আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা জেনে নিন
পাঠক, আপনি কি আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করছেন? আপনি কি আমাশয় রোগে আক্রান্ত? এবং এই রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য কি কি খেতে হবে তা জানতে চান। তাহলে বলব আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আমাশায় রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে।
অনেক রুগী আমাশয় রোগে আক্রান্ত কিন্তু তারা জানেন না আমাশয় রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে।আর তাই আমাশয় রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে আমাশয় ভালো হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে জেনে নিন আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পকে।
ভূমিকা। আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাশয় একটি অতি পরিচিত রোগ। এই রোগটি ছোট বড় প্রাই সকল বয়সী মানুষের হয়ে থাকে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সকলকে অবশ্যই আমাশয় রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে। কোন ব্যক্তি আমাশয় রোগে আক্রান্ত হলে তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার খাদ্য নির্বাচন করা অনেক জরুরী একটি বিষয়।
কেননা এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে সেই সকল নির্বাচনকৃত খাদ্য তালিকা গুলো সহায়তা করে। তাই আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি ও পরিত্রান পাওয়ার জন্য সবচেয়ে যে জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল আমাশয় রোগীর জন্য খাদ্য তালিকা নির্বাচন করা। নিম্নে আমোশ রোগীর খাদ্য তালিকা গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হলো।
কাঁচা কলাঃ আমাশয় রোগীদের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা অপরিহার্য। কেননা কলা আমাশয় রোগ নির্মূল করতে অনেকটাই সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই কলা আমাশয় দূর করতে অনেকটাই উপকারী। তবে আমাশার রোগীদের জন্য কাঁচা কলা খাওয়াটা সবচেয়ে উপকারী। কারণ কাঁচা কলাতে উচ্চ মাত্রার অ্যামাইলেজ প্রতিরোধী চার্ট থাকে।
যা খাবার হজম হতে বেশি সময় নিয়ে থাকে এবং এর ছোট ছোট কনা গুলো অন্তরে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে। এর ফলে ভালো ব্যাকটেরিয়া পরিমাণ অন্ত্রে বৃদ্ধি পায়। এইজন্য কাঁচা কলা আমাশয় রোগের বিরুদ্ধে লড়ে মশাই রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
ওটমিলঃ পোরিজ সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি জানি। অনেকে আবার এই পোরিজে ওটমিল বলেও চিনে। ওটমিল আমাশয় রোগ নিরাময় ও চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদদের মতে আমাশয় রোগ নিরাময়ে ওয়েট মিলখা অত্যন্ত ভালো। ওটমিল আমাশয় রোগ থেকে পরিত্রাণ দেয়।
ভাতঃ আমরা সাধারণত বাসাবাড়িতে যে সাদা চালের ভাত খায় সেটি আমাশয় রোগ সারাতে অনেকটা উপকারী। কেননা ভাতের চালে দ্রবনীয় ফাইবার রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রবণীয় ফাইবার আমাশয় এর প্রভাব অনেকটা কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে ভাতের মার পান করলেও আমাশয় রোগ থেকে পরিত্রান মিলে।
রুটিঃ বিশেষজ্ঞগণ আমাশয় রোগীদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রুটি রাখার পরামর্শ দেন। ভাতের মত রুটিতেও দ্রবনীয় ফাইবার রয়েছে যা আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে। তাই আমাশয় হলে খাদ্য তালিকায় রুটি খেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, আমাশয় হলে পাউরুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
দইঃ আমাশায় রোগীদের জন্য দই একটি উপকারী খাবার। আর এজন্যই বহুদিন আগে থেকে আমাশয় রোগ নিরাময়ে মানুষ দই খেয়ে আসছে। দইয়ে রয়েছে ভালো ব্যাকটেরিয়া যা অন্তকে সুস্থ রাখার সাথে সাথে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে। গবেষণা অনুসারে, দইয়ে প্রোবায়োটিক ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া (ল্যাকটোব্যাসিলি) রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া আমাশয় সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে।
বেলঃ আমাশয় রোগীদের খাদ্য তালিকায় কাঁচা ও পাকা বেল রাখা দরকার। কেননা আমাশয় রোগ মুক্তির জন্য বেলের উপকারিতা অপারিসীম। কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থায় বেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আমাশয়ের মত রোগ দ্রুত ভালো সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেল নরম ও সহজপাত্র তাই খাবার হজম বা পরিপাকেও সাহায্য করে।
কর্ন ফ্লেক্সঃ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আমাশার রোগ নির্মূল করতে সাহায্য করে। এজন্য আমাশয় রোগীদের খাদ্য তালিকায় কর্ন ফ্লেক্স রাখা অত্যন্ত জরুরী। আমাশয় রোগ হলে কনফ্লেক্স এর পরিবর্তে আপনি চাইলে ভুট্টা ও খেতে পারেন। কেননা ভোটটাতেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে।
ডাবের পানিঃ আমাশয় রোগ হলে চিকিৎসকগণ রোগীকে ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। শুধু ডাবের পানি নয়। ডাবের পানির সাথে সাথে বিশুদ্ধ পানিও প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। আপনি চাইলে স্যালাইন পানীয় খেতে পারেন। সুতরাং আমাশয় রোগ হলে রোগীদের খাদ্য তালিকায় ডাবের পানি রাখা উচিত।
আমাশয় রোগের প্রকারভেদ
আমাশয় প্রদাহজনিত পেত ব্যথা, পেটে অস্থিরভাব শ্লেষ্মা বা রক্তস পাতলা পায়খানা সৃষ্টিকারী এক প্রকার রোগ। আমাশয় রোগ প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ অ্যামিবিয় আমাশয় বা অ্যামিবিয়াসিস আর ব্যাসিলারি আমাশয় বা শিগেলোসিস।
অ্যামিবিয় আমাশয়ঃ অ্যামিবিয় আমাশয় সাধারণত এককোষী পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত আমাশয়। Entamoeba histolytica নামক এককোষী অনুযায়ী যখন অন্তরে ঝিল্লিকে আক্রমণ করে তখন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে পচা দেহকোষ আমি বাকোষ বের হয়।
এর ফলে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা ও শ্লেষ্মা সহকারে বারবার পায়খানা হয়। কারো কারো বমি সাথে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। নাভির চারপাশে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং মলত্যাগের ইচ্ছা থাকলেও বাথরুমে গিয়ে পর্যাপ্ত মল বের হয় না।
ব্যাসিলারি আমাশয়ঃ এই আমাশয়ের সংক্রমণ ঘটে দূষিত পানি বা খাদ্যের সঙ্গে Shigella ব্যাসিলাস গলাধঃকরণের ফলে। পরিষ্কার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা এবং মলদার ভালোভাবে পরিষ্কার না রাখার কারণে এই আমাশয় বিস্তার লাভ করে।
অন্তের মধ্যে Shigella ব্যাসিলাস খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে স্পোশ কলার ক্ষতি হয় এবং প্রদাহ রক্তপাত ও জ্বরের সম্ভাবনার সাথে সাথে পেটে তীব্র ব্যথা হয়। মল ত্যাগের সময় মলের সাথে রক্ত ও শ্লেষ্মা নির্গত হয়।
শিশুদের আমাশয় রোগের ঔষধের নাম
বাচ্চাদের বা শিশুদের আমাশয় রোগের চিকিৎসায় মূলত কয়েকটি সিরাপ ও ঔষধ ব্যবহৃত হয়। বড়দের মতো ছোট শিশুদেরও আমাশয় রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের ওষুধ গুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য সিরাপটাই সবথেকে কার্যকরী। আমাদের সকলের বাসায় ছোট্ট সোনামণিরা রয়েছে।
তাদের আমাশয় রোগ নিরাময়ের জন্য আমাদের অবশ্যই শিশুদের আমাশের রোগের ঔষধ ও সিরাপ এর নাম গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। বয়স ভেদে ছোট শিশুদের আমাশয় হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর এই সিরাপ ও ঔষধ গুলো খাওয়ানো উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এই সিরাপ ও ঔষধ গুলো খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
সিরাপঃ
- ফিলমেট ৬০ মি.লি.
- মেট্রো ৬০ মি.লি.
- বি-জিংক ১০০ মি.লি.
- সিপ্রোসিনি ২৫০
ট্যাবলেটঃ
- লোপারামাইড ২ এমজি
- ফিলমেট ৪০০ এমজি
- মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি
- সেক্নিডাজল ১০০০ এমজি
আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না
আমার সহায় রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে পূর্বের প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। আমাশয় রোগ হলে আমাশয় রোগীদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা যেমন জরুরী ঠিক তেমনি এই রোগ হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে।
কারো আমাশয় রোগ হলে সব সময় চেষ্টা করতে হবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার। আমাশয় রোগ চলাকালীন সময় রোগীকে অবশ্যই এমন কিছু কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে যে খাবারগুলো পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাশয় রোগ হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- বিভিন্ন রকম বাদাম, মটরশুটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি খাওয়া যাবেনা। কেননা এ সকল সবুজ শাকসবজিত খেলে অ্যাসিডিটি হয়ে আমাশয় আরো বেড়ে যেতে পারে।
- আমাশয় হলে দুধ ও দুধ খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। এ সময় দুধ, পনির, মাখন ও দুধ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন খাওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র দই খাওয়া যাবে।
- অতিরিক্ত তেল ও মসলায় ভাজা খাদ্য, মুরগির মাংস ক্রিম এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- আমাশয় হলে অ্যালকোহলযুক্ত বিভিন্ন রকম পানীয় এবং ধূমপান করা যাবে না।
- চা ও কফি অথবা অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাদ্য খাওয়া যাবে না।
- লাল মাংস ও কাচা শাকসবজি খাওয়া যাবে না।
আমাশয় রোগের হোমিও ঔষধের নাম
আমাশয় রোগীদের আমাশয় নিরাময়ে একটি কার্যকরী হোমিও ঔষধ হলো "আর ৪"। এই হোমিও ৬৫ যেকোনো আমাশয় নিরাময়ে খুব দ্রুত কাজ করে। যাদের নতুন আমাশয় হয় তাদের ক্ষেত্রে ১৫ ফোটা করে দিনে চারবার আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খেলে দ্রুত আমার হয় ভালো হয়।
আর ছোটদের ক্ষেত্রে ৭ ফোটা। আমাশয়ের জন্য আরোও একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োকেমিক কম্বিনেশন এর হোমিও ঔষধ হলো "বিসি ৯"। এই হোমিও ঔষধটি নতুন আমশয় যাদের হয়েছে তাদের জন্য দিনে চারটি করে বড়ি বা ট্যাবলেট ৪ বার খেতে হয়।
এবং যাদের পুরনো আমাশয় রয়েছে তাদের জন্য দিনে ৪টি করে বড়ি ৩ বার খেতে হয়। নতুন ও পুরাতন উভয় প্রকার আমাশয়ের ক্ষেত্রে একটি মিশ্রণ ঔষধ তৈরি করতে ৩টি হোমিও ঔষধ লাগে।
১।কুড়চি মাদার টিংচার
২। চ্যাপারা এম মাদার টিংচার এবং
৩। ঈগলমার মাদার টিংচার।
মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। এবং পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।
এবং তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumomworld.com টিতে প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url