তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোজাখুজি করছেন। তাহলে বলবো আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আমার আজকের আরর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
আমরা সকলে তরমুজ ফলটির সাথে পরিচিত। আমাদের সকলেরি এই রসালো ফলটি খুব পছন্দের ও প্রিয়। কিন্তু এই পছন্দের ফলটি অর্থাৎ তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরি অজানা। তাই তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ও রসালো ফল। এর ইংরেজি নাম ওয়াটার মেলন (Watermelon)। এই রসালো ফলটি সকলের খুব পছন্দের। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এই ফলে পানির পরিমাণ ৯২% এবং অন্যান্য উপাদান ২%। তরমুজ ভিটামিন এ জাতীয় ফল।
সিয়েরা লিওন দেশটি তরমুজের জন্মভূমি। এছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকার ১৭ টি দেশকে তরমুজের আদিভূমি বলা হয়। এই ফলটিতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম পরিমাণে থাকে তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ভয় থাকে না।
আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আরোও জানতে পারবেন তরমুজের পুষ্টিগুণ, তরমুজ খাওয়ার নিয়ম ও তরমুজের বীজের উপকারিতা এবং তরমুজ খেলে কি গ্যাস হয় এই সমস্ত বিষয়ে। তাহলে চলুন দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
অতিরিক্ত গরম ও প্রচন্ড তাপদাহে শরীরকে সতেজ এবং হাইড্রেড রাখার জন্য রসালো ফল তরমুজের কোন জুড়ি নেই। রসালো এই ফলটির প্রায় ৯২ ভাগই পানি। শরীরকে সতেজ ও হাইডেড রাখার পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করে এই ফলটি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলেঃ তরমুজে ভিটামিন সি উপাদান রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও এই ভিটামিন সি উপাদান শরীরের ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। তরমুজে থাকা বিটা-ক্যরোটিন ত্বককে সতেজ করে এবং ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এছাড়াও চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।
শরীরের পানি শূন্যতা দূর করেঃ তরমুজ ফলটির প্রায় অধিকাংশই পানি। তাই গরমের সময় যখন আমাদের শরীর থেকে ঘাম ও প্রসাবের মাধ্যমে শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই গরমের দিনে তরমুজ খেলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে।
চোখ ভালো রাখেঃ তরমুজ ফলে রয়েছে কেরোটিনয়েড নামক উপাদান। তাই এই ফলটি খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর হয়। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে আমাদের অতি মূল্যবান চোখ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ রসালো এই ফলটিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম উপাদান আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই উপাদান দুইটি ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
কিডনির স্বাস্থ্য সুস্থ রাখেঃ কিডনি থেকে বর্জ্য দূর করতে তরমুজের রস খুব উপকারী। তাই যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এছাড়াও কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকন ডাবের পানি ও শসার পাশাপাশি নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যার কারণে তরমুজ খেলে কিডনি সচল থাকে এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করেঃ রসমালাই লাল ফলটিতে এমাইনো এসিড নামক উপাদান রয়েছে। এই এমাইনো এসিড শরীরের কোলেস্টেরল ও চর্বি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এই ফলটিতে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা মানব দেহে জমে থাকা কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করতে সাহায্য করেঃ তরমুজে থাকা লাইকোপিনো নামক এক ধরনের লাল উপাদান যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। তাই যারা নিয়মিত তরমুজ খান তাদের হা মধুর থাকে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ তরমুজে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। তাই তরমুজ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। তাই যে সকল ব্যক্তি ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত ও পরিমাণ মতো তরমুজ খেতে পারেন।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজের অনেক পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে। নিম্নে তরমুজের থাকা বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিগুণ বা উপাদানের নাম দেওয়া হলো- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে
- পানি ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম
- আঁশ ০.২ গ্রাম
- আমিষ ০.৫ গ্রাম
- চর্বি ০.২ গ্রাম
- ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মিলি.গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১০ মিলি.গ্রাম
- আয়রণ ৭.৯ মিলি.গ্রাম
- কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম
- খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম
- ফসফরাস ১২ মিলি.গ্রাম
- নিয়াসিন ০.২ মিলি.গ্রাম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি-২
তরমুজ খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলে কমবেশি জানি তরমুজ হলো গ্রীষ্মকালীন ফল। গ্রীষ্মকালীন যতগুলো ফল আছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে রসালো, সুস্বাদু ফল হল তরমুজ। অতিরিক্ত গরমে প্রচন্ড তাপদাহে এই ফলটি খেলে শরীরে প্রশান্তি বয়ে আনে। তাই গ্রীষ্মকালীন ফল গুলোর মধ্যে এই ফলটি খুব জনপ্রিয়। এছাড়াও তরমুজ খুব সহজলভ্য। পুষ্টিকর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফলটির কোন অংশ না পেলে খাওয়া যায়।
তরমুজের অপকারিতা
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ইতিপূর্বে জানতে পেরেছি তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে। এখন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে উপস্থাপন করতে চলেছি তরমুজের কিছু অপকারিতার বিষয় সম্পর্কে। তরমুজের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক এর কিছু অপকারিতা রয়েছে।
তরমুজের অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। তরমুজ আমাদের খুব পছন্দের একটি ফল। কিন্তু এই লোভনীয় ফলটি খেলে যে কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে আজ আমরা জানবো। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক তরমুজের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো না।
তাই অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে পেটে অস্বস্তি বোধ হয়। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে গ্যাস থেকে সমস্যা আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হতে পারে। আবার যাদের ব্লাড সুগার বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কেননা বেশি পরিমাণে তরমুজ খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া সম্ভব না থাকে এবং বেড়ে যায়। অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীগণ তরমুজ কে আকর্ষণীয় করে তুলতে নাইট্রেড, মিথানোল, কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম রঙ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করে। যা স্বার্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই আমাদের অবশ্যই তরমুজ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
কেননা এই সকল কৃত্রিম রং দেওয়া তরমুজ খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ফুটপাইজিং, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো জীবন নাশক ব্যাধি সরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই তরমুজ ক্রয় করা ও খাওয়ার বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
তরমুজের বীজের উপকারিতা
তরমুজের মত এর বীজ পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ। তরমুজের বীজ সুপার নিউট্রেশনের উৎস। তরমুজের বিজে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে কিন্তু বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে। আমরা অনেকেই জানিনা তরমুজের বীজের উপকারিতা গুণ সম্পর্কে।
আমার আজকের এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি তরমুজের বীজর উপকারিতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে। তরমুজের বিজ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে একই সাথে চুলের যত্নে এবং দাঁতের সুরক্ষায় এই বীজ খুব উপকারী।
ভালো ফ্যাটের উৎস হিসেবে ধরা হয় তরমুজের বীজকে। তরমুজ থেকে যে সকল পুষ্টি উপাদান গুলো পাওয়া যায় তার প্রায় অধিকাংশই পশ্চিপাড়ার তরমুজের বীরজেও বিদ্যমান থাকে। তরমুজের ভিজে কোন বিষ ক্রিয়া নেই।
এই বীজ স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য উপকারী। তরমুজ খাওয়ার সাথে তরমুজের বীজও আমরা খেয়ে থাকি। তবে তরমুজে বীজগুলো অঙ্কুরিত হওয়ার পর সেগুলো খেলে সবচেয়ে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
তরমুজ খেলে কি গ্যাস হয়
তরমুজ খেলে কি গ্যাস হয়? হ্যাঁ সুপ্রিয় পাঠক, অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে পেটে গ্যাস হওয়া সম্ভবনা থাকে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। সেটা বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে হোক অথবা শরীরের ক্ষেত্রে। এছাড়াও গ্যাস্টিকের সমস্যার পাশাপাশি পেট ফেপে যেতে পারে এবং পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
মুঝে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলে বেশি পরিমাণে তরমুজ খেলে ডায়রিয়াসহ পেটের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এই ফলটিতে থাকে সরবিটল নামক উপাদান যা অম্বল ও বদহজমের মতো পেটের সমস্যা বাড়ায়। তাই তরমুজ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সকলের সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
লেখকের মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক, আমি এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনেছেন তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তথ্যগুলো। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।
তবে আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এ রকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন ও প্রিয়জনদের ভালোবাসুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url