শরীরের ফাটা দাগ দূর ঘরোয়া উপায়।

শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। তাই আপনি যদি শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় জানতে চান তাহলে আপনাকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম।।
শরীরের ফাটা দাগ দূর  ঘরোয়া উপায়
পাঠক, তাহলে চলুন আজকের আলোচ্য বিষয় শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় জানার জন্য এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি এই পোস্টটি পড়তে আপনার ভালো লাগবে। চলুন, শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় এর মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

শরীরের ফাটা দাগ দূর ঘরোয়া উপায়

শরীরের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্কস দূর করার জন্য কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এগুলো ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে। নিচে শরীরের ফাটা দাগ দূর ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো-


অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। প্রতিদিন স্ট্রেচ মার্কসের ওপর তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।

নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল: নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল ত্বকের জন্য গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। এই দুই তেল মিশিয়ে নিয়মিত দাগযুক্ত স্থানে মাসাজ করলে ত্বক নরম ও মসৃণ হবে এবং দাগের চিহ্ন হালকা হতে শুরু করবে।

লেবুর রস: লেবুর রসে প্রাকৃতিক অ্যাসিড আছে যা ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুর রস সরাসরি স্ট্রেচ মার্কসে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।

বিটরুটের রস: বিটরুটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আছে যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন বিটরুটের রস লাগিয়ে ধীরে ধীরে মালিশ করুন এবং ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

চিনি ও মধুর স্ক্রাব: চিনি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে দেয়। চিনি, মধু, এবং লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন এবং এটি হালকা হাতে স্ট্রেচ মার্কসে ঘষে নিন। এটি ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করবে।

ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বককে পুনর্জীবিত করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। একটি ডিমের সাদা অংশ স্ট্রেচ মার্কসে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

গোলাপজল ও গ্লিসারিন: গোলাপজল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে স্ট্রেচ মার্কসে নিয়মিত লাগালে ত্বক মসৃণ হয় এবং দাগ কমে। এটি রাতে ব্যবহার করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কোকো বাটার ও শিয়া বাটার: কোকো বাটার ও শিয়া বাটার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। এই বাটারগুলো প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ফাটা দাগে ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ হালকা হতে শুরু করবে।

আলুর রস: আলুর রসে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট রয়েছে যা ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। আলুর রস দাগযুক্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ভিটামিন ই তেল: ভিটামিন ই তেল ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সহায়ক। এটি ত্বকের কোলাজেন তৈরি বাড়িয়ে ফাটা দাগ হালকা করে। ভিটামিন ই তেল নিয়মিতভাবে সরাসরি দাগে লাগান এবং হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন।

এগুলো নিয়মিতভাবে ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে ত্বকের দাগ হালকা হয়ে আসবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ঘরোয়া উপায় গুলো ধৈর্যের সাথে ব্যবহার করতে হবে।

শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ঔষধ 

শরীরের ফাটা দাগ দূর ঘরোয়া উপায় গুলোর পাশাপাশি শরীরের ফাটা দাগ দূর করার জন্য প্রয়োজনে কিছু ঔষধ ব্যবহার করতে হতে পারে। তাই শরীরের ফাটা দাগ দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়।

যেগুলো ত্বকের দাগ হালকা করতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিছু কার্যকর ঔষধ এবং ক্রিমের সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো:

১. রেটিনয়েড ক্রিম: রেটিনয়েডস, বিশেষ করে ট্রেটিনইন ক্রিম, ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এটি ত্বকের কোষের পুনর্জন্মকে ত্বরান্বিত করে, যা নতুন ত্বক তৈরি করতে সাহায্য করে এবং দাগ হালকা করে। তবে এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত নয়, তাই গর্ভাবস্থায় এটি এড়ানো উচিত।

২. হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ক্রিম: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে ভরাট করে তোলে এবং ফাটা দাগ হালকা করতে কার্যকর।

৩. ভিটামিন ই ক্রিম: ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের কোষের পুনর্জন্মে সহায়তা করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। বাজারে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ক্রিম পাওয়া যায়, যা নিয়মিত ব্যবহার করলে ফাটা দাগ হালকা হতে শুরু করে।

৪. কোকো বাটার এবং শিয়া বাটার ক্রিম: কোকো বাটার এবং শিয়া বাটার ভিত্তিক ক্রিম ত্বকের জন্য খুবই ময়েশ্চারাইজিং এবং পুষ্টিকর। এটি ত্বক নরম ও মসৃণ করে, এবং নিয়মিত ব্যবহারে স্ট্রেচ মার্কসের গভীরতা কমে যেতে পারে।

৫. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ক্রিম: গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এক্সফোলিয়েটিং উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে। এটি নতুন ত্বক গঠনে সহায়ক এবং দাগ হালকা করে।

৬. সিলিকন জেল বা সিলিকন শীট: সিলিকন ভিত্তিক জেল বা শীটগুলো দাগ হালকা করতে এবং ত্বক পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এটি ত্বকের দাগের ওপর একটি বাধা তৈরি করে, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং দাগের রঙ হালকা করতে সহায়ক।

৭. জিনকল তেল: জিনকল বা ক্যালেন্ডুলা তেল ত্বকের পুনর্জীবন এবং কোলাজেন বৃদ্ধি করে, যা ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে। ফাটা দাগের জন্য এটি ব্যবহারে কিছুটা উন্নতি পাওয়া যেতে পারে।

৮. কোলাজেন বুস্টিং সিরাম: কোলাজেন সিরাম ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক, যা দাগের গভীরতা কমায় এবং ত্বককে দৃঢ় করে তোলে। এই সিরামগুলো স্ট্রেচ মার্কসের জন্য কার্যকর।

৯. মেডেমা (Mederma) জেল: মেডেমা একটি জনপ্রিয় স্কার রিমুভাল জেল, যা পুরানো দাগ ও স্ট্রেচ মার্কস হালকা করতে সহায়ক। এটি নিয়মিত ব্যবহারে দাগের গভীরতা এবং দৃঢ়তা হ্রাস করতে পারে।

১০. বায়ো-অয়েল (Bio-Oil): বায়ো-অয়েল বাজারে ফাটা দাগ দূর করতে বেশ জনপ্রিয়। এতে ভিটামিন এ ও ই, ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার এবং রোজমেরি তেল রয়েছে, যা ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে এবং দাগ হালকা করতে সহায়ক।

সতর্কতা: এই ঔষধ বা ক্রিমগুলোর মধ্যে কোনোটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য। কারণ কিছু ঔষধ ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

শরীরের ফাটা দাগ দূর করার ক্রিমের নাম

শরীরের ফাটা দাগ দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। জনপ্রিয় এবং কার্যকর কিছু ক্রিমের নাম নিচে দেওয়া হলো:

  • মেডেমা (Mederma) স্কার জেল
  • বায়ো-অয়েল (Bio-Oil)
  • পামারস কোকো বাটার (Palmer's Cocoa Butter Formula)
  • স্ট্রেট্চমার্কস থেরাপি ক্রিম (StriVectin SD Advanced Plus Intensive Moisturizing Concentrate)
  • রেটিন-এ (Retin-A) ক্রিম
  • মাস্টেলা স্ট্রেটচ মার্কস ক্রিম (Mustela Stretch Marks Cream)
  • মেডিক্স 5.5 ভিটামিন সি এবং রেটিনল লোশন (Medix 5.5 Vitamin C + Retinol Cream)
  • ডার্মাটিক্স (Dermatix) আল্ট্রা অ্যাডভান্সড স্কার ক্রিম
  • ট্রিলাস্টিন স্ট্রেটচ মার্কস ক্রিম (TriLASTIN Stretch Mark Cream)
  • রেভিটোল স্ট্রেটচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম (Revitol Stretch Mark Removal Cream)

এই ক্রিমগুলো নিয়মিতভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের ফাটা দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে পারে। তবে, সর্বোত্তম ফলাফল পেতে ক্রিম ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বক বা বিশেষ শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে।

শরীরের ফাটা দাগ কেন হয় 

শরীরের ফাটা দাগ দূর ঘরোয়া উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে শরীরের ফাটা দাগ কেন হয়। শরীরের চামড়া ফাটার বা স্ট্রেচ মার্কসের কারণগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কারণ আছে। এর কয়েকটি কারণ নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-

ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধির বা হ্রাসের ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। ত্বক এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে চামড়া ফাটতে পারে।

গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় নারীদের পেটের চারপাশে চামড়া প্রসারিত হয়, যা ত্বকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং চামড়া ফাটার কারণ হতে পারে।

হরমোনের পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা, বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বক দ্রুত প্রসারিত হতে পারে, যা স্ট্রেচ মার্কসের সৃষ্টি করে।

জেনেটিক কারণ: পরিবারের অন্য সদস্যদের যদি ত্বকের ফাটার সমস্যা থাকে, তাহলে জেনেটিক কারণে সেই প্রবণতা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যেতে পারে।

শুষ্ক ত্বক: ত্বক শুষ্ক হলে এটি সহজেই ফেটে যায়, কারণ শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতার অভাব থাকে। পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে ত্বক রুক্ষ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রোটিনের অভাব: প্রোটিন ত্বক ও শরীরের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোটিনের অভাব হলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায় এবং ফাটার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

স্টেরয়েডের ব্যবহার: দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েড ব্যবহারে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং চামড়া ফাটতে পারে।

বার্ধক্য: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক পাতলা ও স্থিতিস্থাপকতা হারায়, যা চামড়া ফাটার কারণ হতে পারে।

ত্বকের আঘাত বা প্রসার: ত্বকের ওপর সরাসরি আঘাত বা অতিরিক্ত প্রসারের কারণে ত্বকের কোষের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয় এবং চামড়া ফাটতে পারে

পুষ্টির অভাব: বিশেষ করে ভিটামিন সি, ই এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাব ত্বক দুর্বল করে এবং এটি দ্রুত ফেটে যায়।

এই কারণগুলোর মধ্যে কোনটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা বুঝতে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আজকে এই পোস্টের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এ পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপনি জানতে পেরেছেন শরীরের ফাটা দাগ দূর  ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরও নতুন নতুন প্রতিবেদন পেতে আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন পরিদর্শন করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। এতক্ষন এই প্রতিবেদনটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url