দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না?
দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আজকের এই পোস্টটি।গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। যার কারণে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে। তাই দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না? এ বিষয়টি বিস্তারিত জানতে এই পোস্টের সাথে থাকুন।

দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না?
ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী, দেনমোহর (মাহর) হলো স্ত্রীর একটি প্রাপ্য অধিকার, যা বিয়ের সময় নির্ধারিত হয় এবং স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদান করতে হয়। এটি একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক দায়িত্ব, যা স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও তার অধিকার রক্ষার জন্য প্রবর্তিত হয়েছে। তবে দেনমোহর পরিশোধ না করলেও স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ কিনা, তা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. দেনমোহর প্রদান ও সম্পর্ক স্থাপন:
দেনমোহর পরিশোধ করা না হলেও বিয়ে বৈধ: বিয়ের চুক্তি (নিকাহ) সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন বৈধ। দেনমোহর পরিশোধ করা বিয়ের শর্ত নয়, তবে এটি স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার, যা স্বামীকে অবশ্যই প্রদান করতে হবে।
দেনমোহর একটি ঋণের মতো: দেনমোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত তা স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে থাকে। এটি স্ত্রী চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে দাবি করতে পারেন, বা স্বামী তা ধীরে ধীরে পরিশোধ করতে পারেন।
২. দেনমোহর পরিশোধের সময়কাল: দেনমোহর তাৎক্ষণিক ও বিলম্বিত হতে পারে: দেনমোহর তাৎক্ষণিকভাবে (মহর মু’জ্জাল) অথবা বিলম্বিতভাবে (মহর মুয়াজ্জাল) পরিশোধ করা যেতে পারে। যদি তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা না হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে পরিশোধের জন্য প্রাপ্য থাকে।
৩. স্ত্রীর অধিকার রক্ষা: স্ত্রী যদি দেনমোহর পাওয়ার আগেই স্বামীর কাছ থেকে তা দাবি করেন এবং দেনমোহর প্রদান না করা পর্যন্ত সম্পর্ক স্থাপন করতে না চান, তবে এটি তার অধিকার। স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে হবে এবং দেনমোহর পরিশোধে আন্তরিক হতে হবে।
৪. দেনমোহর না পরিশোধের ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: দেনমোহর পরিশোধ না করা হলে তা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, কারণ এটি স্ত্রীকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। তাই দেনমোহর সময়মতো প্রদান করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেনমোহর পরিশোধ না করলেও স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন বৈধ। তবে স্বামীকে দ্রুত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে, কারণ এটি স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার এবং ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম ইসলামিক
ইসলামে দেনমোহর (মাহর) স্ত্রীকে একটি বাধ্যতামূলক অধিকার হিসেবে দেওয়া হয়। এটি বিবাহের শর্ত নয়, তবে নিকাহ সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রতি এই অর্থ প্রদানের দায়িত্ব অর্পিত হয়। দেনমোহর সম্পর্কিত বিস্তারিত বিধান নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
দেনমোহরের সংজ্ঞা: দেনমোহর হলো সেই আর্থিক পরিমাণ যা স্বামী স্ত্রীর সম্মানে ও তার অধিকার রক্ষার্থে প্রদান করে। এটি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত স্ত্রীর অধিকার এবং স্বামীর ওপর বাধ্যতামূলক।
কুরআন: “তোমরা নারীদের তাদের মহর তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে প্রদান করো। তবে তারা যদি স্বেচ্ছায় কিছু ছেড়ে দেয়, তবে তা আনন্দের সাথে ভোগ করো।” (সূরা আন-নিসা: ৪)
দেনমোহর নির্ধারণের নিয়ম
১. পরিমাণ নির্ধারণ: দেনমোহরের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই; এটি স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। হাদিসে বলা হয়েছে, "বিয়ে সহজ করো এবং দেনমোহর কম রাখো।" (আবু দাউদ: ২১১৭)
২. চুক্তির ভিত্তিতে নির্ধারণ: দেনমোহর সাধারণত উভয় পক্ষের আলোচনা ও সম্মতিতে নির্ধারিত হয়। যদি দেনমোহর নির্ধারণ না করা হয়, তবে স্ত্রীর পরিবারের সাধারণ দেনমোহর অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
দেনমোহর পরিশোধের সময়
১. তাৎক্ষণিক (মহর মু’জ্জাল): বিয়ের সময় বা বিয়ের পরপরই এটি পরিশোধ করা হয়। যদি স্ত্রী তাৎক্ষণিক দাবি করেন, তবে স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে।
২. বিলম্বিত (মহর মুয়াজ্জাল): চুক্তির ভিত্তিতে দেনমোহর পরিশোধ বিলম্বিত হতে পারে। এটি একপ্রকার ঋণের মতো স্বামীর ওপর থাকে।
দেনমোহর আদায়ের পদ্ধতি
১. স্বামীর দায়িত্ব: স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর তার চুক্তি অনুযায়ী প্রদান করবেন। দেনমোহর নগদ, সম্পদ, স্বর্ণ বা অন্য কিছু হতে পারে।
২. স্ত্রীর অধিকার: স্ত্রী চাইলে দেনমোহর আদায় না হওয়া পর্যন্ত সম্পর্ক স্থাপনে বিরত থাকতে পারেন।
দেনমোহর আদায় স্ত্রীর মৌলিক অধিকার, যা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।
দেনমোহর প্রদানের গুরুত্ব
১. স্ত্রীর সম্মান: দেনমোহর স্ত্রীকে সম্মান জানানো এবং তার অধিকার নিশ্চিত করার একটি প্রতীক।
২. ইসলামী আদর্শ অনুসরণ: স্বামী যদি দেনমোহর আদায় না করেন, তবে তিনি পাপী গণ্য হবেন এবং এটি পরকালে জবাবদিহির জন্য রাখা হবে।
দেনমোহর প্রদান না করলে ফলাফল
দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রীর প্রতি অবিচার হবে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ। স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত না করলে আল্লাহর দরবারে স্বামীকে জবাবদিহি করতে হবে। হাদিস: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেরা ব্যক্তি সেই, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।"(তিরমিজি: ৩৮৯৫)।
দেনমোহর স্ত্রীর একটি বাধ্যতামূলক অধিকার, যা স্বামীর ওপর অবশ্যই প্রদান করতে হবে। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ন্যায় ও ভালোবাসার ভিত্তিতে সুসংহত করে।
ইসলামে দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি কি
ইসলামে দেনমোহর (মাহর) স্ত্রীর একটি বাধ্যতামূলক অধিকার, যা স্বামীর ওপর নির্ধারিত। যদি স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে দেনমোহর পরিশোধ না করেন বা তা অস্বীকার করেন, তবে এটি ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর গুনাহ (পাপ) হিসেবে বিবেচিত হয়। কুরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব এবং পরিশোধ না করার পরিণতি সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট দিক তুলে ধরা হয়েছে।
কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে দেনমোহর না দেওয়ার শাস্তি
1. অন্যায় ও গুনাহ: দেনমোহর পরিশোধ না করা একটি বড় অন্যায়, যা আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার দাবি রাখে। কুরআন: "তোমরা নারীদের তাদের মহর খুশিমনে প্রদান করো।" (সূরা আন-নিসা: ৪)। যারা স্ত্রীর অধিকার অস্বীকার করে, তারা আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে।
2. হাক্কুল ইবাদ লঙ্ঘন করা: দেনমোহর হলো স্ত্রীর একটি বৈধ অধিকার। এটি না দিলে স্বামী স্ত্রীর হক নষ্ট করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি অন্যের অধিকার (হক) নষ্ট করে, তার জন্য কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।" (সহীহ মুসলিম)
3. পরকালে কঠোর শাস্তি: স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ না করে মারা গেলে, এটি স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে থেকে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "কোনো ব্যক্তির ঋণ (হক) যদি পরিশোধ না হয়, তবে কিয়ামতের দিন তাকে তার সম্পদ বা সওয়াবের বিনিময়ে সেই ঋণ শোধ করতে হবে।" (বুখারি, হাদিস: ২৩৮৭)
ইসলামে দেনমোহর পরিশোধ না করার ফলাফল
1. পাপের বোঝা বৃদ্ধি: স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে দেনমোহর না দিলে, তিনি পাপের অধিকারী হবেন এবং পরকালে আল্লাহর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
2. স্ত্রীর প্রতি অবিচার: দেনমোহর না দিলে এটি স্ত্রীর মৌলিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা। এটি ইসলামের মূল নীতির বিপরীত।
3. জাহান্নামের শাস্তি: যারা অন্যের অধিকার হরণ করে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির হুমকি এসেছে। "যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করে, সে জাহান্নামের অগ্নি ভক্ষণ করে।" (সূরা আন-নিসা: ১০)
দেনমোহর আদায় নিশ্চিত করতে ইসলামের নির্দেশনা
1. অপরিহার্য দায়িত্ব: দেনমোহর একটি ঋণের মতো স্বামীর ওপর থাকে, যা তিনি জীবদ্দশায় পরিশোধ করতে বাধ্য।
2. স্ত্রীর অধিকার দাবি করা বৈধ: স্ত্রী তার দেনমোহর দাবি করতে পারেন এবং তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে সংযত রাখতে পারেন।
3. পরিবার ও সমাজের ভূমিকা: যদি স্বামী দেনমোহর না দেয়, তবে স্ত্রীর পরিবার এবং সমাজ এই বিষয়ে ন্যায়বিচারের জন্য হস্তক্ষেপ করতে পারে।
দেনমোহর না দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর পাপ। এটি স্ত্রীর প্রতি অবিচার ও আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করার শামিল। যারা দেনমোহর প্রদান করে না, তাদের কিয়ামতের দিনে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তাই, স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর দেনমোহর সময়মতো এবং আন্তরিকতার সঙ্গে প্রদান করতে হবে।
দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা
ইসলামে দেনমোহরের কোনো নির্ধারিত সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ সীমা নেই। এটি নির্ধারণ করা হয় স্বামী-স্ত্রীর আর্থিক সামর্থ্য, পারিবারিক পরিবেশ এবং উভয়পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে। তবে কিছু ইসলামিক নির্দেশনা ও উদাহরণ রয়েছে, যা দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
দেনমোহরের ন্যূনতম পরিমাণের দৃষ্টিভঙ্গি
1. কুরআন ও হাদিসের ভিত্তি: কুরআন ও সুন্নাহতে দেনমোহরের নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে এটি স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী হওয়া উচিত। কুরআন: "তোমরা নারীদের তাদের মহর খুশিমনে প্রদান করো।"(সূরা আন-নিসা: ৪)
হাদিস: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে উত্তম বিয়ে সেই, যার দেনমোহর সহজ ও কম (সুনান ইবনে মাজাহ: ১৮৪৭)
2. সাহাবাদের আমল: সাহাবায়ে কেরামদের যুগে দেনমোহরের পরিমাণ সাধারণত সরল ও স্বল্প রাখা হতো।
3. ন্যূনতম পরিমাণ: ইসলামি ফিকহের অনেক মাযহাব মতে, দেনমোহরের সর্বনিম্ন সীমা ১০ দিরহাম (প্রায় ৩০ গ্রামের মতো রূপার মূল্য) হতে পারে। বর্তমান বাজারে এই মূল্যের সমান পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
দেনমোহর নির্ধারণে কয়েকটি মূলনীতি
1. স্বামীর সামর্থ্য: স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত।
2. স্ত্রীর সম্মান: স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার রক্ষার্থে দেনমোহর এমন পরিমাণে হওয়া উচিত, যা স্ত্রীকে যথার্থ মূল্যায়ন করে।
3. উভয়পক্ষের সম্মতি: দেনমোহর নির্ধারণে উভয়পক্ষের সম্মতি অপরিহার্য।
দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণে ইসলামে কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। এটি উভয়পক্ষের আর্থিক অবস্থা ও সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। তবে এটি এমন পরিমাণে হওয়া উচিত, যা স্বামী সহজে পরিশোধ করতে পারে এবং স্ত্রীর সম্মান বজায় থাকে। ইসলাম সহজ-সরল জীবনযাপনকে উৎসাহিত করে, তাই দেনমোহর খুব বেশি বাড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
মন্তব্য। দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না? সম্পর্কে
সুপ্রিয় পাঠক, এই পোস্টের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ইতিমধ্যে এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না? সে সম্পর্কে। এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে সেয়ার করুন।
আপনি চাইলে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না? পোস্টটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url