হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি? ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ কত বাংলাদেশে?

সুপ্রিয় পাঠক, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি? ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ কত বাংলাদেশে? এই সম্পর্কে জানার জন্য আপনি কি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করছেন। তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পর্কে আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নগুলোর উত্তরের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে আজকের এই পোস্টটি।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি? ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ কত বাংলাদেশে?
তাহলে চলুন, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন হ্যায় ট্রান্সপ্লান্ট কি? ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ কত বাংলাদেশে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি?

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট হলো একটি সার্জিকাল পদ্ধতি যা স্বাভাবিক চুলের বৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করতে ব্যবহৃত হয়। এতে সাধারণত মাথার পিছনের অংশ থেকে সুস্থ চুলের গুটি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর প্রধান দুইটি পদ্ধতি হল ফোলিকল ইউনিট ট্রান্সপ্লান্টেশন (FUT) এবং ফোলিকল ইউনিট এক্সট্রাকশন (FUE)। 

FUT তে একটি ত্বকীয় স্ট্রিপ কেটে চুলের গুটি সংগ্রহ করা হয়, পরে তা ছোট ছোট অংশে ভাগ করে চুলের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। FUE তে সরাসরি চুলের গুটি সংগ্রহ করা হয় এবং ছোট ছোট ছিদ্র করে প্রতিস্থাপন করা হয়। 

সাধারণত এই পদ্ধতির পরে কিছুদিন ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, কিন্তু ফলাফল স্থায়ী ও স্বাভাবিক চুলের মতো দেখায়। সফল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে একজনের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং স্বাভাবিক চুলের লুক ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ কত বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে, যেমন ক্লিনিকের মান, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা। সাধারণভাবে, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ প্রতি গ্রাফট বা প্রতি চুলের ইউনিটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
  • FUT (ফোলিকল ইউনিট ট্রান্সপ্লান্টেশন) প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা প্রতি ১,০০০ গ্রাফটের জন্য।
  • FUE (ফোলিকল ইউনিট এক্সট্রাকশন) প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা প্রতি ১,০০০ গ্রাফটের জন্য।

মোট খরচ বিভিন্ন সেশনে নির্ভর করে এবং কত গ্রাফট লাগবে তার ওপরও নির্ভর করে। কিছু ক্লিনিকে অতিরিক্ত সার্ভিস যেমন প্রি-অপারেটিভ পরীক্ষা, পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ার, এবং ঔষধের খরচ আলাদাভাবে যুক্ত হতে পারে।

এছাড়া, বেশ কিছু ক্লিনিক বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট প্রদান করে, যা খরচ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। তবে, সঠিক পরামর্শ এবং উচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করতে, নির্ভরযোগ্য ও অভিজ্ঞ ক্লিনিক বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এর ক্ষতিকর দিক

উপরে প্রতিবেদনগুলোর পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি এবং হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ফর্ম খরচ কত বাংলাদেশের সে সম্পর্কে। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করলে এই সকল ক্ষতি বা সমস্যাগুলো হতে পারে। এ সমস্যা বা ক্ষতিগুলোর  মধ্যে কিছু সাধারণ এবং কিছু বিরল নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-


 ১। ব্যথা ও অস্বস্তিঃ অপারেশনের পর কিছুটা ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

২। ফোলা ও সোজনঃ মাথার ত্বক ফুলে যেতে পারে, যা সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়।

 ৩। লালচে দাগঃ  ট্রান্সপ্লান্ট করা অংশে লালচে দাগ বা স্কার থাকতে পারে।

৪। চুলের পতনঃ ট্রান্সপ্লান্টের পর নতুন চুলের বৃদ্ধির আগে পুরানো চুল কিছুটা পড়ে যেতে পারে।

৫। ইনফেকশনঃ যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা হয়, ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬। অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়াঃ কিছু ঔষধ বা উপাদানের প্রতি অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

 ৭। আবছা চুলের বৃদ্ধিঃ কিছু ক্ষেত্রে, নতুন চুলের বৃদ্ধি অসম বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হতে পারে।

৮।  ব্লিডিংঃ অপারেশনের পর সামান্য ব্লিডিং হতে পারে।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার পর কি কি ঔষধ ব্যবহার করতে হয় 

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পর স্বাভাবিক চুলের পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু ঔষধ ব্যবহার করতে এবং কিছু সেবন করতে হয়। তাই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার পর সাধারণত যে সকল ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে হয় নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো

১। অ্যান্টিবায়োটিকঃ  ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য, প্রায় ৫-৭ দিন ব্যবহার করা হয়।

২। পেইন কিলারঃ অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কমানোর জন্য, যেমন প্যারাসিটামল।

৩। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগসঃ ফোলা ও সوجন কমানোর জন্য, যেমন ইবুপ্রোফেন।

৪।  মিনোক্সিডিলঃ চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ব্যবহার করা হয়, সাধারণত কয়েক মাস ধরে।

৫। ফিনাস্টেরাইডঃ হরমোনজনিত চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে, দৈনিক ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া, কিছু ক্লিনিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অতিরিক্ত ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট প্রদান করতে পারে। এ সকল ঔষধগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রদান করে থাকে তাই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় বাংলাদেশের কোন কোন ক্লিনিকে?

বাংলাদেশে বেশ কিছু ক্লিনিক হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সেবা প্রদান করে থাকেন। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করেন  এমন কয়েকটি পরিচিত ক্লিনিকের নাম দেয়া হলো-

১। এন আই সি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ক্লিনিক, ঢাকাঃ এটির বিশেষজ্ঞরা উন্নত প্রযুক্তি এবং কাস্টমাইজড সেবা প্রদান করেন।

২। স্মার্টলুক হেয়ার সেন্টার, ঢাকাঃ আধুনিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সেবা প্রদান করে।

৩। ডার্মা কেয়ার ক্লিনিক, ঢাকাঃ  চুলের স্বাস্থ্য ও ট্রান্সপ্লান্টে বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক।

৪। এসপি ক্লিনিক, চট্টগ্রামঃ এখানে ফিউ এবং এফইউটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

৫। স্টার হেয়ার ক্লিনিক, ঢাকাঃ বিভিন্ন ধরনের হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা প্রদান করেন ।

এছাড়া, বাংলাদেশের অন্যান্য বড় শহর যেমন কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনায়ও কিছু ভালো ক্লিনিক আছে। ক্লিনিক নির্বাচনের সময় তাদের অভিজ্ঞতা, কাস্টমার রিভিউ ও চিকিৎসকের দক্ষতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।  ট্রান্সপান্ট হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানো উচিত।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করে কি পূর্বের মতো চুল গজায়?

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে পূর্বের মতো চুল গজানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে এটি নির্ভর করে কয়েকটি ফ্যাক্টরের ওপর। সাধারণত, ট্রান্সপ্লান্টের পরে নতুন চুলের বৃদ্ধি ধীর গতিতে শুরু হয় এবং প্রথম কয়েক মাসে পুরানো চুল কিছুটা পড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ ব্যপার। এতে ঘাবড়ানো বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। 

তবে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে সাধারণত ৬-১২ মাসের মধ্যে নতুন চুল পূর্ণরূপে গজায় এবং পূর্বের চুলের মতো দেখতে হয়। চুলের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে কিনা তা ট্রান্সপ্লান্টের পদ্ধতি, রোগীর শরীরের প্রকারভেদ, এবং যথাযথ চুলের যত্নের ওপর নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসক ও ক্লিনিক বেছে নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার সুবিধা কি কি?

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার যেমন কিছু ক্ষতি বা সমস্যা রয়েছে ঠিক তেমনি এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আমরা প্রত্যেকে সুন্দর সচেতন এবং চুলের যত্নে অনেক বেশি যত্নশীল। চুলের যত্ন করেন না এমন মানুষ খুবই কমই দেখতে পাওয়া যায়। সেটা পুরুষ হোক কিংবা মহিলা সকলেই চুলের যত্নে অনেক বেশি সচেতন। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এর সুবিধা হল-

  • স্থায়ী ফলাফলঃ একবার চুল গজালে এটি স্থায়ী এবং জীবনভর থাকতে পারে।
  • প্রাকৃতিক চেহারাঃ নতুন চুল স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাকৃতিক দেখায়।
  • স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিঃ ট্রান্সপ্লান্ট করা চুল সাধারণত সুস্থ ও শক্তিশালী হয়।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিঃ চুলের ঘনত্ব ফিরে পাওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব উন্নত হয়।
  • নির্ভরযোগ্যতাঃ চুলের চিকিৎসায় সফলতা সাধারণত ভাল হয় এবং অন্য পদ্ধতির তুলনায় অধিক কার্যকর।
  • কম ঝুঁকিঃ আধুনিক পদ্ধতিতে ইনফেকশন বা জটিলতার ঝুঁকি কম থাকে।
  •  প্রাকৃতিকভাবে চুল বৃদ্ধিঃ স্বাভাবিক চুলের মতোই বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করে।

অনেকে মাথার চুল পড়ে যাওয়ার যাওয়ার কারণে অল্প বয়সে মাথায় টাক দেখতে পাওয়া যায়। তা মাথার কারণে অল্প বয়সে অনেককে হতাশায় ভোগেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস দিন দিন কমতে থাকে। হেয়ার  ট্রান্সপ্লান্ট করালে পূর্বের মতো মাথায় চুল গজাতে থাকে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ার সাথে সাথে চেহারায় বয়সের ছাপ দূর হয়।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি হারাম

মন্তব্য


আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কি ও হেয়ার ট্রান্সফার খরচ কত বাংলাদেশ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। জানতে পেরেছেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এর ক্ষতিকর দিক ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করার পর কি কি ঔষধ ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে। 

এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি সামান্য পরিমাণ ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন।  এ পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন পোস্টের মাধ্যমে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url