শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ জেনে নিন।

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ ও শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার সুম্পর্কে বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করছেন? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ ও শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার সম্পর্কে।
শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ জেনে নিন
শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ ও শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার, শুক্রাণু বৃদ্ধির ব্যায়াম, ইসলামে শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায় ও শুক্রাণু কোথায় তৈরি হয় এবং কত বছর পর্যন্ত শুক্রাণু তৈরি হয় এই সকল বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।

সূচনা

শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ ও শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার সুম্পর্কে অনেক ভায়েরাই তেমন ভাবে অবগত না। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে দিন দিন পুরুষদের শরীর অবনতির দিকে যায়। এর ফলে পুরুষদের বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।  শুক্রাণু হলো প্রজনন কোষ, যা নারী ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষেক ঘটায়।

যেখানে জিনগত উপাদান সঞ্চিত থাকে। শুক্রাণু দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটতে পারে, যা ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন। এটি পুরুষের বীর্য থেকে নারী প্রজনন তন্ত্রে প্রবেশ করে এবং নারীরা গর্ভধারন করতে সক্ষম হন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ

শুক্রাণু বা স্পার্মের সংখ্যা কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। নিচে শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ দেওয়া হলো:
  •  অযথা ক্লান্তি: অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসন্নতা শুক্রাণু কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
  •  হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যেতে পারে।
  •  বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়া: বীর্যের ঘনত্ব কমে যাওয়া।
  •  লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা: যৌন উদ্দীপনা পাওয়ার পরেও লিঙ্গ উত্থান সমস্যা দেখা দেয়।
  • যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া: দিন দিন (যৌন আগ্রহ) হ্রাস পায়।
  • বীর্যপাতের সময় ব্যথা: বীর্যপাতের সময় ব্যথা অনুভব করা।
  • যৌন ক্রিয়ায় অসন্তুষ্টি: যৌন মিলনে আগ্রহের অভাব বা অসন্তুষ্টি।
  •  টেস্টিকুলার ব্যথা: অণ্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি।
  •  অণ্ডকোষে ফোলা বা অস্বাভাবিকতা: অণ্ডকোষ ফুলে যায় এবং অস্বাভাবিক দেখায়।
  •  চুল পড়া: শরীরের বিভিন্ন অংশে চুল পড়ে যাওয়া।
  •  ওজন বৃদ্ধি: শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া।
  • মানসিক অবসাদ: বিষণ্নতা বা মানসিক চাপ।
  •  অণ্ডকোষের আকার পরিবর্তন: অণ্ডকোষের আকার ছোট হওয়া।
  •  হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া: হাড়ের দুর্বলতা বা ব্যথা।
  •  আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন: মেজাজে হঠাৎ পরিবর্তন ও খিট মিটে হয়ে যায়।
  •  পেশি দুর্বলতা: পেশিতে দুর্বলতা অনুভব করা।
  •  রাতে অতিরিক্ত ঘাম: ঘুমের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরে।
  •  বীর্যের পরিমাণ কম হওয়া: বীর্যের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া।
  •  শরীরে অবাঞ্ছিত স্থূলতা: বিশেষ করে কোমরের চারপাশে চর্বি বৃদ্ধি।
  •  ত্বকের শুষ্কতা: ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
  •  শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া: শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও কাজকর্মে ক্লান্তি।
  • স্তন অস্বাভাবিকভাবে বড় হওয়া: পুরুষের স্তনে চর্বি জমে বৃদ্ধি পাওয়া।
  •  রাতে ঘুমের ব্যাঘাত: ঘুমের সমস্যা বা ইনসমনিয়া।
  •  অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতা: কোনো কারণ ছাড়াই মানসিক অস্থিরতা।
  •  বন্ধ্যাত্ব: সন্তান ধারণে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা।

গুলো শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাব্য লক্ষণ।

শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার

শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গুণগতমান উন্নত করতে কিছু বিশেষ খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য কিছু উপকারী খাবার দেওয়া হলো:

১। ডার্ক চকোলেট: এতে এল-আর্জিনিন নামক অ্যামাইনো এসিড থাকে, যা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান বাড়ায়।

২। ডিম: ডিমে প্রচুর প্রোটিন এবং ভিটামিন ই থাকে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৩। বাদাম: বিশেষ করে আখরোট ও কাজুতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শুক্রাণুর গুণমান উন্নত করে।

৪। ফল ও সবজি: বিশেষ করে গাজর, টমেটো, কমলা, এবং পালং শাকের মতো ফল ও সবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শুক্রাণুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

৫। কুমড়ার বীজ: এতে জিঙ্ক থাকে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায় এবং একই সাথে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।

৬। ফ্যাটি ফিশ (স্যামন, ম্যাকারেল): এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শুক্রাণুর গতিশীলতা বাড়ায়।

৭। রসুন: রসুনের মধ্যে অ্যালিসিন এবং সেলেনিয়াম থাকে, যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায়।

৮। সবুজ শাকসবজি: বিশেষ করে পালং শাক ও ব্রকোলি, এতে ফোলেট (ভিটামিন বি৯) থাকে, যা শুক্রাণুর সঠিক গঠনে সাহায্য করে।

৯। ডালিম: ডালিম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

১০। কাঁচা হলুদ: এতে থাকা কারকুমিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

১১। কুমড়ো: এতে ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক থাকে, যা শুক্রাণুর গুণমান বৃদ্ধি করে।

১২। দই: এতে প্রোবায়োটিক এবং প্রোটিন থাকে, যা শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান উন্নত করে।

১৩। মধু: শুক্রাণু উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে এই সুপার ফুডটি।

১৪।  স্ট্রবেরি: এতে থাকা ভিটামিন সি শুক্রাণুর গুণমান উন্নত করে।

১৫। বিট: এতে নাইট্রেট থাকে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং শুক্রাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।

১৬। কুইনোয়া: এটি প্রোটিন এবং ফাইবারের চমৎকার উৎস, যা শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়ক।

১৭। অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল শুক্রাণুর গতিশীলতা এবং গুণমান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

১৮। ডার্ক বেরি: বিশেষ করে ব্লুবেরি এবং রাস্পবেরিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শুক্রাণু রক্ষা করে।

১৯। আদা: শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২০। ডিমের সাদা অংশ: এতে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান বৃদ্ধি করতে পারে।

শুক্রাণু বৃদ্ধির ব্যায়াম

শুক্রাণু বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শারীরিক ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। নিচে শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়াম দেওয়া হলো:

১। কেগেল এক্সারসাইজ

এই ব্যায়াম পুরুষের পেলভিক মাংসপেশী শক্তিশালী করতে সহায়ক। এটি শুক্রাণুর গুণমান এবং উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। কিভাবে করবেন: মূত্র ত্যাগ করার সময় প্রস্রাব আটকে রাখার মতো করে পেলভিক মাংসপেশী সংকুচিত করতে হবে। এটি প্রতিদিন ১০-১৫ বার ২-৩ সেট করা যেতে পারে।

২। কার্ডিও ব্যায়াম

নিয়মিত দৌড়ানো, হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটার মতো কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিভাবে করবেন: প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিটের কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ করলে শুক্রাণু উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।

৩। স্কোয়াট

স্কোয়াট পুরুষের টেস্টোস্টেরন লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে, যা শুক্রাণু উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিভাবে করবেন: পায়ের দূরত্ব কাঁধের সমান রেখে, কোমর থেকে ধীরে ধীরে নীচের দিকে ঝুঁকে স্কোয়াট করতে হবে। দিনে ১০-১২ বার ২-৩ সেট করা যেতে পারে।

৪। পুশ-আপস

পুশ-আপ শরীরের পেশী শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা শুক্রাণুর গুণমান বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কিভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে দেহ ওঠানামা করা। দিনে ১৫-২০ বার ২-৩ সেট করা যেতে পারে।

৫। পেলভিক থ্রাস্ট

এই ব্যায়াম পেলভিক অঞ্চলের পেশী শক্তিশালী করে, যা শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়তা করে। কিভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে পেলভিস উপরে উঠানো এবং নিচে নামানো। এটি দিনে ১০-১৫ বার ২-৩ সেট করা যেতে পারে।

৬। ওজন তোলার ব্যায়াম (Strength Training)

শক্তিশালী ওজন তোলার ব্যায়াম যেমন ডেডলিফট, বেনচ প্রেস এবং বারবেল রো, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক। কিভাবে করবেন: সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে ভারোত্তোলন করলে শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে।

৭। যোগব্যায়াম

যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমায় এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে শুক্রাণুর গুণমান উন্নত হয়। কিভাবে করবেন: বিশেষ করে "ভুজঙ্গাসন" (Cobra pose) এবং "পশ্চিমোত্তানাসন" (Seated Forward Bend) শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৮। প্লাঙ্ক এক্সারসাইজ

প্লাঙ্ক পুরো শরীরের পেশী শক্তিশালী করে এবং পেলভিক অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়ায়। কিভাবে করবেন: কনুই এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে থাকার ব্যায়ামটি ৩০-৪০ সেকেন্ড ধরে করা।

৯। লাংগেস

লাংগেস পায়ের পেশী ও পেলভিক অঞ্চলে শক্তি বাড়ায়, যা শুক্রাণুর গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কিভাবে করবেন: একটি পা সামনে রেখে বসার মতো করে ধীরে ধীরে নিচে নামা। প্রতিটি পায়ে ১০-১২ বার ২-৩ সেট করা যেতে পারে।

১০। বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ

বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ অ্যাবডোমিনাল মাংসপেশী শক্তিশালী করে এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।কিভাবে করবেন: পিঠের উপর শুয়ে কনুই এবং হাঁটু একসাথে এনে ক্রাঞ্চ করা।

এই ব্যায়ামগুলো শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, তবে নিয়মিত এবং সঠিকভাবে অনুশীলন করতে হবে। এছাড়া, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামে শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায়

ইসলামে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ও সুস্থ জীবনযাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে শুক্রাণু বৃদ্ধির সরাসরি কোনো বিধান নেই, তবে ইসলামী জীবনযাত্রা ও নির্দেশনার মাধ্যমে সুস্থ যৌন জীবন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। নিচে কিছু সাধারণ ইসলামী অনুশাসন ও পরামর্শ দেওয়া হলো, যা শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে:

১। হালাল ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ

ইসলামে হালাল ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যেমন:

মধু: ইসলামে মধুকে খুব গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি স্বাস্থ্যকর এবং যৌন স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

কালোজিরা: হাদিসে উল্লেখ আছে, কালোজিরা সব ধরনের রোগের উপশম। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

দুধ: দুধ এবং দুধজাত খাবার প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

২। পরিমিত জীবনযাপন (Moderation in Lifestyle)

ইসলামে জীবনযাপনে মধ্যমপন্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা অতিরিক্ত শরীরচর্চা করা ইসলামি নির্দেশনার পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শুক্রাণু উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

৩। সঠিক পর্দা ও যৌন সম্পর্কের নিয়ম

ইসলামে বৈধ পন্থায় (বিয়ে) যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনৈতিক যৌন সম্পর্ক বা হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বৈধ ও সঠিকভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।

৪। দোয়া ও আল্লাহর উপর বিশ্বাস

ইসলামে সব ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোয়া করা এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। কিছু দোয়া, যেমন:

"রব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা যুররিয়াতান ত্বাইয়িবাহ" (হে আমার প্রভু, তুমি আমাকে সৎ ও পুণ্যবান সন্তান দান করো)।

৫. মানসিক চাপ কমানো

ইসলামে ধ্যান, নামাজ ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মানসিক চাপ শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান কমাতে পারে, তাই নিয়মিত নামাজ আদায়, কুরআন পাঠ এবং জিকির করার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা সম্ভব।

৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা

ইসলাম সব সময় ব্যক্তিগত এবং শারীরিক পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দেয়। পবিত্রতা (তাহারাত) বজায় রাখা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।

৭. সঠিক ঘুম ও বিশ্রাম

ইসলামে রাতের একটি নির্দিষ্ট অংশে ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রামের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক, কারণ ঘুমের সময় শরীরের হরমোন ভারসাম্য রক্ষা হয়।

৮. মদ্যপান ও নেশা পরিহার

ইসলামে মদ্যপান, ধূমপান এবং অন্যান্য নেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এইসব নেশা থেকে বিরত থাকা শুক্রাণুর গুণমান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৯. নিয়মিত ব্যায়াম

ইসলামে শরীরচর্চার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কারণ এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ এটি শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিমিত ব্যায়াম শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।

এই ইসলামিক উপায়গুলো অনুসরণ করলে প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং শুক্রাণু উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব।

শুক্রাণু কোথায় তৈরি হয়

শুক্রাণু (Sperm) তৈরি হয় পুরুষের অণ্ডকোষে (Testes)। অণ্ডকোষে থাকা ছোট্ট নালীসমূহকে সেমিনিফেরাস টিউবিউলস (Seminiferous Tubules) বলা হয়, যেখানে শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস (Spermatogenesis) বলা হয়। অণ্ডকোষে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়, যা শুক্রাণুর উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তৈরি হওয়ার পর শুক্রাণু ইপিডিডাইমিস (Epididymis) নামক একটি নালীর মাধ্যমে সংরক্ষণ হয় এবং পরিণত হয়। এরপর যৌন উত্তেজনার সময় বীর্যপাতের মাধ্যমে শুক্রাণু দেহ থেকে নির্গত হয়।

কত বছর পর্যন্ত শুক্রাণু তৈরি হয়

পুরুষের শরীরে সাধারণত বয়ঃসন্ধি (Puberty) থেকে শুরু করে আজীবন শুক্রাণু উৎপাদন হতে থাকে। বয়ঃসন্ধি সাধারণত ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সে শুরু হয়, এবং এ সময় থেকে শুক্রাণু উৎপাদন শুরু হয়।

তবে বয়সের সঙ্গে শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণ কমতে পারে। প্রায় ৪০ বছরের পর থেকে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পেতে থাকে, যা শুক্রাণুর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও শুক্রাণু আজীবন তৈরি হতে থাকে, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর গতিশীলতা, গুণমান এবং প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

লেখকের শেষ কথা

পাঠক, আজকের এই পোস্টটির পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনার পড়ে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

আপনি আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইট প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। শুক্রাণু কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোর প্রতি নজর দিন এবং আপনি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url