বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায় জানার জন্য আপনি কি আগ্রহী। তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে। কেননা আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায়।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে বাবা ও মায়েরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। কি করলে বাচ্চার সর্দি ও কাশি দ্রুত ভালো হয়ে যাবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোজাখুজি করছেন। তাহলে চলুন, আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং বিস্তারিতভাবে জেনে নিন বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে ঘরোয়া কিছু উপায় অনুসরণ করলে স্বাভাবিকভাবে উপশম পাওয়া যেতে পারে। তবে যদি উপসর্গ গুরুতর হয় বা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলো:
১. মধু ও গরম পানি: দুই বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য এক চা-চামচ মধু ও হালকা গরম পানি মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। এটি গলা ব্যথা কমায় এবং কাশির প্রকোপ কমায়।
২. তুলসী পাতা ও আদা চা: কয়েকটি তুলসী পাতা ও একটু আদা ফুটিয়ে সেই পানি বাচ্চাকে ঠান্ডা করে একটু একটু করে খাওয়ান। এটি শ্বাসনালী পরিষ্কার করে ও সর্দি কমায়।
৩. গরম পানির ভাপ (Steam Therapy): বাচ্চাকে হালকা গরম পানির ভাপ নিতে দিন (খুব কাছ থেকে নয়)। এটি নাক বন্ধ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৪. লবণ পানি গার্গল: যদি বাচ্চার বয়স ৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে উষ্ণ লবণ পানি দিয়ে গার্গল করাতে পারেন। এটি গলা ব্যথা ও সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
৫. সরিষার তেল ও রসুন ম্যাসাজ: সরিষার তেলে কয়েকটি রসুন কোঁচিয়ে গরম করে নিন, তারপর ঠান্ডা হলে শিশুর বুকে, পিঠে ও পায়ের তলায় হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি কফ বের হতে সাহায্য করে এবং শরীর গরম রাখে।
৬. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার: শরীর আর্দ্র রাখতে গরম স্যুপ, ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়ান। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
৭. ঘর পরিষ্কার ও ধুলাবালি মুক্ত রাখা: ধুলাবালি ও ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন। ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার রাখুন এবং শিশুকে খুব বেশি ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে দেবেন না।
এই উপায়গুলো মৃদু সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে যদি জ্বর বেশি হয়, বাচ্চা শ্বাসকষ্ট অনুভব করে বা কয়েকদিনেও ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বাচ্চাদের সর্দি হলে কি খাওয়া উচিত না
সর্দি হলে বাচ্চাদের এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা শ্লেষ্মা বৃদ্ধি করতে পারে বা ঠান্ডা বাড়িয়ে দিতে পারে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা এড়ানো উচিত:
যা এড়ানো উচিত:
- ঠান্ডা ও ফ্রিজের খাবার: আইসক্রিম, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি সর্দি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
- দুগ্ধজাত খাবার (যদি শ্লেষ্মা বাড়ে): অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দুধ, দই বা পনির খেলে শ্লেষ্মা বাড়তে পারে, তবে এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার: মিষ্টি, চকলেট বা অতিরিক্ত মিষ্টি সিরাপ সর্দি ও সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ভাজাপোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং শরীর গরম না রেখে শ্লেষ্মা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কোলা বা কৃত্রিম জুস: কার্বোনেটেড পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত ফলের রস (যেমন প্যাকেটের জুস) সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
যা খেতে দেওয়া উচিত:
- গরম স্যুপ (মুরগি বা সবজির)
- গরম পানি বা গরম তুলসী-আদার চা
- ডাবের পানি (পরিমাণমতো)
- মধু ও লেবু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি (২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য)
- নরম ও হালকা খাবার (যেমন খিচুড়ি, সেদ্ধ ডাল-ভাত)
এই খাদ্যতালিকা মেনে চললে বাচ্চার সর্দি দ্রুত ভালো হতে পারে। তবে যদি সর্দি বেশি দিন স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম
বাচ্চাদের জন্য সর্দি-কাশির ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ সব ধরনের ওষুধ সব বয়সের শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। তবে সাধারণভাবে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
১. সর্দির জন্য:
- Nasivion Pediatric (0.025%) – নাক বন্ধ হলে নাকের ড্রপ (ডাক্তারের পরামর্শে)
- Saline Nasal Drop – নাক পরিষ্কারের জন্য লবণ পানি ড্রপ
২. কাশির জন্য:
- Ambroxol Syrup (Mucosolvan, Ambrolex, Broxol) – কফ বের করতে সাহায্য করে
- Diphenhydramine (Benadryl, Histacin Syrup) – শুকনো কাশির জন্য
৩. জ্বর বা ব্যথার জন্য: Paracetamol Syrup (Calpol, Napa, P-500, Babylex) – জ্বর ও ব্যথার জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কাশির ওষুধ সাধারণত না দেওয়াই ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেবেন না।
যদি কাশি বা সর্দি ৫-৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, শ্বাসকষ্ট হয় বা জ্বর বেড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয়
নবজাতক শিশুর (০-৬ মাস) সর্দি-কাশি হলে ওষুধ না দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে চলাই ভালো, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং অনেক ওষুধ তাদের জন্য নিরাপদ নয়।
তবে যদি শিশুর অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিম্নে নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয়গুলো উল্লেখ করা হলো -
১. বুকের দুধ বেশি বেশি খাওয়ানো: মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুর শরীর হাইড্রেটেড রাখে এবং সর্দি-কাশা কমাতে সাহায্য করে।
২. নাক পরিষ্কার রাখা (Saline Nasal Drops): লবণ পানি (সালাইন ড্রপ) নাকে কয়েক ফোঁটা দিন এবং নরম টিস্যু বা নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিন। এটি নাক বন্ধ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৩. হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল: নবজাতককে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমের মধ্যে না রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যেতে পারে। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং আরাম বোধ করে।
৪. ঘরের পরিবেশ উষ্ণ রাখা: শিশুকে খুব ঠান্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার সরাসরি শিশুর দিকে না রাখুন।
৫. গরম পানির ভাপ (Steam Therapy): বাথরুমে গরম পানির বাষ্প তৈরি করে নবজাতককে কয়েক মিনিট সেখানে রাখতে পারেন (শুধু বসিয়ে রাখুন, কাছ থেকে ভাপ দেবেন না)। এটি সর্দি কমাতে সাহায্য করবে।
৬. সরিষার তেল ম্যাসাজ (হালকা গরম করে): সরিষার তেলে রসুন গরম করে ঠান্ডা হলে শিশুর পা ও বুকে হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি শরীর গরম রাখবে এবং আরাম দেবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি: শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হলে। খাওয়ার ইচ্ছা কমে গেলে বা বারবার বমি হলে। শরীর বেশি গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে গেলে। কাশি ৫-৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে। নাক থেকে ঘন হলুদ বা সবুজ শ্লেষ্মা বের হলে।
যেহেতু নবজাতকরা খুব সংবেদনশীল, তাই কোনো ধরনের ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য। বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায়
সুপ্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। উপরের প্রতিবেদন গুলা পড়ার মাধ্যমে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ঘরোয়া উপায়।
আরও জানতে পেরেছেন বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে কি খাওয়া উচিৎ না ও বাচ্চাদের সর্দি কাশির ওষুধের নাম এবং নবজাত শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে আর্টিকেলটি সেয়ার করুন। ধন্যবাদ এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url