পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা।
প্রিয় পাঠক, ভাইয়েরা আমার আপনাকে আমার ওয়েবসাইটের স্বাগতম। পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা জানার জন্য অনেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। সেই সকল ভাইদের জন্য আজকে আর্টিকেলটি।
আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগবে এবং আপনি উপকৃত হবেন। চলুন, পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতার মূল আলোচনা যাওয়া যাক।
পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা
পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়াম পাইলভিক মাংসপেশীগুলোকে শক্তিশালী করার একটি কার্যকর উপায়। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায়। নিচে পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
মূত্রনালীর নিয়ন্ত্রণ: কেগেল ব্যায়াম মূত্রনালীর মাংসপেশীগুলোকে শক্তিশালী করে, ফলে প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ বাড়ায় এবং অকারণে প্রস্রাব পড়ে যাওয়ার সমস্যা কমায়।
স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স হ্রাস: পুরুষরা যখন হাসেন কিংবা কাশলে বা বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের সময় মূত্রপাতের সমস্যা অনুভব করেন। কেগেল ব্যায়াম সেই সমস্যার উপশমে সাহায্য করে।
যৌন ক্ষমতার উন্নতি: কেগেল ব্যায়াম পুরুষদের যৌন ফাংশন উন্নত করতে সাহায্য করে এবং অঙ্গভঙ্গির সময় মাংসপেশীর স্থিতিশীলতা বাড়ায়। ফলে এই ব্যায়াম করলে যৌন জীবন স্বাস্থ্যকর হয়।
অর্গাজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি: কেগেল ব্যায়াম অর্গাজমের সময় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং আরও শক্তিশালী অর্গাজমের অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
সেক্সুয়াল স্বাস্থ্য উন্নতি: পাইলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলির শক্তি: কেগেল ব্যায়াম পাইলভিক ফ্লোরের অন্যান্য মাংসপেশীগুলির উপরও প্রভাব ফেলে। যা শরীরের স্থিতিশীলতা এবং শক্তি বাড়ায়।
পাইলভিক ব্যথা কমানো: পাইলভিক অঞ্চলের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে কেগেল ব্যায়াম সাহায্য করে।
সুস্থ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা: শক্তিশালী পাইলভিক মাংসপেশী সুস্থ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
মেন্টাল ফোকাস: এই ব্যায়াম করার ফলে মনোযোগ এবং মনোবল বৃদ্ধি পায়। ফলে যে কোন কাজে মন বসে এবং মনোমোর আরোও দীর্ঘায়ু হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্য রক্ষা: পুরুষদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাইলভিক ফ্লোর দুর্বল হতে পারে, কেগেল ব্যায়াম এটি রোধ করতে সাহায্য করে।
সাধারণ শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: কেগেল ব্যায়াম সাধারণ শারীরিক কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং শারীরিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়।
রক্ত সঞ্চালন উন্নতি: এই ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, যা পাইলভিক অঞ্চলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মনোরোগের প্রভাব কমানো: কেগেল ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়ক। এই ব্যায়াম নিয়মিত করলে মনোরোগের প্রভাব কমিয়ে সুস্থ থাকা যায়।
পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করা পুরুষদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি পুরুষের যৌন জীবনের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কেগেল ব্যায়াম।
কেগেল ব্যায়াম করার ছবি
পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়াম একটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি। এটি পুরুষের মাংসপেশী গুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতার কারণে দিন দিন এই ব্যায়ামের জনপ্রিয়তা বাড়ছে পুরুষের মাঝে। নিচে কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
মাংসপেশী সনাক্ত করুন: প্রথমে আপনাকে আপনার পাইলভিক ফ্লোরের মাংসপেশী সনাক্ত করতে হবে। এটি করতে, প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাব বন্ধ করার চেষ্টা করুন। যেই মাংসপেশী ব্যবহার করেন, সেটাই আপনার কেগেল মাংসপেশী।
সঠিক পজিশন নির্বাচন করুন: কেগেল ব্যায়াম যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে করা যায়, তবে আরামদায়ক পজিশনে থাকা উচিত। আপনি বসে, শোয়া বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। কিছু পুরুষ শুয়ে থাকা অবস্থায় এই ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ: ব্যায়াম করার সময় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। শ্বাস নেওয়ার সময় পাইলভিক মাংসপেশী সংকোচন করুন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় ধীরে ধীরে সেগুলোকে মুক্ত করুন।
মাংসপেশী সংকোচন: কেগেল ব্যায়াম করার সময়, আপনার পাইলভিক মাংসপেশীকে ধীরে ধীরে সংকোচন করুন। এটি ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন।
মাংসপেশী মুক্ত করা: সংকোচনের পরে, ধীরে ধীরে মাংসপেশী ছেড়ে দিন এবং ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন।
পুনরাবৃত্তি করুন: এই প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার করুন। একবারে ৩ সেট (সেট প্রতি ১০-১৫ বার) করুন। দিনে ২-৩ বার এটি করা ভালো।
পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি: প্রথমে যদি আপনি ১০ বারও করতে পারেন, তবে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ান। ২০ বা ৩০ বার পর্যন্ত যেতে পারেন।
নিয়মিত অনুশীলন: কেগেল ব্যায়ামকে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন। নিয়মিত অনুশীলন করলে ফলাফল বেশি হবে।
ঢিলা ঢালা প্যান্ট পরিধান করুন: ব্যায়ামের সময় আরামদায়ক পোশাক পরুন যাতে আপনার শরীর মুক্তভাবে কাজ করতে পারে।
মনোযোগ দিন: মাংসপেশী সংকোচনের সময় অন্য কোন মাংসপেশী (যেমন পেট বা পা) সংকোচন করবেন না, কারণ এটি ফলস্বরূপ কম কার্যকর হবে।
সঠিক সময়: ব্যায়াম করার সময় একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, যেন নিয়মিতভাবে করতে পারেন।
কেগেল ব্যায়াম পুরুষদের জন্য অনেক উপকারে আসে। নিয়মিতভাবে এই ব্যায়াম করার মাধ্যমে পাইলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্য উন্নত করা যায় এবং বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা পাওয়া যায়।
কেগেল ব্যায়াম কতদিন করতে হবে
পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা পেতে সাধারণত পুরুষের কেগেল ব্যায়াম শুরু করার পর কিছু সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, নিয়মিতভাবে এবং সঠিকভাবে অনুশীলন করলে ফলাফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যেতে পারে।
নিচে কেগেল ব্যায়াম করার সময়সীমা এবং সঠিক অভ্যাস অর্থাৎ কে গেল ব্যায়াম কতদিন করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো:
নিয়মিততা: কেগেল ব্যায়াম প্রতিদিন করা উচিত। সাধারণত, দিনে ২-৩ বার ১০-১৫ সেট করা ভালো।
অবিরাম অভ্যাস: কেগেল ব্যায়াম একটি দীর্ঘমেয়াদী অভ্যাস হওয়া উচিত। যতদিন পর্যন্ত আপনার পাইলভিক ফ্লোরের শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন, ততদিন এটি করতে হবে।
ফলাফল পাওয়ার সময়: অনেক পুরুষ ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে কিছু ফলাফল অনুভব করতে পারেন। যেমন মূত্রনালীর নিয়ন্ত্রণের উন্নতি বা যৌন জীবনের উন্নতি। তবে কিছু ক্ষেত্রে ৩ মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
বিশেষ পরিস্থিতি: বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যা (যেমন স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স) থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করতে হবে যতক্ষণ না সমস্যা সমাধান হয়।
ক্লিনিকাল পরামর্শ: যদি কেগেল ব্যায়ামের ফলে উন্নতি না ঘটে বা আপনি অসুবিধা অনুভব করেন, তাহলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তারা আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিশেষ নির্দেশনা দিতে পারবেন।
কেগেল ব্যায়াম একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি। তবে এটি সফল হওয়ার জন্য ধারাবাহিকতা এবং সময়ের প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে কেগেল ব্যায়াম করা হলে, এটি আপনার পাইলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
কেগেল ব্যায়াম কখন করতে হয়
পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতার কথা মাথায় রেখে অনেক পুরুষ এই ব্যায়ামের প্রতি দিন দিন অগ্রসর হচ্ছেন। এর জন্য অনেক পুরুষই জানতে চান কেগেল ব্যায়াম কখন করতে হয়। মূলত কেগেল ব্যায়াম যে কোনও সময় এবং স্থানে করা যেতে যায়।
কারণ এটি একটি সুবিধাজনক এবং গোপনীয় ব্যায়াম। তবে, কিছু নির্দিষ্ট সময় এবং অবস্থান রয়েছে যা কেগেল ব্যায়াম করার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। নিচে তা উল্লেখ করা হলো:
দিনের শুরুতে: সকালে উঠে শরীরকে সচল করার জন্য কেগেল ব্যায়াম করা যেতে পারে। এটি দিনের শুরুতে পাইলভিক ফ্লোরের মাংসপেশীগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য একটি ভাল উপায়।
দিনের মধ্যে যেকোনো সময়: কেগেল ব্যায়াম অফিসে, বাসে, বা অন্য যেকোনো স্থানে বসে করা যায়। এটি সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে করা সম্ভব, তাই আপনার দৈনন্দিন রুটিনে এটি অন্তর্ভুক্ত করা সহজ।
অফিসে কাজ করার সময়: যখন আপনি ডেস্কে বসে কাজ করছেন, তখন এই ব্যায়ামটি করতে পারেন। এটি আপনার মনোযোগও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন: শোয়া অবস্থায় বা বিশ্রাম নেওয়ার সময় কেগেল ব্যায়াম করা খুবই কার্যকর হতে পারে। এটি মাংসপেশীগুলোকে ভালোভাবে সংকোচন করতে সহায়তা করে।
ব্যায়ামের পরে: যেকোনো ধরনের শারীরিক ব্যায়ামের পরে কেগেল ব্যায়াম করা অনেক বেশি উপকারী । এটি পাইলভিক ফ্লোরকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
সন্ধ্যায় বিশ্রাম করার সময়: রাতে শোয়ার আগে কেগেল ব্যায়াম করা একটি ভালো অভ্যাস। এটি শরীরকে শিথিল করতে এবং রাতে ভালো ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
মেডিটেশনের সময়: মেডিটেশন বা মনোযোগের সময় কেগেল ব্যায়াম করা যেতে পারে। এটি আপনার মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করতে এবং শরীরের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কেগেল ব্যায়াম করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে যেকোনো সময় করা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে কেগেল ব্যায়াম করার ফলে পাইলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
মন্তব্য
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এই আর্টিকেলটি এতক্ষণ ধৈর্য ধরে পড়ার মাধ্যমে আপনি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা।আরোও জানতে পেরেছেন পুরুষের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম।
ও কেগেল ব্যায়াম কতদিন করতে হয়? এবং কেগেল ব্যায়াম কখন করতে হয়? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই আর্টিকেলটি আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আপনিও চাইলে কেগেল ব্যায়াম করে আপনি আপনার জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। এতক্ষন আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url