দাড়ি না গজানোর কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ।

দাড়ি না গজানোর কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ সম্পর্কে জানার জন্য আপনি কি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করছেন? তাহলে আপনাকে আমার ওয়েবসাইটের স্বাগতম। কারণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন দাড়ি না গজানোর কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ সম্পর্কে।
দাড়ি না গজানোর কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ
পাঠক, তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে ও কথা না বাড়িয়ে আজকের আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন দাড়ি না গজানোর কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ সম্পর্কে। চলুন মওলার বাসায় যাওয়া যাক।

দাড়ি না গজানোর কারণ

প্রত্যেকটা পুরুষই চান তার মুখে চাপ দাড়ি থাকুক। দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে। কিন্তু অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও সঠিক সময় দাড়ি গজায় না। দাড়ি না গজানোর বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা শারীরিক, জেনেটিক বা হরমোনাল সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। এখানে নিম্নে দাড়ি না গজানোর কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।

জেনেটিক কারণ: আপনার পরিবারের জেনেটিক্স যদি এমন হয় যে পুরুষ সদস্যদের দাড়ি পাতলা হয় বা গজায় না, তবে আপনার ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে পারে। কিছু মানুষের দাড়ি কম গজায় কারণ তাদের জিনে এ বৈশিষ্ট্য থাকে।

হরমোনাল সমস্যা: টেস্টোস্টেরন হরমোন দাড়ি বৃদ্ধির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হয়, তবে দাড়ি গজানো ধীর হতে পারে বা দাড়ি গজানো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এন্ড্রোজেনের অভাবও দাড়ি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

পুষ্টির অভাব: দাড়ি গজানোর জন্য শরীরের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন। প্রোটিন, ভিটামিন ডি, এবং জিঙ্কের অভাব দাড়ি গজানোর প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে।

চর্মরোগ: ত্বকের কিছু রোগ, যেমন অ্যালোপেসিয়া বা ফোলিকুলার সংক্রমণ, দাড়ি গজানোর বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এসব চর্মরোগ গুলোর কারণে অনেকের দাড়ি গজায় না।

বয়স: সাধারণত কিশোর বয়স থেকে পুরুষদের দাড়ি গজাতে শুরু করে, তবে অনেক ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত দাড়ি সম্পূর্ণভাবে গজায় না। এটি বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাভাবিক বিষয়।

স্বাস্থ্যগত অবস্থা: থাইরয়েড সমস্যা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা দাড়ির বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।

যদি দাড়ি না গজানো নিয়ে উদ্বেগ বা হতাশায় থাকেন। তবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভালো। কারণ কোন ব্যক্তির হরমোনাল বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা থাকলে তা পরীক্ষা করা যেতে পারে এভাবে চিকিৎসা গ্রহণ হতে পারে।

কোন হরমোনের অভাবে দাড়ি গজায় না 

উপরের প্রতিবেদনটি পড়ে ইতিমধ্যে দাড়ি না গজানোর কারণগুলো আমরা জানলাম এখন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা জানবো কোন হরমোনের অভাবে দাড়ি গজায় না। দাড়ি গজাতে না পারার ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি হরমোনের ঘাটতি বা কার্যকারিতার অভাব জড়িত থাকে। 

যেমনঃ টেস্টোস্টেরন এবং ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT)। এই দুইটি হরমোন পুরুষের শারীরিক বৃদ্ধি এবং লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে হরমোন গুলো সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।

টেস্টোস্টেরন: টেস্টোস্টেরন হলো প্রধান পুরুষ হরমোন যা পুরুষদের গোঁফ, দাড়ি, শরীরের অন্যান্য লোমের বৃদ্ধি এবং পেশী ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। যদি শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তবে দাড়ি গজানোর হারও কমতে পারে।

বয়স, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যগত কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রভাবিত বা কম হতে পারে। কিছু পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রাকৃতিকভাবে কম হতে পারে, যা দাড়ি গজানোর সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও তাদের দাড়ি গজায় না।

ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT): টেস্টোস্টেরন থেকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) তৈরি হয়, যা বিশেষভাবে দাড়ি ও শরীরের অন্যান্য স্থানে লোম গজানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। DHT হেয়ার ফলিকলকে উদ্দীপিত করে, যা দাড়ি বৃদ্ধিতে সহায়ক করে।

তবে DHT এর অভাব হলে দাড়ি বা মুখের লোম গজানোর হার অনেক কমে যায়। অনেক সময় পুরুষদের দাড়ি পাতলা হওয়ার কারণও হতে পারে DHT হরমোনের পরিমাণ কম থাকা। যদি হরমোনাল সমস্যা থাকে বলে সন্দেহ হয়,  তবে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা এবং রক্ত পরীক্ষা করে হরমোনের মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।

কি খেলে দাড়ি গজায়?

দাড়ি গজানোর জন্য শরীরকে সঠিক বা পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ৫টি খাদ্য উপাদান উল্লেখ করা হলো যা দাড়ি বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং দাড়ি গজাতে বেশ কার্যকরী।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: মাছ, মাংস, ডিম, এবং ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন চুলের ফলিকল মজবুত করে এবং দাড়ি গজাতে সাহায্য করে।

ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার: বিশেষ করে বায়োটিন (ভিটামিন B7) দাড়ি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি ডিম, বাদাম, এবং গোটা শস্যে পাওয়া যায়।

ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা দাড়ির বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলো এবং ফ্যাটি মাছ, ডিমের কুসুমে এটি পাওয়া যায়।

জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার: জিঙ্ক হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সহায়ক। এটি মাংস, বাদাম, এবং শিমজাতীয় খাদ্যে পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্যকর চর্বি: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ আখরোট, বিভিন্ন রকম শস্য জাতীয় খাবার, মাংস ও মাছ, এবং চিয়া বীজ দাড়ির বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ

দাড়ি গজানোর জন্য বেশ কিছু ঔষধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়স। তবে এগুলোর ব্যবহার করার তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। নিম্নে কয়েকটি দাড়ি গজানোর ওষুধ ও স্প্রের না বললে করা হলো-

মিনোক্সিডিল (Minoxidil): এটি একটি বহুল ব্যবহৃত টপিকাল ঔষধ, যা মূলত চুল পড়া রোধে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। মিনোক্সিডিল দাড়ি বা চুলের ফলিকলগুলোতে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা লোমের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। এটি সাধারণত দিনে দুইবার সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করতে হয়। ব্যবহার করার পর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়।

ফিনাস্টেরাইড (Finasteride): এটি মূলত চুল পড়া কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এটি টেস্টোস্টেরনকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে (DHT) রূপান্তর রোধ করে, যা দাড়ির বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। ফিনাস্টেরাইড সাধারণত মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমন যৌন ক্ষমতা হ্রাস।

বায়োটিন (Biotin): বায়োটিন একটি ভিটামিন B7 যা চুল, নখ, এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট দাড়ির বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। এটি সাধারণত ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।

চুল প্রতিস্থাপন সার্জারি (Hair Transplant Surgery) কিছু ক্ষেত্রে, যদি দাড়ি খুব পাতলা হয় বা ফলিকল কাজ না করে, তবে চুল প্রতিস্থাপন সার্জারি করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে শরীরের অন্য অংশ থেকে চুলের ফলিকল নিয়ে মুখের ত্বকে প্রতিস্থাপন করা হয়।

এভাবে চুল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দাড়ি গজায়।উল্লেখ্য, এসব ঔষধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে এবং সব ক্ষেত্রেই কার্যকর নাও হতে পারে। তাই ঔষধ বা থেরাপি ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সেভ করলে কি দাড়ি গজায়?

অনেকের ধারণা ঘন ঘন সেভ করলে দাড়ি গজায়। পাঠক বন্ধুগণ এ কথাটির কোন ভিত্তি নাই। এর কারন সেভ করার সাথে দাড়ি গজানোর কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। অনেকের মাঝে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে যে সেভ করলে দাড়ি ঘন বা দ্রুত গজাবে, কিন্তু এটি আসলে সত্য নয়। সেভ করলে দাড়ির ফলিকলের গঠন বা বৃদ্ধির হার পরিবর্তিত হয় না। 

তবে, সেভ করার সময় দাড়ির প্রান্তগুলো মোটা ও তীক্ষ্ণ হয়ে যায়, যা সেভ করার পরে দাড়িকে সাময়িকভাবে ঘন দেখাতে পারে। দাড়ির বৃদ্ধি মূলত নির্ভর করে জেনেটিক্স, হরমোনাল ব্যালান্স (বিশেষত টেস্টোস্টেরন) এবং পুষ্টি সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ের উপর। সেভ করার মাধ্যমে এগুলো প্রভাবিত হয় না।

কত বছর বয়সে দাড়ি গজায়?

দাড়ি সাধারণত কিশোর বয়সে গজাতে শুরু করে, যা প্রায় ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে, দাড়ি পূর্ণাঙ্গভাবে গজানোর প্রক্রিয়া এবং ঘনত্ব বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে দাড়ি ২০ বছর বা তার পরেও ঘন হতে শুরু করে।

 কিছু মানুষের ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত দাড়ি সম্পূর্ণ গজায় না। দাড়ি গজানোর সময় এবং ঘনত্ব প্রধানত জেনেটিক্স, হরমোনাল স্তর (বিশেষত টেস্টোস্টেরন এবং ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন বা DHT), এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর নির্ভর করে।

লেখক এর শেষ কথা

পাঠক বন্ধুগণ, এই আর্টিকেল একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন দারি না গতানুগ কারণ ও দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ সম্পর্কে। আরোও জানতে পেরেছেন কোন হরমোনের অভাবে দাড়ি গজায় না, 

কি খেলে দাড়ি গজায় ও সেভ করলে কি দাড়ি গজায় এবং কত বছর বয়সে দাড়ি গজায় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url