শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার আজকের এই পোস্টটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আপনি যদি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তবে আপনি সঠিক ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছেন।
তাহলে চলুন, সময় নষ্ট না করে আজকের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আশা করি এই পোস্টটি পড়তে আপনার ভালো লাগবে।
উপস্থাপনা
ডেঙ্গু রোগ এডিস মশা বাহিত ভাইরাসজনিত এক প্রকার গ্রীষ্মকালীন রোগ। এ রোগটি একটি প্রাচীন রোগ। ডেঙ্গু রোগ সর্বপ্রথম চীনে ৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সনাক্ত করা হয়। এ রোগটি মহামারী রূপ ধারণ করে ১৯৫০ সালে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয় ১৯৬০ সালে।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে?
বর্তমান সময়ে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্বে প্রতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এই রোগটি হতো। কিন্তু বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস জ্বরে সারা বছর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত জলবায়ুর পরিবর্তন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি,
যেখানে সেখানে জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা ও অসচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকের এই পোস্টটির সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। সুপ্রিয় পাঠক, চলুন মূল আলোচনা যাওয়া যায়।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
টানা কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের সময় ডেঙ্গু রোগ বৃদ্ধি পায়। বড়দের মতো ছোট্ট শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর ফলে প্রতিবছর শিশুরা ডেঙ্গুতে খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেক শিশু মারা যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার।
শিশুদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এই রোগের উপসর্গগুলো সনাক্ত করা যায়। পাঠক বন্ধুগণ, তাহলে চলুন শিশুদের ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো জেনে নেয়া যাক।
১। হঠাৎ শরীরে জ্বরের তীব্রতা ১০৪ ডিগ্রী ফাইনাইট পর্যন্ত হতে পারে।
২। তীব্র মাথাব্যথা, শরীরের মাংসপেশীর ব্যথা, হাতে ব্যথা হতে পারে।
৩। বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
৪। নাক বা মাড়ি থেকে হালকা রক্তপাত হতে পারে।
৫। ত্বকে হালকা ক্ষত ভাব ও খিঁচুনি জ্বর।
৬। অনেক শিশুর শরীর নুয়ে পড়ে ও অস্বাভাবিক ছটফট করে।
৭। শিশুদের মাথা ঘুরানো ও ঝিমঝিম ভাব।
৮। শিশুদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে এবং ফ্যাকাসে দেখায়।
৯। ছাদ থেকে পাঁচ ঘন্টা অথবা দীর্ঘ সময় ধরে শিশুর প্রস্রাব না হওয়া।
১০। পাতলা পায়খানা হওয়া ও পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
১১। শিশুদের শরীর লাল লাল ছোপ বা র্যাশ দেখতে পাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো কোনো শিশুর শরীরে বুঝতে পারার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে শিশুকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা গ্রহণ করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
শিশু ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। যেহেতু ডেঙ্গু রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এই রোগের লক্ষণগুলো বুঝতে পারার পর প্রতিকার হিসেবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে নিয়ে যাক শিশুর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারগুলো সম্পর্কে।
- শিশুকে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করানো যেতে পারে।
- শিশুর জ্বরে তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে ছয় থেকে আট ঘন্টা পর পর প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যথার জন্য ব্যথা নাশক বিভিন্ন রকম ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না।
- শিশুর তীব্র ঝড় কমানোর জন্য হালকা কুসুম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শিশুর সমস্ত শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। এমনকি প্রয়োজনে গোসলও করানো যেতে পারে।
- ডেঙ্গু রোগকে আক্রান্ত রোগীরা শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল ও ক্লান্ত থাকে তাই তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া জরুরি।
- শিশুর জ্বরের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং রক্তদান প্রয়োজন হতে পারে।
- ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করার পূর্বে সঠিক সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে হবে।
- শিশুকে যদি বাসা থেকে চিকিৎসা প্রদান করা হয় তবে শিশুকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত না।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার
ছোট্ট শিশুদের ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল ও সচেতনতা রাখতে হয়। শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের মুখের রুচি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। এর ফলে শিশুরা খাওয়ার প্রতি অনীহা করে। এর প্রভাবে শিশুর শরীরে পুষ্টি ও ক্যালসিয়াম কমে যেতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়।
তাই এই সময়টিতে শিশুদের শরীরের পুষ্টি ও ক্যালরির কথা মাথায় রেখে শিশুদের ডেঙ্গু রোগের খাবারগুলো নির্বাচন করা প্রয়োজন। এই খাদ্যগুলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরের পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থতা দানে সাহায্য করে।
শিশুর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। পানি পানির পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম ফলের রস খাওয়াতে পারেন। শিশুর বয়সের অপর ভিত্তি করে শিশুর সহজে হজম হয় এমন খাবার গুলো নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
যেমন - সুজি, জাউ ভাত, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, সাবু ও সবজি খিচুড়ি ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাশাপাশি শিশুর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুধ, ডিম, মাছ ও মুরগির মাংস খাওয়াতে হবে। তবে এই সকল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো অবশ্যই শিশুর বয়সের উপর বিবেচনা করে খেতে দিতে হবে।
শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়
ইতিমধ্যে আপনারা শিশুর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। শিশুর ডেঙ্গু রোগের উপরোক্ত প্রতিকারের পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। এই সকল পদক্ষেপগুলো ডেঙ্গু রোগ সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে।
তাই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো নেওয়া যেতে পারে। এই সকল পদক্ষেপ গুলো ডেঙ্গু প্রতিকার ও প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই শিশুদের দিনগুলো হওয়া থেকে বাঁচতে শুরুতেই এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
১। সর্ব প্রথমে এ দেশ মশার উৎস নির্মূল বা ধ্বংস করতে হবে। যেখানে সেখানে পানি ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে বাসায় ফুলের টব, ছোট গর্তে বা যে সকল স্থানে পানি জমে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফুলের টবের পানি কয়েক দিন পর পরিবর্তন করতে হবে এবং কোনভাবেই তবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
২। এডিস মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা যে সময় বাইরে ছোট ছোট বিভিন্ন রকম খেলাধুলা করে। সে সময় তাদের শরীরে যেন মশা লাগতে না পারে এজন্য কোয়েল বা মশা নিরোধিকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে হবে।
৩। শিশুর মা যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সে ভাইরাসের কোন প্রকার প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পরিলক্ষিত হয় না। তাই ডেঙ্গু রোগে মা আক্রান্ত হলে সে তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে।
৪। ছোট্ট শিশুদের দিনে ও রাতের বেলায় মশারির ভিতরে রাখতে হবে। এডিস মশা সাধারণত দিনে কামরায়। তাই শিশু ঘুমালে থাকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতর রাখা জরুরী।
৫। এয়ার কন্ডিশনার, ফ্যান বা অন্যান্য ডিভাইসের ড্রেইন পয়েন্টগুলি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে সেখানে মশা নিধনকারী স্প্রে করতে হবে।
৬। শিশু যদি নবজাতক হয় তবে তাদেরকে লম্বা হাতা জামা ও ফুল প্যান্ট পড়াতে হবে। যাতে মশার কামড় প্রতিরোধ করা যায়।
৭। ছোটখাটো জলাশয় ও রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোতে নিয়মিতভাবে মশা প্রতিরোধক ঔষধ ছিটাতে হবে।
বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
মন্তব্য
পাঠক, আজকের এই পোষ্টের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ইতিমধ্যে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্য দিয়ে জানতে পেরেছেন শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আরো জানতে পেরেছেন শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার ও শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে।
এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। আরও নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। এতক্ষণ এই পোস্টটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url