রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় ও করণীয় কি?

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এ বিষয়ে জানার জন্য আপনি কি আগ্রহী? তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে। আজকের এই পোস্টটিতে সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়?
তাই এ পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়? সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভূমিকা

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এই বিষয়ে জানার জন্য এই আর্টিকেলটির সাথে থাকুন। রাসেল ভাইপার এক আতঙ্কের নাম। আমাদের দেশে এই সাপের কামড়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। রাসেল ভাইপার নামে সাপটির অস্তিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ১ শতাব্দী থেকে। 

একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকরা পান। বাংলাদেশে যে কয়েকটা বিষাক্ত সাপ রয়েছে যেমন- গোখরো ও কেউটে। এই সাপ গুলোর চেয়েও বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। 

এই সাপটি নিশাচর এবং ইঁদুর জাতীয় প্রাণী খেতে পছন্দ করে। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে, জানতে পারবেন রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়, রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় ও রাসেল ভাইপার সাপ কোন দেশের এবং রাসেল ভাইপার কামড়ানোর লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

রাসেল ভাইপার কি

রাসেল ভাইপার হলো এক ধরনের অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ। এই সাপটি ইংরেজি নাম ( Daboia russelii)। ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতে এসেছিলেন স্কটিক সার্জন প্যাট্রিক রাসেল নামক একজন সাপ গবেষক। ১৭৯৬ সালে তিনি সাপ গবেষণা শুরু করেন। তারি নাম অনুসারে এই সাপের নামকরণ করা হয়েছিলস রাসেল'স ভাইপার।

তবে স্থানীয় লোকেরা এই সাপকে চন্দ্রবোড়া ও উলুবোড়া নামেও ডাকে। এই সাপটির মাথা চ্যাপ্টা ত্রিভুজ আকার এবং হাড় থেকে আলাদা। রাসেল ভাইপারের নাকের ছিদ্র বড় এবং চোখ গুলো বড় ও হলুদ। শরীরে বাদামি দাগ থাকে। 

এই দাগের প্রত্যেকটির চারপাশে একটি কালো বলয় রয়েছে। রাসেল ভাইপার লম্বাই ৬৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এশিয়া দ্বীপগুলোতে এই সাপ গড়ে কিছুটা ছোট হয়। সাধারণত ঝোপ ঝাড়, বন, জঙ্গল ও ফসলের খেতে এই সাপের বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়।

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়

রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয়? এ বিষয়ে আমাদের জানা খুবই জরুরী। রাসেলস ভাইপার নামে বিষাক্ত সাপ যে স্থানে কামড়ায় সে জায়গায় ব্যথা শুরু হয়। অবিলম্বে কামরানোর স্থান ফুলে ওঠে। এই সাপের কামড়ের একটি সাধারন উপসর্গ হলো রক্তপাত। বিশেষ করে দাতের মাড়ি থেকে এবং প্রস্রাবে মাধ্যমে রক্তপাত হয়। 

রাসেল ভাইপারের কামড়ে ২০ মিনিটের মধ্যে থুতুর সাথে রক্তপাত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। একই সাথে রক্তচাপ কমে যায় এবং হৃদস্পন্দন কমতে থাকে। আশা করি সংক্ষিপ্ত এই আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় সেই সম্পর্কে।

রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয়

রাসেল ভাইপার দেখতে কিছুটা অজগর সাপের মত। এই সাপটি শুকনো পাতা, জঙ্গল ও ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। বিশেষ করে ধানের ক্ষেত ও ফসলের জমিতে এর বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়। এজন্য ফসলের জমিতে কাজ করতে যাওয়ার পূর্বে কৃষকদেরকে লম্বা বাশ বা লম্বা লাঠি দিয়ে ঝোপঝাড় নাড়িয়ে তারপর জমিতে নামতে হবে। 

বিশেষ করে ঝোপঝাড় ও ফসলি জমিতে কাজ করতে যাওয়ার সময় গামবুট ও জিনসের ট্রাউজার পরিধান করতে হবে। এই সকল সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও যদি রাসেল ভাইপার কোন ব্যক্তিকে কামড়ায় তবে কিছু করণীয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয় বিষয়গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

  • সর্ব প্রথমে কাউকে রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় হিসাবে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে সাপে কামড় মানেই মৃত্যু নয়। সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে সাহস দিতে হবে।
  • যত দ্রুত সম্ভব রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত স্থান থেকে শরীরের অন্য অংশে যাতে বিষ না ছড়াতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • সাপে কামড়ের পর ওই ব্যক্তিকে নড়াচাড়া করতে দেয়া যাবে না। কেননা ভুক্তভোগী যত নড়াচড়া করবে তার শরীরে রক্তের সাথে ওই বিষ তত মিশাতে থাকবে।
  • যদি ভুক্তভোগী পায়ে কামড় খায় তবে সাথে সাথে বসে পড়তে হবে। এবং হাত বা শরীরের অন্য অংশে যদি কামড়ায় তাও বেশি নড়াচড়া করা যাবে না।
  • রাসেল ভাইপারের কামড়ে দাঁত বসে গেলে শরীরের ক্ষতস্থানসহ উপর-নিচের জায়গা হালকা করে ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
  • হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বে অর্থাৎ চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ব্যান্ডেজ কোনোভাবেই খোলা উচিত না।
  • সাপে কাটা ভুক্তভোগীর শ্বাসকষ্ট হলে মুখে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করা।
  • এবং সর্বোপরি যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছানো এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা।

মনে রাখবেন রাসেল ভাইপার বা যেকোনো সাপে কামড়ালে সাপটিকে মারার জন্য সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। কোনভাবেই সময় নষ্ট করা উচিত না। অনেকেই সাপে কামড়ালে সর্বপ্রথমে ওঝার কাছে যান। 

এই ভুলটি দয়া করে কেউ করবেন না। সাপে কাটলে সময় নষ্ট না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিন ও সুস্থ হোন। কেননা আপনার সতর্কতায় একটি জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।

রাসেল ভাইপার সাপ কোন দেশের

বর্তমানে রাসেল ভাইপার এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যার কারণে এই সাপ সম্পর্কে জানার আগ্রহ সকলের। রাসেল ভাইপার কোন দেশের সাপ এটা আসলে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রাসেল ভাইপার শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, নেপাল, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি রয়েছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশের ২৭ টি জেলাতে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেল ভাইপারের আতঙ্ক। বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলাগুলার মধ্যে পদ্মা তীরবর্তী জেলা গুলোতে এই সাপের উপদ্রব্য সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রাজশাহী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া ও ভোলাতে।
 
সব থেকে বেশি রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর ফলে গ্রামগঞ্জে এই সাপের আতঙ্ক বিকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশের সব জায়গাতে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে রাসেল ভাইপার নামক সাপটি।

রাসেল ভাইপার সাপের ছবি



রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ানোর লক্ষণ

রাসেল ভাইপারের কামড়ানোর কিছু লক্ষণ রয়েছে। এই সকল লক্ষণগুলোর মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয় যে ভুক্তভোগী কে রাসেল ভাইবারে কামড়িয়েছে। এই সাপে কামড়ালে দংশিত স্থানের বিষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। বিষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে গেলে শরীরে ক্রমাগত রক্তপাত ও রক্ত জমাট বাধা, স্নায়ু বিকলাঙ্গ  হতে পারে। 

এছাড়াও যে ব্যক্তিকে রাসেল ভাইপার কামড়ায় তার চোখ ভারি হয়ে আসে। একই সাথে কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এই সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যায়। ফুসফুসের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে পারে এমনকি হার্ট অ্যাটাকও ঘটতে পারে।

আশা করি উপর্যক্ত আলোচনাগুলো পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ানোর লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাই এই সাপের কামড়ানোর লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান এবং সুচিকিৎসা প্রদান করুন।

মন্তব্য

রাসেল ভাইপার কামড়ালে এর বিষক্রিয়া হয় মারাত্মক। এই সাপের কামড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থাতে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মারা যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় এই বিষয়ে। এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

আরোও গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumonworld.com এর সাথেই থাকুন। এতক্ষণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রাসেল ভাইপার থেকে সাবধানে থাকুন এবং সবাইকে এই সাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করুন।
(০৯২)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url