ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে সে সম্পর্কে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে আপনি ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই সম্পর্কে অজানা বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন। এই পোস্টটিতে তে আরোও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে। এ তথ্যগুলো পড়তে আশা করি আপনার ভালো লাগবে।

উপস্থাপনা

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশা বাহিত এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। এই মশার কামড়ে ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রোগীর শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের বিভিন্ন উপসর্গগুলো দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর দেহের বিভিন্ন উপসর্গ গুলো হলো- স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।


মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও বমি, পেশীতে ও গাঁটে প্রচন্ড ব্যথা। আজকের রি পোস্টটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি  ডেঙ্গু জ্বর  হলে কি খেতে হবে সে সম্পর্কে। অনুরোধ রইলো পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল  আলোচনায় যাওয়া যাক।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

বর্তমানে সারাদেশসহ বিশেষ করে রাজধানীতে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সারাদেশে মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বেশিরভাগী রোগী ঢাকাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেকে মারাও যাচ্ছেন।


ডেঙ্গু জ্বর রোধে বিশেষ করে সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু থেকে সুস্থতা অর্জন করার জন্য সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক খাবার গ্রহণ অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় কিছু পুষ্টিকর খাবার-দাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুস্থতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে এমন কিছু কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে নিম্নে সেসকল খাবার সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো-

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ কমলা লেবু, লেবু্‌, জাম্বুরা ও টক জাতীয় ফল। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীরের কোষের সুস্থতা দান করতেও সাহায্য করে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত।

শাকসবজিঃ সতেজ পাতা যুক্ত শাক সবজি যেমন- পালং শাক, লাল শাক, সবুজ শাক, মুলা শাক, পুই শাক ইত্যাদি শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিএক্সিডেন্ট এবং আয়রন রয়েছে। যা প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুস্থতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

ডাবের পানিঃ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে পানি কমতে থাকে এবং শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। তাই ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতে এবং শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে হবে। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ইলেক্ট্রোলাইটস। যা রোগীর ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখে।

ডালিমঃ ডালিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি রসালো ফল। একই সাথে ডালিমে রয়েছে প্রয়োজনীয় মিনারেল। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে নিয়মিত ডালিম খেলে ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। এছাড়াও ডালিমে বা বেদানায় থাকা আয়রন রক্তের জন্য খুব উপকারী। প্রাচীন কাল থেকে এই রসালো ফলটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে এই সকল খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডাবের পানির সাথে সাথে বিভিন্ন রকম ফলের জুস করে খেতে হবে। একই সাথে লেবু চা পান করতে হবে। এই সকল তরল জাতীয় খাবার গুলো খাবার পাশাপাশি ডাল পাতলা করে খেতে হবে।

বিভিন্ন রকম সবজি ও মুরগির মাংস দিয়ে স্যুপ খেতে হবে। এছাড়াও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য সিং, মাগুর, পাবদা ও কম তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস খেতে হবে। এর পাশাপাশি হজম হয় যেমন, জাউ ভাত, পাতলা খিচুড়ি, দই ইত্যাদি খেতে হবে।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না?

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ইতিমধ্যে উপরের প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। ঠিক তেমনি ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কেও আজ জানবেন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।


এ সকল খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকলে ডেঙ্গু থেকে সহজেই সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব। ডেঙ্গু হলে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খাওয়া একবারে উচিত না। কেননা উচ্চ চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার গুলো হজমে বাধার সৃষ্টি করে। 

এর ফলে রোগীর বুকে ও পেটে জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি বোধ হয়। এই খাবারগুলোর পাশাপাশি অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে। তাই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ডেঙ্গু হলে খাওয়া উচিত না।

এছাড়াও ডেঙ্গু হলে অ্যালকোহল, ধুমপান ও বিভিন্ন রকম তামাকজাত দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। আশা করি উপরোক্ত আলোচনা পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এই প্রশ্নটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিসহ প্রায় কম বেশি সকলের একটা সাধারণ প্রশ্ন। ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে কি না? এর আগে জানতে হবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের তীব্রতা কম না বেশি।

যদি রোগীর জ্বরের তীব্রতা বেশি হয় তবে এই সময় চিকিৎসকগণ গোসল করতে বারণ করেন। অপরদিকে জ্বরের তীব্রতা যদি সহনীয় বা কম হয় তবে রোগীকে গোসল করার পরামর্শ দেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে গোসলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাবধানতা অনুসরণ করতে হয়।

কেননা এই সময় রোগীর শারীরিক অবস্থা খুব দুর্বল থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে হালকা গরম কুসুম পানিতে গোসল করাতে হবে। হালকা গরম কুসুম পানিতে রোগীকে গোসল করালে রোগীর জ্বরের তীব্রতা কমার সাথে সাথে শরীরের পেশী শিথিল হয়। রোগীকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো মোটেও উচিত না।

কেননা ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে রোগীর শরীরে কাঁপুনি শুরু হতে পারে। রোগীকে গোসল করানোর সময় তাৎক্ষণিক সাহায্যে করার জন্য পাশে কাউকে রাখতে হবে কেননা রোগী যদি হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় তাহলে যেন তৎক্ষণাৎ ভাবে কাউকে সাহায্যের জন্য পায়। উপরোক্ত সাবধানতা গুলো অবলম্বন করে ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে গোসল করানো যাবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল ঔষধ খেতে হবে। চিকিৎসকন সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কোন ব্যাক্তি ডেঙ্গু জ্বর হলে সে যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হন তাহলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮টি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।

তবে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনিজনিত জটিল সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই প্যারাসিটামল খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে কোন ভাবে ব্যথা নাশক ওষুধ দেওয়া যাবে না।

কেননা ব্যথার ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। যদি জ্বরের তীব্রতা বেশি হয় তবে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পাশাপাশি সাপোজিটরি দিতে হবে।

ডেঙ্গু হলে আনারস খাওয়া যাবে কি?

ডেঙ্গু হলে আনারস খাওয়া যাবে কি? হ্যাঁ সুপ্রিয় পাঠক, অবশ্যই ডেঙ্গু হলে আনারস খাওয়া যাবে। আনারস ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল। এছাড়াও আনারসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, মিনারেল, শর্করা, ফাইবার, বিটা-ক্যারোটিন ও আয়রন এবং প্রোটিন।

 এই রসালো ফলটিতে প্রচুর ক্যালরি পাওয়া যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে মুখে এমনিতেই রুচি থাকে না। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে আনারস সহায়ক। এছাড়াও আনারস রোগীর মুখের ভেতরে জীবাণুর আক্রমন রোধ করতে সাহায্য করে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগী স্বাভাবিকভাবে অনেক দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রোগীর শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে আনারস। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে নিয়মিত আনারস খাওয়ার চেষ্টা করুন।

লেখকের মন্তব্য

পাঠক বন্ধুগণ, এই পোস্টটি একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই পোস্টটি এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

এই পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইট WWW. SUMONWORLD.COM প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে নিজে সজাগ থাকুন এবং সবাইকে সতর্ক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url