গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী।
ফলিক এসিড
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মা ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে। ফলিক অ্যাসিড ভিটামিন বি৯-এর একটি রূপ, যা ডিএনএ তৈরিতে, কোষ বিভাজনে, এবং রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। এখানে গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ার প্রধান উপকারিতাগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা: ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। এটি বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করা: ফলিক অ্যাসিড নিউরাল টিউব ডিফেক্টস (Neural Tube Defects) প্রতিরোধ করে। এই ধরনের ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

স্পাইনা বাইফিডা: যেখানে শিশুর মেরুদণ্ড সঠিকভাবে গঠিত হয় না।

অ্যানেন্সেফালি: যেখানে শিশুর মস্তিষ্ক বা খুলি পুরোপুরি বিকশিত হয় না।

৩. গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস: ফলিক অ্যাসিড গর্ভপাত এবং প্রি-টার্ম (অপরিণত) শিশুর জন্মের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের প্রয়োজন বাড়ে। ফলিক অ্যাসিড লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে।

৫. শিশুর ওজন ঠিক রাখা: ফলিক অ্যাসিড গর্ভস্থ শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

৬. হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা: ফলিক অ্যাসিড শিশুর হৃদপিণ্ডের গঠনজনিত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৭. প্লাসেন্টার স্বাস্থ্য রক্ষা: ফলিক অ্যাসিড প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুকে পুষ্টি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ।

৮. মা ও শিশুর ডিএনএ গঠন সঠিক রাখা: ফলিক অ্যাসিড ডিএনএ সংশ্লেষণ ও কোষ বিভাজনে সাহায্য করে, যা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়া শিশুর সুস্থ জন্ম নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সঠিক ডোজ এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়তা করে এবং কিছু গুরুতর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। এখানে এর সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম:

১. কখন শুরু করবেন: গর্ভধারণের আগে: গর্ভধারণ পরিকল্পনার সময় থেকেই ফলিক অ্যাসিড নেওয়া শুরু করা উচিত। এটি ডিম্বাণুর সঠিক বিকাশে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস: গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে প্রথম ১২ সপ্তাহ (প্রথম ত্রৈমাসিক) পর্যন্ত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই সময়ে শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।

২. ডোজ বা পরিমাণ: গর্ভাবস্থার জন্য সাধারণত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফলিক অ্যাসিড প্রতিদিন গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা (যেমন: পূর্বে জন্মগত ত্রুটিযুক্ত সন্তান থাকা): চিকিৎসকের পরামর্শে ডোজ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০০ মাইক্রোগ্রাম (৪ মি.গ্রা.) পর্যন্ত হতে পারে।

৩. কখন খাবেন: ফলিক অ্যাসিড সাধারণত খালি পেটে বা খাবারের আগে খাওয়া ভালো। তবে এটি খাবারের পরও নেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ট্যাবলেট গ্রহণের অভ্যাস করলে ডোজ মিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

উপকারিতা গর্ভাবস্থায়: নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ: শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি (যেমন: স্পাইনা বাইফিডা) প্রতিরোধ করে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে।

সন্তানের সঠিক ওজন নিশ্চিত করা: শিশুর জন্মের সময় ওজন সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভপাতের ঝুঁকি কমানো: ফলিক অ্যাসিড গর্ভপাত বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি হ্রাস করে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ: যদি কোনো শারীরিক সমস্যা বা অতিরিক্ত ঝুঁকির ইতিহাস থাকে (যেমন: ডায়াবেটিস, এপিলেপসি, বা স্থূলতা), তাহলে ডোজ চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে হবে। অন্য কোনো ওষুধ গ্রহণের সময় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সতর্কতা: ডোজ মিস হলে পরের দিন দ্বিগুণ ডোজ না নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে চালিয়ে যান। অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ না করার চেষ্টা করুন, কারণ এটি শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ শিশুর সুস্থ জন্ম নিশ্চিত করতে অত্যন্ত কার্যকর। তবে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ফলিক অ্যাসিড সাধারণত নিরাপদ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন। তবে অতিরিক্ত ডোজ বা দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এখানে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

পেটের সমস্যা: পেট ব্যথা, গ্যাস, বা ফোলাভাব হতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

বমি বমি ভাব বা বমি: ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের পর অনেকের মধ্যে বমি বমি অনুভূতি হতে পারে।

ত্বকের সমস্যা: ত্বকে র‍্যাশ, লালচে ভাব, বা চুলকানি দেখা যেতে পারে। এলার্জির কারণে হাইভস বা ত্বকে ফোস্কা পড়তে পারে।

স্বাদের পরিবর্তন: মুখে ধাতব স্বাদ বা স্বাদের পরিবর্তন অনুভূত হতে পারে।

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (দুর্লভ): 

অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিডের প্রভাব: অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণে শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি ঢেকে যেতে পারে, যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

এলার্জিক রিঅ্যাকশন: শ্বাসকষ্ট, মুখ, ঠোঁট বা গলার ফোলাভাবের মতো গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে (এনাফাইল্যাক্সিস)।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: অনিদ্রা, মুড সুইং, বা উত্তেজনা হতে পারে।

রক্তে হোমোসিস্টেইনের মাত্রা বৃদ্ধি: দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর দাম কত

বাংলাদেশে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের দাম ব্র্যান্ড ও প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ:

বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর ৫ মি.গ্রা. ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের ইউনিট মূল্য প্রায় ০.৩৫ টাকা, অর্থাৎ প্রতি স্ট্রিপ (১০ ট্যাবলেট) ৩.৫০ টাকা।

ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর 'প্রিফল' ব্র্যান্ডের ৫ মি.গ্রা. ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের ইউনিট মূল্য প্রায় ০.২২ টাকা।

তবে, কিছু আমদানিকৃত বা বিশেষ ব্র্যান্ডের ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সেনোভিস ফলিক অ্যাসিড ৫০০ মাইক্রোগ্রাম (১৫০ ট্যাবলেট) এর দাম প্রায় ১,৫০০ টাকা।

দ্রষ্টব্য, ওষুধের দাম সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং ভিন্ন ফার্মেসিতে দাম ভিন্ন হতে পারে। সঠিক ও হালনাগাদ দামের জন্য স্থানীয় ফার্মেসি বা অনলাইন ফার্মেসির সাথে যোগাযোগ করা পরামর্শযোগ্য।

মন্তব্য। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

সুপ্রিয় পাঠক মন্ডলী আজকেরে এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলের  একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং পড়ার  বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা।

আরও জেনেছেন ফলিক এসিড ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ফলিক এসিড ট্যাবলেটের দাম সম্পর্কে। আপনার যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তবে দয়া করে আর্টিকেলটি সেয়ার করুন এবং ফলো দিয়ে রাখুন নতুন নতুন আরও আর্টিকেল পেতে।

ধন্যবাদ এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url