গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা জানুন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোজাখুজি করছেন। তাহলে বলবো আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আমার আজকের এই আরর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সকলে খেজুর ফলটির সাথে পরিচিত। আমাদের সকলেরি এই সুস্বদু ফলটি খুব পছন্দের ও প্রিয়। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরি অজানা। তাই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের বিশেষ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে এ সময় গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন খাবার খাওয়া উচিত এবং যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সময়ে সঠিকভাবে জীবন যাপন এবং খাদ্য বাসের প্রতি যদি সচেতন থাকেন তবে বিভিন্ন রকম ঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ সবল সন্তান জন্ম দিতে পারেন। 


এজন্য গর্ভাবস্থায় পুষ্টি কর ও সুষম খাবার খেতে হয়। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শাক সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসগম। ফলমূল গুলোর মধ্যে খেজুর অন্যতম। আজকের এয়ার টিকেটের মাধ্যমে আমি আলোচনা করতে চলেছি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা। 

আরও আলোচনা করতে চলেছি খেজুরের পুষ্টিগুণ ও খেজুর খাওয়ার নিয়ম এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কি নিরাপদ? এই সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সবদিক দিয়ে খুব সচেতনতার সাথে থাকতে হয়। কেননা এই সময় সার্বিক দিক দিয়ে অর্থাৎ খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা, শারীরিক যত্নের ব্যাপারে সচেতন হলে গর্ভাবস্থায় অনেক ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার দাবার ও সুষম খাবার খাওয়া দরকার। 


এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর একটি খাবার হল খেজুর। যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য খুব উপকারী। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া এটা কোন নতুন বিষয় না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে তা ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা হ্রাস করে তাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর ফলে প্রসব বেদনা অনেকটাই কমে যায়।

১। শরীরের রক্ত উৎপাদন করেঃ বাচ্চা প্রসবের সময় মায়েদের শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যায়। এতে গর্ভবতী মায়েরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় একই সাথে শরীরে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। এজন্য গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ভাবে খেজুর খেলে শরীরের রক্ত দ্রুত তৈরি হয় এবং শরীরের শক্তির সঞ্চার থাকে।

২। জরায়ুর পেশি শক্তিশালী করেঃ খেজুরে থাকা অক্সিটোসিন’ নামক এক বিশেষ ধরনের হরমোন যা জরায়ুর পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই অক্সিটোসিন’ হরমোন সন্তান প্রসবের সময় গর্ভবতী মায়েদের প্রসব বেদনা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।


৩। পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেঃ খেজুরের পুষ্টিগুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই খেজুরে রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় মা ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের বৃদ্ধির জন্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য খেজুর খুব উপকারী।

৪। প্রাকৃতিক ভাবে শক্তি যোগায়ঃ খেজুর একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু ফল। এই ফলটিতে প্রাকৃতিক অনেক শক্তি উপাদান মজুদ রয়েছে। খেজুর কার্বোহাইড্রেটের প্রাকৃতিক উৎস। এছাড়াও খেজুরে প্রচুর গ্লুকোজ থাকে। যা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শারীরিক দুর্বলতা কমিয়ে শরীরের শক্তি সঞ্চার করে শরীরকে সক্রিয় রাখে।

৫। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করেঃ গর্ভবতী মহিলাদের একটি বড় সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। কম বেশি সকল গর্ভবতী মহিলারাই গর্ভাবস্থায় এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি যন্ত্রণাদায়ক রোগ। খেজুরে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের সমস্যা দূর করে। তাই গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খালি পেটে পানিতে ভিজানো খেজুর খেতে হবে।


৬। কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণেঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ করে এই ফলটি। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফ্লোক্টোজ, গ্লোকোজ ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এ সকল উপাদান শরীরের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি শরীরের গ্লোকোজ ধরে রাখে এবং ফ্লোক্টোজ ও কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ করে।

৭। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পুষ্টিগুনে ভরপুর ও সুস্বাদু এই ফলটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে খুব সাহায্য করে। খেজুর আর সমৃদ্ধ ফল। আশ হজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে একই সাথে পেট পরিষ্কার রাখে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হজমজনিত সমস্যা লেগে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করলে হজনিত সমস্যা সহজে দূর হয়।

৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এই অবস্থায় নিয়মিতভাবে খেজুর খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি শরীর অসুস্থ থাকে।

৯। প্রসব প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করেঃ খেজুরে থাকা ফ্যাটি এসিড গর্ভবতী মায়েদের সারভাইক্যাল মাসল ফেক্সিবল করে প্রসব বেদনা কমায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় একেবারে শেষের দিকে অর্থাৎ ৩৫ সপ্তাহের পর ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম খেজুর খেলে গর্ভবতী মায়েদের শরীরে সার্ভিক্স মজুদ হয়। এর ফলে কৃত্রিমভাবে প্রসব ব্যথা সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয় না।

খেজুরের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে যে সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। খেজুরে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। তাই আমরা যারা আমাদের শারীরিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য খেজুর খেয়ে থাকে তাদের অবশ্যই খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান উল্লেখ করা হলো-

  • শক্তি - ১,১৭৮ ক্যালরি
  • শর্করা- ৭৫.০৩ গ্রাম
  • চিনি- ৬৩.৩৫ গ্রাম
  • খাদ্য আঁশ -৮ গ্রাম
  • স্নেহ পদার্থ - ০.৩৯ গ্রাম
  • প্রোটিন - ২.৪৫ গ্রাম
  • ভিটামিন এ-  ১০ আইইউ
  • থায়ামিন বি১-  ০.০৫২ মিলিগ্রাম
  • রিবোফ্লেভিন বি২-  ০.০৬৬ মিলিগ্রাম
  • নায়াসিন বি৩-  ১.২৭৪ মিলিগ্রাম
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫-  ০.৫৮৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি৬-  ০.১৬৫ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট বি৯ - ১৯ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি - ০.৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই - ০.০৫ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন কে - ২.৭ মাইক্রোগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম - ৩৯ মিলিগ্রাম
  • লৌহ - ১.০২ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম - ৪৩ মিলিগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ - ০.২৬২ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস - ৬২ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম - ৬৫৬ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম - ২ মিলিগ্রাম
  • জিংক - ০.২৯ মিলিগ্রাম

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সবথেকে বেশি খাবারের প্রতি সচেতন থাকতে হয়। এই অবস্থায় প্রতিটা খাবার পরিমাণ মতো ও নিয়মমত খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। তবে খেজুরের ক্ষেত্রে যে সকল খেজুরে উচ্চ রাসায়নিক উপাদান দেয়া থাকে সেগুলো গর্ভাবস্থায় কখনো খাওয়া উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় দিনে ২ থেকে ৩টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় দিনের যেকোনো সময় খেজুর খাওয়া যেতে পারে। তবে এই অবস্থায় খেজুর খাওয়ার সব থেকে ভালো নিয়ম হলো খাবার খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর খাওয়া। তবে গর্ভাবস্থায় কোষ্টকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা যদি থাকে তাহলে খেজুর রাত্রে ঘুমানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই ভিজানো খেজুরগুলো খেতে হবে। খেজুর এই নিয়মে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের যদি এলার্জি ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থেকে থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পর খেজুর খাওয়া উত্তম।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কি নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কি নিরাপদ এ প্রশ্নটি গর্ভবতী মায়েদের একটি কমন প্রশ্ন। আজ আমার এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আলোচনা করতে চলেছি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কি নিরাপদ এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। হ্যাঁ সুপ্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া নিরাপদ এবং সেটা যদি পরিমাণ মতো হয় তাহলে। 

খেজুরে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালরি রয়েছে। এছারাও রয়েছে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যার কারণে গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে দীর্ঘক্ষন পেট ভরা থাকে। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

অনেক মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে প্রচন্ড বমি হয় এর ফলে গর্ভের সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিকভাবে বিকাশ হয় না। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে যদি গর্ভবতী মহিলা খেজুর খান তবে গর্বের সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারবে। 

খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম গর্ভের সন্তানের হার মজবুত করতে সাহায্য করে। যেহেতু স্বাভাবিকের তুলনায় গর্ভবতী মহিলাদের একটু বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়েরা খেজুর খেয়ে বেশি শক্তি যোগান দিতে পারে। 

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠির মত সমস্যা ও পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা সহজে দূর হয়। পাঠক, আশা করি উপলক্ত আলোচনাগুলো পড়া মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন গর্ভবস্থায় খেজুর খাওয়া কতটা নিরাপদ এবং কতটা জরুরী।

শেষ কথা।

সুপ্রিয় পাঠক, আমি এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনেছেনগর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তথ্যগুলো। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এ রকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন ও প্রিয়জনদের ভালোবাসুন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url