এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায় জানুন।

এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায় পূর্বে থেকে জানা থাকলে এই রোগটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এপেন্ডিসাইটিস একটি অতি পরিচিত রোগ। আজকের এই আর্টিকেলটতে এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায় জানুন।

তাহলে পাঠক বন্ধুগন, চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায়। আসুন, মূল আলোচনা যাওয়া যাক।

এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায়

এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার জন্য কিছু নির্দিষ্ট উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে, যদিও সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে, কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনাকে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিচে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো:


১। আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ: ফল, শাকসবজি, এবং শস্যজাতীয় খাবার খান। আঁশযুক্ত খাদ্য অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং হজমের সমস্যা কমায়।

২। পর্যাপ্ত পানি পান:পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, যা শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে এবং পেটের স্বাস্থ্যে সহায়ক।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৪। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ: পেটে ব্যথা, বমি বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

৫। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন: ব্যক্তিগত ও খাবারের স্বাস্থ্যের জন্য পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। ভালো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৬। এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার: সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।

৭। অতিরিক্ত মশলাদার খাবার এড়ানো: অতিরিক্ত মশলাদার বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এগুলি অন্ত্রের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৮। মাল্টিভিটামিন: প্রয়োজনমত মাল্টিভিটামিন বা খনিজের অভাব পূরণ করার জন্য চিকিৎসকের  পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা।

৯। পরিবারের ইতিহাস মনোযোগ দেওয়া: যদি আপনার পরিবারের মধ্যে এপেন্ডিসাইটিসের ইতিহাস থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ যত্ন নিন।

১০। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ করা: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল অন্ত্রের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এগো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

এগুলি অনুসরণ করলে এপেন্ডিসাইটিসের ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব। তবে, সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়?

এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায় জানার পাশাপাশি সাধারণত কোন পাশে হয় সেটা জানাও অত্যন্ত জরুরি। এপেন্ডিসাইটিস সাধারণত পেটের ডানদিকের নীচের অংশে ঘটে। অ্যাপেন্ডিক্স, যা একটি ছোট সিলিন্ডার আকৃতির অঙ্গ, এটি বৃহদান্ত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সাধারণত পেটের ডানদিকের নীচে অবস্থিত।

লক্ষণ অনুযায়ী স্থান:
  • ব্যথার স্থান: সাধারণত প্রথমে পেটের উপরের অংশে ব্যথা অনুভূত হয় এবং পরে তা ডানদিকের নীচের অংশে স্থানান্তরিত হয়।
  • ডান সাইডের অবস্থিতি: পেটের ডান দিকের নিচের কোণে চাপ দিলে ব্যথা বাড়তে পারে।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা পেটের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুভূত হতে পারে, তবে সাধারণত এপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে ডানদিকের নীচের অংশে ব্যথা প্রধান লক্ষণ।

এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়?

এপেন্ডিসাইটিসের কারণগুলি বিভিন্ন রকম হতে পারে। এ সকল কারণ গুলি জানা থাকলে এপেন্ডিসাইটিসে থেকে বাঁচার উপায় বা দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় বা এর প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • অবরোধ: অ্যাপেন্ডিক্সের অভ্যন্তরীণ অংশে খাদ্য, মল বা টিউমার দ্বারা অবরোধ সৃষ্টি হলে ইনফেকশন হতে পারে।
  •  ব্যাকটেরিয়া: সাধারণত অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অ্যাপেন্ডিক্সে সংক্রমণ ঘটায়, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  •  জন্মগত কারণে: কিছু মানুষের অ্যাপেন্ডিক্সের গঠনগত কারণে এটি সহজে প্রদাহিত হতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা: যে সকল ব্যক্তিদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের এপেন্ডিসাইটিস হওয়া সম্ভব না থাকে।
  •  ডায়েটের অভাব: আঁশযুক্ত খাদ্য কম খাওয়া এপেন্ডিসাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  •  বংশগত প্রভাব: পরিবারের মধ্যে এপেন্ডিসাইটিসের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  •  বয়স: সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এপেন্ডিসাইটিস বেশি ঘটে।
  •  অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা: যেমন কোলাইটিস বা ক্রনিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে।

এই কারণগুলির মধ্যে যে কোনও একটি বা একাধিক কারণ এপেন্ডিসাইটিসের সৃষ্টি করতে পারে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে এটি গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। 

এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ

এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন খরচ বিভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভর করে, যেমন:

 ১। অপারেশনের ধরন:
  • ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেন্ডেকটমি (মিনিম্যালি ইনভেসিভ) সাধারণত খরচ কম এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়।
  • ওপেন অ্যাপেন্ডেকটমি সাধারণত বেশি খরচে হতে পারে।

২। হাসপাতালের স্থান: শহরের বড় হাসপাতাল বা বিশেষায়িত মেডিকেল সেন্টারে খরচ বেশি হতে পারে।

৩। ডাক্তারের ফিস: সার্জনের অভিজ্ঞতা এবং খ্যাতির ওপর ভিত্তি করে ফি ভিন্ন হতে পারে।

৪। অপেরেশন পরবর্তী যত্ন: হাসপাতালে থাকা এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

৫।  ভিজিট এবং পরীক্ষার খরচ: চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষার খরচ ইত্যাদি যুক্ত হবে।

বাংলাদেশে সাধারণত এপেন্ডিসাইটিসের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিগুলোতে অপারেশনের খরচ প্রায় ৩০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

তবে, এই খরচ দেশের স্থান, হাসপাতালের নীতি এবং রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। নিশ্চিত খরচ জানতে নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।অপারেশনের জন্য হাসপাতাল নির্বাচন করে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে এই খরচ নিশ্চিত করুন।

এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন পরবর্তী জটিলতা

এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন পরবর্তী কিছু জটিলতা হতে পারে। সাধারণ জটিলতাগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • সংক্রমণ: অপারেশন করার পর ইনফেকশন হতে পারে, যা পেটের গভীরে বা ক্ষতস্থানে হতে পারে।
  • রক্তক্ষরণ: অপারেশন শেষে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা সেলাইয়ের স্থানে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অবসেস: ক্ষতস্থানে পুঁজ জমে যেতে পারে, যা চিকিৎসার জন্য খোলার প্রয়োজন হতে পারে।
  • আন্ত্রিক সমস্যা: কিছু রোগী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সম্মুখীন হতে পারেন।
  • হেপাটাইটিস বা অন্যান্য সংক্রমণ: অপারেশন পরবর্তী সময়ে অন্য সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
  •  শ্বাসকষ্ট: কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পর শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • যন্ত্রণা: অপারেশনের পর স্থায়ী বা তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে।
  • অসুস্থতা: অপারেশন পরবর্তী সময়ে ব্যথা, জ্বর এবং অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • পুনরাবৃত্তি: কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিস পুনরায় হতে পারে।

এটি উল্লেখযোগ্য যে অপারেশনের পর এই জটিলতাগুলি যদি দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। সঠিক যত্ন এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আশাকরি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করেছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন এপেন্ডিসাইটিস থেকে বাঁচার উপায়। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

এই আর্টিকেলটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এইরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইট  প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। আবার দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url