দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।

সুপ্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আপনার কি দাঁত শিরশির করছে? আপনি কি দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাইছেন তাহলে আপনার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। কেননা এই আর্টিকেলটিতে আপনার কাঙ্খিত জানার বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
তাহলে, চলুন কথা না বাড়িয়ে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে এবং ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়। চলুন সময় নষ্ট করে মূল আলোচনা যাওয়া যাক।

দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

দাঁতের শিরশির অনুভূতি সাধারণত সংবেদনশীল দাঁতের কারণে হয়। দাঁতের ইমেল ক্ষয়, মাড়ির সমস্যা বা দাঁতের ফাটল থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে দাঁতের শিরশির বন্ধ করা যেতে পারে।

১. লবঙ্গ তেল: লবঙ্গের তেল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে, যা দাঁতের শিরশির বন্ধ করতে সহায়ক। তুলার মধ্যে ২-৩ ফোঁটা লবঙ্গ তেল নিয়ে দাঁতের শিরশির করা অংশে লাগান। এটি দাঁতের ব্যথাও কমায়।

২. লবণ পানির গার্গল: লবণ পানি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার গার্গল করুন। এটি দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করবে।

৩. নারকেল তেল টানাটানি (Oil Pulling): নারকেল তেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করে। প্রতিদিন সকালে ১০-১৫ মিনিট ধরে মুখে নারকেল তেল রেখে কুলকুচি করুন।

৪. পেঁয়াজের রস: পেঁয়াজের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। কিছু পেঁয়াজ কেটে দাঁতের ওপর লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এটি সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেবে।

৫. রসুন: রসুন দাঁতের সংক্রমণ দূর করতে পারে। এক টুকরো রসুন কেটে শিরশির করা দাঁতের ওপর চেপে ধরুন। এতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমবে এবং দাঁতের শিরশির ভাব কমবে।

৬. হালকা গরম চা ব্যাগ: চা ব্যাগের মধ্যে থাকা ট্যানিন দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে। গরম পানিতে চা ব্যাগ ভিজিয়ে দাঁতের ওপর রাখুন। এটি ব্যথা কমিয়ে শিরশির ভাব দূর করবে।

৭. অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা দাঁতের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল সরাসরি দাঁতের মাড়িতে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শিরশির ভাব কমাবে।

৮. হলুদ: হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে। এক চিমটি হলুদের গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতে লাগান। এটি দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে কার্যকর।

৯. দারুচিনি ও মধুর মিশ্রণ: দারুচিনি এবং মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে। এক চা চামচ মধু ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে দাঁতে লাগান। এটি শিরশির ভাব কমাবে।

১০. ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট: ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন, যা দাঁতের ইমেলকে শক্তিশালী করে শিরশির বন্ধ করতে সাহায্য করে।

দাঁত শিরশির করে কেন?

দাঁতের শিরশির করা বা সংবেদনশীলতা সাধারণত দাঁতের ইমেলের ক্ষয় বা মাড়ির সংকোচনের কারণে হয়। দাঁতের ইমেল ক্ষয়ে গেলে দাঁতের ভেতরের ডেন্টিন নামক স্তরটি উন্মুক্ত হয়, যেখানে সংবেদনশীল নার্ভ থাকে। যখন ঠান্ডা বা গরম খাবার, মিষ্টি, টকজাতীয় খাবার অথবা বাতাস এই ডেন্টিনে স্পর্শ করে, তখন দাঁতে শিরশির অনুভূতি হয়।

মাড়ির সমস্যা বা মাড়ির সংকোচনের কারণে দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে গেলে দাঁতও শিরশির করতে পারে। দাঁতের ফাটল, সঠিকভাবে ব্রাশ না করা, অতিরিক্ত জোরে ব্রাশ করা, বা দাঁতের ক্ষয় থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া দাঁতের কোনো চিকিৎসা, যেমন: রুট ক্যানাল বা ফিলিং করার পরও দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে। দাঁতে প্লাক বা টার্টার জমার ফলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা দাঁত শিরশির করার অন্যতম কারণ হতে পারে।

দাঁত শিরশির বন্ধ করার টুথপেস্ট 

দাঁতের শিরশির বন্ধ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি টুথপেস্টগুলো দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে কার্যকর। এই ধরনের টুথপেস্টে সাধারণত পটাসিয়াম নাইট্রেট বা স্ট্রন্টিয়াম ক্লোরাইড থাকে, যা দাঁতের নার্ভকে শান্ত করে এবং দাঁতের শিরশির ভাব কমাতে সাহায্য করে।

বাজারে প্রচলিত কিছু টুথপেস্ট

১. Sensodyne: এটি দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে কার্যকর এবং নিয়মিত ব্যবহারে শিরশির ভাব দূর করতে পারে।

২. Colgate Sensitive Pro-Relief: এই টুথপেস্ট দাঁতের সংবেদনশীলতা দূর করতে কাজ করে।

৩. Oral-B Sensitive: এটি দাঁতের ইমেলকে শক্তিশালী করে এবং শিরশির ভাব কমায়।

৪. Parodontax: এটি দাঁতের মাড়ি ও সংবেদনশীলতা রোধ করতে সহায়ক।

৫. Pepsodent Sensitive Expert: দাঁতের শিরশির ভাব দূর করতে এবং ইমেল সুরক্ষায় কার্যকর।


এই টুথপেস্টগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে দাঁতের সংবেদনশীলতা কমিয়ে আনে এবং শিরশির ভাব দূর হয়।

কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে?

দাঁতের শিরশির করার পেছনে ভিটামিনের অভাব একটি বিশেষ কারণ হতে পারে। বিশেষত, ভিটামিন ডি-এর অভাব দাঁতের শিরশির বা সংবেদনশীলতা বাড়ায়। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে, যা দাঁত ও হাড়কে মজবুত রাখে। এর অভাবে দাঁতের ইমেল দুর্বল হয়ে যায়, ফলে দাঁতে শিরশির ভাব দেখা দেয়।

এছাড়াও, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন সি-এর অভাবও মাড়ির সমস্যা ও দাঁতের সংবেদনশীলতার কারণ হতে পারে। ভিটামিন সি মাড়ির সুস্থতা বজায় রাখে, এবং এর অভাবে মাড়ি রক্তপাত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দাঁতে শিরশির ভাব সৃষ্টি হতে পারে।

দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ 

দাঁত শিরশির করার সমস্যা বন্ধ করার জন্য বেশ কিছু ঔষুধ রয়েছে। এই ওষুধগুলো একজন ডেন্টিস বা দন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে। বিশেষ করে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না হয় তাহলে। 

দাঁতের শিরশির ভাব কমানোর জন্য ডাক্তার বা ডেন্টিস্টরা সাধারণত নিম্নলিখিত ঔষুধ সেবন করার পরামর্শ দেন। এই ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করা মোটে উচিত না। নিম্নে ঔষুধ গুলোর নাম দেয়া হলো-

দাঁত শিরশির বন্ধ করার হোমিও ঔষধ 

দাঁতের শিরশির ভাব কমানোর জন্য হোমিওপ্যাথিতে কিছু কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায়, যা দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। হোমিও চিকিৎসা নেওয়ার আগে একজন যোগ্য হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রচলিত হোমিও ঔষধ নিম্নরূপ:

  • Plantago: দাঁত ব্যথা ও শিরশির ভাব কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  •  Calcarea Fluorica: দাঁতের ইমেল শক্তিশালী করতে সহায়ক এবং সংবেদনশীলতা কমায়।
  •  Magnesia Phosphorica: দাঁতের শিরশির ভাব বা ব্যথা দ্রুত প্রশমিত করে।
  •  Silicea: দাঁত ও মাড়ির সংবেদনশীলতা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
  •  Chamomilla: দাঁতের ব্যথা ও শিরশির ভাব কমাতে কার্যকর।

লেখকের শেষ কথা

পাঠক, আজকের আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ইতিমধ্যে এয়ার টিকেট পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন দাঁত শিরশির বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে । আরও জানতে পেরেছেন দাঁত শিরশির করে কেন ও দাঁত শিরশির বন্ধ করার টুথপেস্ট এবং কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url