টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষন ও প্রতিকার আপনি জানতে চাইছেন? তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন টাইফয়েড জ্বরের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত রোগ। তাহলে চলুন, সময় নষ্ট না করে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন টাইফয়েড জ্বরের লক্ষন ও প্রতিকার। আশা করি এই পোস্টটি পড়তে ভালো লাগবে।

উপস্থাপনা

টাইফয়েড একটি পানি বাহিত রোগ। এই রোগ সাধারণত পানিত মাধ্যমে ছড়ায়। আমাদের দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে, টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ বুঝতে পারার পরেও অবহেলার কারণে সুচিকিৎসা গ্রহণ না করার ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি দিকে ধাবিত হয়। 


অনেকে আবার চিকিৎসা গ্রহণ না করার ফলে মারাও যান। সকল বয়সের মানুষ এই জ্বরে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে ছোট শিশুরা এই জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকারের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক ।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

টাইফয়েড জ্বর হল এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ। টাইফয়েড সাধারনত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ সঠিক সময়ে সনাক্ত করতে না পারলে এবং চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগীকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।


তাই আমাদের সকলেরই টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কেননা সঠিক সময়ে এই জ্বরের লক্ষণগুলো সনাক্ত করতে পারলে খুব দ্রুত টাইফয়েড থেকে সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে।

  • রোগীর অনেক বেশি জ্বর থাকবে। অর্থাৎ ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর হওয়া।
  • টানা জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে
  • খাওয়ার প্রতি কোন রুচি থাকে না।
  • বমি বমি ভাব হওয়া ও বমি হওয়া।
  • শরীর ঝিমঝিম ও ম্যাজ  ম্যাজ করে।
  • জ্বরের সাথে কাশি হতে পারে এবং কফও উঠতে পারে।
  • কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া হতে পারে।
  • শরীরে তাপমাত্রার সাথে হৃদস্পন্দন কমতে পারে।
  • রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা বা চ্যাপ্টা গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো যদি কোন ব্যক্তির শরীরের প্রকাশ পায়। তবে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে সুচিকিৎসা গ্রহণ করে প্রাথমিক অবস্থাতেই টাইফয়েড জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকার

কারো শরীরে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু পেলে রোগীকে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ার পাশাপাশি দুই থেকে তিন সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিবেন। 

টাইফয়েড জ্বরের রোগী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের ৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হতে শুরু করে। অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবনের সময় রোগীকে মাথায় রাখতে হবে চিকিৎসক যতদিন অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবনের জন্য পরামর্শ দিবেন। 

ঠিক ততদিন পর্যন্তই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগী পানি শূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগেন। এ সময় রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। 

রোগীর জ্বরের তীব্রতা যদি বাড়তে থাকে তবে রোগীর শরীর বার বার গামছা বার তোয়লা দিয়ে মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকারে কিছু বিশেষ করণীয় কাজ রয়েছে যেগুলো অনুসরন করতে হবে।  নিম্নে টাইফয়েড জ্বর প্রতিকারে করণীয় কাজ গুলো উল্লেখ করা হলো-
  • নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • যথা সময়ে টাইফয়েডের ভ্যাকসিন নিতে হবে।
  • টয়লেট সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • শাকসবজি ও মাছ মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
  • কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  • মলত্যাগের পর সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • নিয়মিত পায়খানা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ঘরে অন্যান্য জিনিসপাতি ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • খাবার গ্রহণের আগে ও পরে সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধরে নিতে হবে।
  • রাস্তার পাশে বিক্রি করা বিভিন্ন রকম খাবার ও পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • রান্নাবান্না করার সময় ও খাবার পরিবেশন এর পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে?

টাইফয়েড জ্বরের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার প্রায় ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এই জ্বরের লক্ষণগুলো শনাক্ত করা যায়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এই জ্বর সাধারণত রোগীর দেহে এক থেকে দুই সপ্তাহ মতো থাকে। 

এটা অনেকটা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির উপর। অনেকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে যার কারণে টাইফয়েড জ্বর হলে রোগী যদি খুব দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেন তাহলে দ্রুত সেরে উঠেন। 

অপরদিকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগী যদি চিকিৎসা নিতে দেরি করে বা অবহেলা করেন তবে এই জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই কারো টাইফয়েড জ্বর হলে এই জ্বর কতদিন থাকে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগীর সঠিক চিকিৎসার উপর।

টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম

টাইফয়েড জ্বর সাধারণত কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে। এই জ্বরের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষধ গুলো টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ টাইফয়েড জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গুলো সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনে সেবন করার পরামর্শ দেন। তাহলে চলুন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে জেনে নিন টাইফয়েড জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের নাম-


১। সিফিক্সিম (সুপ্রাক্স)

২। সিপ্রোফ্লক্সাসিন (সিপ্রো)

৩। লেভোফ্লক্সাসিন (লেভা)

৪। অ্যাজিথ্রোমাইসিন (জিথ্রোম্যাক্স)

৫। সেফট্রিয়াক্সোন (রোসেফিন)

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় এই সকল আন্টিবায়োটিক ঔষধ গুলো সাধারণত রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, এবং সংক্রমনের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকগণ রোগীকে সেবন করতে পরামর্শ দেন। টাইফয়েড জ্বরের এই সকল আন্টিবায়োটিক ঔষধ গুলো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। 

ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত এই সকল ঔষধ গুলো সেবন করা উচিত না। এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। আপনি যদি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন। দেখবেন এই জ্বর থেকে কিছু দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে পারবেন।

টাইফয়েড টেস্ট এর নাম

কোন ব্যক্তি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটা সনাত্মক করার জন্য চিকিৎসকগণ সাধারণত রোগীর রক্ত ও মলমূত্রের টেস্ট বা পরীক্ষা করে থাকেন। রোগীর এই সকল নমুনাগুলো সংগ্রহ করার পর মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে রোগীর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করা হয়। 

সাধারণত টাইফয়েড জ্বরের সন্দেহ হলে Widal রক্ত ​​​​পরীক্ষা বা টেস্ট করা হয়। এই Widal টেস্টের মাধ্যমে রোগের টাইফয়েড সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এটি একটি সাধারন টেস্ট বা পরীক্ষা যাতে রোগীর সিরাম দুইটি ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিজেনের সাথে মিশ্রিত করা হয়। 

এরপর রোগীর সিরাম দুটি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা করা হয়। যদি রোগীর দুটি অ্যান্টিজেনের যে কোন একটি বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি থাকে তবে পরীক্ষাটি ইতিবাচক বা পজেটিভ বলে বিবেচিত হয়।

টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম

টাইফয়েড জ্বর সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। কোন বয়সে এবং কারা বেশি টাইফয়েড রোগের ঝুঁকিতে থাকেন?

উওরঃ টাইফয়েড যেকোনো বয়সেই হতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় তবে বিশেষ করে ছোট শিশুদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব না সব থেকে বেশি। যে সকল ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম 

এবং যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন ডায়াবেটিস, এইচআইভি তাদের টাইফয়েড হওয়া সম্ভবনা বেশি থাকে। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় এ রোগের পাদুর্ভাব বেশি সেই এলাকায় গেলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২। টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে?

উত্তরঃ টাইফয়েড ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, এমনকি পানির মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

৩। টাইফয়েড এর ভ্যাকসিন এর নাম কি?

উত্তরঃ টাইফয়েড কনজুগেট টিকা ।

৪। টাইফয়েড কতদিন স্থায়ী হয়?

উত্তরঃ টাইফয়েড জ্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও ১-২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে।

উপস্থাপনা

আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আরোও জানতে পেরেছেন টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে?

টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম ও টাইফয়েড টেস্ট এর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন। তবে আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন।

আরোও নতুন নতুন পোস্টট পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumonworld.com নিয়মিত পরিদর্শন করুন। আপনি চাইলে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষন পোস্টটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url