কমলা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি কি জানার জন্য আগ্রহী? কমলা খেতে পছন্দ করেন অথচ কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন না। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে পারবেন।
সুপ্রিয় পাঠক, তাই কমলা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা জানার জন্য আপনাকে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়তে আপনার ভালো লাগবে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে আলোচনাটি পড়ে নিন।
ভূমিকা
কমলা হলো শতগুণে সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল। এই ফলটি দেখতে যেমন লোভনীয় ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। পুষ্টিবিদদের মতে কমলার কোয়া ও খোসা দুটোতেই পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। কমলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফ্ল্যাভনয়েড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ডায়েটারি ফাইবার।
তাই বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ে এই ফলটি খাওয়া হয়। দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষের শরীরে যে পরিমাণ ভিটামিন সি এর প্রয়োজন। তার প্রায় ৭০ ভাগ কমলা থেকে পাওয়া যায়। কামড়ায় থাকা ভিটামিন বি ৬ মানব দেহের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
আর্টিকেলটি প্রার মাধ্যমে আপনি আরোও জানতে পারবেন কমলা খাওয়ার নিয়ম, কমলা পুষ্টিগুণ, কমলা কখন খাওয়া উচিত ও বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও আলোচনা। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কমলা খাওয়ার উপকারিতার কথা বলে শেষ করে যাবে না। রসে টসটোসে এই ফলটি ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস। তাই এই ফলটি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এই ফলটি রাখা খুব জরুরী। কমলা ফলটি ছোট বড় সকলের কাছে খুব প্রিয় ও লোভনীয়। তাহলে চলুন জেনে নিয়ে যা কমলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ রোগের বিরুদ্ধে লড়ে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে এই ফলটি খুব কার্যকরী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে শরীরকে বিভিন্ন রকম ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেও এই ফলটি সাহায্য করে। যেহেতু কমলা ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস তাই নিয়মিতভাবে কমলা খেলে বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২। মস্তিষ্ক শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতেঃ মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করতে ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই ফলটি। তাই যারা নিয়মিত কমলা খায় তাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কমলায় থাকে ফ্লেভনয়েডস নামক উপাদান যা মস্তিষ্কের ফাংশন ঠিক রাখে এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
৩। ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কামলাতে থাকে ডি-লিমুনিন নামক এক ধরনের যৌগ। এই যৌগটি ফুসফুসের ক্যান্সার ত্বকের ক্যান্সার স্তনের ক্যান্সারের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই ফলটিতে থাকা ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে ক্যান্সারের সাথে লড়তেও সাহায্য করে।
৪। কিডনিতে পাথর দূর করতেঃ রসালো এই ফলটি কিডনির জন্য বেশ উপকারী। কমলায় থাকা ভিটামিন সি কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে কমলা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
৫। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ পূর্বেই বলেছি কমলা ফলটি ভিটামিন সি এর যত প্রধান উৎস। তাই এই ফলটি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষভাবে কার্যকরী। চোখের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কমলা রাখলে চোখের সমস্যা সহজেই দূর হবে। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত কমলা খান।
৬। ত্বক ভালো রাখতেঃ ত্বক ভালো রাখতে ও ত্বকের যত্নে কমলা লেবু সবচেয়ে কার্যকরী ফল। সুন্দর ত্বক বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রকাশের পাশাপাশি সুস্থতাও প্রকাশ করে। তাই ত্বকের যত্নে যে সকল খাবারগুলো খাওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে একটি উপকারী ফল হল কমলা। তাই প্রতিদিন কমলা খেলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় একই সাথে ত্বকের দাগ ছোপ সহজে দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
৭। হৃদযন্ত্র ভালো রাখতেঃ হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে আমাদের সকলকেই যত্নশীল ও সচেতন হতে হবে। তাই জীবজন্ত ভালো রাখতে নিয়মিত কমলা খাওয়া উচিত। যে সকল ব্যক্তিদের বিভিন্ন রকম হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ফলটি খুব উপকারী। তাই নিয়মিত কমলা খান হৃদযন্ত্র ভালো রাখুন।
৮। ওজনরা হ্রাসে সাহায্য করেঃ দ্রুত ওজন কমাতে কমলার কোন জুড়ি নেই। কমলাতে থাকে ভিটামিন সি ও ফাইবার যা সহজে মেদ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরে ভারসাম্য বজায় থাকে।
কমলা খাওয়ার নিয়ম
কামলা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে কমলা খেলে এর পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব। সুপ্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কমলা খাওয়ার কিছু সাধারন নিয়ম গুলো সম্পর্কে। এর জন্য সতেজ ও পরিষ্কার কমলা বাছাই করতে হবে এবং বাঁশি কমলা পরিহার করতে হবে।
দুইবার খাবার খাওয়ার মধ্যবর্তী সময় কমলা খাওয়া উচিত। কমলা খাওয়ার পূর্বে সেটাকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে। কমলা খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি খাওয়া যায়। অথবা আপনি চাইলে জুস করেও খেতে পারেন। উপরোক্ত নিয়ম বা নির্দেশনাগুলি মেনে কমলা খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।
কমলা খাওয়ার অপকারিতা
কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি। কমলা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধা বা অপকারিতাও রয়েছে। আমরা সচরাচর কমলা খায় কিন্তু কমলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে তেমন জানিনা। আমার এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আলোচনা করতে চলেছি কমলা খাওয়ার অপকারিতার কিছু দিক সম্পর্কে।
পাঠক, চলুন তাহলে প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন কমলা খাওয়ার অপকারিতা।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কমলা খুব উপকারী। তবে যদি সেটা পরিমাণ মতো বা সীমিত পরিমাণে খাওয়া হয়। অন্যথায় এ কমলা অতিরিক্ত খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। কামলাতে থাকা ফাইবার এর কারণে অতিরিক্ত কমলা খেলে পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমনঃ পেটে ব্যথা, পেটে খিচুনি, পেট ফুলে যাওয়া ও বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া দেখা দিতে পারে।
অপরদিকে কমলায় ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে কমলা খেলে বুক জ্বালাপোড়া করা, অনিদ্রা ও হার্ট এটাকের মত সমস্যাও হতে পারে। যাদের রক্তে পটাসিয়ামের পরিমাণ বা মাত্রা বেশি থাকে সে সকল ব্যাক্তিদের কমলা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
কেননা যাদের রক্তে পটাশেমের মাত্রা বেশি সে সকল ব্যক্তি অতিথি তো কমলা খেলে তাদের হাইপারক্যালেমিয়া নামক সমস্যা হতে পারে। তবে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় তাই বেশি পরিমাণে কমলা রাখা উচিত না।
কমলার পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলায় রয়েছে-
- ক্যালোরি ৪৭ কিলোক্যালোরি
- চর্বি ০.১ গ্রাম
- সোডিয়াম 0 মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম ১৮১ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১১.৮ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার ২.৪ গ্রাম
- চিনি ৯.৪ গ্রাম
- প্রোটিন ০.৯ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৫৩.২ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম
- ফোলেট ৩০ মাইক্রোগ্রাম
কমলা কখন খাওয়া উচিত
কমলালেব ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস তাই এই ফলটি সকালে ও রাতে খাওয়া একেবারে উচিত নয়। বিশেষ করে খালি পেটে খাওয়াতো যাবে না। খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে বা পরে কমলা লেবু খেতে হয়। তাই এই ফলটি খাবার পূর্বে খেলে খিদে বৃদ্ধি করে এবং খাবার খাওয়ার পর হজমে সাহায্য করে।
যেহেতু কামরা লেবু টক জাতীয় ফল তাই ভরা পেটে এই ফলটি খাওয়াই উত্তম। এতে করে ক্যাস্টিকের মতো সমস্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তাই সকালে খাবার খাওয়ার পর ও দুপুরের খাবার খাবার মাঝামাঝি সময় কমলা খাওয়া যেতে পারে। চাইলে বিকালে সুস্বাদু ফলটি খাওয়া যায়।
বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা
শেষ কথা।
এই আর্টিকেলটির একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত তথ্য। আপনিও চাইলে প্রতিদিন কমলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
এতে করে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং আপনার শরীর রোগ বিরুদ্ধে লড়ার সক্ষমতা অর্জন করবে। আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন। আরো নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার www.sumonworld.com ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url