ভাতের মাড় খাওয়ার ১০টি উপকারিতা - ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক।
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, আজকের এই পোস্টটিতে আলোচনা করব ভাতের মার খাওয়ার উপকারিতা ও ভাতের মারের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে। ভাতের মাড়ের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
তাহলে চলুন এই পোস্টটি পারার মাধ্যমে জানতে পারবেন ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আরো জানতে পারবেন ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক ও ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়? সম্পর্কে।
ভূমিকা। ভাতের ফ্যান বা মাড়
ভাতের ফ্যান বা মাড় একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার। এই পুষ্টিকর খাবার আমাদের শরীর ও ত্বককে চাঙ্গা করে। ভাতের মাড়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন "ই" সহ আরোও বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। আগেকার সময়ে ভাতের মাড় খাওয়ার প্রচলন ছিল।
বর্তমানে ভাতের মাড় খাওয়ার প্রচলন কম বেশি উঠেই গেছে। বর্তমানে আমাদের বাসা বাড়িতে রান্নায় সময় বাঁচানোর জন্য সাধারণত বেশিরভাগ রাইস কুকারে ভাত রান্না করা হয়। এর ফলে ভাতে আর মাড় থাকে না। যার জন্য সচরাচর এখন অনেকে আর মাড় খেতেও পায় না।
ভাতের মাড় শুধু মানুষের জন্যই পুষ্টিকর খাবার না এটা গৃহপালিত প্রাণীদের জন্য একটি পুষ্টিকর ও উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য। আজকের এই পোস্টটির সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে থাকছে ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও এর কিছু ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা
ভাতের মাড় বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাদ্য। এই খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ভাতে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তার সকল উপাদানি রয়েছে ভাতে মাড়ের মধ্যে। এছাড়াও ভাতের মাড়ের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের সবাইকে বিভিন্ন রকম রোগের বিরোধের লড়তে সাহায্য করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এই ফাইবার আমাদের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাহলে চলুন জেনে নিন ভাতে মার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। নিম্নে ভাতের মার খাওয়ার উপকারিতা গুলো উল্লেখ করা হলো-
১। ভাতের মাড় একাধিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে বিভিন্ন রোগের উপশমেও হিসেবে ভূমিকা পালন করে। একই সাথে ভাতের মাড় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীর সতেজ রাখে।
২। পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে ভাতের মাড় খাওয়ার কোন বিকল্প নাই। পেট খারাপ ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে ভাতের মাড় খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হলে এক গ্লাস ভাতের মাড়ের সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়।
৩। অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় ভোগেন। সাধরনত শরীরে পানি শূন্যতার কারণে এই রোগ হয়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ ও শরীরে পানি শূন্যতা দূর করে ভাতের মাড়। নিয়মিত ভাতের মাড় খেলে আমাদের বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক থাকে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪। বিভিন্ন রকম শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করার আগে এক গ্লাস ভাতের মাড় খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ৮টি উপকারী অ্যামাইনো এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করার সময় বেশি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একই সাথে শরীরে এলার্জির ঘাটতি দূর করে এই ভাতের মাড়।
৫। ভাতের মার বিভিন্ন মৌসুমীর রোগ ও বিভিন্ন সংক্রমনের হাত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই যে সকল ব্যক্তি নিয়মিত সর্দি, জ্বর ও কাশির মত সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত ভাতের মাড় খেতে পারেন।
৬। ভাতের মাড় খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেননা ভাতের মারে সোডিয়ামের মাত্রা খুব কম থাকে। যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য।
৭। যারা শারীরিক পরিশ্রম করার সময় ক্লান্তি বোধ করে ভাতের মাড় উৎকৃষ্ট খাবার। ভাতের মাড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। এই কার্বোহাইড্রেট ক্লান্তি দূর করে শরীরের কাজ করার শক্তি যোগায়।
৮। ভাতের মাড় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমের সময় ভাতের মাড় খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
৯। ভাতের মাড় গাছের সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভাতের মাড় গাছের গোড়ায় সার হিসেবে দিলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় একই সাথে গাছে অল্প সময়ে ফুল ও ফল আসে।
১০। এছাড়াও ভাতের মাড় গৃহপালিত প্রাণী যেমন- গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া এদের একটি পছন্দের খাবার। ভাতের মাড় এ সকল গৃহপালিত প্রাণীদের চুসকা হিসেবে খাওয়ানো হয়।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
ইতিমধ্যে উপরের প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তথ্যগুলো। এখন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে জানতে পারবেন ভাতে্র মাড়ের ক্ষতিকর কিছু দিক সম্পর্কে। ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। নিম্নে ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো আলোচনা করা হলো-
- বেশি পরিমাণে ভাতের মাড় খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে এর ফলে পেটে ব্যথা ও পেট ফাঁপার মত সমস্যা হতে পারে।
- প্রতিদিন বেশি বেশি করে ভাতের মাড় খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। আর অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে সরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।
- বেশি বেশি করে ভাতের মাড় খেলে অতিরিক্ত ঘুম পায় এবং অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে শরীর অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- লাল চালের ভাত ও এর মাড় আমাদের জন্য উপকারিত। তবে সাদা চালের ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে মেটাবলিজম ও কার্বোহাইড্রেট কমে গিয়ে হজমে সমস্যা হতে পারে
ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক
রূপচর্চায় ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক অনেকে ব্যবহার করেন। এই ফেসপ্যাক বানানো খুব সহজ। এর জন্য প্রয়োজন ভাতের মার, কাঁচা হলুদ, ডিমের সাদা অংশ, এলোভেরা জেল। এই সকল উপাদান গুলো ভাতের মারের সাথে মিশিয়ে একটা ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এই ফেসপ্যাক ত্বকের যত্নে অনেক আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক দিনে দুইবার মুখে লাগালে মুখের ত্বকে ছোট ছোট ব্রণ ও কালো ভাব হয় না। ভাতের মাড়ে থাকা এন্টি ইনফ্লামেন্টরি উপাদান দ্রুত মুখের ব্রণ সারিয়ে তোলে। ভাতের মার মুখে লাগিয়ে মেসেজ করলে ত্বকের বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট দাগ দূর হয়।
একই সাথে মৃত কোষ জোর করে তোকে চকচকে ও উজ্জ্বল করে। আবার দুধের সাথে ভারতের মার মিশে ত্বকে লাগালে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। এছাড়াও ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে ভাতের মাড়ের সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক সুন্দর হয় ও ত্বকের বলিরেখা দূর হয়।
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়?
ভাতের মার খেলে কি মোটা হয়? এই সাধারণ প্রশ্নটি কমবেশি সকলেই করে এবং এর উত্তর জানতে চাই। বিশেষ করে যে সকল ব্যক্তি ভাতের মার খেতে পছন্দ করে তারাই কম বেশি এই প্রশ্নটি করে থাকেন। ভাতের মারে অনেক বেশি শর্করা থাকে যার শরীরে ক্যালরির যোগান দিতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীর অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলে শরীরে চর্বি জমে গিয়ে ওজন বেড়ে যায়। এছাড়াও ভাতের মারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই কার্বোহাইডেট শরীরে ওজন বৃদ্ধি করে মোটা হতে সাহায্য করে। সুতরাং এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারছেন যে ভাতের মার খেলে মোটা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক, আশাকরি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করেছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলোর বিস্তারিত আলোচনা। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট WWW.SUMONWORLD.COM প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url