ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা ও চুপ থাকার ফজিলত আপনি কি জানতে চান। তাহলে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা ।
ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা। আশা করি এই আর্টিকেলটি পরে আপনার ভালো লাগবে এবং আপনি উপকৃত হবেন। চলুন মোনাজায় যাওয়া যায়।

ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা

ইসলামে চুপ থাকার (বা নীরব থাকার) গুরুত্ব এবং উপকারিতা অনেক বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামে চুপ থাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু দিক রয়েছে যা আত্মবিশ্বাস, দয়া এবং শান্তির সঞ্চার করে। নিচে ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা কিছু মূল উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:

১. গুনাহ থেকে রক্ষা: ইসলামে চুপ থাকা গুনাহ (পাপ) থেকে বাঁচার একটি মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। আমাদের মুখ দিয়ে যখন কথা বের হয়, তখন সম্ভবনা থাকে ভুল কিছু বলার, মিথ্যা বলার, অথবা অপরকে কষ্ট দেওয়ার। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বলো না, যা তোমরা জানো না।” (সূরা আল-ইসরা, ১৭: ৩৬) এভাবে নীরবতা গুনাহ থেকে বাঁচতে সহায়ক হতে পারে।

২. জ্ঞান ও বিচক্ষণতা বৃদ্ধি: ইসলামে বলা হয়েছে যে, যখন কেউ চুপ থাকে, তখন সে চিন্তা করার জন্য আরো বেশি সময় পায়, যা তাকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে সাহায্য করে। নবী (সা.) বলেছেন, “চুপ থাকা এক ধরনের জ্ঞান, তবে এটা সেই জ্ঞান যে কোনো ভুল বা অবিচার করবে না।"

৩. আত্ম-সংযমের প্রশিক্ষণ: চুপ থাকা আত্ম-সংযমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষ যখন চুপ থাকে, তখন সে নিজের আবেগ এবং খেয়াল-খুশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা এক ধরনের আধ্যাত্মিক উন্নতি। এর মাধ্যমে মানুষ তার অনুভূতিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং কল্যাণকর কাজগুলোতে মনোনিবেশ করতে পারে।

৪. সম্পর্কের উন্নতি: অনেক সময় কথার মাধ্যমে সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। চুপ থাকলে, বিশেষ করে কোনো বিতর্ক বা বিরোধের সময়, সম্পর্কের মধ্যে শান্তি বজায় থাকে। ইসলামে প্রতিটি মুসলমানকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে যে, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কথা না বলে, শান্ত থাকতে।

৫. আল্লাহর নিকট ভালবাসা অর্জন: নির্বাচিতভাবে চুপ থাকা এক ধরনের ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। যা আল্লাহ তাআলার কাছে পছন্দনীয়। নবী (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চুপ থাকে, তার নীরবতা এক ধরনের ইবাদত।” (আল-হাদিস)

৬. শান্তি ও প্রশান্তি লাভ: নীরবতা এক ধরনের মানসিক শান্তি এনে দেয়, কারণ অযথা কথা বলার কারণে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে। ইসলামে বলা হয়েছে, “নীরবতা হল এক ধরনের প্রশান্তি, যা চিন্তা এবং মনোভাবকে সুষম রাখে।”

৭. অহংকার ও গর্ব থেকে বাঁচা: অন্যদের সাথে অনেক কথা বললে অহংকার এবং গর্ব বাড়তে পারে, তবে চুপ থাকার মাধ্যমে মানুষের গর্ব ও অহংকার কমে যায় এবং সে অন্যদের প্রতি বেশি নম্র হয়। ইসলামে অহংকার ও গর্বকে নিষেধ করা হয়েছে।

এই উপকারিতা গুলি চুপ থাকার ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ইসলামে চুপ থাকার সঙ্গে সঙ্গে দরকার সময়মতো উপকারী কথা বলাও, যাতে মানুষকে সাহায্য করা যায় এবং ধর্মের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।

চুপ থাকার ফজিলত

ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা আর্টিকেল এই প্রতিবেদনে থাকছে চুপ থাকার ফজিলত। ইসলামে চুপ থাকার (নীরবতা) ফজিলত বা মর্যাদা ব্যাপক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুপ থাকার মাধ্যমে আত্ম-সংযম এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন করা সম্ভব। নিম্নে চুপ থাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত বর্ণনা করা হলো:

১. গুনাহ থেকে রক্ষা: চুপ থাকার মাধ্যমে আমরা আমাদের মুখ দিয়ে কোনো অবাঞ্চিত কথা বলার ঝুঁকি কমাতে পারি, যা গুনাহ (পাপ) হতে পারে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন "যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।" (বুখারি, মুসলিম)

২. আধ্যাত্মিক শান্তি: নীরবতা আধ্যাত্মিক শান্তি প্রদান করে। যখন কেউ চুপ থাকে, সে তার আবেগ এবং মনের অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকে। এই শান্তি তাকে আল্লাহর নিকট আরও কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে।

৩. জ্ঞান অর্জন ও চিন্তা করার সুযোগ: চুপ থাকার মাধ্যমে মানুষ চিন্তা করার সুযোগ পায়, যেটি তাকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে সাহায্য করে। মহানবী (সা.) বলেছেন:"চুপ থাকা এক ধরনের জ্ঞান।" (বুখারি)

৪. আত্মসংযম ও নিয়ন্ত্রণ: চুপ থাকা আত্মসংযমের এক প্রকার প্রশিক্ষণ। নিজের কথা বলার আগেই চিন্তা করার অভ্যাস তৈরি হয়, যা মানসিক উন্নতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক।

৫. অহংকার থেকে মুক্তি: অনেক সময় কথা বলার মাধ্যমে অহংকার এবং গর্ব সৃষ্টি হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। চুপ থাকা অহংকার ও গর্ব থেকে মুক্তি দেয় এবং মানুষকে নম্রতা ও ভদ্রতার পথে পরিচালিত করে।

৬. সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি: অনেক সময় কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত পৌঁছায়, বা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। চুপ থাকার মাধ্যমে এসব সমস্যা এড়ানো যায় এবং সম্পর্কের মধ্যে শান্তি বজায় থাকে।

৭. অন্যদের প্রতি সদাচরণ: যখন কেউ চুপ থাকে, তখন সে অন্যদের কথা শোনার সুযোগ পায় এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সদাচরণ প্রদর্শন করতে পারে। এটা মানুষকে ভালো আচরণ ও সদাচরণের দিকে পরিচালিত করে।

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: আল্লাহ তাআলা চুপ থাকার মাধ্যমে এমন ইবাদতকে পছন্দ করেন, যেটি আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তা বা কাজ থেকে অতিরিক্ত বিপথগামী না হওয়ার সাহায্য করে। "যে ব্যক্তি চুপ থাকে, সে অনেক ভালো কাজ করতে পারে।" (আল-হাদিস)

৯. ধৈর্য্য ও সমঝোতা: চুপ থাকার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ধৈর্য্য এবং সমঝোতার বিকাশ ঘটাতে পারে, বিশেষত যখন তার প্রতি অন্যরা অপমানজনক বা উত্তেজিত আচরণ করে। চুপ থাকলে মানুষ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।

এভাবে, ইসলামে চুপ থাকার ফজিলত বিশেষভাবে আত্ম-সংযম, আধ্যাত্মিক উন্নতি, এবং সম্পর্কের উন্নতি ও শান্তি অর্জনের একটি পথ হিসেবে বিবেচিত।

চুপ থাকা মানে দুর্বলতা নয়

ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানবো চুপ থাকা আমাদের দুর্বলতা নাই সে সম্পর্কে। হ্যাঁ, চুপ থাকা কখনোই দুর্বলতা নয়। বরং এটি এক ধরনের শক্তি, আত্মসংযম এবং বিচক্ষণতার প্রদর্শন। অনেক সময় চুপ থাকা মানে নিজের আবেগ বা প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারা, যা মানবিক শক্তির প্রমাণ। চুপ থাকলে আমরা অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারি, যেমন:

১. আত্মসংযম এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ: চুপ থাকা আত্মসংযমের একটি দৃষ্টান্ত। যখন কেউ উত্তেজিত বা ক্ষুব্ধ হয়, তখন চুপ থাকলে সে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা দুর্বলতার চেয়ে বরং শক্তির পরিচায়ক। একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি জানেন কখন কথা বলবেন এবং কখন চুপ থাকবেন।

২. বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতা: চুপ থাকা অনেক সময় বুদ্ধিমত্তার প্রতীক হয়। অনেক পরিস্থিতিতে, বিশেষত বিতর্ক বা উত্তপ্ত সময়ে, কথা না বলাই উত্তম। চুপ থাকা মানে নয় যে আপনি কিছু জানেন না বা দুর্বল, বরং এটি বোঝায় যে আপনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।

৩. সম্মান এবং শান্তি বজায় রাখা: চুপ থাকার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। কোনো ধরনের উত্তেজনার সময় চুপ থাকলে, আমরা সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়াতে সক্ষম হয় এবং সম্পর্কগুলো শান্ত ও সুস্থ থাকে।

৪. আধ্যাত্মিক শক্তি: ইসলামে চুপ থাকা এক ধরনের ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোনো দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক শক্তি, যা মানুষকে তার চিন্তা এবং কথার মাধ্যমে সঠিক পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করে।

৫. বিকল্প চিন্তা: কখনো কখনো, চুপ থাকা আমাদের সময় দেয় বিষয়গুলো ভালোভাবে ভাবার জন্য। এর মাধ্যমে আমরা আরও পরিষ্কার এবং যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এটি পিপাসিত বা তাড়াহুড়োর মধ্যে না গিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করে।

অতএব, চুপ থাকা মানে দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হতে পারে, যা আত্মসংযম, বিচক্ষণতা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের প্রতীক।

চুপ থাকার অপকারিতা

ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি চুপ থাকার কিছু অপকারিতাও রয়েছে।এখন আমরা চুপ থাকার উপকারিতা কি কি তা জানবো। চুপ থাকার কিছু সময়ের জন্য উপকারিতা থাকলেও, এর অতিরিক্ত বা অযথা চুপ থাকা কিছু অপকারিতাও থাকতে পারে। 

চুপ থাকার অপকারিতাগুলি এমন পরিস্থিতিতে হতে পারে যেখানে তা সমস্যা সমাধানে সাহায্য না করে, বরং আরো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে চুপ থাকার কিছু অপকারিতা বর্ণনা করা হলো:

১. ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে: যখন কেউ নিজের অনুভূতি বা মতামত প্রকাশ না করে চুপ থাকে, তখন অন্যরা হয়তো তাকে অবহেলা বা অপমানিত মনে করতে পারে। এতে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে এবং সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

২. প্রয়োজনীয় তথ্য বা সাহায্য না পাওয়া: কখনো কখনো চুপ থাকা মানুষকে প্রয়োজনীয় তথ্য বা সাহায্য নিতে বাধা দেয়। যদি কেউ চুপ থাকে এবং তার সমস্যার কথা না বলে, তবে অন্যরা তাকে সাহায্য করতে পারে না। এতে তার সমস্যাগুলি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

৩. আত্মবিশ্বাসের অভাব: অতিরিক্ত চুপ থাকা কোনো মানুষের আত্মবিশ্বাসের অভাব বা নিজের মতামতকে মূল্য না দেওয়ার প্রতীক হতে পারে। যদি কেউ সবসময় চুপ থাকে এবং নিজের মতামত জানাতে ভয় পায়, তবে সে তার আত্মবিশ্বাস বা ক্ষমতাকে হ্রাস পেতে পারে।

৪. বিরোধ বা সমস্যার সমাধান না হওয়া: কিছু পরিস্থিতিতে চুপ থাকা সমস্যা বা বিরোধ সমাধানের পরিবর্তে তাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। যদি কেউ তার অস্বস্তি বা ক্ষোভ প্রকাশ না করে, তবে সেই সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে থাকতে পারে এবং কোনো সমাধানও পাওয়া যাবে না।

৫. অতিভালণ বা দূরত্ব সৃষ্টি: চুপ থাকা অনেক সময় মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা সামাজিক যোগাযোগে। একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য দরকার সময়মতো কথা বলা এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা। চুপ থাকার ফলে সম্পর্কের মধ্যে পরোক্ষ মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

৬. অত্যধিক চাপ বা মানসিক উদ্বেগ: চুপ থাকা কখনো কখনো মানুষের মধ্যে অপ্রকাশিত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। যদি কেউ তার অনুভূতি বা সমস্যাগুলি শেয়ার না করে, তাহলে তা মানসিকভাবে তাকে আরও উদ্বিগ্ন বা চাপগ্রস্ত করে তুলতে পারে।

৭. সমস্যার কারণে অগ্রগতি ব্যাহত: যখন কেউ নিজের মতামত বা চিন্তা প্রকাশ না করে, তখন তার সামনে কোনো সমস্যার সমাধান বা উন্নতি হতে পারে না। এর ফলে ব্যক্তির বা দলের অগ্রগতি থমকে যেতে পারে এবং তারা যেসব বিষয়ে এগোতে চাচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

চুপ থাকার অপকারিতা মূলত সেই পরিস্থিতিতে আসে যেখানে সমস্যা সমাধান বা সম্পর্ক উন্নয়ন প্রয়োজন। তবে, সবসময় চুপ থাকা বা প্রয়োজনীয় কথা না বলা জীবনে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

চুপ থাকার উপায়

ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই চুপ থাকার উপায়গুলো জানতে এবং বুঝতে হবে। চুপ থাকার উপায় বা নীরব থাকার কৌশলগুলো আসলে বেশ উপকারী হতে পারে, বিশেষত যখন আপনাকে নিজেকে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। 

চুপ থাকতে পারলে আপনি আপনার আবেগ ও মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সহায়ক। নিচে চুপ থাকার কিছু কার্যকর উপায় বর্ণনা করা হলো:

১. নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা: চুপ থাকতে হলে প্রথমত আপনাকে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যখন আপনি ক্ষুব্ধ, দুঃখিত বা উত্তেজিত হন, তখন অযথা কিছু বললে তা পরিস্থিতি আরো জটিল করতে পারে। তাই এমন সময়ে নিজের অনুভূতি সংযত রাখার চেষ্টা করুন এবং চিন্তা করুন কেন আপনি চুপ থাকছেন।

২. শ্বাস নিতে ও মনোযোগ সঞ্চালন করা: যখন আপনি চুপ থাকার চেষ্টা করছেন, তখন গভীর শ্বাস নিতে পারেন। এটি আপনাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার আবেগকে ঠান্ডা করবে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিজের চিন্তা ও অনুভূতির দিকে মনোযোগ দিন।

৩. অধিক কথা না বলা বা পরিহার করা: কোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজিত হলে, নিজেকে অভ্যাসে পরিণত করুন কথা না বলার জন্য। নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে এই মুহূর্তে কথা না বলাই উত্তম হবে। আপনি যদি বলতে চান, তাহলে নিজেকে বলুন, "এটা আমার জন্য বা অন্যদের জন্য ভালো হবে না, যদি আমি কিছু না বলি।"

৪. শ্রবণ দক্ষতা বাড়ানো: চুপ থাকতে হলে অন্যদের কথা শুনতে মনোযোগ দিন। অন্যের মতামত বা অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা করুন। এতে আপনি বেশি বলার চেষ্টা না করে, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে পারবেন এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৫. গভীরভাবে চিন্তা করা এবং পরিণতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া: কখনো কখনো চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিজেকে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার সুযোগ দেয়। যদি কোনো বিষয়ে কথা বলতে বা কিছু করার প্রয়োজন হয়, তাহলে চুপ থাকার মাধ্যমে আপনি বিষয়টি আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে পারবেন এবং পরিণত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

৬. মনে মনে জিজ্ঞাসা করা: যখন আপনি কথা বলার প্রবণতা অনুভব করেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন—"এই মুহূর্তে কথা বলা কি সত্যিই দরকার?" অথবা "এই কথাটি অন্যদের উপকারে আসবে কি?" যদি উত্তর না হয়, তাহলে চুপ থাকতে চেষ্টা করুন।

৭. নিজের মূল্যায়ন করা: চুপ থাকার কৌশল হিসেবে নিজের মনোভাব বা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজের মনোভাব বা চিন্তা পর্যালোচনা করে, দেখুন আপনার নীরব থাকার সিদ্ধান্ত আপনাকে বা অন্যদের কি উপকারে আসবে।

৮. একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুপ থাকার পরিকল্পনা করা: যদি কোনো পরিস্থিতি বা বিতর্কে আপনার মাথা গরম হয়ে যায়, তাহলে চুপ থাকার জন্য একে একটি নির্দিষ্ট সময় হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনি কিছু সময় নির্ধারণ করে বলুন, "আমি এখন চুপ থাকব এবং পরে এই বিষয়ে কথা বলব।"

৯. শরীরের ভাষা নিয়ন্ত্রণ করা: শরীরের ভাষাও কথা বলার পরিবর্তে অনেক কিছু ব্যক্ত করতে পারে। যদি আপনি চুপ থাকতে চান, তবে আপনার শরীরের ভাষা—যেমন চোখের অঙ্গভঙ্গি, হাতের অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি—এগুলোও সমঝোতার অংশ হিসেবে কাজ করতে পারে।

১০. আলাদা জায়গায় গিয়ে একা থাকা: কখনো কখনো চুপ থাকার জন্য আপনাকে কোনো নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে একা থাকতে হতে পারে। একা থাকলে আপনি আপনার আবেগ বা অনুভূতি সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারবেন এবং নিজের মধ্যে শান্তি ফিরে পেতে পারেন।

১১. স্মৃতিতে ইতিবাচক বিষয়গুলো রাখা: আপনার মনের মধ্যে ইতিবাচক বিষয়গুলো রাখুন, যাতে আপনি অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে দূরে থাকতে পারেন। এতে আপনার মনোভাব এবং প্রতিক্রিয়াও অনেক বেশি শান্ত থাকবে।

চুপ থাকার এই কৌশলগুলো শুধু আপনার নিজস্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক নয়, বরং আপনি যখন সত্যিই কোনো পরিস্থিতিতে কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করবেন, তখন আরো পরিষ্কার এবং সঠিকভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আজকে এই পোস্টের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এ আর্টিকেলটি  পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরও নতুন নতুন প্রতিবেদন পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন পরিদর্শন করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। এতক্ষন এই প্রতিবেদনটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url