এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় সম্পর্কে জানার জন্য আপনি কি খুব আগ্রহী। অনেক ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্যটি পাচ্ছে না। তবে আপনাকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় সম্পর্কে।
তাহলে চলুন, দেরি না করে এবং কথা না বাড়িয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় কি সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ
এপেন্ডিসাইটিস পুরুষ ও মহিলা এমনকি ছোট শিশুদেরও হয়ে থাকে। এই রোগটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এপেন্ডিসাইটিস নামক রোগটি খুব যন্ত্রণাদায়ক। এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। এই সকল লক্ষণগুলো থেকে সহজেি বুঝতে পারা যায় রোগীর এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কিনা। এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো নিম্নরূপ-
১। পেটের ব্যথা: সাধারণত পেটের উপরের অংশে শুরু হয় এবং পরে ডানদিকের নীচের দিকে স্থানান্তরিত হয়।
২। তীব্র ব্যথা: ব্যথা সাধারণত তীব্র এবং ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
৩। বমি বমির বোধ: অনেক রোগী বমি করতে পারেন, যা এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ।
৪। রুচিহীনতা: খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
৫। জ্বর: রোগী সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি জ্বরে আক্রান্ত হন, যা ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হতে পারে।
৬। শক্তি হ্রাস: রোগী ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন।
৭। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: কিছু রোগী পেটের সমস্যা হিসেবে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্মুখীন হন।
৮। পেটের চাপ দিলে ব্যথা: পেটের ডানদিকের অংশে চাপ দিলে ব্যথা বাড়তে পারে।
৯। মলদ্বারে ব্যথা: অনেক সময় মলদ্বারে ব্যথা অনুভূত হয়।
১০। ফোলা পেট: কিছু ক্ষেত্রে পেট ফোলা দেখা যেতে পারে।
১১। পেটের মাংসপেশির সংকোচন: পেটের মাংসপেশিতে সংকোচন অনুভূত হতে পারে।
১২। চিকিৎসার সময় সীমিত: চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩। প্রাথমিক লক্ষণগুলি: সাধারণ শীতলভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।
১৪। বয়সের পার্থক্য: লক্ষণগুলি বয়সের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে।
দ্রুত চিকিৎসা: লক্ষণগুলি গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। উপরোক্ত এই লক্ষণগুলো সনাক্ত হলে বুঝতে হবে যে এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে।
এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয়
উপরোক্ত প্রতিবাদের পড়া মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণগুলো সম্পর্কে। এখন এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানবো এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় কি।এপেন্ডিসাইটিস হলে বিভিন্ন রকম করণীয় বিষয় রয়েছে। এপেন্ডিসাইটিস হলে নিচের করণীয় বা পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত-
- চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- শরীরের লক্ষণ পরীক্ষা করুন: পেটের ব্যথা, জ্বর এবং অন্যান্য লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন।
- পানি ও খাদ্য এড়িয়ে চলুন: ব্যথা শুরু হলে পানি বা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
- দ্রুত হাসপাতাল যান: চিকিৎসকের পরামর্শের পর দ্রুত হাসপাতালে যান।
- ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা: প্রয়োজন হলে আলট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যান করান।
- অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: চিকিৎসক প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
- সার্জারির প্রস্তুতি: যদি এপেন্ডিসাইটিস নিশ্চিত হয়, তাহলে সার্জারির জন্য প্রস্তুতি নিন।
- পরিবারকে অবহিত করুন: পরিবারের সদস্যদের অবগত করুন যাতে তারা সাহায্য করতে পারে।
- অবস্থান এবং বিশ্রাম: যতটা সম্ভব বিশ্রাম করুন এবং শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
- ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করুন: চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন।
- লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন: নতুন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসককে জানান।
- নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুন: খাদ্য ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুন।
- রোগীর যত্ন নিন: যতটা সম্ভব মানসিক সাপোর্ট দিন এবং সাহায্য করুন।
- মেডিকেল রিপোর্ট রাখুন: চিকিৎসার সব তথ্য এবং রিপোর্ট সংরক্ষণ করুন।
- রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা: ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন।
এভাবে এপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।
এপেন্ডিসাইটিস এর ঔষধ
এপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত অপারেশন বা সার্জারির মাধ্যমে করা হয়। তবে রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। কিছু কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ঔষুধ সেবনের মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস ভালো হয়ে যায়। এপেন্ডিসাইটিসের জন্য ব্যবহৃত কিছু সাধারণ ঔষধ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১। অ্যান্টিবায়োটিক: ইনফেকশন প্রতিরোধে বা নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। সাধারণত:
- সিফট্রিয়াকসন (Ceftriaxone)
- মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
২। পেইন কিলার: ব্যথা উপশম করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত:
- অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen)
৩। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ: প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
৪। ফ্লুইড থেরাপি: রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইটের সঠিক পরিমাণে ব্যবস্থাপনা করা হয়।
এপেন্ডিসাইটিস এর ঔষধ গুলো সেবন করা পূর্বে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা আবশ্যক। চিকিৎসগণ রোগীর অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে পরামর্শ বা ওষুধ পত্র প্রদান করবেন সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
এপেন্ডিসাইটিস এর পরীক্ষা
এপেন্ডিসাইটিস নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়। নিম্নে এপেন্ডিসাইটিস এর প্রধান পরীক্ষাগুলির নাম উল্লেখ করা হলো-
- শারীরিক পরীক্ষা: চিকিৎসক রোগীর পেটের বিভিন্ন অংশে চাপ দিয়ে ব্যথার মাত্রা এবং স্থান চেক করেন।
- রক্ত পরীক্ষা: রক্তের পরীক্ষা করা হয়, যা ইনফেকশনের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
- মূত্র পরীক্ষা: মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রথলির সংক্রমণ বা অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।
- আলট্রাসাউন্ড: পেটের আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস অবস্থান এবং অবস্থানগত সমস্যাগুলি নির্ণয় করা হয়।
- সিটি স্ক্যান (CT scan): এটি এপেন্ডিসাইটিস নির্ণয়ের জন্য খুব কার্যকর। এই পরিক্ষা শরীরের অভ্যন্তরের বিস্তারিত ছবি তৈরি করে।
- ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (MRI): বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি বিকিরণ মুক্ত।
- ল্যাপারোস্কোপি: এটি একটি মিনিম্যালি ইনভেসিভ পদ্ধতি, যেখানে ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরা ব্যবহার করে এপেন্ডিসাইটিস অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে উপরোক্ত পরীক্ষাগুলা করার মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস চিহ্নতে করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
এপেন্ডিসাইটিস রোগীর খাবার
এপেন্ডিসাইটিস রোগীর জন্য খাবার নির্বাচনে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সাধারণত, এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো বুঝতে পারার পর এবং এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয় বা এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পরে একজন রোগীকে বেশ কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেতে হতে পারে। নিচে এপেন্ডিসাইটিস রোগীর খাবার তালিকা উল্লেখ করা হলো-
অপারেশনের পূর্বে:
১। হালকা খাবার:
- স্যুপ (শাকসবজি বা মুরগির)
২। ফল ও সবজি: সিদ্ধ বা ভেজিটেবল স্যালাড (পেটের সমস্যা না থাকলে)
৩।পানি ও লিকুইড: পর্যাপ্ত পানি, ফলের জুস (ফল এবং সবজি সজীব রাখা)
অপারেশনের পরে:
১। স্পষ্ট তরল খাবার:
২। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার:
- সিদ্ধ ভাত, সিদ্ধ আলু, এবং হালকা ডাল
- পনির ও দই (পেটের স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে)
৩। শাকসবজি: সেদ্ধ শাকসবজি (গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি)
৪। ফল: কলা, আপেল, এবং পাকা ফল (যা সহজে হজম হয়)
পরিহারযোগ্য খাবার
- মসলাদার খাবার: তীব্র মশলা এবং তেলযুক্ত খাবার।
- ফাস্ট ফুড: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার ইত্যাদি।
- দুগ্ধজাত খাবার: কিছু রোগীর জন্য দুধ এবং দুধের পণ্য খাওয়া কঠিন হতে পারে।
- গ্যাস তৈরি করা খাবার: ব্রকলি, ফুলকপি, শিম ইত্যাদি।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
- খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা।
- ক্ষুদ্র পরিমাণে খাবার খাওয়া, যাতে পেটের ওপর চাপ না পড়ে।
এটি রোগীর স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসকের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সঠিক নির্দেশনার জন্য চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করা জরুরি।
মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক, আশাকরি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করেছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় দিকগুলোর বিস্তারিত আলোচনা। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url