পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন।

সুপ্রিয় পাঠক, পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা আজকে এই পোস্টিতে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে থাকেন। তবে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন।
পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
তাহলে চলুন, আজকের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা। আশা করি এই পোস্টি পড়তে আপনার ভালো লাগবে। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে পোস্টটির সাথেই থাকুন।

ভুমিকা

আম হল জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফল। আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাংগিফেরা ইন্ডিকা। আম দক্ষিণ এশিয়ার ফল তবে বর্তমানে সারা বিশ্বে এই ফলটি চাষ করা হচ্ছে। রসালো ও লোভনীয় এই ফলটিকে ফলের রাজা বলা হয়। আম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
 

আমের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। তবে আমের আকার, আকৃতি, স্বাদ, রঙ ও গন্ধের ভিন্নতার কারণে একেক আমলে একেক নাম দারা চিহ্নিত করা হয়। জনপ্রিয় আম গুলো হলো হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আলফানসো এবং কেসাসা। 

এই সকল আম তাদের পুষ্টিগুণ ও স্বাদের কারণে বক্তাদের আকৃষ্ট করে। আজকের এই প্রতিবেদনটিতে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পাকা আমের উপকারিতা

আম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আম ছোট বড় সকল বয়সের মানুষ খেতে পছন্দ করে। পাকা আম পুষ্টিগুনে ভরপুর ও রসালো একটি ফল। আম খেতে যেমন অত্যন্ত সুস্বাদু ঠিক তেমনি এর উপকারিতা রয়েছে বহুগুণ। আম আমরা প্রায় সকলেই খাই কিন্তু আমের উপকারিতা সম্পর্কে তেমন জানিনা। তাহলে জেনে নিন পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কে।


১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পাকা আম আমাদের রোদ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা শরীরকে বিভিন্ন রকম সংক্রমনের হাত থেকেও রক্ষা করে। এই ফলটিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যালস হ্রাস করতে সাহায্য করে।

২। দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করেঃ পাকা আম খেলে চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর হয়। কেননা আমে রয়েছি ভিটামিন "এ"। আমরা কম বেশি সকলেই জানি ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। একই সাথে আম ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে চোখে রক্ষা দান করে।


৩। খাদ্য হজমে সাহায্য করেঃ আম খেলে খাদ্য হজম ভালো হয়। হজম প্রক্রিয়া ভালো হওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য মত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা দূর হয়। আমি দাড়ি ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেতে যাবতীয় সমস্যা দূর করে।

৪। ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ আম ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এই ফলটিতে থাকা ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। একই সাথে ত্বকের দাগ কমাতে এবং ত্বকে বয়স্কের ছাপ রোধ করতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ

৫। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ আম খেলে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি কমে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে আম স্তন ও পলিফেনলস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

৬। রক্ত শুদ্ধিকরণ করতে সাহায্য করেঃ আমে থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ রক্ত শুদ্ধ করতে সহায়তা করে একই সাথে লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

৭। হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করেঃ রসালো এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাই আম খেলে আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং হাড় মজবুত থাকে।

৮। পানি শূন্যতা দূর করেঃ আমে প্রায় ৮০ শতাংশ পানি রয়েছে। তাই আম খেলে আমাদের শরীরের পানি ঘাটতি দূর হয়। এর ফলে শরীর ডিহাইডেশনের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং হেট স্টপ প্রতিরোধ করে।

৯।মানুষিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ আমি রয়েছে ভিটামিন বি৬ নামক উপাদান। এই উপাদান আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। একই সাথে আমাদের মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মেজাজ ফুরফুরে রাখে।

১০। প্রদাহ বা ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ শরীরের বিভিন্ন রকম প্রদাহ বা ব্যথা প্রশমনে আম সাহায্য করে। আমে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। এই উপাদান ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

১১। চুল পড়া রোধ করেঃ আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ফলিকল গুলোকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। এর ফলে চুল পড়া কমে যায় এবং চুল ঘন ও লম্বা হয়।

১২। হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ এই ফলটিতে থাক উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, প্যাকটিন ও আঁশ এবং পটাসিয়াম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

পাকা আমের অপকারিতা

পাকা আম খাওয়া যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি পাকা আমের কিছু অপকারিতা রয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যে কোন জিনিস অতিরিক্ত গ্রহণ বা সেবন উচিত না। নিম্নে পাকা আমের কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো উল্লেখ করা হলো-

  • আমে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই যে সকল ব্যক্তির ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য বেশি আম খাওয়া উচিত না। বেশি আম খেলে ডায়াবেটিসে মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  • আমি ইউরিশিয়াল নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তাই আম খেলে এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে অনেকের এলার্জিজনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • এমনকি এর রাসায়নিক পথের কারণে অনেকের ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- ত্বক ফুলে ওঠা, ত্বকে ফোসকা পড়া, অতিরিক্ত চুলকায়, ও তোকে ছোট ছোট দানার মত দেখা দেওয়া।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে অনেকের বদহজম হওয়া সম্ভব না থাকে। ফলে পেট খারাপ হয় এবং বমি বমি ভাব ও বমি হয়। এমনকি পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
  • ফলের রাজা আমি প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি বিদ্যমান রয়েছে। তাই বেশি পরিমাণে আম খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেলে শরীরের বিভিন্ন রকম জটিলতার সৃষ্টি হয়।
  • আম গরম প্রকৃতির ফল তাই বেশি পরিমাণ আম খেলে শরীরে তাপ অনেক বেড়ে যায়। অনেকে আবার দুধের সাথে আম খেয়ে থাকে। এভাবে আম খেলে বদহজম, ডায়রিয়া সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
  • যারা বেশি বেশি আম খায় তাদের প্রচন্ড ঘুম পায়। বেশি বেশি ঘুমানো কারণে অল্পতে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। একই সাথে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও যে সকল ব্যক্তি কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের বেশি পরিমাণে আম খাওয়া ঠিক না। আম খেলে কিডনির সমস্যা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বিশেষ করে যারা অ্যাজমাতে ভুগছেন তাদের আম খাওয়া থেকে বিরত থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে

রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ফলটিতে কি কি ভিটামিন আছে আজকের এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা তা জানবো। পাকা আম বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি লোভনীয় ফল। পাকা আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ এই ফলটি এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে শরীর সুস্থ রাখার জন্য এই ফলটি খুব উপকারী। 

এই ফলটির পুষ্টির উপাদান শরীরের শক্তি যোগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। পাকা আমের ক্যারোটিনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের আমে রয়েছে প্রায় ২৭৪০ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন। এছাড়া পাকা আমে রয়েছে-

১.৩ গ্রাম আয়রণ, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মি.গ্রা. থায়ামিন, ভিটামিন বি১ ০.১ মি.গ্রামি.গ্রা ও বি২ ০.০৭ মি.গ্রা, খনিজ লবণ ০.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.০ গ্রাম ও ফ্যাট ০.৭ গ্রাম, শ্বেতসার ২০ গ্রাম।

আম খাওয়ার সঠিক সময়

গ্রীষ্মকাল মানে সকল ফলের সমারোহ। গ্রীষ্মকালে কমবেশি সকল ফলগুলো পাওয়া যায়। তাই কি সকালে যতগুলো ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে আম খুব জনপ্রিয়। আম কাঁচা হোক কিংবা পাঁকা সব অবস্থাতে এই ফলটি খাওয়া যায়। আম আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। 

অনেকে রুটি দিয়ে আম খেতে পছন্দ করে, আবার অনেকেই চিড়া দিয়ে আম খায়। কেউ কেউ তো আবার ভাত দিয়েও আম খায়। কেউবা এমনি আম খেতে ভালোবাসে। আম যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন আম খাওয়ার সঠিক সময় রয়েছে। আজকের প্রতিবেদন মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আম খাওয়ার সঠিক সময় কখন সে সম্পর্কে।

আম যেহেতু নিজেই পরিপূরক খাবার। তাই খুব ভরা পেটে আম খাওয়া উচিত না। আম খাওয়া সঠিক সময় হলো সকালে নাস্তা বা দুপুরের খাওয়ার মাঝামাঝি সময়। সকালে নাস্তা খেয়ে কিছুক্ষণ সময় পর আম খাওয়া ভালো। অথবা বিকেলে হালকা নাস্তার সাথে আম খাওয়া যেতে পারে।

পাঁকা আম খাওয়া সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন/উত্তর

১। পাঁকা আম খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সুপ্রিয় পাঠক। পাঁকা আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালোতো বটেই তার সাথে অনেক উপকারী। পাঁকা আম প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীর সুস্থ রাখে।

২। প্রতিদিন কয়টা আম খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ প্রতিদিন ১ থেকে ২টা মাঝারি আকারের আম খাওয়া স্বাস্থ্যকর জন্য উপকারী। বেশি বেশি আম খেলে ওজন বৃদ্ধির বৃদ্ধির পাশাপাশি ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

৩। আম খাওয়ার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অতিরিক্ত আম খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বৃদ্ধি, হজমের সমস্যা,এবং অ্যালার্জিত সৃষ্টি হতে পারে।

৪। পাকা আম ও কাঁচা আমের মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী?
উত্তরঃ পাকা আম ও কাঁচা আম দুই অবস্থাতেই এই ফল থেকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। তবে বিশেষ করে পাকা আমের পুষ্টিকর্ন ভিটামিন বেশি।

উপসংহার

আজকের এই পোষ্টের একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন পাকা আমের উপকারিতা অব্যাহত সম্পর্কে। আরো জানতে পেরেছেন পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে ও আম খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে। 

প্রকৃতির এই ফলটি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক অনেক বেশি উপকারী। তবে এই ফলটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা পরিমাণ মতো আম খাব। তাহলে আমরা আমের উপকারিতা গুলো সঠিকভাবে পাব। 

এ পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে এই পোস্টটি আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ এই পোস্টটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবারও দেখা হবে নতুন কোন পোস্টের মাধ্যমে। ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url