বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান জেনে নিন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান অপরিসীম। আজকের এই আর্টিকেলটিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স এর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে । আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়তে আপনার ভালো লাগবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান সম্পর্কে। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

রেমিট্যান্স কী?

রেমিট্যান্স হল বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিদের তাদের উপার্জিত অর্থ নিজ দেশে প্রেরণ করা। এটি বৈদেশিক মুদ্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীত চাঙ্গা হয় এবং গ্রামীণ উন্নয়নে অবদান রাখে।
 

একই সাথে জিটিপিতেও বিশেষ অবদান রাখে। এই অর্থ দিয়ে প্রাপক তার পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করে থাকে। রেমিট্যান্স দেশের রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে স্থিতিশীল করে। রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণ করলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমক বৈধ পথে প্রবাহিত হয়। 

রেমিট্যান্স দেশের গ্রামীণ উন্নয়নেও অবদান রাখে, কারণ অধিকাংশ অর্থ গ্রামীণ এলাকায় পাঠানো হয়। রেমিট্যান্স প্রাপ্তি দেশের দারিদ্র্য হ্রাস করতে সহায়তা করে। এর ফলে প্রাপকের পরিবারের জীবনযাত্রার মান দিন দিন উন্নত হয়। রেমিট্যান্স আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে আসছে।

রেমিট্যান্স কত প্রকার?

রেমিটেন্স কি ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছেন। এখন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন রেমিটেন্স কত প্রকার ও কি কি। রেমিট্যান্স প্রধানত দুই প্রকারের হতে পারে। যথাঃ

১। ব্যক্তিগত রেমিট্যান্সঃ
  • এটি বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিরা তাদের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ প্রেরণ করে।
  • ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স সাধারণত পরিবারের দৈনন্দিন খরচ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
২। ব্যবসায়িক রেমিট্যান্সঃ
  • এটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রেরিত অর্থ, যেমন পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের জন্য প্রেরিত হয়।
  • ব্যবসায়িক রেমিট্যান্স আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে দেশের রপ্তানি ও আমদানির ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

এছাড়াও, কিছু বিশেষ প্রকারের রেমিট্যান্সও রয়েছে। যেমনঃ
  • উপহার রেমিট্যান্সঃ এটি কোনও বিশেষ উপলক্ষ বা উদযাপনের জন্য প্রেরিত হয়, যেমনঃ ঈদ, ক্রিসমাস বা পূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা ও অন্যান্য কোনো উৎসবের সময়।
  • বিনিয়োগ রেমিট্যান্সঃ এটি কোনও ব্যবসায় বা উদ্যোক্তায় বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়।

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত

বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের বিভিন্ন রকম খাত রয়েছে। এই সকল খাদগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আমাদের দেশে আসে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রেমিটেন্স খাত গুলোর নাম উল্লেখ করা হলো। 

তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতঃ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং এবং কল সেন্টার সেবাগুলোতে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা রেমিট্যান্স পাঠান।

গৃহকর্মী ও শ্রমিক খাতঃ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য দেশে কাজ করা গৃহকর্মী এবং নির্মাণ শ্রমিকরা বৃহৎ পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠান। বাংলাদেশে গৃহকর্মী ও শ্রমিক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। 

স্বাস্থ্যসেবা খাতঃ আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স বিদেশী কর্মরত আছেন। বিদেশে কর্মরত এই সকল বাংলাদেশি ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী তাদের উপার্জনের একটি অংশ দেশে প্রেরণ করেন। 

শিক্ষা ও গবেষণা খাতঃ বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করে।সেখানে পড়াশোনা পাশাপাশি পার্ট টাইম বিভিন্ন রকম আয়মূলক কাজ করেন। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ বিদেশে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকরা প্রায়ই তাদের পরিবারের সহায়তার জন্য রেমিট্যান্স পাঠান।

বিনোদন ও সংস্কৃতি খাতঃ সংগীত, নৃত্য, অভিনয় এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিরা বিদেশে কর্মরত থেকে অর্থ দেশে পাঠান।

এই খাতগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। যা বলে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের রেমিটেন্স দিয়ে তার বিভিন্ন রকম উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সচল রেখেছে। এই রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে রেমিটেন্স। নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স এর অবদানগুলো উল্লেখ করা হলো।  

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিঃ রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সব থেকে বেশি সহায়তা করে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

দারিদ্র্য হ্রাসঃ রেমিট্যান্স প্রাপক পরিবারগুলোর আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। যা দারিদ্র্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ করে এটি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাঃ রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়তা করে। এটি অর্থনৈতিক সংকটের সময় একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। 

উন্নয়ন ও বিনিয়োগঃ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত অর্থ প্রায়শই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। এর ফলে দেশে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।

খরচ বৃদ্ধিঃ রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধি করে, যা স্থানীয় বাজার ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে।

ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নঃ রেমিট্যান্স বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণ করলে দেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ায়। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় না।

প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নঃ সরকার রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামাগুলো নির্মাণে এই রেমিটেন্স সহায়তা করে

বেকারত্ব হ্রাসঃ বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশীয় বেকারত্বের হার কমায় এবং প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। এর ফলে দেশে বেকারত্ব যেমন কমছে অপরদিকে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন দেশ থেকে?

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার এবং অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে কর্মরত আছেন। ১৯৭০-এর দশক থেকে সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে কাজ করে আসছে। 

প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশে গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সৌদি আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান এবং কাতার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। 

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সও বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যেও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছেন এবং তারা নিয়মিতভাবে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

এই রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করে। রেমিট্যান্স দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক এবং এটি গ্রামের উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। 

ব্যাংকিং খাতেও রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ায়। সার্বিকভাবে, সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান
রেমিট্যান্স অর্থনীতি বলতে কি বুঝ

মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আরটিকালটি পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান সম্পর্কে। আরো জানতে পেরেছেন রেমিটেন্স কি?, রেমিটেন্স কত প্রকার ও কি কি? 

বাংলাদেশের রেমিটেন্স এর খাত গুলো কি কি? এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে কোন দেশ থেকে? এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।

এবং তাদেরও রেমিটেন্স সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট www.sumonworld.com প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। ধন্যবাদ এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url