা পুষ্টিগুনে ভরপুর সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা কলায় যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো নিম্নে দেয়া হলো।
- পটাসিয়াম ৩.৫৮ মি.গ্রাম
- সোডিয়াম ১ মি.গ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মি.গ্রাম
- আয়রন ০.২৬ মি.গ্রাম
- ফসফরাস ২২ মি.গ্রাম
- ভিটামিন সি ৮.৭ মি.গ্রাম
- জিঙ্ক ০.১৫ মি.গ্রাম
- রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.০৭৩ মি.গ্রাম
- থায়ামিন (বি১) ০.০৩১ মি.গ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ ০.২৭ মি.গ্রাম
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.৩৩৪ মি.গ্রাম
- নিয়াসিন (বি৩) ০.৬৬৫ মি.গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ২২.৮৪ গ্রাম
- চর্বি ০.৩৩ গ্রাম
- ফাইবার ২.৬ গ্রাম
- প্রোটিন ১.০৯ গ্রাম
- চিনি ১২.৩৩ গ্রাম
কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয়
কলা পাকা অবস্থায় ফল এবং কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসাবে খাওয়া হয়ে থাকে। তবে কাঁচা কলা বা সবজি কলা আলাদা হয়ে থাকে। অনেকে ধারণা কাঁচা কলা খেলে গ্যাস হওয়া সম্ভব না থাকে বা গ্যাস্টিকের লক্ষণ গুলো দেখা দেয়। কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালোরি, ভিটামিন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
যারা সকল বয়সের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কাঁচা কলা খেলে পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও পেট ফাঁপার মত সমস্যাগুলো দূর হয়। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে কাঁচা কলা পরিমাণ মতো খাওয়ার।
যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বহুদিন ধরে ভুগছেন তারা নিয়মিত কাঁচা কলা রান্না করে বা ভর্তা করে পরিমাণ মতো খেতে পারেন। আয় পরিমান মত কাচা কলা খেলে গ্যাস হওয়া সম্ভব না থাকে না। আশা করি এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন যে কাঁচা কলা খেলে ওজন পেয়ে যায়। সে সকল ব্যক্তিদের জন্য আজকের এই প্রতিবেদনটি। কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না কাঁচা কলা খেলে কোনভাবেই ওজন বাড়ে না।
কাঁচা কলা তে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আয় কাঁচা কলা খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। এছাড়াও কাঁচা কলা আঁশযুক্ত খাদ্য হওয়ার কারণে শরীরের মেদ আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলে।
এখন থেকে আপনি কোন প্রকার সংকোচ বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই পরিমাণ মতো কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীর বিভিন্ন দিক দিয়ে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি আপনার ওজনও বাড়বে না বরং কমে যাবে।
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম
মন্তব্য
পাঠক, আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে আপনারা জানতে পেরেছেন কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।
তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনারা আপনাদের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। আরো গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumonworld.com এ প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আপনারা চাইলে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url