ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম, ত্বীন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

পাঠক, ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম ও ত্বীন ফল খাওয়া ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কেননা এই আর্টিকেলটিতে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চলেছি ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম - ত্বীন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে।
ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম - ত্বীন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
তাহলে সময় নষ্ট না করে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম - ত্বীন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতার বিভিন্ন দিক। ত্বীন ফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও ঔষধি ফল হিসেবে পরিচিত। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায়  যাওয়া যাক।

উপাস্থাপনা

পবিত্র আল কোরআনের আত ত্বীন সূরায় বর্ণিত রয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীনের কথা। এই ফল গাছটির আয়ুষ্কাল প্রায় ১০০ বছর। ত্বীন ফলটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। যা মরু অঞ্চলে খুব সহজে জন্মায়। এই সুস্বাদু ফলটি যখন পুরোপুরি পাকে তখন রসে ভরপুর হয়। 

বর্তমান সময়ে ছাদ বাগানিদের মধ্যে এই ফল গাছটির চাষ খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেশের বাইরে অর্থাৎ বিদেশেও এই ফলের দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। এশিয়া উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত ও জাপানে এর চাহিদা ব্যাপক। ত্বীন ফলের ১০৩ টি জাতের মধ্যে ৬টি জাত এখন পর্যন্ত চাষাবাদ শুরু হয়েছে। 

এ জাতগুলোর ফল নীল, মেরুন, লাল, হলুদসহ বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে আপনি আরও জানতে পারবেন ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ, ত্বীন ফল গাছ কোথায় পাওয়া যায় ও ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি নিম্নক্ত আলোচনা পড়ে আপনার ভালো লাগবে।

ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম

ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এখন আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিব ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এই ফল খাওয়ার বিশেষ তেমন কোন নিয়ম নাই। অন্যান্য ফলের মততোই ত্বীন ফল খাওয়া হয়। বিভিন্ন রকম উপায়ে এই ফল খাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত ত্বীন ফল সবজি হিসাবে রান্না করে খাওয়া হয়। 

এছাড়াও এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। সবজি হিসেবে এই ফলটিকে সিদ্ধ করে চিংড়ি মাছ দিয়ে অথবা আলু দিয়ে ভাজি করেও খাওয়া যায়। এই সবগুলো নিয়মেই ত্বীন ফল খাওয়া যায়। ত্বীন ফল অনেকের সালাদ হিসেবেও খায়। ভাতের সাথে সালাদ হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি অনেকে আবার এই ফলটি জুস হিসেবে খায়।

ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ

পবিত্র আল কোরআনের ত্বীন ফলের কথা বলা হয়েছে। ত্বীন ফল একটি জান্নাতি ফল। ত্বীন ফলে রয়েছে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও এই ফলটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। প্রতি ২০০ গ্রাম ত্বীন ফলে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

  • আঁশ ১০.১৪ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট ১.৫৫ গ্রাম
  • প্রোটিন ৪.৬৬ গ্রাম
  • থায়ামিন ১.৬৫ গ্রাম)
  • নিয়াসিন ১.৬৫ গ্রাম
  • আয়রন ৩.০১ গ্রাম
  • ফোটেল ১০.৬৫ মিলিগ্রাম
  • জিংক ১.৬৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ ৭.৬৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ২৭৮ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম ৭৮৬ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ৭৭ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৭৮.৯৮ মিলিগ্রাম

ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা

ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই ফলটি একটি পবিত্র ফল। ত্বীন ফল পুষ্টি উপাদানের ভরপুর। মানবদেহের বিভিন্ন রকম শারীরক সমস্যা দূর করতে এ ফলটি খাওয়া হয়। এ ফলটি কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতে খাওয়া যায়। এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতার সম্পর্কে।

১। শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতেঃ শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ত্বীন ফলের উপকারিতা অপরিসীম। বর্তমান সময়ে মানুষের শারীরিক সমস্যা যেন শেষ নেই। তাই যারা নিয়মিত এই ফলটি খান তাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দূর হয়। এই ফলটি শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য বিভিন্ন রকম ফলমূল খাওয়া হয়। সেই সকল ফরমুলের মধ্যে ত্বীন ফল খুব কার্যকরী। এই ফলটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৩। হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে। হজমের সমস্যার কারণে পরিপাকে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দেয়। এই ফলটিতে আঁশ রয়েছে যা খাবার পরিপাকে খুব সাহায্য করে এবং খাবার খুব দ্রুত হজম হয়।

৪। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ যে সকল ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তাদের নিয়মিত ত্বীন ফল খাওয়া উচিত। এই ফল খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমতে থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিকের মতো অসুখের বিরুদ্ধে লড়তে এই ফল সাহায্য করে।

৫। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ত্বীন ফল খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ফলটি সাহায্য করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে সে সকল ব্যাক্তি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত এই ফলটি খেতে পারেন।

৬। রক্তস্বল্পতা দূর করতেঃ শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে মাথা ঘুরার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি হারায়। অনেকে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করতে তিন ফল খাওয়া খুব উপকারী। এই ফলটি নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা কমে যায়।

৭। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ শরীরে বাড়তি ওজনের সকলের জন্য সমস্যা একটি বড় কারণ। শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শরীরে বিভিন্ন রকম অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে। তাই যে সকল ব্যক্তি ওজন কমিয়ে শারীরিকভাবে স্থির থাকতে চান তারা দৈনন্দিন ডায়েট খাবারের তালিকায় ত্বীন ফল রাখতে পারেন।

৮। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আমরা সকলেই খুব সচেতন। আমরা সকলেই চাই আমাদের ত্বক সুন্দর, মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকুক। বিশেষ করে মেয়েরা তাঁকে সৌন্দর্য নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। তাই ত্বকের জন্য বিভিন্ন রকম রাসায়নিক দ্রব্য সংযুক্ত কসমেটিক্স বা প্রসাধনী ব্যবহার না করে নিয়মিত এ ফলটি সেবন করুন। তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।

৯। ক্ষতিকর চর্বি দূর করেঃ এই ফল আমাদের শরীরে ক্ষতিকর চর্বি দূর করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে শরীর ওজন ও স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। তাই শরীরে অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে নিয়মিত ত্বীন ফলের উপকারিতা অপরিসীম।

১০। হাড় মজবুত করেঃ ত্বীন ফল খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত থাকে। হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা অনেকে তেমন চিন্তিত না। এর ফলে খুব অল্প বয়সে আমাদের হাড়ের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। সুস্থ ও সরল ভাবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হাড় মজবুত থাকা দরকার। তাই হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং হার মজবুত রাখতে নিয়মিত ত্বীন ফল খেতে হবে।

এছাড়াও ত্বীন ফলে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা সহজে কমে, মৃগীরোগ, প্যারালাইসিস, হৃদরোগ, ডিপথেরিয়া, প্লীহা বৃদ্ধি ও বুকের ব্যথায় ডুমুর কার্যকরী। এই ফলটি আমাদের শরীরে এসিডের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং শরীরে পিএইচ এর ভারসাম্য বজায় রাখে। আর মরণ ব্যাধির মত ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়ক হিসেবে কাজ করে এই ফলটি।

ত্বীন ফল গাছ কোথায় পাওয়া যায়

ত্বীন ফল আমারের দেশে তেমন একটা চাষ হয় না বললেই চলে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এই ফলের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। ত্বীন ফল গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে বর্তমানে এই গাছে কলম কাটিং করে চাষীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোর সহ বিভিন্ন জেলায় এই ফলের চাহিদা থাকার কারণে এ সকল অঞ্চলেও স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে আয়তনের দিক থেকে শ্রীপুরের ত্বীন ফলের প্রজেক্টটি দেশের সবথেকে বৃহত্তম প্রজেক্ট। ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের যোগ করা সম্ভব হবে।

ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি

ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। খুব সহজে এ ফলের গাছটি চাষ করা সম্ভব। এই ফলে গাছটি কোন রাসায়নিক সার ছাড়াই চাষাবাদ করা যায়। জৈব ও কম্পোস্ট সার ভালোভাবে মিশিয়ে মাঠে ও ছাদে মাটি প্রস্তুত করে এই গাছে চাষ করা যায়। বিশেষ করে যারা ছাঁদ বাগান খুব আগ্রহী তারা এ ফলটি চাষ বেশি করে করছেন এবং সাফল্য পাচ্ছে। 

অন্যান্য ফল গাছের অপেক্ষায় ত্বীন গাছে ফল খুব দ্রুত চলে আসে। ত্বীন গাছের কাটিং করা চারা গাছ লাগানোর ৪ থেকে ৫ মাস পরে এই গাছ ফল দিতে শুরু করে। এক একটি গাছে থেকে প্রথম বছরে ১ থেকে ২কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১০ কেজি এবং তৃতীয় বছরে প্রায় ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

 তাই ত্বীন গাছের চারা লাগানো ২ থেকে ৩ মাস পর থেকে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সরিষার খোল ও জৈব সার এবং পানি দিতে হয়। মাঝে মাঝে গাছে ঘোরার মাটি খুঁড়ে আলগা করে দিতে হয়। এই ফল গাছটিতে বিভিন্ন রকম পোকামাকড়ের উপদ্রব্য হয়। বৃষ্টির কারণে এই ফলের গাছে ফাঙ্গাসের আক্রমণ ঘটে। 

 এজন্য গাছে Alternaria, Aspergillus, Botrytis, এবং Penicillium fungi ফাংগাল রোগ দমনে ফাংগিসাইড প্রয়োগ করতে হয়। এই তো এগুলো ব্যবহার করে পোকামাকড় উপদ্রব্য কামানো যায়। এভাবেই খুব সহজে ত্বীন ফল চাষ করা যায়।

ত্বীন ফল গাছ দাম

উপসংহার

এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি ইতিমধ্যে পড়ার মাধ্যমে আপনি জেনে গেছেন ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম - ত্বীন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতার সকল বিষয় সম্পর্কে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে অবশ্যই আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আবারও দেখা হবে কোন এক নতুন আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করলাম। ভালো থাকবেন নিজের শরীরের যত্ন নিবেন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url