পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাঠক, আপনি কি পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানতে চাইছেন? তাহলে বলব আপনি সঠিক ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে প্রবেশ করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
তাহলে চলুন পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানার জন্য এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে ও মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কেননা এই আর্টিকেলটিতে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপাযয়ের বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

অর্শ রোগ বা পাইস যার ইংরেজি হেমোরয়েড (Haemorrhoids)। আমাদের দেশে পাইলস একটি অতি পরিচিত রোগ। পুরুষ ও মহিলা এমনকি ছোট শিশুদেরও এই রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগটি অতি যন্ত্রণাদায়ক ও অস্বস্তিকর রোগ। পাইলস হলে মলদ্বার বা মলদ্বারের নিচে শিরা গুলো ফুলে যায় এবং প্রসারিত হতে থাকে। 


পাইলস মলদ্বারের ভিতরে অথবা মলদ্বারের বাইরেও হয়ে থাকে এবং গুটি গুটি অনুভূত হয়। তাই পাইলস রোগ হলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় আমাদের সকলের জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন পাইলস এর লক্ষণ, পাইলসের কারণ ও পাইলস কি ভালো হয়? এবং পাইলস থেকে মুক্তির দোয়া সম্পর্কে। তাহলে চলুন মুল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে পাইলস অতি পরিচিত একটি রোগ। যে কোনো বয়সের পুরুষ ও মহিলার এ রোগটি হওয়া সম্ভবনা থাকে। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে বা ধারণা থাকলে। প্রাথমিক অবস্থাতেই এই যন্ত্রণাদায়ক রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

অপরদিকে প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা না নিলে এ রোগটি জটিল আকার ধারণ করে এবং অবশেষে অপারেশন পর্যন্ত করাতে হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে পাইলসের সঠিক চিকিৎসা করানোর জন্য সকলের জানা উচিত পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।

এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নিন পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে।

পর্যাপ্ত পানি পান করেঃ  পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কেননা পানি শূন্যতার কারণে কষ্টকাঠিন্য দেখা দেয় এবং পাইলসের সূচনা হয়। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

ইসবগুলে্র ভুসি খাওয়াঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ইসবগুলের ভুষি পানিতে মিশিয়ে পান করলে পায়খানা স্বাভাবিক থাকে। এর ফলে কষ্টকাঠিন্য ও পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে হলে পরিমাণ মতো ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

মূলার জুস পান করেঃ মুলা একটি শীতকালীন সবজি। এই সবজিটির গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাই পাইলস বা অর্শ্ব সমস্য থেকে মুক্তি পেতে মূলা অত্যন্ত উপকারী। মূলার রস খেতে যাদের সমস্যা হয় তারা চাইলে অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। নিয়মিত মূলার জুস খেলে পাইলস বা অর্শ এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লেবু ও আদার রস পান করেঃ আপনারা হয়তো জানেন পাইলসের অন্যতম প্রধান যে কারণটি রয়েছে সেটা হল শরীরের পানি শূন্যতা। তাই শরীরে পানি শূন্যতা দূর করতে পর্যাপ্ত পানি পানের পাশাপাশি লেবু ও আদার রস পানিতে মিশিয়ে সেখানে এক থেকে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হওয়ার পাশাপাশি পাইলসের সমস্যা সমাধান হয়।

মলত্যাগের সময় বসার ধরন পরিবর্তন করেঃ সঠিক নিয়মে টয়লেটে বা কমোডে বসে মলত্যাগ না করার কারণে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে কোমরের মলত্যাগ করার সময় পায়ের নিচে একটা ছোট টুল রাখা প্রয়োজন। আর সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বসতে হবে। এর ফলে মলত্যাগের সময় বৃহদন্ত্রে কম চাপ পড়বে এবং পাইলস হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।

মলত্যাগের সময় পায়খানায় কম সময় ব্যয় করেঃ অনেকেই আছেন যারা পায়খানায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে। এটা মোটে উচিৎ না। মলত্যাগ হয়ে গেলে স্বস্তি অনুভব হলে পায়খানা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। 

কেননা মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ কোমড বা প্যানে বসে থাকলে মলদ্বার ঝুলে যেতে পারে। তাই মলত্যাগের সময় সাবধানতা অবলম্বন করে কম সময়ে মলত্যাগ করে পায়খানা থেকে বের হয়ে পাইলসের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া পাওয়া সম্ভব হয়।

ডুমুরঃ পাইলসের সমস্যার সমাধান করে চিরতরে মুক্তিতে অনেক কার্যকরী ডুমুর। পাইলসের রোগীদের জন্য ডুমুর খাওয়া খুব উপকারী। তাই পাইলসের রোগীদের জন্য ডুমুর মহা ঔষধ। রাত্রে কয়েকটি কাঁচা ডুমুর ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। 

এরপর ডুমুরগুলো ১ গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। ও পরদিন সকালে খালি পেটে সেই ডুমুর ভেজানো পানি অর্ধেক খেয়ে নিতে হবে এবং বাকি অর্ধেকটা পানি বিকালে খেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলেই বুঝতে পারবেন আপনি কতটা উপকৃত হচ্ছেন।

ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমেঃ সতেজ ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা সবুজ শাকসবজি ও ফলমূলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবারের ফলে সহজেই মলত্যাগ করা সম্ভব হয় এবং পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পাইলস এর লক্ষণ

প্রাথমিক অবস্থায় পাইসের লক্ষণ গুলো সনাত্মক বা চিহ্নিত করতে পারলে পাইলস রোগ থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটির লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত ভালো হওয়া যায়। 

এমন অনেকে আছে যারা পাইলসের লক্ষণগুলো বুঝতে পারা সত্বেও চিকিৎসা নিতে অনেক দেরি করে বা অবহেলা করে। এর ফলে এই রোগটি জটিল আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন সমস্যার উৎপত্তি ঘটায়। তাই আমাদের সকলের উচিত পালসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা 

এবং এই লক্ষণগুলো শরীরে দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আলোচনা করতে চলেছি পাইলস এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নিন পাইলসের লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

  • পায়ু বা মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া
  • মলদ্বারে অস্বাভাবিক ব্যথা ও অস্বস্তি ভাব
  • মলদ্বারে চারপাশ ফোলা ও যন্ত্রণা হওয়া
  • মলত্যাগের সময় ব্যাথাহীন রক্ত বের হওয়া
  • মাটিতে বা শক্ত জায়গায় বসলে মলদ্বারে ব্যথা পাওয়া
  • মলত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া ও রক্তপাত

পাইলস এর কারণ

বিভিন্ন কারণে পাইলস হয়ে থাকে। যেকোনো একটি কারণ কে দায়ী করা যাবে না। তাই আমাদের সকলের উচিত পালসের লক্ষণগুলো জানার পাশাপাশি কি কি কারণে পাইলস রোগ হয় তা জানা। কেননা পাইলসের কারণ গুলো জানা থাকলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

পাইলসের কারণ গুলো জানা থাকলে পূর্ব থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে এই রোগটি থেকে দূরে থাকা যায়। আজকের এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন পাইলস এর  কারণগুলো কি কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। পাঠক বন্ধুগণ, তাহলে জানুন পাইলস হওয়ার কারণগুলো-

  • পরিবারে কারো পাইলস থাকলে
  • নিয়মিত শক্ত মলত্যাগের কারণে
  • মল ত্যাগের সময় বেশি চাপ দিলে
  • দীর্ঘ সময় ধরে মলত্যাগ করলে
  • দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগলে
  • দীর্ঘ সময় ধরে ডায়রিয়া হওয়ার কারণে
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে
  • অতিরিক্ত ভারী বস্তু তোলার সময় পায়ুপথে চাপ লাগলে
  • বার্ধক্য জনিত কারণে
  • অনিয়মিত মলত্যাগের কারণে
  • এছাড়াও দীর্ঘদিন কাশি ও বমির কারণে

পাইলস কি ভালো হয়

পাইলস কি ভালো হয়? এই সাধারন প্রশ্নটা পাইলস যাদের হয়েছে তাদের মনেও ঘুরপাক খায় আবার যাদের হয়নি তাদের মনেও ঘুরপাক খায়। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, হ্যাঁ পাইলস রোগ ভালো হয়। প্রাথমিক অবস্থায় বা সঠিক সময়ে যদি পাইলস রোগের লক্ষণগুলো বুঝতে পারা যায় এবং সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ যায় তবে পাইলস ভালো হয়ে যায়। 

পাইলস হওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যে কোন বয়সী মানুষের পাইলস হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক বা সুচিকিৎসা না নিলে এই রোগ শরীরে থেকে যায় ও জটিল আকা ধারণ করে। এবং পরবর্তীতে এই রোগ থেকে বিভিন্ন রোগের  জন্ম হয়। 

জীবন যাত্রার অভ্যাস ও খাবার দাবারের পরিবর্তন করার মাধ্যমে এ রোগ ভালো করা যায়। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়া। মলত্যাগের বেগ পেলে সময় মত মলত্যাগ করা। পর্যাপ্ত পানি পান করা। মলদ্বার পরিষ্কার রাখা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার খাওয়া এবং চিকিৎসকের চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ ভালো হয়ে যায়।

পাইলস থেকে মুক্তির দোয়া

যে কোনো রোগের মতো পাইলস রোগ থেকে মুক্তির জন্যও পবিত্র কোরআনে দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কেননা মহান রাব্বুল আলামিন যে কোন রোগ বালাই থেকে সেফা অর্জন করার জন্য বেশি বেশি দোয়ার আমল করতে বলেছেন। তাই যে কোনো রোগের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনের পাশাপাশি বেশি বেশি দোয়ার আমল করা অপরিহার্য। 

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ইনশিরাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফীল নিয়মিত তিলাওয়াত করবো। এই দুইটি সূরা দ্বারা ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আমরা প্রতিদিন পড়তে থাকবো। তাহলে ইনশা-আল্লাহ অর্শ বা পাইলস রোগ থেকে আমরা দ্রুত মুক্তি অর্জন করতে পারব। ইনশা-আল্লাহ।

পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয়

লেখকের মন্তব্য

পাঠক, আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। 

এবং তাদের জানার সুযোগ দেন পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। যেকোনো রোগ হলে ধৈর্য ধরুন সঠিক সময়ে সচিবসা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
(০৮৭)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url