তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
তুলসী পাতা আমরা অনেকেই চিনি কিন্তু তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তুলসির পাতা অতি পরিচিত একটি ভেষজ। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে।
তুলসী পাতা আমাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক রোগ সারাতে সাহায্য করে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হওয়া। এই আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে ধৈর্য ধরে পড়েন তাহলে তুলসী পাতা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে পারবেন।
ভূমিকা
প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তুলসির পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই পাতার ওষুধে গুণ অনেক। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশ ও ভারতে এই গাছের বেশি দেখা মিলে। সনাতন বা হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষেরা তুলসীর গাছকে পূজা করে। তাই সনাতনদের বাড়িতে এই গাছটির সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরোও জানতে পারবেন পারবেন তুলসী পাতার উপাদান, শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
তুলসী পাতার উপকারিতা
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ তুলসীর পাতাতে রয়েছে জিংক ও ভিটামিন সি। এছাড়াও এই পাতাতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ফাংগাল ও এন্টিভাইরাল উপাদান। এ উপাদানগুলো থাকার কারণে তুলসী পাতা শরীরের রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্ত্রের প্রদাহ, ফুসফুসের সমস্যা, লিভার ও ও জরের মত রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এই পাতা।
২। রক্তের সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ রোগীদের তুলসির পাতা ইনসুলিন উপাদান হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত তুলসীর পাতা খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা হ্রাস পায়। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আর রক্তের শর্করা পরিমাণ কমে। এই পাতাতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েডস ডায়বেটিস প্রোরতিরোধে খুব কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতার ১২টি উপকারিতা ও অপকারিতা
৩। ঠান্ডা জনিত কাশি দূর করেঃ ঠান্ডা জনি তোর বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা যেমন, সর্দি ,কাশি ও বুকে কফ জমা দূর করতে তুলসির পাতা মহা ঔষধ। ঠান্ডা জমিতে সমস্যা গুলো দূর করতে এই পাতা দ্রুত কার্যকরী। ঠান্ডার কারণে যাদের মুখে কফ জমে যায় তাদের জন্য তুলসীর পাতা ও আদা মিশ্রিত চা খুব উপকারী। তুলসী ও আদা মিশ্রিত চা পান করলে দ্রুত বুকে কফ দূর হয়।
৪। গলা ব্যথা ও মাথা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করেঃ যাদের গলা ব্যথা সমস্যা রয়েছে তাদের তুলসির পাতার উপর আস্থা রাখা উচিত। গলা ব্যথা সহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতেও এই পাতা বেশ উপকারী। তুলসীর পাতা পানিতে জাল করে সে পানি হালকা কুসুম অবস্থায় গড়গড়া করলে গলার ব্যথা কমে যায়। মুখের রোগ জীবাণু ও মুখের গন্ধ দূর করতে এই পাতা দ্রুত কাজ করে।
এছাড়াও তুলসীর পাতা মাথাব্যথা দূর করতে বিশেষ উপকারী। এই পাতা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। এর ফলে মাংস খিচুনি রোদ করার সাথে সাথে মাথা ব্যথাও দূর করে। তাই যাদের মাথা ব্যথা ও গলা ব্যথার মত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত তুলসী পাতার চা সেবন করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
৫। টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেঃ শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে টিউমার হয় এবং এই টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে তুলসীর পাতা ঔষধ হিসেবে পরিচিত। তুলসী পাতাতে রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ নামক এক উপাদান জাতীয় মারের কোষ উপলক্ষে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। তুলসীর পাতা অজ্ঞা শরীর টিউমার ব্রেস ক্যান্সার ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
৬। চর্ম দূর করতে সাহায্য করেঃ চর্মরোগ সারাতে ও দূর করতে তুলসীর পাতা ও দুর্বা ঘাসের ডগা একসাথে বেটে পেস্ট করে শরীরের যে স্থানে চর্ম দেখা দিয়েছে সেখানে লাগিয়ে রাখলে দ্রুত চর্মরোগ ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ঘা ও সরিয়াসিস ও কুষ্ঠ রোগের মত রোগ সারাতেও তুলসির পাতা সক্ষম।
আরও পড়ুনঃ এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার
৭। মাসিক বাপ পিরিয়ডের সমস্যা দূর করেঃ তুলসির পাতায় বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলোর উপকারিতা হলো এটি মেয়েদের মাসিকের বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন, মাসিক না হওয়া, দীর্ঘ সময় মাসিক হওয়া, মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যথা হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী গাছে শিকড় রোদ্রে শুকিয়ে গুড়ো করে পানের সাথে খেলে এই সমস্যা গুলি দূর হয়।
৮। পুরুষের বীর্য বৃদ্ধি করেঃ পুরুষের বীর্য বৃদ্ধি করতে তুলসী গাছের বীজের কথা না বললেই নয়। তুলসীর ভিজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। বিভিন্ন প্রতিবেদনা দেখা গেছে ২ টেবিল চামচ তুলসীর বীজে এক টুকরো পনিরের সমপরিমাণ বা সমতুল্য ক্যালরি রয়েছে। এর জন্য তুলসীর বীজ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে পুরুষের শরীরে বীর্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পুরুষের সহবাসে সময় স্থায়িত্ব হয়।
৯। চোখের সমস্যা দূর করেঃ তুলসীর পাতাতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান চোখের চুলকানি, অঞ্জনি ওঠা ও চোখে পিচুটি জমা হওয়া সহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করে। এছাড়াও তুলসীর পাতা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। এজন্য রাতে কয়েকটি তুলসির পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সে পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেললে চোখের বিভিন্ন রকম সংক্রমণ দূর হয়।
১০। কানের সমস্যা দূর করেঃ কানের বিভিন্ন রকম সমস্যা ও কানে প্রদাহ সারিয়া তুলতে তুলসী পাতা সাহায্য করে। তুলসী পাতা ও রসুনের রস থেকে প্রস্তুতকৃত তেল কানের প্রদাহ ও ব্যথা দূর করে। এছাড়া কানের বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে তুলসি তেল খুব কার্যকরী।
তুলসী পাতার অপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যে তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। তুলসী পাতা ভেষজ উপাদানের যেমন উপকারিতা রয়েছে এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এই পর্যায়ে এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি তুলসী পাতার কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক তুলসী পাতার অপকারিতা গুলো।
অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসির পাতা সেবন করলে বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নারীদের অতিরিক্ত তুলসীর পাতা গ্রহণের ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে নারীদের গর্ভাবস্থায় তুলসির পাতা সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এসে পরিমাণে তুলসির পাতা সেবনের ফলে জরায়ুর সংকোচন ঘটে।
তাই বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। এছাড়াও অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনের ফলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কোন প্রকার অপারেশন বা সার্জারির অন্তত দুই সপ্তাহ পূর্ব থেকে এই পাতার সেবন করা বন্ধ করতে হবে।
তুলসির পাতাতে রয়েছে পটাশিয়াম এই পটাশিয়ামের কারণে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেয়। আর যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের তুলসির পাতা সেবন করা থেকে বিরত থাকায় উত্তম। আবার অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসীর পাতা খেলে বমি বমি ভাব সহ বমি হয় এবং গলা জ্বালাপোড়া করে। আশা করি এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন তুলসী পাতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
তুলসী পাতার উপাদান
তুলসী পাতাতে যে সকল উপাদান বাবুনাগুন বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো নিম্ন উল্লেখ করা হলো।
- ভিটামিন সি
- এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান
- এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান
- ফাইটোনিউট্রইয়েন্টস
- এসেনসিয়াল অয়েলগুলো
- রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান
- ফাইটোক্যামিকেল
- স্যাপোনিন
- ত্রিতারপিনিন
- ফ্ল্যাবোনয়েডস
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ঋতু পরিবর্তনের ফলে শিশুদের জ্বর, সর্দি -কাশি, গলা ব্যথা ও ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ বালাই লেগেই থাকে। শিশুদের এ রোগ বালাই দূর করতে দারুন কাজ করে তুলসী পাতা। কিন্তু শিশুদের কিভাবে তুলসির পাতা খাওয়াতে হয় সে বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা।
নিয়ম না জানার কারণে শিশুদের তুলসির পাতা খাওয়ানোর ফলে এই পাতার সঠিক উপকারিতা পাওয়া যায় না। তাই এই পাতার সঠিক কার্যকারিতা পেতে শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। পাঠক, তাহলে চলুন এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ানোর জন্য প্রথমে তুলসী পাতা সংগ্রহ করে সে পাতাগুলো পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে পাটায় অথবা ব্লেন্ডারে বেটে পেস্ট করে নিতে হবে। আপনি চাইলে তুলসী পাতা সাথে আদা কুচি যোগ করতে পারেন। এরপর তুলসীর পাতা ও আদার পেস্ট এর সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিতে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
আবার আপনি চাইলে একটি পাত্রে পানি গরম করে সেখানে আদা কুচি, তুলসির পাতা ও দারুচিনির গুঁড়া মিশে একটি পানীয় প্রস্তুত করে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও তুলসীর পাতা ও মধু সরাসরি চিবিয়েও শিশুকে খেতে দিতে পারেন।
এভাবে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে শিশুদের তুলসির পাতা খাওয়ালে শিশুদের বিভিন্ন রকম শারীরিক রোগ বালাই দূর হবে। তাই পরিবারের শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত্তে এই নিয়মে শিশুদের তুলসীর পাতা খাওয়াতে পারেন।
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
তখন যত্নে আমরা সকলেই খুব সচেতন। তবে যত্ন করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সুন্দর ও মুসলিম ত্বক আমাদের সৌন্দর্যের অংশ। তাই তোকে যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। সুতরাং ত্বকের যত্নে ও ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করতে তুলসির পাতা ব্যবহার করা হয়। এই পাতাতে থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রইয়েন্টস এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে।
তাই তুলসির পাতা ব্যবহারে ত্বকে য়সের ছাপ পড়ে না। এই পাতা ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর হয়। শরীরে কোন অংশ পুড়ে গেলে বা শরীরে কোথাও ছেকা লাগলে তুলসীর রস ও নারিকেল তেল মিশিয়ে পোড়া স্থানে লাগালে জ্বালা কমে এবং দাগো দূর হয়। এই পাতা যৌবন ধরে রাখতেও সাহায্য করে।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশাকরি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করেছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত আলোচনা। করার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট WWW.SUMONWORLD.COM প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url