পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে রাখুন
সুপ্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করছেন? তাহলে বলব আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করতে চলেছি পাথরকুচি পাতা উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে স্থায়িত্ব আলোচনা।
তাহলে চলুন সুপ্রিয় পাঠাক, এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নেই পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পরে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ে নিন।
সূচনা
পাথরকুচি পাতার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। গ্রাম অঞ্চলে যেখানে সেখানে এই গাছটি দেখতে পাওয়া যায়। পাথরকুচি পাতা বিভিন্ন ঔষধি গুন সম্পূর্ণ যার কারণে এই গাছটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় খুব ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ঘর অভাবে বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ে পাথরকুচি পাতার রস সেবন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতার ১২টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে। আরোও জানতে পারবেন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম ও পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য এবং পাথরকুচি পাতা থেকে গাছ কিভাবে হয় এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
পাথরকুচি পাতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করে যাবে না। এই পাতার বিভিন্ন রকম উপকারিতা গুণ রয়েছে।
১। পেটের সমস্যা দূর করেঃ যাদের পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে। যেমনঃপেট ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া এই সকল সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতার কার্যকারিতা অপারেশন। তাই পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস বানিয়ে সেখানে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২। প্রসাবের সমস্যা দূর করেঃ নারী-পুরুষ উভয়ে প্রসবের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই যে সকল মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য পাথরকুচির পাতা এক মহাঔষধ। প্রসাবে ইনফেকশন বা মূত্রথলির বিভিন্ন সমস্যা অথবা প্রসব আটকে যাওয়ার মত সমস্যা দূর করে সাহায্য করেন এই পাথরকুচির পাতার রস।
আরও পড়ুনঃ হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
৩। কিডনিতে পাথর দূর করেঃ পাথরকুচি পাতার রস কিডনিতে পাথর হওয়ার রোধ করতে এবং পাথর বের করতে খুব কার্যকরী। তাই যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খেলে কিডনিজনিত বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর হয়।
৪। শিশুদের পেট ব্যাথা দূর করেঃ পাথরকুচি পাতার নির্যাস শিশুদের পেট ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের জন্য এই পাতার রস খুব উপকারী। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার রস বেটে নির্যাস করে শিশুদের পেটে ভালোভাবে মালিশ করলে এতে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
৫। পালসার সমস্যা দূর করেঃ অর্শ ও পাইলসের মতো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার কোন জুড়ি নেই। তাই যাদের পাইলসের মত কঠিন সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত এই পাতার রস করে খাওয়া উচিত। পাথরকুচি পাতার রস করে সেখানে গোলমরিচ বেটে একসাথে খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার জেনে নিন
৬। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে রেহাই পেতে হলে প্রতিদিন পাথরকুচি পাতার রস খেতে হবে। এই পাতার রস প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
৭। মাথা ব্যথা দূর করেঃ বর্তমান সময়ে মাথা ব্যাথা সমস্যা কম বেশি সকল বয়সী মানুষের মধ্যে রক্ষা করা যায়। তাই মাথা ব্যাথা দূর করতে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অনেক। এক্ষেত্রে এ পাতা ভাবে বেঁটে পেস্ট করে কপালে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে মাথা ব্যাথা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর হয়।
৮। ঠান্ডা জনিত রোগ দূর করেঃ শীতে ঠান্ডা জড়িত বিভিন্ন রকম রোগের প্রভাব ঘটে। সেটা ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ গুলো হল নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও জ্বর। এ সকল ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতা রস এবং খুব দ্রুত ফল দেয় এবং এ সকল ঠান্ডা জড়িত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা জেনে নিন
৯। ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ পাথরকুচি পাতার রস ব্লাড ক্যান্সার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই পাতার রস দিনে ২বার করে পাঁচ থেকে দশ ফোটা খেলে ব্লাড ক্যান্সারের মত মরণবাদী প্রতিরোধ করা যায়।
১০। ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করেঃ শরীরে কোন অংশ কেটে গেলে বা সেখানে ক্ষত হলে পাথরকুচি পাতার বেটে সে ক্ষতস্থান লাগিয়ে দিলে দ্রুত ক্ষতস্থান সেরে যায়। এছাড়াও পোকামাকড় কামড়ালে সেই স্থানে এ পাতার রস বেটে দিলে দ্রুত উপশম হওয়া যায় এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে রেহায় পাওয়া যায়।
এছাড়াও মৃগী রোগ দূর করতে। মেহ ও পুরাতন সর্দি কাশি দূর করতে এবং ডায়রিয়া ও আমশয় নিরাময়ে এই পাতার উপকারিতা অপরিসীম। এমনকি জন্ডিস ভালো করতেও এই পাতার জুস বানিয়ে খাওয়া হয়।একই সাথে এই পাতার রস লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
পাথরকুচি পাতার অপকারিতা
উপরোক্ত প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে আপনারা অবগত হয়েছেন পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। পাথরকুচি পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যা আমাদের সকলেরই জানা খুব প্রয়োজন। পাঠক বন্ধুগণ, এবার চলুন জেনে নেয়া যাক পাথরকুচি পাতার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
- বেশি পরিমাণে পাথরকুচি পাতা রস খেলে ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথার মত সমস্যা হতে পারে। পেটে ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাবো হতে পারে।
- যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে। সে সকল ব্যক্তি এই পাতার রস খেলে তাদের রক্তচাপ আরোও কমে যেতে পারে। এর ফলে মাথা ঘুরে এবং চোখে ঝাপসা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত পাথরকুচির পাতা খাওয়া গর্ভপাতের ছুটি বাড়িয়ে দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় মহিলাদের পাথরকুচি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বেশি পরিমাণে নিয়মিত পাথরকুচি পাতা রস খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে কোন খাবারই খেতে ইচ্ছা করে না এবং ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়।
- অতিমাত্রায় পাথরকুচি পাতার রস সেবন করলে পিত্তথলির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে পাথরকুচি পাতা উপকারিতা জানার পাশাপাশি এর অপকারিতা বা ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কেও আমরা অবগত হলাম। তাই যাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা রয়েছে তারা পাথরকুচি পাতা সেবনে পড়বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং এই পাতার রস সেবন করবেন।
কেননা এই পাতার রস কারো কারো ক্ষেত্রে উপকারিতা বয়ে আনে এবং কিছু কিছু মানুষের জন্য এই পাতার রস অপকারিতা বা ক্ষতি সাব্যস্ত হয়। তাই পাথরকুচি পাতার রস এবং এ পড়বে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বনে পাশাপাশি এ পাতার রসের গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের সকলের অবগত হওয়া উচিত।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা দূর করার জন্য পাথরকুচি পাতার নির্যাস সেবন করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি পাথরকুচি পাতা খাওয়ার কেউ সম্পর্কে।
পাথরকুচি পাতার গুনাগুন সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য এই পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা সঠিক নিয়মে এই পাতা খেলে তবে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকম রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে এই পাতার নির্যাস সকালে খালি পেটে ও বিকালেও খাওয়া যায়।
এ পাতার নির্যাস সেবনের জন্য পাথরকুচি পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে পাটাই বা ব্লেন্ডারে পিষে এর নির্যাস বের করে সেখানে সামান্য পরিমাণ মধু যোগ করে খেলে বিভিন্ন রকম রোগ থেকে পরিতান পাওয়া যায়। আশা করি এ প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন পাথরকুচি পাতা খাওয়া নিয়ম।
পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য
পাথরকুচি একটি শোভা বর্ধনকারী ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ঔষধি ভেষজ। সাধারণত ছোট অবস্থায় পাথরকুচির পাতা দেখতে গোলাকার ও ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। বড় হওয়ার সাথে সাথে এই গাছের পাতাগুলো লম্বাটে হয়। পাথরকুচি পাতার রং সবুজ হয় এবং এই গাছ ১ থেকে ১.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
পাথরকুচির গাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। পাথরকুচির পাতার ফুল দেখতে মনমুগ্ধকর এজন্য বাসাবাড়ির টবে এই গাছ লাগানো হয়। আশা করি এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনারা সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
পাথরকুচি পাতার ছবি
পাথরকুচি পাতা থেকে গাছ কিভাবে হয়
পাতা থেকে গাছের জন্ম হয় এই কথাটা ভাবতেই কেমন লাগে। কিন্তু হ্যাঁ সুপ্রিয় পাঠক, পাথরকুচি পাতা থেকে গাছে জন্ম হয়। এই গাছের বিশেষত্ব এটাই যে এই গাছের পাতা থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। এর জন্য আপনাকে পাথরকুচি একটা পরিপক্ক পাতা নিতে হবে। তারপর সে পাতাটি যেখানে লাগাবেন সেই স্থানে পাতাটি রেখে এর ওপর সামান্য পরিমাণ মাটির ছিটে দিতে হবে।
আপনি চাইলে পাতাটা সামান্য পরিমাণ অর্থ করে পুঁতেও দিতে পারেন। এরপর সেখানে কয়েক দিন নিয়মিত পানি ছিটিয়ে দিন এমন লক্ষ্য রাখুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে সে পাতা থেকে নতুন গাছের ভারার জন্ম হচ্ছে। মূলত এভাবে পাথরকুচি পাতা থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন পাথরকুচি পাতা থেকে গাছ কিভাবে হয় সে সম্পর্কে।
পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
পাথরকুচি একটি বীরুৎ জাতীয় ঔষধি ভেষজ। পাথরকুচি রোগ প্রতিরোধকারী উদ্ভিদ হিসেবে অতি পরিচিত। পাথরকুচির বোটানিক্যাল নাম Kalanchoe pinnata (Lamk) Pers। পাথরকুচি Crassulaceae ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত। ইউনানী বা আযুর্বেদিক চিকিৎসায় এটিকে বলে আসল পাথরকুচি।
লেখক এর মন্তব্য
পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারী ও ধৈর্য ধরে পড়েছেন। পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে জানতে পেরেছেন পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে। তবে আপনাদের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।
এই রকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমার www.sumonworld.com ওয়েবসাইটটি পরিদর্শন করুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভাল থাকুন এবং প্রিয়জনদের ভালবাসুন। আল্লাহ হাফেজ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url